Ajker Patrika

ভারতীয় এক্স অ্যাকাউন্টগুলো থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের গুজব থামছেই না

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৪, ১৮: ১০
ভারতীয় এক্স অ্যাকাউন্টগুলো থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের গুজব থামছেই না

বাংলাদেশে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গত সপ্তাহে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই কার্যত ভেঙে পড়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এই সুযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ মন্দির–বসতবাড়ি ভাঙচুরসহ লুটপাটের ঘটনা।

গতকাল শনিবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ নামে দুটি সংগঠন দাবি করেছে, শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের ৫২টি জেলায় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর ২০৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যেই সাম্প্রদায়িক হামলার নামে এক্সে (সাবেক টুইটার) ক্রমাগত ছড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন ভুল তথ্য সংবলিত দাবি, অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও। এসব অ্যাকাউন্টের মধ্যে ভারতীয়দের দ্বারা পরিচালিত অ্যাকাউন্ট যেমন আছে, তেমনি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশের অ্যাকাউন্টও আছে। এসব দাবির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।

দাবি ১: বাংলাদেশি ছোটপর্দার অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী করের বাড়িতে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর হামলা
‘বাবা বানারাস (Baba Banaras)’ নামে একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) বাংলাদেশি ছোটপর্দার অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী করের একটি ছবি টুইট করে দাবি করা হয়, তাঁর বাড়িতে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে।

বাংলাদেশি ছোটপর্দার অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী করের বাড়িতে হামলার দাবিতে গুজব। ছবি: আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিশ্লেষণদাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী করের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। ঊর্মিলা দাবিটিকে গুজব উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। তাঁর বাড়িতে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।’

দাবি ২: হিন্দুদের ওপর হামলা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
‘বাবা বানারাস (Baba Banaras)’ নামের একই অ্যাকাউন্ট থেকে আজ রোববার ২৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও টুইট করে দাবি করা হয়, জামায়াতে ইসলামীই নয় কেবল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও হিন্দুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। ভিডিওটিতে দাবি করা হয়, হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় যেসব হিন্দু প্রতিবাদ জানাচ্ছে, সেসব হিন্দুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, দুই তরুণকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুই সদস্য লাঠিপেটা করছেন। ভিডিওটিতে ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহ আকবার’ স্লোগান দিতে শোনা যাচ্ছে।

হিন্দুদের ওপর হামলা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দাবিতে গুজব। ছবি: আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিশ্লেষণ ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে ‘Kranchy’ নামের একটি অ্যাকাউন্টে মূল ভিডিওটি পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্টটি থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, হিন্দুদের ওপর সেনাবাহিনীর হামলার দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি চট্টগ্রাম থেকে ধারণ করা। ভিডিওটিতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা যাদের লাঠিপেটা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়ার দাবি করা হয়েছে ভিডিওটিতে। ভিডিওটিতে কোনো ধর্মীয় স্লোগান শোনা যায়নি।

প্রসঙ্গত, ‘বাবা বানারাস (Baba Banaras)’ অ্যাকাউন্টটি থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার দাবিতে ক্রমাগত ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এর আগেও আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ অ্যাকাউন্টটি থেকে একাধিক সাম্প্রদায়িক হামলার দাবিতে প্রচারিত ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে।

দাবি ৩: বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার দাবিতে বগুড়ার রথযাত্রার দুর্ঘটনার ভিডিও প্রচার
মি. ন্যাশনালিস্ট’ নামের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ১ মিনিটের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, বর্তমানে বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্থা এটি। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকজন নারী–পুরুষ সড়কে এবং সড়ক বিভাজকে পড়ে আছেন। কেউ কেউ তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার কোনো সম্পর্ক নেই। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের ইউটিউব চ্যানেলে গত ৭ জুলাই হুবহু একই ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি বগুড়ায় রথযাত্রায় বিদ্যুতায়িত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু এবং অন্তত ৩০ জন আহত হওয়ার ঘটনার। বগুড়া শহরের সেউজগাড়ী আমতলী মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার দাবিতে বগুড়ার রথযাত্রার দুর্ঘটনার ভিডিও প্রচার। ছবি: আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিশ্লেষণদাবি ৪: ছাত্রলীগ নেত্রীর ভিডিও ব্যবহার করে মনগড়া গল্প
মি. ন্যাশনালিস্ট’ নামের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও টুইট করা হয়। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এক তরুণী কান ধরে ওঠবস করছেন এবং আশপাশে অন্য তরুণীরা সেই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করছেন। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ‘এই মেয়ের নাম জ্যোতিকা বসু চ্যাটার্জি। তিনি বাংলাদেশে একটি মানবিক সহায়তা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি হিন্দুদের থেকে প্রাপ্ত সহায়তা দিয়ে মুসলিমদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করেন। তবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা শুরু হওয়ার মানুষ সব ভুলে গিয়ে জ্যোতিকাকে কান ধরে ওঠবস করায়। পরে প্রায় ২০ জন তাঁকে উলঙ্গ করে ধর্ষণ করে ধর্মীয় স্লোগান তুলে জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়। জ্যোতিকার ভাই এই ঘটনায় ভিডিও বার্তায় ভারত সরকারের সহযোগিতা চান। পরে তাঁকেও আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়।’

ছাত্রলীগ নেত্রীর ভিডিও ব্যবহার করে মনগড়া গল্প প্রচার। ছবি: আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিশ্লেষণআজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘মি. ন্যাশনালিস্ট’ এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ৩১ সেকেন্ডের ভিডিও টুইট করে যে দাবিটি করা হচ্ছে, সেটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ভাইরাল ভিডিওটি গত ১৭ জুলাইয়ের এবং এ ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলার কোনো সম্পর্ক নেই।

ভিডিওটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে একটি বাংলা জাতীয় দৈনিকে গত ২৬ জুলাইয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওর ঘটনাটি গত ১৭ জুলাইয়ের।

আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম সাগরিকা, ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুস্মিতা বাড়ৈ গ্রুপের কর্মী হিসেবে পরিচিত। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন ইডেন কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রীরা। তিনিও তাঁদের একজন। আরেকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আজকে ইডেনের শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদের দিন’ শিরোনামে একটি ফেসবুক ভিডিও পোস্টে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা এক ছাত্রলীগ নেত্রীকে কান ধরে ওঠবস করাচ্ছেন। 

দাবি ৫: ঈদযাত্রার ভিডিওকে হিন্দুদের বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার বলে দাবি
‘হুদা জান্নাত (Hoda_Jannat)’ নামের একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে আজ রোববার নদীতে কিছু যাত্রীবাহী লঞ্চের ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ইসলামি উগ্রপন্থীদের হামলায় হিন্দুরা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। ভিডিওটি থেকে কিছু কি–ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ‘Gola Bazar Gorakhpur’ নামের একটি ফেসবুক পেজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ৩০ মে পেজটিতে পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে ইংরেজিতে লেখা, ‘ঈদ উপলক্ষে লঞ্চের ছাদে অনেক যাত্রী।’ অর্থাৎ ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান।

ঈদ যাত্রা ভিডিওকে হিন্দুদের বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার দাবিতে প্রচার। ছবি: আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিশ্লেষণদাবি ৬: ভারতে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে মুসলিমদের ওপর হামলা
ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের গাজিয়াবাদে বসবাসকারী বেশ কয়েকটি মুসলিম শ্রমিক পরিবারকে অবৈধ বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে মিস্টার সিনহা নামের একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল শনিবার (১০ আগস্ট) একটি ভিডিও টুইট করা হয়। টুইটটিতে দাবি করা হয়, এই বাংলাদেশিরা তাঁদের অস্থায়ী তাঁবুতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হিন্দুদের ওপর হামলা উদ্‌যাপন করছিল। ভারতের হিন্দু রক্ষা দল (এইচআরডি) এটি দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের তাঁবুগুলো গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় কাউকে আঘাত করা হয়নি।

ভারতে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে মুসলিমদের ওপর হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিশ্লেষণ তবে ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। এরপর এইচআরডির দুই নেতা ওই এলাকার মুসলমানদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান। গতকাল শনিবার দেশটির পুলিশ কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অভিষেক শ্রীবাস্তব নামে এক সহকারী পুলিশ কমিশনারের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। হামলার শিকাররা মুসলিম পরিবার, কিন্তু তাঁদের কেউই বাংলাদেশের নন।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গোপালগঞ্জ সহিংসতা নিয়ে অসম্পর্কিত ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ. লীগ: প্রেস উইং

বাসস  
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০৩
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

গতকাল বুধবার সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে নানা পোস্ট ছড়ানো হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল এ দিনের সহিংস ঘটনার মনগড়া বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি সংগঠিত প্রোপাগান্ডা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রভাবশালী আ. লীগপন্থীরা পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ছবি শেয়ার করেছেন, যা এদিনের সহিংসতার দৃশ্য বলে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, ‘ইউনূস গ্যাং’ এবং বিরোধীদলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মকভাবে আক্রমণ করছে।

একটি ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন এক আহত কিশোরকে বহন করছে, পেছনে আগুন জ্বলছে এবং উত্তেজিত জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। ছবিটি গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়। অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে-এই ছবিটি ২০২৪ সালের ১০ আগস্টের একটি ভিন্ন ঘটনার।

আরেকটি বহুল প্রচারিত পোস্টে দেখা যায়, জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়ছেন।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব পোস্টে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। পোস্টে তাঁরা উল্লেখ করেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং এনসিপি নেতা-কর্মীদের উসকানিতে এই সহিংসতা শুরু হয়। এতে বলা হয়, ‘বাস্তবতা হলো, ছবিটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপি সমাবেশের সময়ের, যেখানে ডিবি কর্মকর্তা কনককে জনতার দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।’

জাকির হোসেন আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তিনিও দাবি করেন, এটি গোপালগঞ্জের আজকের সংঘর্ষের ফলাফল। তবে প্রেস উইং বলেছে, ‘তবে এই ছবিটিও ভিন্ন ঘটনার। ছবিটি ২০২৩ সালের ২০ মার্চ এক সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনার সময় তোলা হয়েছিল।’

একই ভুয়া প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি শিশুর ছবি ছড়ানো হয়—যেখানে তাকে লাঠি হাতে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ছবিটি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তোলা এবং ওই শিশু নাকি সহিংসতায় অংশ নেয়। ছবিটি এই মিথ্যা বার্তা ছড়াতে ব্যবহার করা হয় যে, রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের পর্যন্ত জড়ানো হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ছবির একটি ডিজিটালি সম্পাদিত (সম্ভবত এআই-নির্মিত) সংস্করণ শেয়ার করেন নিঝুম মজুমদার, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজন অনলাইন প্রোপাগান্ডিস্ট হিসেবে পরিচিত বলে প্রেস উইং দাবি করেছে।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে এই বিষয়ে বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে, শিশুর এই ছবিটি গোপালগঞ্জে তোলা হয়নি, বরং গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ধারণ করা একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। মূল ভিডিওটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিল।’

এসব বিভ্রান্তিকর ছবির পাশাপাশি, আওয়ামী লীগপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো ভিত্তিহীনভাবে দাবি করে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাকি বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এসব মিথ্যা প্রচারণা জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। প্রেস উইংয়ের মতে এসব ভুয়া প্রচারণা ও যাচাইকৃত সূত্রভিত্তিক তথ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।

আজকের সহিংসতা শুরু হয় যখন গোপালগঞ্জ শহরে নির্ধারিত সমাবেশ শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা আক্রমণ করে। এই আক্রমণ দ্রুত বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি গাড়িও আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, ১৬ জুলাই রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয় ‘মাঠের বাস্তব ঘটনার বিপরীতে, আওয়ামী লীগপন্থী সামাজিক মাধ্যম চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, প্রাসঙ্গিকতা-বর্জিত ও মনগড়া ছবি ছড়িয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০০
নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক ইউনিট সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল রোববার এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস উইং জানিয়েছে, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ইওনসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন বলে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সোহাগের বাবার নাম মো. আয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী লাকি বেগম, বোন ফাতেমা এবং একমাত্র ছেলে সোহানকে রেখে গেছেন।

গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর নিথর দেহেও বোল্ডার ছুড়ে মারা হয়। নৃশংস এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার জানাজা শেষে সোহাগকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ গ্রাম বন্দরগাছিয়ায় তাঁর মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

ভারতের যেসব সংবাদমাধ্যম সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করেছে, তারা তাদের প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেনি। বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম নিয়মিত ভিত্তিহীন ও ভুল তথ্য প্রচার করে আসছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /নাটকের দৃশ্যকে ধর্ষণের পর হত্যা দাবিতে প্রচার

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, ১৯: ০০
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেখে গেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।

৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একজন তরুণী হাত বাঁধা অবস্থায় কংক্রিটের মেঝেতে পড়ে আছেন। পাশেই একজন মধ্যবয়সী তরুণীটির বাবা পরিচয়ে আর্তনাদ করছেন। তাঁকে আরেকজন যুবক সান্ত্বনা দিচ্ছেন। পুলিশের পোশাক পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি তরুণীকে ঘিরে পর্যবেক্ষণ করছেন। ভিডিওর শেষাংশে পুলিশকে তরুণীর মরদেহ ব্যাগে ভরতে দেখা যায়।

‘Md Nishad Hossain’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আজ সোমবার (৩০ জুন) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘আহারে নির্মমতা এবং একজন বাবার আর্তনাদ। বাংলাদেশ ২০২৪’র আগস্ট মাস থেকে সারা দেশে নারী ধর্ষণ করেই চলছে বিএনপি জামাতের মব সন্ত্রাসীরা। একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে রেখে গেছে। মেয়ের পিতার আহাজারী কে শুনবে দেশে এখন বিচার নাই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী হায়ানারা যা যা করছে ২০২৪ ’র বাংলাদেশে বিএনপি জামাত তার চেয়ে বেশি করছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভিডিওটি ১৯ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ৫১৫টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৫৬টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১৮৫ বার।

এসব কমেন্টে অনেকে ভিডিওটি নাটক উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে সত্য মনে করেও কমেন্ট করেছে। Shilvi Akther নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ‘আহারে জীবন! মানুষ কিভাবে এতো নির্মম হয়? একজন বাবার আর্তনাদ কি কারো মনকে মর্মাহত করে না?’ (বানান অপরিবর্তিত) Narayon Saha লিখেছে,’ এই দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট বাবার কান্দে সন্তানের লাশ হায়রে দুনিয়া।’ (বানান অপরিবর্তিত)

S M Salam Patwari, গর্জে ওঠো আরেকবার বাংলাদেশ এবং গাজীপুর জেলা যুবলীগ শাখা নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ‘Short Film BD’ নামে একটি লোগো লক্ষ করা যায়। এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Short Film BD’ নামে একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ২০ জুনে প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মেঝেতে পড়ে থাকা তরুণী, পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তি, আহাজারি করা ব্যক্তি ও আশপাশের দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘মৌসুমীর সাথে কি হলো।’ ৪ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখে বোঝা যায়, এটি একটি নাটিকার দৃশ্য।

Short Film BD নামে ফেসবুক পেজটিতে একই তারিখে একই ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘মেয়ের কি হইছে জানতে চায় অসহায় বাবা।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

Short Film BD ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন ধরনের নাটিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে অভিনয় করা একাধিক ব্যক্তিকে অন্যান্য ভিডিওতেও (, ) দেখা গেছে।

এ ছাড়া এই পেজের ইন্ট্রোতে লেখা, ‘শর্টফিল্ম ও নাটক দেখুন এবং উপভোগ করুন। আমাদের সঙ্গেই থাকুন।’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তরিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

সুতরাং, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে একটি নাটক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সাপ্লাই চেইন বিভাগে চাকরির সুযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করবে: আমীর খসরু

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

সিটি করপোরেশন হচ্ছে সাভার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত