Ajker Patrika

ফ্যাক্টচেক /‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিচরণ’ দাবিতে ভিডিও ভাইরাল, যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক  
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ১২: ১৭
পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র বাহিনী বিচরণের দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র বাহিনী বিচরণের দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

পার্বত্য চট্টগ্রামে দুর্গম পাহাড়ে একটি সশস্ত্র গ্রুপ ঘুরে বেড়াচ্ছে— এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। ভিডিওটি একই ক্যাপশনে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ এবং এক্স অ্যাকাউটেও পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওটি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে ধারণ করা। এতে পাহাড়ি এলাকার একটি সরু রাস্তায় সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মের মতো পোশাকে আট জন সশস্ত্র ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। শারীরিক গঠন বিবেচনায় অন্তত দুজনকে নারী বলে মনে হচ্ছে।

ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক গণকণ্ঠের ফেসবুক পেজে গতকাল শুক্রবার (২ মে) রাত ৯টায় প্রকাশিত ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে এরা কারা; কিভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)

গতকাল শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিওটি ৩ লাখ ৮৩ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং রিঅ্যাকশন পড়েছে ৪ হাজার ৪০০। পোস্টে ২৭০টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৮ হাজার ৩০০। এসব কমেন্টে ভিডিওটি অন্য দেশের উল্লেখ করে কেউ কেউ কমেন্ট করেছেন। আবার এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ভিডিও বলে অনেকে কমেন্ট করেছেন।

Ahmed Jakariya নামে অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড যেমন বাংলাদেশ ভারতের বিভিন্ন সিমান্ত পাহারা দিচ্ছে তেমনিভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের অঞ্চল গুলোতেও বর্ডার গার্ডের পাহারা আরো জোরদার করা জরুরি।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Moahmmed Jashim Uddin লিখেছে, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী গুষ্টি গুলি সক্রিয় হচ্ছে মনে হয় আমাদের সাবধান হওয়া খুবই দরকার।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Al-Amin RahmanSheikh Abdullah নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং Shahalam Sajeeb নামে এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ভিডিওটির কিছু কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে Eshita Angom নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বরে প্রকাশিত ভিডিওতে একই দৃশ্য দেখা যায়। তবে এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্য ৩ মিনিট ৪১ সেকেন্ড। এর ৩২ সেকেন্ড থেকে ৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত দৃশ্যের সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওটির মিল রয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সংস্করণের এই ভিডিওর ৫০ সেকেন্ডের পরের দৃশ্যে আরও একজনকে যুক্ত হয়ে ৯ জন দেখা যায়। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে থাকা সশস্ত্র ব্যক্তি, তাঁদের পোশাক, পাহাড়ি এলাকার সাদৃশ্য রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিচরণ দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিচরণ দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

এই ভিডিওর শেষের অংশে পাহাড়ের চূড়ায় ১২–১৩ জনের একটি গ্রুপের অরবিটিং প্যারালেক্স ড্রোন শটের (কোনো সাবজেক্টকে কেন্দ্র করে চারপাশে ঘুরে দৃশ্য ধারণ) দৃশ্য দেখা যায়। এতে একটি ক্রুশের মতো একটি কাঠামো মাঝখানে রেখে সবাইকে অস্ত্র হাতে পোজ দিতে দেখা যায়। এর মধ্যে একজনের ড্রোন কন্ট্রোলার দেখা যায়। দুইজন ছাড়া বাকিরা সবাই একই ধরনের পোশাক পরা। তাদের কেউ কেউ ড্রোনের দিকে অস্ত্র তাক করে পোজ দিচ্ছিলেন। এই দৃশ্যে উপস্থিত প্রায় সবার অস্ত্রের ওপরের দিকে লাল কাপড়ের ফিতা বাঁধা। ভিডিওর শেষে ইংরেজিতে ‘DIRECTED BY, Input Title’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়।

Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট।
Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট।

ভিডিওর ক্যাপশনটি রোমান হরফে বিদেশি ভাষায় লেখা। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘Kuki Minai singsina taoribase meitei Eikhoina touramladi Action nanghouroi.’। ক্যাপশনটির ভাষা সম্পর্কে জানতে গুগল ট্রান্সলেটেরের ভাষা শনাক্তকারী টুলের সহায়তা নেওয়া হয়। এটি ককবরক ভাষায় লেখা বলে জানায় গুগল। এটিকে ইংরেজিতে ভাষান্তর করে বোধগম্য কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। ককবরক হলো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের জাতীয় ভাষা।

গুগল ট্রান্সলেটরের সহায়তা নিয়েও ভাষা বোঝা না গেলেও এতে কিছু পরিচিত শব্দ পাওয়া যায়। যেমন, ‘Kuki’, ‘meitei’, ‘Action’।

এসব শব্দগুচ্ছ গুগলে সার্চ করে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২০ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেইতেই ও কুকি ভারতের মণিপুর রাজ্যে দুটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী। মণিপুরের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মেইতেই জনগোষ্ঠীর। অন্যদিকে ৪৩ শতাংশ লোক কুকি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাস। মেইতেই গোষ্ঠীর অধিকাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং কুকিদের অধিকাংশ খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারী। ভূমির অধিকার ও স্থানীয় প্রভাব নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে এই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। ২০২৩ সালের মে মাসে মেইতেই জনগোষ্ঠীর কিছু লোক কুকি জনগোষ্ঠীর একটি গ্রাম ধ্বংস করার পর সেখানকার দুই নারীকে নগ্ন করে কুচকাওয়াজ করায়। এই ঘটনার পর মণিপুরের সংঘাতময় পরিস্থিতি নতুন মাত্রা পায়। ভারতের রাজ্যটিতে এখনো অশান্তি বিরাজ করছে।

মনিপুরে সর্বশেষ সংঘাতের কারণ ছিল মেইতেই গোষ্ঠীর লোকদের তফসিলী জাতির ঘোষণার সরকারি সিদ্ধান্ত। এর প্রতিবাদে কুকি জনগোষ্ঠী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ২০২৩ ৩ মে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটিতে জাতিগত সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত সহিংসতায় ২৫৮ জন নিহত এবং ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ৪ হাজার ৭৮৬টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং মন্দির ও গির্জাসহ ৩৮৬টি ধর্মীয় কাঠামো ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে বেসরকারি সূত্র থেকে প্রাপ্ত সংখ্যা আরও বেশি।

Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া দীর্ঘ ভিডিওর শেষ দিকের কিছু দৃশ্যের কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে Ashwini Shrivastava নামে একটি এক্স অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিও ক্লিপটি Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট হওয়া ভিডিওর ৩ মিনিট ১১ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড পর্যন্ত রয়েছে।

Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সঙ্গে Ashwini Shrivastava নামে এক্স অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সঙ্গে Ashwini Shrivastava নামে এক্স অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, ‘মণিপুরে কুকি সন্ত্রাসীরা মেইতেই হিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা মেইতেই গ্রামগুলোর কাছে খ্রিস্টান ক্রুশ চিহ্নসহ ক্যাম্প স্থাপন করছে। এটি কোনো জাতিগত সংঘাত নয়, বরং গত ১৮ মাস ধরে কুকি সন্ত্রাসীরা মেইতেই গ্রামগুলোতে ধারাবাহিকভাবে পরিকল্পিত হামলা চালাচ্ছে।’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় অনূদিত)

একই তথ্যে ভিডিওটি ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর ভারতের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন অরগানাইজারের এক্স অ্যাকাউন্টে, একই বছরের ২২ ডিসেম্বর TheBlueHills নামে এক্স অ্যাকাউন্টে এবং Front Fact News নামে একটি লিংকড ইন অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায়।

ভারতের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন অরগানাইজার ও TheBlueHills নামে এক্স অ্যাকাউন্ট এবং Front Fact News নামে লিংকড ইন অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট। ছবি: স্ক্রিনশট
ভারতের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন অরগানাইজার ও TheBlueHills নামে এক্স অ্যাকাউন্ট এবং Front Fact News নামে লিংকড ইন অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট। ছবি: স্ক্রিনশট

এ ছাড়া ভারতের হিন্দি ভাষার জাতীয় দৈনিক ভাস্করের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই দৃশ্যের একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সূত্রের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, পাকিস্তান থেকে জম্মু ও কাশ্মীর এবং পাঞ্জাব হয়ে ভারতের মনিপুরসহ ৫টি রাজ্যে অবৈধ অস্ত্রের চালান আসছে। ভারতের উত্তর–পূর্ব রাজ্যগুলোতে অস্থিতিশীলতার তৈরি চেষ্টা করছে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা।

এই দৃশ্যে অস্ত্রে লাল ফিতা বাঁধার বিষয়টি জানার চেষ্টা করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।

কুকি ও মেইতেই জনগোষ্ঠীর নাম উল্লেখ রেখে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড সার্চ করলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির ওয়েবসাইটে গত ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিতে সশস্ত্র ব্যক্তিদের হাতে থাকা অস্ত্রে লাল ফিতা বাঁধা দেখা যায়। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা, মণিপুরের বিজেপি মুখপাত্র মাইকেল লামজাথাং হাওকিপকে হুমকি দিচ্ছে কুকি জঙ্গি। ছবিটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট।

Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সঙ্গে এনডিটিভির প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সঙ্গে এনডিটিভির প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একই তথ্য ও ভিডিওসহ ভারতের মণিপুর রাজ্যের বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম এলিট টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও পাওয়া যায়।

সুতরাং, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিচরণ’ দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, ভিডিওটি ভারতের মণিপুর রাজ্যের কুকি বিদ্রোহীদের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গোপালগঞ্জ সহিংসতা নিয়ে অসম্পর্কিত ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ. লীগ: প্রেস উইং

বাসস  
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০৩
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

গতকাল বুধবার সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে নানা পোস্ট ছড়ানো হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল এ দিনের সহিংস ঘটনার মনগড়া বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি সংগঠিত প্রোপাগান্ডা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রভাবশালী আ. লীগপন্থীরা পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ছবি শেয়ার করেছেন, যা এদিনের সহিংসতার দৃশ্য বলে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, ‘ইউনূস গ্যাং’ এবং বিরোধীদলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মকভাবে আক্রমণ করছে।

একটি ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন এক আহত কিশোরকে বহন করছে, পেছনে আগুন জ্বলছে এবং উত্তেজিত জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। ছবিটি গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়। অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে-এই ছবিটি ২০২৪ সালের ১০ আগস্টের একটি ভিন্ন ঘটনার।

আরেকটি বহুল প্রচারিত পোস্টে দেখা যায়, জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়ছেন।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব পোস্টে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। পোস্টে তাঁরা উল্লেখ করেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং এনসিপি নেতা-কর্মীদের উসকানিতে এই সহিংসতা শুরু হয়। এতে বলা হয়, ‘বাস্তবতা হলো, ছবিটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপি সমাবেশের সময়ের, যেখানে ডিবি কর্মকর্তা কনককে জনতার দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।’

জাকির হোসেন আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তিনিও দাবি করেন, এটি গোপালগঞ্জের আজকের সংঘর্ষের ফলাফল। তবে প্রেস উইং বলেছে, ‘তবে এই ছবিটিও ভিন্ন ঘটনার। ছবিটি ২০২৩ সালের ২০ মার্চ এক সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনার সময় তোলা হয়েছিল।’

একই ভুয়া প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি শিশুর ছবি ছড়ানো হয়—যেখানে তাকে লাঠি হাতে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ছবিটি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তোলা এবং ওই শিশু নাকি সহিংসতায় অংশ নেয়। ছবিটি এই মিথ্যা বার্তা ছড়াতে ব্যবহার করা হয় যে, রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের পর্যন্ত জড়ানো হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ছবির একটি ডিজিটালি সম্পাদিত (সম্ভবত এআই-নির্মিত) সংস্করণ শেয়ার করেন নিঝুম মজুমদার, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজন অনলাইন প্রোপাগান্ডিস্ট হিসেবে পরিচিত বলে প্রেস উইং দাবি করেছে।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে এই বিষয়ে বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে, শিশুর এই ছবিটি গোপালগঞ্জে তোলা হয়নি, বরং গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ধারণ করা একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। মূল ভিডিওটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিল।’

এসব বিভ্রান্তিকর ছবির পাশাপাশি, আওয়ামী লীগপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো ভিত্তিহীনভাবে দাবি করে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাকি বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এসব মিথ্যা প্রচারণা জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। প্রেস উইংয়ের মতে এসব ভুয়া প্রচারণা ও যাচাইকৃত সূত্রভিত্তিক তথ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।

আজকের সহিংসতা শুরু হয় যখন গোপালগঞ্জ শহরে নির্ধারিত সমাবেশ শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা আক্রমণ করে। এই আক্রমণ দ্রুত বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি গাড়িও আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, ১৬ জুলাই রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয় ‘মাঠের বাস্তব ঘটনার বিপরীতে, আওয়ামী লীগপন্থী সামাজিক মাধ্যম চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, প্রাসঙ্গিকতা-বর্জিত ও মনগড়া ছবি ছড়িয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০০
নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক ইউনিট সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল রোববার এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস উইং জানিয়েছে, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ইওনসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন বলে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সোহাগের বাবার নাম মো. আয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী লাকি বেগম, বোন ফাতেমা এবং একমাত্র ছেলে সোহানকে রেখে গেছেন।

গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর নিথর দেহেও বোল্ডার ছুড়ে মারা হয়। নৃশংস এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার জানাজা শেষে সোহাগকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ গ্রাম বন্দরগাছিয়ায় তাঁর মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

ভারতের যেসব সংবাদমাধ্যম সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করেছে, তারা তাদের প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেনি। বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম নিয়মিত ভিত্তিহীন ও ভুল তথ্য প্রচার করে আসছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /নাটকের দৃশ্যকে ধর্ষণের পর হত্যা দাবিতে প্রচার

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, ১৯: ০০
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেখে গেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।

৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একজন তরুণী হাত বাঁধা অবস্থায় কংক্রিটের মেঝেতে পড়ে আছেন। পাশেই একজন মধ্যবয়সী তরুণীটির বাবা পরিচয়ে আর্তনাদ করছেন। তাঁকে আরেকজন যুবক সান্ত্বনা দিচ্ছেন। পুলিশের পোশাক পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি তরুণীকে ঘিরে পর্যবেক্ষণ করছেন। ভিডিওর শেষাংশে পুলিশকে তরুণীর মরদেহ ব্যাগে ভরতে দেখা যায়।

‘Md Nishad Hossain’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আজ সোমবার (৩০ জুন) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘আহারে নির্মমতা এবং একজন বাবার আর্তনাদ। বাংলাদেশ ২০২৪’র আগস্ট মাস থেকে সারা দেশে নারী ধর্ষণ করেই চলছে বিএনপি জামাতের মব সন্ত্রাসীরা। একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে রেখে গেছে। মেয়ের পিতার আহাজারী কে শুনবে দেশে এখন বিচার নাই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী হায়ানারা যা যা করছে ২০২৪ ’র বাংলাদেশে বিএনপি জামাত তার চেয়ে বেশি করছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভিডিওটি ১৯ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ৫১৫টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৫৬টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১৮৫ বার।

এসব কমেন্টে অনেকে ভিডিওটি নাটক উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে সত্য মনে করেও কমেন্ট করেছে। Shilvi Akther নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ‘আহারে জীবন! মানুষ কিভাবে এতো নির্মম হয়? একজন বাবার আর্তনাদ কি কারো মনকে মর্মাহত করে না?’ (বানান অপরিবর্তিত) Narayon Saha লিখেছে,’ এই দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট বাবার কান্দে সন্তানের লাশ হায়রে দুনিয়া।’ (বানান অপরিবর্তিত)

S M Salam Patwari, গর্জে ওঠো আরেকবার বাংলাদেশ এবং গাজীপুর জেলা যুবলীগ শাখা নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ‘Short Film BD’ নামে একটি লোগো লক্ষ করা যায়। এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Short Film BD’ নামে একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ২০ জুনে প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মেঝেতে পড়ে থাকা তরুণী, পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তি, আহাজারি করা ব্যক্তি ও আশপাশের দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘মৌসুমীর সাথে কি হলো।’ ৪ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখে বোঝা যায়, এটি একটি নাটিকার দৃশ্য।

Short Film BD নামে ফেসবুক পেজটিতে একই তারিখে একই ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘মেয়ের কি হইছে জানতে চায় অসহায় বাবা।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

Short Film BD ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন ধরনের নাটিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে অভিনয় করা একাধিক ব্যক্তিকে অন্যান্য ভিডিওতেও (, ) দেখা গেছে।

এ ছাড়া এই পেজের ইন্ট্রোতে লেখা, ‘শর্টফিল্ম ও নাটক দেখুন এবং উপভোগ করুন। আমাদের সঙ্গেই থাকুন।’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তরিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

সুতরাং, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে একটি নাটক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত