Ajker Patrika

মানুষের অত্যাচারে বিলীন ৪ নদী, মৃতপ্রায় ১২টি

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর
মানুষের অত্যাচারে বিলীন ৪ নদী, মৃতপ্রায় ১২টি

তিন-চার দশক আগেও শেরপুরের নদ-নদীগুলোতে লঞ্চ-ট্রলার চলত। এসব নদ-নদী দিয়ে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন ছিল অনেক সহজ। কৃষিকাজে ব্যবহার হতো নদ-নদীগুলোর পানি। এ ছাড়া মাছ ও শাপলা-শালুকসহ জীববৈচিত্র্যের ভান্ডার ছিলও এসব নদ-নদী। সময়ের ব্যবধানে বাঁধ নির্মাণসহ নানাভাবে দখলের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে জেলার বেশির ভাগ নদ-নদী। মানুষের অত্যাচারে একসময়ের খরস্রোতা নদীগুলো এখন খালে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, শেরপুর জেলায় অন্তত ১৬টি নদী ছিল। কালের বিবর্তনে ৪টি বিলীন হয়ে গেছে। বাকি ১২ নদী দখল-দূষণে এখন মৃতপ্রায়। 
এদিকে, শেরপুরের সব নদ-নদী থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে খনন, সংস্কার ও সংরক্ষণসহ ছয় দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে এসব দাবি-সংবলিত একটি স্মারকলিপি দেয় নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটি। এ সময় ডিসি ও জেলা নদী রক্ষা কমিশনের সভাপতি সাহেলা আক্তার বলেন, খোঁজখবর নিয়ে জেলার নদ-নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরিবেশ আইন ও কৃষিজমি রক্ষায় খাসজমি বণ্টন নীতিমালা উপেক্ষা করে একশ্রেণির স্থানীয় প্রভাবশালী সরকারি খাসজমি হিসেবে চিহ্নিত নদ-নদী ও জলাশয় ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করছেন। এ ছাড়া নদীর স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে মৎস্য চাষ করা হচ্ছে। অন্যদিকে খনিজসম্পদ আহরণের নামে শ্যালোচালিত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বিভিন্ন নদ-নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এতে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদ, ভোগাই, চেল্লাখালি, মৃগী, দশানি, সুতিখালি, বলেশ্বর, সোমেশ্বরী, মহারশি, ঝিনাই, কালাঘোঁষাসহ অন্যান্য নদী এবং পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন ছড়া, ঝোরা, ঝরনা শুকিয়ে গতিহীন হয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নকলা উপজেলার পাঠাকাটা ইউনিয়নের সুতিখালি নদীটি বর্তমানে অবৈধ দখলদারের কবলে চলে গেছে। দখলদারেরা নদীতে বাঁধ দিয়ে শতাধিক পুকুর তৈরি করে মাছ চাষ করছে। ২০১৯ সালে সুতিখালি থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। সে সময় নদীটির বেশ কিছু অংশ উদ্ধার করা হলেও অজ্ঞাত কারণে কিছুদিন পর সেই অভিযান থেমে যায়।

এদিকে, সুবর্ণখালি নদীর অবস্থাও ভালো না। দখলদারেরা নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করে ক্রমেই গ্রাস করছে নদীর তীরবর্তী এলাকা। এতে সংকুচিত হয়ে গতিহীন হয়ে পড়ছে নদীটি। এ ছাড়া বলেশ্বর নদ দখল ও নাব্যতা-সংকটে হারিয়ে গেছে।

অন্যদিকে, জেলা সদরের ব্রহ্মপুত্র নদ ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই নদে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে গতিপথ হারাচ্ছে। একইভাবে ঝিনাইগাতী উপজেলার সোমেশ্বরী, মহারশি ও কালাঘোঁষা নদী থেকে অবাধে বালু ও পাথর উত্তোলনের কারণে বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

এ বিষয়ে জনউদ্যোগ শেরপুরের আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শেরপুর জেলায় অন্তত ১৬টি নদী ছিল। কালের বিবর্তনে ৪টি বিলীন হয়ে গেছে। বাকি ১২ নদী দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। এসব নদী রক্ষায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ জন্যই আমরা নদ-নদী রক্ষায় ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছি।’পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের শেরপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. মেরাজ উদ্দিন বলেন, পরিবেশ ও জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষায় নদ-নদীগুলো দখলমুক্ত ও পুনর্খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত