Ajker Patrika

আন্দোলনের শিক্ষা

সম্পাদকীয়
আন্দোলনের শিক্ষা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পথ ধরে সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে দেশের নানা জায়গায় অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হামলা কত কিছুই হচ্ছে। আবার ভালো খবরও সামনে আসছে। যেমন চুরি-ডাকাতির আশঙ্কায় এলাকাবাসী রাত-বিরাতে পাহারার কাজ করছে, ট্রাফিক পুলিশ পুরোদস্তুর রাস্তায় নামার আগপর্যন্ত শিক্ষার্থীরাই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো রক্ষায় এগিয়ে আসছে সংখ্যাগরিষ্ঠরা।

যদিও এসব তাদের কাজ নয়। তবে এই আন্দোলন বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার যে ভাষা শিখিয়ে দিয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার। এই মানুষদের কাছে এখন অন্যায়-অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না—এ কথা অন্যায়-অপরাধকারীরা যত দ্রুত বুঝতে পারবে, ততই তাদের জন্য মঙ্গল। আর এই উপলব্ধির জন্য সুদূর ইতিহাস ঘাঁটার প্রয়োজন নেই, অদূর অতীত কিংবা বর্তমান পরিস্থিতিই যথেষ্ট।

বিগত সরকারের সময়টাতেও ছাত্রলীগের সমালোচনা কম হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের খবর গণমাধ্যমগুলো প্রকাশ করেছে।পত্রিকার সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়তে তাদের নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। তবু তাদের দাপট প্রদর্শন কমেনি এতটুকুও। কেননা তাদের শাস্তি না দিয়ে অন্যায়-অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ফলে বারবারই তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।

সোমবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর থেকে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তৌহিদসহ ওই হলের অন্য নেতা-কর্মীদের কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেখানকার শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রলীগের এই সদস্যরা তুচ্ছ ঘটনায় তাঁদের কক্ষে ডেকে নিয়ে এসব অস্ত্র দিয়ে হত্যার হুমকি দিতেন, অত্যাচার করতেন। ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ অনেক।

তবে ভবিষ্যতে সুবিধাভোগীরা যেন সুযোগসন্ধানীর চরিত্রে হাজির না হয়, সেদিকেও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ইতিমধ্যেই সুযোগ পেয়ে লুটপাট করেছে যারা, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি ত্বরান্বিত না করলে আন্দোলনের সফলতা বিফলে যাবে, কেটে যাবে আন্দোলনের প্রভাব, হারিয়ে যাবে প্রতিবাদের ভাষা।

সোমবারের আজকের পত্রিকার আরও একটি খবরের উদাহরণ দেওয়া যায়—আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে পুকুর, জলাশয় ও দিঘি ভরাট এবং জবরদখলের হিড়িক পড়ে; দখলদারদের নামের তালিকায় আছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির নেত্রী বিলকিস জাহান শিরিনও। শুধু বরিশাল নগরীতেই তিনি ছাড়াও এসব কাজে লিপ্ত হয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপির নেতারা। তবে শিরিনের দলীয় পদ স্থগিত করেছে বিএনপি।

এত দিনের আন্দোলনের পরও যখন তাদের মতো অনেকেই ভাবছে সুযোগ পেয়ে ক্ষমতার দাপট দেখাতে পারবে, তারা আসলে ইতিহাস বা বর্তমান, কোনোটি থেকেই শিক্ষা নেয়নি। তারা চিনতে পারেনি বর্তমান প্রজন্মকে। তারা বুঝতে চায় না এই প্রজন্মকে, যারা ভবিষ্যতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই প্রজন্মের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছিল বলে প্রমাণ করেছে যে তারা আর অন্যায়-অপরাধকে প্রশ্রয় দিতে চায় না।

যারাই যখন ক্ষমতায় থাকবে, তারা যেন এই প্রজন্মের স্বপ্ন ভেঙে না দেয়, সুশাসন কায়েম করে—সেটাই প্রত্যাশা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত