Ajker Patrika

নবমের ইংরেজি বইয়ে বাংলা ছড়া, বাস-ট্রাক-কলার ছবির উদ্দেশ্য কী

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ২৪
নবমের ইংরেজি বইয়ে বাংলা ছড়া, বাস-ট্রাক-কলার ছবির উদ্দেশ্য কী

নতুন শিক্ষাক্রমের বই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক থামছেই না। শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই ‘আদম হাওয়া পাপ করল’ এমন পাঠসংবলিত একটি পৃষ্ঠার ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হয়, সেটি নতুন বইয়ের অংশ। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পৃষ্ঠাটি নতুন পাঠ্যক্রমেরই নয়। এবার নবম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের কয়েকটি পৃষ্ঠার ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে, নবম, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাস, ট্রাক, কলা চেনানো হচ্ছে! ইংরেজি বইয়ে বাংলা ছড়া ছাপানো হয়েছে।

১৩ জানুয়ারি ‘ফারজু স্টোরি’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটিতে ধারাভাষ্যকার বইটি খুলেই বলছেন, ‘এই যে ইংরেজি কবিতা, এরপরেই আবার বাংলা কবিতা। এটা তাজ্জব ব্যাপার!’ কয়েকটি পৃষ্ঠা উল্টিয়ে তিনি বলেন, ‘আরও বড় তাজ্জব ব্যাপার, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিখবে ট্রেন কী, বাস কী, ডিএসএলআর ক্যামেরা কী!’

এরপর বইয়ের দুটি পৃষ্ঠায় থাকা জুতা, স্যান্ডেল, কলা, পাউরুটি, স্যান্ডউইচ ইত্যাদির ছবি নিয়ে উপহাস করতে দেখা যায়। এ সময় সঙ্গের দুই কিশোরের উদ্দেশে নানা কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে।

ভিডিওটি আজ বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত প্রায় ৪২ লাখ বার দেখা হয়েছে। শেয়ার হয়েছে ৪৫ হাজার। মন্তব্য পড়েছে প্রায় ৯ হাজার।   

ইংরেজি বইটির ওই পৃষ্ঠাগুলো দিয়ে ফটোকার্ড আকারে গত সোমবার (১৫ জানুয়ারি) ‘ফ্রাইডে পোস্ট’ নামে আরেকটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করতে দেখা গেছে। ফটো কার্ডটিতে লেখা রয়েছে, ‘ওপরের ছবি দুইটা নবম শ্রেণির ইংরেজি বই থেকে নেওয়া নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেমেয়েকে শেখাচ্ছে—কোনটি বাস, কোনটি ট্রেন, কোনটি জুতা, কোনটি কলা।’ এতেও রিঅ্যাকশন পড়েছে ৬০০-এর বেশি। শেয়ার হয়েছে দেড় শর বেশি।

পোস্ট দুটির কমেন্ট বক্স ঘুরে দেখা যায়, পোস্ট ও ভিডিও থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে নবম শ্রেণির বইয়ে এসব ছবি ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করেছেন। 

শারমিন সুলতানা নামে একজন ফেসবুক ব্যবহাকারী লিখেছেন, ‘এসব তো নার্সারির বইতে থাকে।’ মুহাম্মদ আল আমিন নামে একজন লিখেছেন, ‘এত এত গুরুত্বপূর্ণ লেখাপড়া থাকতে বাস, কলা, জুতা—এগুলো চেনাতে হবে কেন। নির্বোধ লোক দিয়ে দেশ পরিচালনা করলে এর চেয়ে ভালো কিছু হবে বলে মনে হয় না।’

রাজু খান নামে একজন লিখেছেন, ‘এই নবম শ্রেণির বই আমার দুই বছরের বাচ্চাটাও পরতে পারবে ইনশা আল্লাহ।’ এম রহমান শেখ নামে একজন ইংরেজিতে মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘এটি একটি আহাম্মকি পাঠ্যক্রম, যা নিম্নমানের শিক্ষার সূচনা করবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমরা এমনিতেই পিছিয়ে। আমি ইউরোপীয় বা উত্তর আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থার সাথে তুলনা করছি না। বাংলাদেশে এমন কারিকুলাম চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মানসিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়বে, তারা পিছিয়ে যাবে এবং সুবিধাবঞ্চিত হবে।’ আলমগীর হাসান নামে একজন লিখেছেন, ‘একটা জাতিকে ধংস করতে হলে তাদের পরবর্তী জেনারেশনকে মূর্খ বানালেই যথেষ্ট। আমার মনে হয়, বইতে এই ভুলগুলো ইচ্ছে করে করা হয়েছে।’ 

ইমতিয়াজ আহমেদ জিসান নামে একজন লিখেছেন, ‘হায়রে বাংলাদেশ আজকে এই ভিডিও টা দেখার পর লজ্জা বোধ হচ্ছে, কি সব শিক্ষামন্ত্রী আমরা বাংলাদেশে রেখেছি, যে বিষয়টি আমরা শিশু শ্রেনীতে পড়তাম আর সেই বিষয়টি এখন নবম-দশম শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীদের পড়তে হচ্ছে,আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একি উন্নতি?’ (মন্তব্যের বানান ও শব্দচয়ন অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে)।

ভাইরাল পোস্টটিতে নবম শ্রেণির ইংরেজি বইটির সমালোচনা করে নেটিজেনদের মন্তব্য।নবম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে বাংলা ছড়া কেন
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের নবম শ্রেণির ইংরেজি বইটি সংগ্রহ করে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা হয়। বইটির ২৬ পৃষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়া রয়েছে। তবে ছড়ার ওপরেই লেখা রয়েছে, এটি মূলত উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

ছড়াটি কিসের উদাহরণ, সে সম্পর্কে আগের পৃষ্ঠা অর্থাৎ ২৫ নম্বর পৃষ্ঠায় ২.৪.১ পাঠটিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা যেন পাঠ্যবই (বাংলা অথবা ইংরেজি) অথবা অন্য কোনো বই থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য তুলে ধরে এমন একটি কবিতা বেছে নেয়। পরে দলীয়ভাবে কবিতায় থাকা সেসব ছবি চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে, যেগুলো তারা দেখতে, শুনতে এবং অনুভব করতে পেরেছে। এরপর ছবিগুলো কীভাবে তাকে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে ভূমিকা রাখছে, তা বর্ণনা করতে বলা হয়েছে এবং তাদের উত্তরগুলো শ্রেণিতে আলোচনা করতে বলা হয়েছে।

নবম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে রবীন্দ্রনাথের বাংলা ছড়াটি ব্যবহার করা হয়েছে উদাহরণ হিসেবে।২.৪.১ পাঠটি ইংরেজি বইটির নেচার’স ট্যাপেস্ট্রি নামের অধ্যায়ের মূল পাঠের অংশ। পাঠটি শুরু হয়েছে বৃষ্টির দিন, কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল, ঝড়ের রাতের তিনটি আলাদা ছবি দিয়ে। ছবিগুলোর শুরুতে শিক্ষার্থীদের ছবিগুলো দেখে নিজের ভাষায় বর্ণনা দিতে বলা হয়েছে এবং এসব পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা কেমন বোধ করে, তা নিয়ে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। এই পাঠে উদাহরণ হিসেবে দেওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছড়াটির আগে ইংরেজি সাহিত্যের দুজন বিখ্যাত কবি আলফ্রেড টেনিসন ও জন কিটসের দুটি কবিতা রয়েছে। কবিতা দুটি যথাক্রমে ‘ক্রসিং দ্য বার’ ও ‘অন দ্য গ্রাসহুপার অ্যান্ড ক্রিকেট’। দুটি কবিতাতেই প্রকৃতি সৌন্দর্য বর্ণনা রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভাইরাল পোস্টগুলোতে পুরো পাঠটি সম্পর্কে উল্লেখ না করেই শেষ অংশে কেবল উদাহরণ হিসেবে দেওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়াটি বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।

নবম শ্রেণির বইয়ে ট্রেন, বাস, জুতা বা স্যান্ডেলের ছবি কেন 
নবম শ্রেণির ইংরেজি বইটির ৭৯ থেকে ৮০ নম্বর পৃষ্ঠায় ট্রেন, বাস, ব্যাগ, জুতা, কলা ইত্যাদির ছবি রয়েছে। পৃষ্ঠা দুটি ‘দ্য আর্ট অব এক্সপ্রেসিং কমপারিসন্স’ নামে একটি পাঠের অংশ। এটি ইংরেজি বইয়ের ষষ্ঠ পাঠ।

এর অধীনে ৬.১.১ পাঠের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘মনে করো, এখন গ্রীষ্মকালের ছুটি। তুমি তোমার পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো একটি স্থানে ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করছ। তোমাকে এখন বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নিচের ছবিগুলো দেখো এবং তোমার ভ্রমণের জন্য প্রদত্ত বিকল্পগুলোর মধ্যে কোনটি তুমি বেছে নিবে, সে সিদ্ধান্ত নাও। পরে তোমার ভ্রমণের জন্য পছন্দের তালিকাটি শ্রেণিতে শেয়ার করো এবং কেন সেই জায়গাগুলো বেছে নিয়েছ, তা ব্যাখ্যা করো।’

নবম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে ট্রেন, বাসের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে কম্পারেটিভ এ্যাসে লেখা শেখানোর উদ্দেশ্যে।এই পাঠের অধীনে ভ্রমণের গন্তব্য হিসেবে দেখানো হয়েছে রাঙামাটির সাজেক ও কক্সবাজার। পরিবহন হিসেবে দেখানো হয়েছে ট্রেন ও বাস। জিনিসপত্র বহন করার জন্য দেখানো হয়েছে স্যুটকেস ও ব্যাগ। জুতার উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে কেডস ও স্যান্ডেল। ছবি তোলার ডিভাইস হিসেবে দেখানো হয়েছে মোবাইল ফোন ও ডিএসএলআর ক্যামেরা, ভ্রমণে খাবার হিসেবে দেখানো হয়েছে কলা, পাউরুটি ও স্যান্ডউইচ। 

এরপরের ৬.১.২ পাঠে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, তারা যেন দলে আলোচনা করে এবং যানবাহন, লাগেজ ও খাবারের বিকল্পগুলোর মধ্য থেকে একটি পছন্দ করার জন্য যে ধাপগুলো অনুসরণ করেছে, তা নিয়ে ভাবে। শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এই পাঠটিতে কিছু ধাপও যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের আরও ধাপ যুক্ত করতে বলা হয়েছে এখানে। এরপর একটি ফ্লো চার্ট বা প্রবাহচিত্রে এ ধাপগুলো সাজিয়ে সবশেষে শ্রেণিতে শেয়ার করতে বলা হয়েছে। 

ভাইরাল ভিডিও এবং পোস্টগুলো যাচাই করে দেখা যায়, পাঠের এই বিষয়গুলো বিস্তারিত উল্লেখ না করেই নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাস, ট্রেন, কলা ইত্যাদি চেনানোর দাবিতে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে। 

যা বলছেন বইটির লেখক ও সম্পাদকীয় মণ্ডলীর সদস্য রুবাইয়াৎ জাহান
নবম শ্রেণির বইটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল দাবিগুলো প্রসঙ্গে বইটির লেখক ও সম্পাদকীয় মণ্ডলীর সদস্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অধ্যাপক রুবাইয়াৎ জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

তিনি মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘বাস, ট্রেনের ছবিযুক্ত যে পৃষ্ঠাগুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, ওখানে শিক্ষার্থীদের বাস, ট্রেন চেনানো উদ্দেশ্য না। ওই ছবিযুক্ত পাঠটির নাম আর্ট অব এক্সপ্রেসিং কমপারিসন্স। এই পাঠটির উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কীভাবে কম্পারেটিভ এ্যাসে লিখতে হয়, সেটি শেখানো। আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্যই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখানো। এই উদ্দেশ্যে বইগুলোকে ধাপে ধাপে সাজানো হয়েছে। বাস, ট্রেনের অংশটি আছে পাঠের শুরুতেই ৬.১.১ এ; আর এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে ৬.৩.১ তে। সেখানে পাঠের কনসেপ্ট বা ধারণা নোট হিসেবে দেওয়া হয়েছে। তাই যারা বলছে, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাস, ট্রেন, কলা ইত্যাদি চেনানো হচ্ছে, তারা হয়তো একদমই না বুঝে বলছে।’

নবম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে ট্রেন, বাসের ছবি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য আলোচনা করা হয়েছে এই পাঠে।ইংরেজিতে বাংলা ছড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে শিক্ষার্থীদের বাংলা কবিতা শেখানো হচ্ছে না। আমাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখানোর সবশেষ ধাপ হচ্ছে বইয়ের বাইরে গিয়ে চিন্তা করা। যেকোনো কবিতার মাধ্যমেই এটা হতে পারে। একটা কবিতাতে সুন্দর প্রকৃতির বর্ণনা আছে, সেটা আমি পড়ে আরেকটা কবিতা থেকে সেটা আমি খুঁজে বের করতে পারছি কি না, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এখানে তাই উদাহরণ হিসেবে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে।’

সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন করে বইয়ের অংশবিশেষ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৩
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত