Ajker Patrika

বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধুর অবদান

মো. মফিজার রহমান রাজু
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, ১২: ২৯
Thumbnail image

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত ধাপ মুক্তিযুদ্ধ। লাল-সবুজের সুন্দর দেশটি স্বাধীন করতে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান সম্পর্কে আজ স্বল্প পরিসরে আলোচনা করব।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা। দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে অসামান্য অবদানের জন্য বাঙালির জাতির পিতার আসনে তিনি অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ধাপে ধাপে তিনি বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের শীর্ষ আসনে চলে আসেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু দেশের রাজনীতির ইতিহাসে সবার অগ্রভাগে থেকে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে আলোর পথ দেখিয়েছেন। তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের সোনার ফসল এই স্বাধীন বাংলাদেশ।

প্রথম মুসলিম লীগের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির পথে যাত্রা। সেই থেকে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন পূর্ব বাংলার অসাম্প্রদায়িক ও গণতন্ত্রের প্রাণপুরুষ। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকে তিনি মুসলিম লীগ থেকে ক্রমশ সরে গিয়ে তরুণদের সংগঠিত করতে থাকেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দেওয়ার কারণেই তাঁর জেলজীবন শুরু। জেলখানায় বন্দী থেকেও তিনি ভাষার দাবিকে উসকে দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে তাঁর অবদান সবার ওপরে। বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভূখণ্ডের স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে লালন করে আসছিল। কিন্তু এর বাস্তব রূপ লাভ করেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই। ছাত্রজীবন থেকেই প্রতিবাদী এ প্রাণপুরুষ প্রতিটি আন্দোলনে সবার আগে ছিলেন। তাঁর প্রতিটি কথাতেই ছিল প্রতিবাদী সুর। পাকিস্তানের সামরিক শাসকেরা সব সময় বঙ্গবন্ধুর ভয়ে তটস্থ থাকতেন। সে কারণে তাঁরা বিভিন্ন অজুহাতে তাঁকে জেলে বন্দী রেখেই স্বস্তি পেতেন।

প্রথম জেল থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন রাজনীতির শীর্ষ দুয়ারে। ১৯৬৬ সালে প্রথম ৬ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান। এই ৬ দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ।

বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলন ঠেকাতে পশ্চিমা সামরিক শাসক আইয়ুব খান ‘ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়’ শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে প্রহসনের বিচার শুরু করেন। এ দেশের মানুষের গণদাবির মুখে উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করার পর শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। সেই থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু নামে ভূষিত হন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর তিনি বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে পরিগণিত হন। তাঁর বজ্রকণ্ঠে দেওয়া ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ভাষণের মর্যাদা পেয়েছে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বর্বর হত্যাকাণ্ড শুরু করলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যায়।

এরপর তাঁকে পশ্চিম পাকিস্তানের লায়ালপুর কারাগারে স্থানান্তর করে দীর্ঘ ১০ মাস বন্দী করে রাখে। কিন্তু এ দেশের মানুষেরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের নির্দেশনা মোতাবেক মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করে। বঙ্গবন্ধুর নামেই পরিচালিত হয়েছে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ। মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু।

পাকিস্তানি কুচক্রী সরকার স্বাধীনতা ঘোষণার অপরাধে বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহের অপরাধে ফাঁসির আদেশ দেয়। কিন্তু প্রতিবাদী সুশীল বিশ্বনেতাদের চাপে বারবার তাঁকে ফাঁসির দড়ি থেকে ফিরিয়ে এনেছে। ১৯৭২ সালের ১০ মার্চ যখন তিনি দেশে ফিরেছিলেন এ দেশের মানুষ আবেগে উচ্ছ্বাসে বরণ করেছিল এ বিশ্ববরেণ্য নেতাকে।

সুতরাং এ কথা নিশ্চিত বলা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। পূর্ব পাকিস্তানের আমজনতা এক হয়েছিল তাঁর বজ্রকঠিন ভাষণে। পুরো বাঙালি জাতি সংগঠিত হয়েছিল তাঁর নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে এ দেশের মানুষ সব আন্দোলন ও সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ত বলে পশ্চিমা শাসকেরা সব সময় সুযোগ খুঁজত, কীভাবে তাঁকে কারারুদ্ধ রাখা যায়। বস্তুত বাঙালি জাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর এ স্বাধীনতা অর্জনের অগ্রদূত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

লেখক: উপদেষ্টা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রংপুর জেলা শাখা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ রাখার পক্ষে যে যুক্তি দিলেন আলী রীয়াজ

রাজধানীতে নিখোঁজ কিশোরী নওগাঁয়, যা বললেন সঙ্গে থাকা তরুণের বাবা

নবাবি প্রশাসনে হিন্দু আমলারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ

আটক ৩ জনকে ছাড়িয়ে নিতে উত্তরায় থানায় হামলা শিক্ষার্থীদের

উপদেষ্টা রিজওয়ানার কাছে মাত্র ১৫ মিনিট সময় চেয়ে পাইনি: বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত