Ajker Patrika

১৭ বার কাটাছেঁড়ায়ও দূর হয়নি বিতর্ক

আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২২, ০৯: ১০
১৭ বার কাটাছেঁড়ায়ও দূর হয়নি বিতর্ক

১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল যাত্রা করা স্বাধীন বাংলাদেশের গণপরিষদে একই বছরের ৪ নভেম্বর গৃহীত হয়েছিল সংবিধান বিল। সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে কার্যকর হয় দেশের এই সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানের ৫০ বছর পূর্তি আজ। এ সময়ে ১৭ বার সংশোধন করা হলেও সংবিধান নিয়ে বিতর্ক কমেনি। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সংসদেই সংবিধান সংশোধন করা হয় চারবার। কয়েকটি সংশোধনী আদালতেও বৈধতা পায়নি। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে বিতর্ক সবচেয়ে বেশি।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধান থেকে ৫০ বছরে আমাদের যাত্রা উল্টো পথে। এ সময়ে যত সংশোধনী হয়েছে তাতে মৌলিক অধিকারের প্রসার হয়নি, বরং খর্ব করেছে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন অবশ্য দাবি করেন, এখন কোনো বিতর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘বিতর্ক হয়েছে, আবার আদালতের মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি হয়েছে। আশা করা যায়, ষোড়শ সংশোধনীও শিগগির আদালতে নিষ্পত্তি হবে।’

সংবিধান প্রণয়নের জন্য ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল। ড. কামাল গত বছর বিবিসিকে বলেছিলেন, মূল সংবিধানের মৌলিক বিষয়গুলোতে বারবার যে সংশোধন করা হয়েছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত।

প্রথমবারের মতো আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেল দিবসটি।

ষোড়শ সংশোধনী সর্বোচ্চ আদালতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়। বাহাত্তরের মূল সংবিধানে এই ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সে ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে। আপিল বিভাগের রায়ে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ব্যবস্থা রেখে দেওয়া হয়েছিল। বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়।

ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর রিট আবেদন করেন ৯ আইনজীবী। হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৫ মে সংশোধনীটি বাতিল করে রায় দেন। এর বিরুদ্ধে সরকার আপিল করে। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ৩ জুলাই সংক্ষিপ্ত রায়ে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। একই বছরের ১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। তাতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা বিধান নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা-সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হয়।

রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধানসংবলিত ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গণতন্ত্রসহ সার্বিক বিষয় উঠে আসে। এসব নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল মাঠে নামে প্রধান বিচারপতির পক্ষে-বিপক্ষে। আওয়ামী লীগ তখন প্রধান বিচারপতির পদত্যাগও দাবি করে। একপর্যায়ে ছুটি নিয়ে বিদেশে চলে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। পরে তিনি বিদেশে থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। পরে সরকার ওই রায় রিভিউ চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে, যা এখনো ঝুলে আছে।

বিতর্কের সূত্রপাত 
বাহাত্তরের সংবিধানে নিবর্তনমূলক আটক এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধান ছিল না। ১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় সংশোধনীতে এ ধরনের বিধান আনা হয়। তাতে মৌলিক অধিকার স্থগিত করার বিধানও ছিল। প্রতিবাদে তখন সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছিলেন বিরোধীদলীয় ও স্বতন্ত্র সদস্যরা। 
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা আমূল বদলে ফেলা হয়েছিল। সংসদীয় সরকারপদ্ধতি বিলুপ্ত করে প্রবর্তন করা হয়েছিল একদলীয় সরকারব্যবস্থা। এ নিয়ে এখনো বিতর্ক হয়।

সামরিক শাসনামলে মূলে আঘাত
জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের সব কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া হয় ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে। অন্যতম মৌলিক বিষয় ধর্মনিরপেক্ষতাও বাদ দেওয়া হয়। যুক্ত করা হয় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। সংশোধনীটি এখনো বিতর্কিত।

এরশাদের সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়া হয় সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে। অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ করা হয়। এগুলো ব্যাপক বিতর্কিত।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘সংবিধানের মূল ধারণা লালন করে আমাদের রাজনীতি আবর্তিত হয়নি। হয়েছে ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকাকে কেন্দ্র করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত