Ajker Patrika

বাংলা কি সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭: ১৬
বাংলা কি সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওন। ৭১ হাজার ৭৪০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ দেশে বসবাস করে অন্তত ১৬টি জাতিগোষ্ঠী, যেগুলোর প্রতিটির আলাদা ভাষা ও রীতিনীতি আছে। সিয়েরা লিওনের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক, যার সূচনা হয় তিন দশকের বেশি আগের গৃহযুদ্ধের সূত্র ধরে। প্রায় এক যুগ পর ২০০২ সালে এই গৃহযুদ্ধের সময় শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং অবসানের পর দেশটির পুনর্গঠনে জাতিসংঘের অধীনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অনন্য ভূমিকা পালন করে।

২০০২ সালের পর থেকে ফেব্রুয়ারি এলেই গণমাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে, তা হলো- সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা বা অন্যতম রাষ্ট্রীয় ভাষা বা দাপ্তরিক ভাষা বাংলা। দেশের বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যপুস্তকেও এ তথ্য জায়গা পেয়েছিল। যেমন, সদ্যবিদায়ী শিক্ষাক্রমের নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বইয়ের ‘জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ’ অধ্যায়েও বাংলাকে সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লেখ করা ছিল। 

আসলেই কি বাংলা দেশটির দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

সিয়েরা লিওনের ভাষা পরিস্থিতি
ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান ইনস্টিটিউটের সৌজন্যে ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করে। ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান ইনস্টিটিউটের জার্নালে মূল নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। এই নিবন্ধ থেকে জানা যায়, সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা ইংরেজি। এটি দেশটির আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, সরকার, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, সংবাদ মাধ্যম, আন্তর্জাতিক যোগাযোগসহ সবক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এর বাইরে দেশটির স্বীকৃত, সংবাদ মাধ্যমে বহুল প্রচারিত এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও সাহিত্যে স্বল্পমাত্রায় ব্যবহৃত চারটি জাতীয় ভাষা হলো- ক্রিও, লিম্বা, মেন্দে এবং তেমনে। অর্থাৎ সিয়েরা লিওন একটি বহুভাষিক রাষ্ট্র।

সিয়েরা লিওনের ভাষাগত রাজনীতি নিয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আফ্রিকান জার্নাল অব পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ১৯৬১ সালে ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। ঔপনিবেশিক শাসনের সময় থেকেই সেখানে ইংরেজি একমাত্র সরকারি ও অভিজাত ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত। যদিও দেশটির জাতিগোষ্ঠীরা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে। এসব ভাষার মধ্যে ক্রিও নামের ভাষা দেশটির রাজধানী ফ্রিটাউনে লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ শহরটির অধিকাংশ মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। দেশটিতে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজিকে ব্যবহার করা হয়। 

সিয়েরা লিওনে প্রচলিত ভাষাসমূহ। ছবি: আফ্রিকান জার্নাল অব পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসসিয়েরা লিওনের মাতৃভাষা নিয়ে ২০১০ সালের মার্চে টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস গ্রুপের জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে দেশটিতে ব্যবহৃত ভাষা নিয়ে আলোচনা পাওয়া যায়। ওই নিবন্ধে দেশটিকে বহুভাষিক রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশটির জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষাসহ বাইরের বেশকিছু ভাষাও দেশটিতে প্রচলিত। এর মধ্যে আছে ইংরেজি, ফরাসি ও আরবি। গবেষণাগুলো থেকে বাংলা ভাষা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

সম্ভাব্য সংঘাত, হুমকি চিহ্নিতকরণ এবং সমাধান, মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ ও প্রচার এবং সুশাসনের জন্য সংস্কার সুসংহত করার লক্ষ্যে সিয়েরা লিওন সরকারকে সহায়তা দিতে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনাইটেড ন্যাশনস ইন্টিগ্রেটেড পিসবিল্ডিং অফিস ইন সিয়েরালিওন (ইউএনআইপিএসআইএল)।

ইউএনআইপিএসআইএলের ওয়েবসাইট থেকে সিয়েরা লিওনের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। এখানে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে কেবল ইংরেজির নাম উল্লেখ আছে। এর বাইরে ক্রিওকে বহুল ব্যবহৃত ভাষা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানেও বাংলা ভাষা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। 

ট্রান্সলেটর উইথ আউট বর্ডারস নামে অনুবাদ নিয়ে কাজ করা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে দেশটিতে অনুষ্ঠিত আদম শুমারি অনুযায়ী, সিয়েরা লিওনে ১৮টি প্রধান ভাষা আছে। এর মধ্যে ক্রিও সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষা। এটি দেশটিতে লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও দেশটির মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ তাদের প্রধান ভাষা হিসেবে এটি ব্যবহার করে। এর বাইরে মেন্দে ও তেমনেও আছে। তবে সরকারি ভাষা হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রশাসন এবং সংবাদ মাধ্যমে ইংরেজি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বাংলা ভাষা ও সিয়েরা লিওন 

শিক্ষামূলক জিওগ্রাফি ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসে সিয়েরা লিওনের ভাষা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এ থেকে দেশটিতে অন্তত ২৩টি ভাষা প্রচলিত থাকার কথা জানা যায়। সিয়েরা লিওনের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করে।

সিয়েরা লিওনের ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট ভিজিট সিয়েরা লিওন থেকেও প্রায় একই তথ্য জানা যায়। এতে বলা হয়, সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা ইংরেজি। দেশটিতে ২৩টি ভাষা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ভাষা হলো- মেন্দে, তেমনে, লিম্বা এবং ক্রিও। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ক্রিও। 

ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসে উল্লেখ করা হয়, সাবেক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক হিসেবে দেশটির সরকারি ভাষা ইংরেজি। ক্রিও দেশটিতে লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। এটি দেশটির প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা হলেও দেশটির জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। তবে ভাষাটির কোনো সরকারি স্বীকৃতি নেই। দেশটিতে ব্যবহৃত অন্যান্য ভাষার মধ্যে আছে মেন্দে, তেম্নে এবং লিম্বা। 

এই ওয়েবসাইট থেকে সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষার উপস্থিতি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়, সিয়েরা লিওন দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে দেশটির নাগরিকরা বাংলা ভাষা ব্যবহার করে না। কারণ, বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি ‘অনারারি স্ট্যাটাস’ বা সম্মানসূচক।

বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের সম্মানসূচক সরকারি ভাষা দাবি। ছবি: কমেনওয়েলথ চেম্বার অব কমার্সকমেনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংগঠন কমেনওয়েলথ চেম্বার অব কমার্সের ওয়েবসাইট থেকে সিয়েরা লিওন সম্পর্কে একটি নিবন্ধ পাওয়া যায়। নিবন্ধটিতে সিয়েরা লিওনে গৃহযুদ্ধ এবং বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০২ সালের ডিসেম্বরে দেশটি বাংলাকে ‘অনারারি অফিসিয়াল ল্যাংগুয়েজ’ বা সম্মানসূচক সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেয়।

দেশীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্যে যা ছিল
 
কমেনওয়েলথ চেম্বার অব কমার্সের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যের সূত্রে দেশের ২০০২ সালের সংবাদপত্রগুলোর আর্কাইভ খোঁজে দেখে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।

পুরোনো পত্রিকার সংগ্রহশালা সংগ্রামের নোটবুকের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৮ ডিসেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার শেষ পাতায় ‘বাংলা সিয়েরা লিওনের অন্যতম সরকারি ভাষা’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিয়েরা লিওন সরকার বাংলা ভাষাকে দেশটির অন্যান্য অফিসিয়াল ভাষার মত সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পুনঃনির্মিত একটি সড়ক উদ্বোধনকালে এই ঘোষণা দেন। একই তথ্য পাওয়া যায় একই দিনে দৈনিক প্রথম আলো, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার থেকে। 

অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস, কমেনওয়েলথ চেম্বার অব কমার্সের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির সরকারি বা দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। বরং এটি ছিল সম্মানসূচক স্বীকৃতি। বিপরীতে দেশীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিয়েরা লিওন দেশটির অন্যান্য অফিসিয়াল ভাষার মত সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।

প্রকৃত তথ্য কি 
বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবিটির সত্যতার খোঁজে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) স্বীকৃত পশ্চিম আফ্রিকাভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান দুবাওয়ার একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। দুবাওয়া নাইজেরিয়া, ঘানা, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া এবং গাম্বিয়াতে কার্যক্রম পরিচালনা করে। সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি নিয়ে ২০২৩ সালের মার্চে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে দুবাওয়া। 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হওয়া দেশটির মানুষ অনেকগুলো ভাষায় কথা বলে। তবে এগুলোর কোনোটিই দেশটির সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহার হয় না। দেশটিতে রাষ্ট্রের স্বীকৃত ভাষা ইংরেজি। বাংলা ভাষার স্বীকৃতি নিয়ে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহর বক্তব্যের বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় না। 

বাংলাকে সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। ছবি: দুবাওয়া তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে দুবাওয়া সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রি টাউন কেন্দ্রিক ভাষা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট ফর সিয়েরা লিওনিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেসের (টিআইএসএলএল) প্রোগ্রাম ডিরেক্টর লামিন এইচ কার্গবুয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, বাংলা কখনোই সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা ব্যবহার হয়নি বা এমন কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। 

দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহর বাংলাকে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে তিনি অবগত। প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বা স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে বলেছিলেন। কিন্তু সেটি সরকারি ভাষা হিসেবে নয়।  

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ দেশটির গৃহযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকার ও দেশটির জনগণের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এমন মন্তব্য করেছিলেন। তবে কখনোই বাংলাকে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি। প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ এমন স্বীকৃতি দিয়েছেন বলে যদি ধরেও নেই, তারপরও সিয়েরা লিওনের নাগরিকদের কাছে বাংলা স্বীকৃত ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়নি এবং দেশটির কোথাও বাংলা ব্যবহৃত হয় না।’

তিনি দুবাওয়াকে আরও বলেন, সিয়েরা লিওনের একমাত্র সরকারি ভাষা ইংরেজি। ইংরেজির বাইরে দেশটিতে ব্যবহৃত অন্যান্য ভাষাগুলো ব্যবহৃত হয় কেবল অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য।

একই প্রসঙ্গে সিয়েরা লিওনের ২৫ বছরের বেশি শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত সিয়া টেংবেহ নামের এক শিক্ষিকা দুবাওয়াকে বলেন, তাঁর ২৫ বছরের শিক্ষকতা পেশায় কোনো প্রেসিডেন্ট বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দেশটির সরকারি ভাষা পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো ঘোষণা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা কেবল ইংরেজি।

প্রসঙ্গত, বাংলা ভাষার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহ ২০০৩ সালের ২১ অক্টোবর তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ওই সময়ের পত্রিকাগুলোর আর্কাইভ বা পুরোনো সংস্করণ খুঁজেও সেই সময় তাঁর সফরকালে বাংলাকে দেশটির দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়ে কোনো আলোচনা পাওয়া যায় না। 

উপরোক্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট, বাংলা সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি সঠিক নয়। দেশটির একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি। দেশটিতে সংঘঠিত প্রায় ১১ বছরের গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বা স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে বলেছিলেন। কিন্তু সেটি সরকারি ভাষা হিসেবে নয়। পরে এটিই সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা বাংলা ঘোষণা করা হয়েছে দাবিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গোপালগঞ্জ সহিংসতা নিয়ে অসম্পর্কিত ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ. লীগ: প্রেস উইং

বাসস  
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০৩
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

গতকাল বুধবার সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে নানা পোস্ট ছড়ানো হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল এ দিনের সহিংস ঘটনার মনগড়া বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি সংগঠিত প্রোপাগান্ডা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রভাবশালী আ. লীগপন্থীরা পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ছবি শেয়ার করেছেন, যা এদিনের সহিংসতার দৃশ্য বলে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, ‘ইউনূস গ্যাং’ এবং বিরোধীদলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মকভাবে আক্রমণ করছে।

একটি ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন এক আহত কিশোরকে বহন করছে, পেছনে আগুন জ্বলছে এবং উত্তেজিত জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। ছবিটি গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়। অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে-এই ছবিটি ২০২৪ সালের ১০ আগস্টের একটি ভিন্ন ঘটনার।

আরেকটি বহুল প্রচারিত পোস্টে দেখা যায়, জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়ছেন।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব পোস্টে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। পোস্টে তাঁরা উল্লেখ করেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং এনসিপি নেতা-কর্মীদের উসকানিতে এই সহিংসতা শুরু হয়। এতে বলা হয়, ‘বাস্তবতা হলো, ছবিটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপি সমাবেশের সময়ের, যেখানে ডিবি কর্মকর্তা কনককে জনতার দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।’

জাকির হোসেন আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তিনিও দাবি করেন, এটি গোপালগঞ্জের আজকের সংঘর্ষের ফলাফল। তবে প্রেস উইং বলেছে, ‘তবে এই ছবিটিও ভিন্ন ঘটনার। ছবিটি ২০২৩ সালের ২০ মার্চ এক সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনার সময় তোলা হয়েছিল।’

একই ভুয়া প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি শিশুর ছবি ছড়ানো হয়—যেখানে তাকে লাঠি হাতে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ছবিটি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তোলা এবং ওই শিশু নাকি সহিংসতায় অংশ নেয়। ছবিটি এই মিথ্যা বার্তা ছড়াতে ব্যবহার করা হয় যে, রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের পর্যন্ত জড়ানো হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ছবির একটি ডিজিটালি সম্পাদিত (সম্ভবত এআই-নির্মিত) সংস্করণ শেয়ার করেন নিঝুম মজুমদার, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজন অনলাইন প্রোপাগান্ডিস্ট হিসেবে পরিচিত বলে প্রেস উইং দাবি করেছে।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে এই বিষয়ে বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে, শিশুর এই ছবিটি গোপালগঞ্জে তোলা হয়নি, বরং গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ধারণ করা একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। মূল ভিডিওটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিল।’

এসব বিভ্রান্তিকর ছবির পাশাপাশি, আওয়ামী লীগপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো ভিত্তিহীনভাবে দাবি করে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাকি বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এসব মিথ্যা প্রচারণা জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। প্রেস উইংয়ের মতে এসব ভুয়া প্রচারণা ও যাচাইকৃত সূত্রভিত্তিক তথ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।

আজকের সহিংসতা শুরু হয় যখন গোপালগঞ্জ শহরে নির্ধারিত সমাবেশ শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা আক্রমণ করে। এই আক্রমণ দ্রুত বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি গাড়িও আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, ১৬ জুলাই রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয় ‘মাঠের বাস্তব ঘটনার বিপরীতে, আওয়ামী লীগপন্থী সামাজিক মাধ্যম চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, প্রাসঙ্গিকতা-বর্জিত ও মনগড়া ছবি ছড়িয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০০
নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক ইউনিট সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল রোববার এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস উইং জানিয়েছে, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ইওনসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন বলে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সোহাগের বাবার নাম মো. আয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী লাকি বেগম, বোন ফাতেমা এবং একমাত্র ছেলে সোহানকে রেখে গেছেন।

গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর নিথর দেহেও বোল্ডার ছুড়ে মারা হয়। নৃশংস এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার জানাজা শেষে সোহাগকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ গ্রাম বন্দরগাছিয়ায় তাঁর মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

ভারতের যেসব সংবাদমাধ্যম সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করেছে, তারা তাদের প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেনি। বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম নিয়মিত ভিত্তিহীন ও ভুল তথ্য প্রচার করে আসছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /নাটকের দৃশ্যকে ধর্ষণের পর হত্যা দাবিতে প্রচার

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, ১৯: ০০
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেখে গেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।

৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একজন তরুণী হাত বাঁধা অবস্থায় কংক্রিটের মেঝেতে পড়ে আছেন। পাশেই একজন মধ্যবয়সী তরুণীটির বাবা পরিচয়ে আর্তনাদ করছেন। তাঁকে আরেকজন যুবক সান্ত্বনা দিচ্ছেন। পুলিশের পোশাক পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি তরুণীকে ঘিরে পর্যবেক্ষণ করছেন। ভিডিওর শেষাংশে পুলিশকে তরুণীর মরদেহ ব্যাগে ভরতে দেখা যায়।

‘Md Nishad Hossain’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আজ সোমবার (৩০ জুন) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘আহারে নির্মমতা এবং একজন বাবার আর্তনাদ। বাংলাদেশ ২০২৪’র আগস্ট মাস থেকে সারা দেশে নারী ধর্ষণ করেই চলছে বিএনপি জামাতের মব সন্ত্রাসীরা। একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে রেখে গেছে। মেয়ের পিতার আহাজারী কে শুনবে দেশে এখন বিচার নাই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী হায়ানারা যা যা করছে ২০২৪ ’র বাংলাদেশে বিএনপি জামাত তার চেয়ে বেশি করছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভিডিওটি ১৯ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ৫১৫টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৫৬টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১৮৫ বার।

এসব কমেন্টে অনেকে ভিডিওটি নাটক উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে সত্য মনে করেও কমেন্ট করেছে। Shilvi Akther নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ‘আহারে জীবন! মানুষ কিভাবে এতো নির্মম হয়? একজন বাবার আর্তনাদ কি কারো মনকে মর্মাহত করে না?’ (বানান অপরিবর্তিত) Narayon Saha লিখেছে,’ এই দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট বাবার কান্দে সন্তানের লাশ হায়রে দুনিয়া।’ (বানান অপরিবর্তিত)

S M Salam Patwari, গর্জে ওঠো আরেকবার বাংলাদেশ এবং গাজীপুর জেলা যুবলীগ শাখা নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ‘Short Film BD’ নামে একটি লোগো লক্ষ করা যায়। এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Short Film BD’ নামে একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ২০ জুনে প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মেঝেতে পড়ে থাকা তরুণী, পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তি, আহাজারি করা ব্যক্তি ও আশপাশের দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘মৌসুমীর সাথে কি হলো।’ ৪ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখে বোঝা যায়, এটি একটি নাটিকার দৃশ্য।

Short Film BD নামে ফেসবুক পেজটিতে একই তারিখে একই ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘মেয়ের কি হইছে জানতে চায় অসহায় বাবা।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

Short Film BD ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন ধরনের নাটিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে অভিনয় করা একাধিক ব্যক্তিকে অন্যান্য ভিডিওতেও (, ) দেখা গেছে।

এ ছাড়া এই পেজের ইন্ট্রোতে লেখা, ‘শর্টফিল্ম ও নাটক দেখুন এবং উপভোগ করুন। আমাদের সঙ্গেই থাকুন।’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তরিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

সুতরাং, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে একটি নাটক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত