রাজবাড়ী প্রতিনিধি
যুদ্ধের শুরুর দিকে বাবা-চাচাকে হত্যা করে বিহারি ও বাঙালি রাজাকারেরা। বাবার লাশ ফেলে মা, চাচি ও বোনদের নিয়ে চলে যান ভারতে। সেখান থেকে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার প্রশিক্ষণ নেন রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দা গ্রামের গীতা কর। একাত্তরের স্মৃতি মনে এলে এখনো আঁতকে ওঠেন তিনি। বাংলাদেশ সীমান্তে যুদ্ধকালীন হাসপাতালে সাত-আট মাস আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেন। এত পরিশ্রম আর ত্যাগের স্বীকৃতি মেলে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর ২০২০ সালে।
গীতা কর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৭ বছরের কিশোরী ছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকতেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ গ্রামে। যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন পর দুষ্কৃতকারীরা তাঁর চাচাকে হত্যা করে। চাচার মৃত্যুর পর বাবা তাঁদের বড় চার বোনকে নিয়ে মামাবাড়ি সদর উপজেলার এড়েন্দা গ্রামে চলে যান।
একদিন রাতে বিহারি ও বাঙালি রাজাকারেরা তাঁর মামাবাড়ি লুটপাট করার সময় বাবা জিতেন্দ্র করকে হত্যা করে। বাবার লাশ ফেলে ওই রাতে পরিবারের বাকি সদস্যদের নিয়ে টানা ৯ দিন হেঁটে শিকারপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পৌঁছান। সেখানে এক দূরসম্পর্কের দাদার সঙ্গে কথা বলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য তিনি ও তাঁর বোন ইরা কর নাম লেখান। দুই বোনসহ সাতজন নারী দিয়ে শুরু হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প।
তাঁদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি বাড়ি ঠিক করেন বর্তমান সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী। সেখানে তাঁদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণসহ প্রাথমিক চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ক্যাম্প থেকে অক্টোবর মাসের দিকে পথপ্রদর্শক হিসেবে অবাঙালি একজনকে সঙ্গে দেওয়া হয়। তাঁর দেখানো পথে হাওড়া স্টেশন থেকে আসাম যান তাঁরা। সেখান থেকে ওই ব্যক্তিও তাঁদের ছেড়ে চলে যান।
সেখান থেকে হেঁটে তাঁরা সীমান্তের করিমগঞ্জের শরণার্থী ক্যাম্পে পৌঁছান। ওই ক্যাম্পে থাকা মাখন সোম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। কোথা থেকে এসেছেন, কীভাবে এসেছেন সব ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে মাখন সোম খাবার ও ঘুমানোর ব্যবস্থা করেন।
সকালে মাখন সোম কলকাতায় সাজেদা চৌধুরীর কাছে টেলিগ্রাম পাঠান। কয়েক দিনের মধ্যেই একটি টেলিগ্রাম আসে। টেলিগ্রামের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁদের আগরতলা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কুমিল্লা সীমান্তে বিশ্রামগঞ্জ নামক স্থানে মুক্তিবাহিনীর জন্য ৪৮০ শয্যার হাসপাতাল ছিল। ওই হাসপাতালে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা) ও ক্যাপ্টেন সেতারা বেগমের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁরা তাঁদের মুক্তিযোদ্ধাদের সেবার দায়িত্ব দেন।
গীতা কর বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সেবার দায়িত্বের কথা শুনে তাঁর মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ, তাঁরা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অনেক ভেবে দেখেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করাটাও কম নয়। মন শক্ত করে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা শুরু করেন। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় নিয়োজিত থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার অপেক্ষায় থাকেন তিনি।
দেশ স্বাধীনের পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর ক্যাম্প থেকে অনেকেই দেশের দিকে রওনা দিলেও তাঁরা কয়েকজন সেখানে থেকে যান। ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি কুমিল্লার সোনামুড়া সীমান্ত দিয়ে দেশে এসে তাঁরা দুই বোন কয়েক দিন ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে থাকেন।
সাত-আট মাস পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না থাকায় তাঁদের রাজবাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামে ফিরে দেখেন ঘর নেই, দরজা নেই, সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পরিবারের ১২ সদস্য প্রায় অনাহারে দিনাতিপাত করছেন।
কিছুদিন পর একটি চিঠি পেলেন। সেনাবাহিনীর প্রধান এম এ জি ওসমানী তাঁদের সনদ দেবেন। গর্বে বুকটা ভরে উঠল। এরও কিছুদিন পর পেলেন ডা. জাফরুল্লাহর চিঠি। তাঁকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নতুন দেশের সেবার জন্য যেতে বলা হয়েছে। ভীষণ চিন্তায় পড়লেন। তিনি পরিবারের সবার বড়। পরিবারের দায়িত্ব তাঁর ওপর। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, নাকি দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবেন। সিদ্ধান্ত নিলেন দেশ গড়ার কাজেই জীবন উৎসর্গ করবেন।
এরপর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ শুরু করেন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সেখানেই চাকরি করেছেন। দেশ ও পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চিরকুমারীই থেকে যান গীতা কর। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৪৯ বছর পর ২০২০ সালে পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রাজবাড়ী সদর উপজেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল বলেন, গীতা কর ও তাঁর দুই বোন মুক্তিযোদ্ধা। ত্রিপুরা সীমান্তের কুমিল্লা এলাকায় তাঁরা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদান প্রশংসার যোগ্য।
যুদ্ধের শুরুর দিকে বাবা-চাচাকে হত্যা করে বিহারি ও বাঙালি রাজাকারেরা। বাবার লাশ ফেলে মা, চাচি ও বোনদের নিয়ে চলে যান ভারতে। সেখান থেকে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার প্রশিক্ষণ নেন রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দা গ্রামের গীতা কর। একাত্তরের স্মৃতি মনে এলে এখনো আঁতকে ওঠেন তিনি। বাংলাদেশ সীমান্তে যুদ্ধকালীন হাসপাতালে সাত-আট মাস আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেন। এত পরিশ্রম আর ত্যাগের স্বীকৃতি মেলে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর ২০২০ সালে।
গীতা কর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৭ বছরের কিশোরী ছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকতেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ গ্রামে। যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন পর দুষ্কৃতকারীরা তাঁর চাচাকে হত্যা করে। চাচার মৃত্যুর পর বাবা তাঁদের বড় চার বোনকে নিয়ে মামাবাড়ি সদর উপজেলার এড়েন্দা গ্রামে চলে যান।
একদিন রাতে বিহারি ও বাঙালি রাজাকারেরা তাঁর মামাবাড়ি লুটপাট করার সময় বাবা জিতেন্দ্র করকে হত্যা করে। বাবার লাশ ফেলে ওই রাতে পরিবারের বাকি সদস্যদের নিয়ে টানা ৯ দিন হেঁটে শিকারপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পৌঁছান। সেখানে এক দূরসম্পর্কের দাদার সঙ্গে কথা বলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য তিনি ও তাঁর বোন ইরা কর নাম লেখান। দুই বোনসহ সাতজন নারী দিয়ে শুরু হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প।
তাঁদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি বাড়ি ঠিক করেন বর্তমান সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী। সেখানে তাঁদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণসহ প্রাথমিক চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ক্যাম্প থেকে অক্টোবর মাসের দিকে পথপ্রদর্শক হিসেবে অবাঙালি একজনকে সঙ্গে দেওয়া হয়। তাঁর দেখানো পথে হাওড়া স্টেশন থেকে আসাম যান তাঁরা। সেখান থেকে ওই ব্যক্তিও তাঁদের ছেড়ে চলে যান।
সেখান থেকে হেঁটে তাঁরা সীমান্তের করিমগঞ্জের শরণার্থী ক্যাম্পে পৌঁছান। ওই ক্যাম্পে থাকা মাখন সোম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। কোথা থেকে এসেছেন, কীভাবে এসেছেন সব ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে মাখন সোম খাবার ও ঘুমানোর ব্যবস্থা করেন।
সকালে মাখন সোম কলকাতায় সাজেদা চৌধুরীর কাছে টেলিগ্রাম পাঠান। কয়েক দিনের মধ্যেই একটি টেলিগ্রাম আসে। টেলিগ্রামের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁদের আগরতলা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কুমিল্লা সীমান্তে বিশ্রামগঞ্জ নামক স্থানে মুক্তিবাহিনীর জন্য ৪৮০ শয্যার হাসপাতাল ছিল। ওই হাসপাতালে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা) ও ক্যাপ্টেন সেতারা বেগমের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁরা তাঁদের মুক্তিযোদ্ধাদের সেবার দায়িত্ব দেন।
গীতা কর বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সেবার দায়িত্বের কথা শুনে তাঁর মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ, তাঁরা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অনেক ভেবে দেখেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করাটাও কম নয়। মন শক্ত করে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা শুরু করেন। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় নিয়োজিত থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার অপেক্ষায় থাকেন তিনি।
দেশ স্বাধীনের পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর ক্যাম্প থেকে অনেকেই দেশের দিকে রওনা দিলেও তাঁরা কয়েকজন সেখানে থেকে যান। ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি কুমিল্লার সোনামুড়া সীমান্ত দিয়ে দেশে এসে তাঁরা দুই বোন কয়েক দিন ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে থাকেন।
সাত-আট মাস পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না থাকায় তাঁদের রাজবাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামে ফিরে দেখেন ঘর নেই, দরজা নেই, সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পরিবারের ১২ সদস্য প্রায় অনাহারে দিনাতিপাত করছেন।
কিছুদিন পর একটি চিঠি পেলেন। সেনাবাহিনীর প্রধান এম এ জি ওসমানী তাঁদের সনদ দেবেন। গর্বে বুকটা ভরে উঠল। এরও কিছুদিন পর পেলেন ডা. জাফরুল্লাহর চিঠি। তাঁকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নতুন দেশের সেবার জন্য যেতে বলা হয়েছে। ভীষণ চিন্তায় পড়লেন। তিনি পরিবারের সবার বড়। পরিবারের দায়িত্ব তাঁর ওপর। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, নাকি দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবেন। সিদ্ধান্ত নিলেন দেশ গড়ার কাজেই জীবন উৎসর্গ করবেন।
এরপর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ শুরু করেন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সেখানেই চাকরি করেছেন। দেশ ও পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চিরকুমারীই থেকে যান গীতা কর। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৪৯ বছর পর ২০২০ সালে পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রাজবাড়ী সদর উপজেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল বলেন, গীতা কর ও তাঁর দুই বোন মুক্তিযোদ্ধা। ত্রিপুরা সীমান্তের কুমিল্লা এলাকায় তাঁরা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদান প্রশংসার যোগ্য।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
৬ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫