Ajker Patrika

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের গুজবে সয়লাব এক্স, অধিকাংশ অ্যাকাউন্টই ভারতীয়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের গুজবে সয়লাব এক্স, অধিকাংশ অ্যাকাউন্টই ভারতীয়

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত সোমবার পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই কার্যত ভেঙে পড়ে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা। ঘটতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীসহ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ মন্দির–বসতবাড়ি ভাঙচুরসহ লুটপাটের ঘটনা। এসবের মধ্যে কিছু ঘটনা সত্য যেমন আছে, তেমনি ছড়িয়েছে গুজব, ভুল তথ্যও। এসব গুজব ছড়িয়েছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে, পেরিয়েছে দেশের গণ্ডিও। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স ও ফেসবুক মনিটরিংয়ে এমন কিছু দাবি নজরে এসেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের। অধিকাংশ অ্যাকাউন্টই ভারত থেকে পরিচালিত।

দাবি ১: ঢাকায় হিন্দু হোস্টেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর হামলা
‘বাবা বানারাস (Baba Banaras)’ নামে একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ১ মিনিট ২৬ মিনিটের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, ঢাকায় একটি হিন্দু হোস্টেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী হামলা চালিয়েছে। হামলা থেকে বাঁচতে হোস্টেলের কার্ণিশে এসে ঝুলতে থাকেন। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী নিচে পড়ে যান আবার কেউ ভয়েও পড়ে যান। তাঁরা বেঁচে আছেন না মারা গেছেন তা জানা যায়নি। 

ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলার কোনো সম্পর্ক নেই। ভাইরাল ভিডিওটি চট্টগ্রামের মুরাদপুরের। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। 

ওইদিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ করে ছাত্রলীগ–যুবলীগের ও স্বেচ্ছোসেবকলীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের মধ্যে ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগের ১৫–২০ জন কর্মী একটি ৫ তলা ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন। পরে আন্দোলনকারীরা ওই ভবনে উঠে মারধর শুরু করে। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা পাইপ বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেন। অন্তত তিনজন ছাত্রলীগকর্মী ছাদ পড়ে যায়। ছাত্রলীগ জানিয়েছে, চট্টগ্রামের ১০০ নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। এই ঘটনা নিয়ে গত ১৭ জুলাই ‘চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় ৫ তলার ছাদ থেকে পড়ে ৩ ছাত্রলীগকর্মী জখম’ শিরোনামে প্রতিবেদনও প্রকাশ করে আজকের পত্রিকা। 

জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তরে এই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকার হিন্দু হোস্টেল দাবিতে প্রচারিত ভবনটি চট্টগ্রামের মুরাদপুরের বেলাল মসজিদের পাশে অবস্থিত। ভবনটির নাম মিরদাদ ম্যানশন। 

দাবি ২: এক বয়স্ক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে জামায়াতে ইসলামী
বাবা বানারাস (Baba Banaras)’ নামে একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেই গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ভাস্কর্যের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা এক ব্যক্তির মরদেহের ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, ঝুলিয়ে রাখা মৃত ব্যক্তিটি একজন বয়স্ক হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাঁকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে জামায়াতে ইসলামী। 

ভিডিওটি সম্পর্কে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ‘কর্পোরেট সংবাদ’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ঝুলিয়ে রাখা ব্যক্তির নাম শহিদুল ইসলাম হিরণ (৭৫)। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় পোড়াহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। 

এক বয়স্ক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে জামায়াতে ইসলামী মেরে ঝুলিয়ে রাখার দাবিতে গুজব। ছবি: আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিশ্লেষণ

এ সম্পর্কে ঝিনাইদহে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ভাইরাল ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তিটি শহিদুল ইসলাম হিরণই। বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁকে হত্যা করে পায়রা চত্বরে ঝুলিয়ে রাখে।

দাবি ৩: বাংলাদেশে মুসলিম নারীরা হিন্দু নারীদের বেঁধে রেখেছে
সুদর্শন বাংলা (Sudarshan Bangla)’ নামের ভারতের একটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, হিন্দু নারীদের বেঁধে রেখেছে মুসলিম নারীরা। 

ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, একদল তরুণী দুইজন তরুণীকে পিলারের সঙ্গে বাঁধছেন। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিন্দু নারীদের মুসলিম নারীরা বেঁধে রেখেছেন দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি গত ১৭ জুলাইয়ের। ওই সময় বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রীদের বেঁধে রাখেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। 

বাংলাদেশে মুসলিম নারীরা হিন্দু নারীদের বেঁধে রেখেছে দাবিতে গুজব। ছবি: আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিশ্লেষণ 

ওই সময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের হলগুলোকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করছিলেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে আবাসিক হল থেকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটছিল। ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজেও ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীকে বেঁধে রাখার ঘটনা ঘটে। ভাইরাল ফুটেজটি ওই ঘটনার। তবে বেঁধে রাখা দুই শিক্ষার্থীর পরিচয় জানা যায়নি। 

দাবি ৪: বাংলাদেশে হিন্দু মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন
রুনিত অন্তিল (Ronit Antil)’ নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে অজ্ঞাত এক তরুণীকে নির্যাতনের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয়, ছবিটি বাংলাদেশে হিন্দু তরুণীকে নির্যাতনের। ছবিটিতে লেখা, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এভাবেই হিন্দুদের শিক্ষা দিতে হবে। সব হিন্দু ভারতের এজেন্ট। আন্দোলনের সময় ৪ থেকে ৫ জন তরুণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দুদের সম্পদ লুট করেছে...।’

বাংলাদেশে হিন্দু মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন দাবিতে গুজব। ছবি: আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিশ্লেষণ 

ভাইরাল ছবিটি রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান অল্ট নিউজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভাইরাল ছবিটি ২০২১ সালের। ওই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক তরুণীকে ধর্ষণের ভিডিও ভাইরাল হয়। ছবিটি ওই ঘটনারই। 

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ভারতের পূর্ব ব্যাঙ্গালুরুর রামামুর্থিনগর এলাকার একটি ভবনে ধারণ করা হয়েছিল। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীরা সবাই বাংলাদেশি। ভুক্তভোগী তরুণী আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

দাবি ৫: বাংলাদেশের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুরো হিন্দু পরিবারকে হত্যা করে তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করছে
‘রেশমি সামান্ত (Rashmi Samant)’ নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও টুইট করে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুরো হিন্দু পরিবারকে হত্যা করে তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করছে। 

ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, ১০–১২ জন তরুণ এক তরুণীকে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে তুলছেন। ভিডিওটি প্রায় একই দাবিতে ফেসবুকেও ছড়িয়েছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো থেকে জানা যায়, ঘটনাটি নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মইশাই গ্রামের। তরুণীর পরিচয়ে বলা হয়েছে, তিনি মইশাই গ্রামের দুলাল পালের মেয়ে। 

বাংলাদেশের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুরো হিন্দু পরিবারকে হত্যা করে তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করছেন দাবিতে গুজব। ছবি: আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিশ্লেষণ 

ভিডিওটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সভাপতি গৌতম হালদার প্রান্তের ফেসবুক পেজে গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) একটি পোস্ট পাওয়া যায়। 

পোস্টটিতে তিনি লেখেন, ‘দুলাল চন্দ্র পালের মেয়েকে এভাবেই সিনেমা স্টাইলে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মইশাই গ্রামের পালবাড়ি থেকে এই মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাচ্ছিল তাঁর প্রাক্তন স্বামী। স্থানীয় লোকজন সেনাবাহিনীকে ফোন করলে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং মেয়েটিকে উদ্ধার করে। প্রসঙ্গত, মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল। আর যে তুলে নিয়ে যেতে এসেছিল সে মেয়েটার প্রাক্তন স্বামী। এর আগেও সে দুইবার তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। মেয়েটি তার স্বামীর সাথে থাকবে না। তাই যেতে চাইছিল না, কিন্তু স্বামী জোরপূর্বক নিতে চেয়েছিল। সেনাবাহিনী খবর পেলে ঘটনাস্থলে এসে মেয়েটাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।’ 

ঘটনাটি সম্পর্কে আরও জানতে যোগাযোগ করা হয় আজকের পত্রিকার সেনবাগ প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল আওয়ালের সঙ্গে। ভিডিওটি সম্পর্কে সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুর রহমানের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ওই তরুণীকে তুলে নেওয়ার ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলা বা নির্যাতনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি পারিবারিক কলহের বিষয়। 

আব্দুল আওয়াল আরও বলেন, তরুণীটিকে তুলে নেওয়ার জন্য ১৭ জন এসেছিলেন। এর মধ্যে একটি কালো মাইক্রোবাসসহ তিনজনকে আটক করে স্থানীয়রা সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। এই তিনজনের একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁর নাম প্রসেনজিৎ, তিনি কুমিল্লার বিজয়পুরের বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই তরুণীকে তুলে নিতে ১৭ জন এসেছিলেন। এর মধ্যে ১৪ জন পালিয়ে যান।  
 
দাবি ৬: বাংলাদেশে হিন্দু নারীকে প্রকাশ্যে বেঁধে রাখা হয়েছে
মুখে স্কচটেপ, হাত পিছমোড়া করে বাঁধা এক তরুণীর একটি ভিডিও ‘দ্য জয়পুর ডায়লগস’ নামের একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়, এটাই বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের অবস্থা। বাংলাদেশে হিন্দু নারীরা হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। 

বাংলাদেশে হিন্দু নারীকে প্রকাশ্যে বেঁধে রাখা হয়েছে দাবিতে গুজব। ছবি: আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিশ্লেষণ 

ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা যায়, এর সঙ্গে বাংলাদেশে হিন্দু তরুণীদের ওপর নির্যাতনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি চলতি বছরের মার্চ মাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের একজন শিক্ষার্থীর পারফরমেন্স আর্টের দৃশ্য। ওই মাসে নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। আত্মহত্যার জন্য তিনি এক শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে যান। এ ঘটনার বিচার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন ওই শিক্ষার্থী। 

প্রসঙ্গত, একই ভিডিও কিছুদিন আগেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিন্ন দাবিতে ভাইরাল হয়। তখন এই তরুণীকে ছাত্রলীগ নেত্রী দাবি করা হয়। যা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গোপালগঞ্জ সহিংসতা নিয়ে অসম্পর্কিত ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ. লীগ: প্রেস উইং

বাসস  
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০৩
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস
ছবি: সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

গতকাল বুধবার সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে নানা পোস্ট ছড়ানো হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল এ দিনের সহিংস ঘটনার মনগড়া বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি সংগঠিত প্রোপাগান্ডা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রভাবশালী আ. লীগপন্থীরা পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ছবি শেয়ার করেছেন, যা এদিনের সহিংসতার দৃশ্য বলে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, ‘ইউনূস গ্যাং’ এবং বিরোধীদলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মকভাবে আক্রমণ করছে।

একটি ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন এক আহত কিশোরকে বহন করছে, পেছনে আগুন জ্বলছে এবং উত্তেজিত জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। ছবিটি গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়। অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে-এই ছবিটি ২০২৪ সালের ১০ আগস্টের একটি ভিন্ন ঘটনার।

আরেকটি বহুল প্রচারিত পোস্টে দেখা যায়, জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়ছেন।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব পোস্টে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। পোস্টে তাঁরা উল্লেখ করেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং এনসিপি নেতা-কর্মীদের উসকানিতে এই সহিংসতা শুরু হয়। এতে বলা হয়, ‘বাস্তবতা হলো, ছবিটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপি সমাবেশের সময়ের, যেখানে ডিবি কর্মকর্তা কনককে জনতার দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।’

জাকির হোসেন আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তিনিও দাবি করেন, এটি গোপালগঞ্জের আজকের সংঘর্ষের ফলাফল। তবে প্রেস উইং বলেছে, ‘তবে এই ছবিটিও ভিন্ন ঘটনার। ছবিটি ২০২৩ সালের ২০ মার্চ এক সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনার সময় তোলা হয়েছিল।’

একই ভুয়া প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি শিশুর ছবি ছড়ানো হয়—যেখানে তাকে লাঠি হাতে দেখা যায়। দাবি করা হয়, ছবিটি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তোলা এবং ওই শিশু নাকি সহিংসতায় অংশ নেয়। ছবিটি এই মিথ্যা বার্তা ছড়াতে ব্যবহার করা হয় যে, রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের পর্যন্ত জড়ানো হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ছবির একটি ডিজিটালি সম্পাদিত (সম্ভবত এআই-নির্মিত) সংস্করণ শেয়ার করেন নিঝুম মজুমদার, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজন অনলাইন প্রোপাগান্ডিস্ট হিসেবে পরিচিত বলে প্রেস উইং দাবি করেছে।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে এই বিষয়ে বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে, শিশুর এই ছবিটি গোপালগঞ্জে তোলা হয়নি, বরং গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ধারণ করা একটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। মূল ভিডিওটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিল।’

এসব বিভ্রান্তিকর ছবির পাশাপাশি, আওয়ামী লীগপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো ভিত্তিহীনভাবে দাবি করে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাকি বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এসব মিথ্যা প্রচারণা জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। প্রেস উইংয়ের মতে এসব ভুয়া প্রচারণা ও যাচাইকৃত সূত্রভিত্তিক তথ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।

আজকের সহিংসতা শুরু হয় যখন গোপালগঞ্জ শহরে নির্ধারিত সমাবেশ শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা আক্রমণ করে। এই আক্রমণ দ্রুত বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি গাড়িও আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, ১৬ জুলাই রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয় ‘মাঠের বাস্তব ঘটনার বিপরীতে, আওয়ামী লীগপন্থী সামাজিক মাধ্যম চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, প্রাসঙ্গিকতা-বর্জিত ও মনগড়া ছবি ছড়িয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ০০
নিহত সোহাগকে হিন্দু দাবি করে মিথ্যা প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম: প্রেস উইং

রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তথা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগকে হিন্দু বলে প্রচার করেছে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক ইউনিট সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল রোববার এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস উইং জানিয়েছে, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ইওনসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন বলে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সোহাগের বাবার নাম মো. আয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী লাকি বেগম, বোন ফাতেমা এবং একমাত্র ছেলে সোহানকে রেখে গেছেন।

গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর নিথর দেহেও বোল্ডার ছুড়ে মারা হয়। নৃশংস এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার জানাজা শেষে সোহাগকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ গ্রাম বন্দরগাছিয়ায় তাঁর মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

ভারতের যেসব সংবাদমাধ্যম সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করেছে, তারা তাদের প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেনি। বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম নিয়মিত ভিত্তিহীন ও ভুল তথ্য প্রচার করে আসছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /নাটকের দৃশ্যকে ধর্ষণের পর হত্যা দাবিতে প্রচার

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, ১৯: ০০
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রেখে গেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।

৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একজন তরুণী হাত বাঁধা অবস্থায় কংক্রিটের মেঝেতে পড়ে আছেন। পাশেই একজন মধ্যবয়সী তরুণীটির বাবা পরিচয়ে আর্তনাদ করছেন। তাঁকে আরেকজন যুবক সান্ত্বনা দিচ্ছেন। পুলিশের পোশাক পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি তরুণীকে ঘিরে পর্যবেক্ষণ করছেন। ভিডিওর শেষাংশে পুলিশকে তরুণীর মরদেহ ব্যাগে ভরতে দেখা যায়।

‘Md Nishad Hossain’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আজ সোমবার (৩০ জুন) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘আহারে নির্মমতা এবং একজন বাবার আর্তনাদ। বাংলাদেশ ২০২৪’র আগস্ট মাস থেকে সারা দেশে নারী ধর্ষণ করেই চলছে বিএনপি জামাতের মব সন্ত্রাসীরা। একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে রেখে গেছে। মেয়ের পিতার আহাজারী কে শুনবে দেশে এখন বিচার নাই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী হায়ানারা যা যা করছে ২০২৪ ’র বাংলাদেশে বিএনপি জামাত তার চেয়ে বেশি করছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভিডিওটি ১৯ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ৫১৫টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৫৬টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১৮৫ বার।

এসব কমেন্টে অনেকে ভিডিওটি নাটক উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে সত্য মনে করেও কমেন্ট করেছে। Shilvi Akther নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ‘আহারে জীবন! মানুষ কিভাবে এতো নির্মম হয়? একজন বাবার আর্তনাদ কি কারো মনকে মর্মাহত করে না?’ (বানান অপরিবর্তিত) Narayon Saha লিখেছে,’ এই দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট বাবার কান্দে সন্তানের লাশ হায়রে দুনিয়া।’ (বানান অপরিবর্তিত)

S M Salam Patwari, গর্জে ওঠো আরেকবার বাংলাদেশ এবং গাজীপুর জেলা যুবলীগ শাখা নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ‘Short Film BD’ নামে একটি লোগো লক্ষ করা যায়। এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Short Film BD’ নামে একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ২০ জুনে প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মেঝেতে পড়ে থাকা তরুণী, পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তি, আহাজারি করা ব্যক্তি ও আশপাশের দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Short Film BD ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘মৌসুমীর সাথে কি হলো।’ ৪ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখে বোঝা যায়, এটি একটি নাটিকার দৃশ্য।

Short Film BD নামে ফেসবুক পেজটিতে একই তারিখে একই ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘মেয়ের কি হইছে জানতে চায় অসহায় বাবা।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

Short Film BD ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন ধরনের নাটিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে অভিনয় করা একাধিক ব্যক্তিকে অন্যান্য ভিডিওতেও (, ) দেখা গেছে।

এ ছাড়া এই পেজের ইন্ট্রোতে লেখা, ‘শর্টফিল্ম ও নাটক দেখুন এবং উপভোগ করুন। আমাদের সঙ্গেই থাকুন।’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তরিত)

Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট
Short Film BD ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

সুতরাং, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে একটি নাটক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত