Ajker Patrika

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের বিলটি যেন ছিন্নভিন্ন খনি

মো. ফারুক হোসেন, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) 
Thumbnail image

দেখে বোঝার উপায় নেই, এটা কোনো ফসলি জমি। সেখানে এখন পুকুরের পর পুকুর। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ও ভাদুর ইউনিয়নের পাঁচ গ্রাম নিয়ে একটি বিলের দৃশ্য এটি। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত চার বছরে ২০০ একরের বেশি আয়তনের এই বিলে খনন করা হয়েছে দুই শতাধিক পুকুর। এর মধ্যে চলতি বছরই খনন করা হয়েছে ৩০টি। আর এসব পুকুরের মাটি নেওয়া হচ্ছে আশপাশের ইটভাটায়। 

স্থানীয়রা আরও জানান, পুকুর খনন করা এসব জমির বেশির ভাগই ধানের জমি। এতে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ হতো ধান। তবে পুকুর কাটায় কমে যাচ্ছে চাষাবাদের জমি। 

তাঁদের ভাষ্য, আশপাশের জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে গর্ত করে ফেলায় অনেকে বাধ্য হচ্ছেন নিজেদের জমি কম দামে বেচে দিতে। এ ছাড়া এসব ফসলি জমির মাটি নেওয়া হচ্ছে আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা বৈধ-অবৈধ ইটভাটায়। 

সম্প্রতি ওই বিলে গিয়ে দেখা যায় মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ। ২০ থেকে ২৫টি অবৈধ ট্রলি ও ভেকু দিয়ে চলছে খননকাজ। 

স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরে বিলে ৩০টির বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে। তাঁরা কয়েকবার মানববন্ধন, প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ, গণস্বাক্ষরসংবলিত স্মারকলিপি দিলেও বন্ধ হয়নি মাটি কাটা। 

আবদুস সালাম, কালা মিয়া, রাজা মিয়াসহ কয়েকজন কৃষক জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল পাটোয়ারী, প্রভাবশালী আমির হোসেন ডিপজল, জাহাঙ্গীর কোম্পানি, সিরাজ মিয়াসহ একটি চক্র জমি কিনে ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর করে মাটি নিয়ে যায়। এতে পাশের জমি ভেঙে পুকুরে পড়ে। পরে ওই জমির মালিক বাধ্য হয়ে এ চক্রের কাছে অল্প দামে জমি বিক্রি করে দেন। আবার অনেক কৃষককে জমির মাটি বিক্রিতেও বাধ্য করা হয়। 

সিরাজ নামের একজন কৃষক বলেন, ‘সমস্ত মাঠটাকে যেভাবে ধ্বংস করে ফেলছে, আমরা কৃষক কীভাবে চাষাবাদ করব, কী খাব?’ 
শাহ আলম নামের আরেকজন বলেন, ‘মাঠজুড়ে পুকুর। পুকুরের কারণে নিজের জমিতেই যাওয়া যায় না। কিছু কিছু জমির ধান পেকে আছে অথচ কেটে কীভাবে আনব; নৌকায় করেও আনা সম্ভব নয়।’ 

ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা, শাহারপাড়া, শাকতলা ও ভাদুর ইউনিয়নের সমেষপুর ও সিরুন্দিসহ পাঁচ গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক যুগ যুগ ধরে এ বিলে চাষাবাদ করে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। কয়েক বছর আগে থেকেই এ মাঠটি মাটিখেকোদের কুনজরে পড়ে। 
মাটি কাটায় অভিযুক্ত দুলাল পাটোয়ারী বলেন, ‘সবাই কাটে। আমরা কাটলে দোষ হয়? আপনারা আসছেন, আপনারা নিউজ করেন। আমরা আমাদের কাজ করি।’

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ পাঠান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’ 

ভোলাকোট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দিলু বলেন, ‘আমি অসহায়। আমার কিছু করার নেই মাটি কাটা বন্ধে। আপনারা নিউজ করে দেখেন কিছু করতে পারেন কি না।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. শারমিন ইসলাম বলেন, সর্বশেষ মাসিক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মাটি কাটা রোধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত