Ajker Patrika

সেতু নয়, মেলে শুধু আশ্বাস

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ৫৬
Thumbnail image

তারাগঞ্জ উপজেলার যমুনেশ্বরী ও চিকলী নদীর চারটি ঘাটে দীর্ঘদিনেও সেতু নির্মাণ হয়নি। আশ্বাসেই একমাত্র ভরসা ওই চার ঘাট দিয়ে পারাপার হওয়া ৪৯টি গ্রামের ৬১ হাজার মানুষের। সেতু নির্মাণ না হওয়ায় এ অঞ্চলের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে চিকলী নদীর শাইলবাড়ী ঘাট। এ ঘাটের দুই পাড়ে দরজিপাড়া, খ্যানপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, মহেশখোলা, শাইলবাড়ী, নলুয়াডাঙ্গা, প্রামাণিকপাড়া, ভীমপুর, মৌলভীপাড়া, বানিয়াপাড়াসহ ১২টি গ্রাম। ঘাটে সেতু না থাকায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে অতিরিক্ত ১১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

ঘাটপারে কথা হলে শাইলবাড়ী গ্রামের আতিয়ার রহমান বলেন, ‘এটে সেতু বানে দিবার চায়া লাঙল, নৌকায় ভোট দিনো। এমপি বানাইনো, সরকার হইল। তাও এটে সেতু হইল না। একনা সেতুর জন্যে আর কত অপেক্ষা করমো।’

যমুনেশ্বরী নদীর নারায়ণজন ঘাটে সেতু নেই। শুকনো মৌসুমে এখানে স্থানীয় লোকজন বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করেন। বর্ষা মৌসুমে কলাগাছের ভেলাই তাঁদের একমাত্র ভরসা। বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়তে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।

উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে হাড়িয়াকুঠি ইউনিয়নে নারায়ণজন ঘাটের অবস্থান। এ খেয়াঘাটের দুই পাড়ে আছে ১৫টি গ্রাম। এর মধ্যে নারায়ণজন, কবিরাজপাড়া, খিয়ারপাড়া, হাজিপাড়া, কুঠিপাড়া, জুম্মাপাড়া, সরকারপাড়া, চাকলা, জলুবার, বানিয়াপাড়া, জেলেপাড়া, নদীপাড়, মহিমাপুর, পাঁচালিসহ ১৫টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়ে উপজেলা সদরে যেতে হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই ঘাটে পাকা কোনো সেতু নেই। বাঁশের যে সাঁকোটি আছে, তা বেশ নড়বড়ে। সাঁকোটির অর্ধেক অংশের বাঁশের পাটাতন খসে পড়ে গেছে। বেশ কয়েকটি খুঁটি সরে গেছে। যাতায়াতের বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় পথচারীরা ওই সাঁকো দিয়ে অতি কষ্টে পারাপার হচ্ছেন।

কথা হয় নারায়ণজন গ্রামের গৃহবধূ বুলি মাইয়ের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এটে একনা সেতু বানে দাও। বর্ষার সময় হামার খুব কষ্ট হয়। টেলিভিশনেই, পেপারেই দেখাচ্ছে রাস্তা, নদী নাই তাও সেতু বানে থামছে। হামার এটে নদী-ঘাট সহগ আছে সেতু বানাইতে সমস্যা কোনটি?

যমুনেশ্বরী নদীর গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ঘাট হলো কালারঘাট। এ ঘাটের দুই পাড়ে ১২টি গ্রাম। দীর্ঘ দিন ধরে সেতু নির্মাণের আশ্বাস পেলেও সেতু হয়নি। ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

উপজেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে এয়ার ইউনিয়নে যমুনেশ্বরী নদীর এ ঘাটটি পারাপারে একমাত্র অবলম্বন বাঁশের সাঁকো। এ খেয়াঘাটের দুই পাড়ে শাহপাড়া, কাংলাচড়া, উজিয়াল, চারআনী, দোলাপাড়া, বুড়িরহাট, চিলাপাকসহ রয়েছে ১২টি গ্রাম। এলাকাবাসী চাঁদা তুলে ঘাটে সাঁকো বানালেও বর্ষাকালে যমুনেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে সেটি ডুবে যায়। তখন নৌকা বা কলার ভেলাই ভরসা।

স্থানীয়রা জানান, ওই সাঁকো পেরিয়ে চিলাপাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসে। বর্ষাকালে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটে শিক্ষক ও অভিভাবকদের। কালারঘাটে সেতু না থাকায় বর্ষাকালে নদীর ওপারের উজিয়াল, শাহপাড়া, চারআনী গ্রামের বেশির ভাগ শিশু ভয়ে স্কুলে যেতে চায় না। যমুনেশ্বরী নদীর চাকলা ঘাটের দুই পাড়ের ১০টি গ্রামের ১৪ হাজার মানুষও যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েন সেতু না থাকায়।

মহিমাপুর খেয়াঘাটে কথা হয় চাকলা গ্রামের সাইবুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ভোটের সময় বাড়ি আসি সেতু বানে দিবার চায়। কথা শুনি মনে হয় এইবার সেতু পামো। কিন্তু ভোট বেরাইলে (শেষ হলে) চেনে না। এটে সেতু না থাকায় হামার কষ্টের ফসল হাটোত নিগি বেচপার পাই না। ছাওয়া ছোটগুলা ঠিকমতো স্কুল যাবার পায় না।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ওই চারটি ঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডির জেলা ও উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কয়েকবার কথা হয়েছে।’

উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মেদ হায়দার বলেন, ‘ওই চার ঘাটে সেতু না থাকার বিষয়টি জানা আছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সেতু নির্মাণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত