Ajker Patrika

অর্থসংকটে চা-শ্রমিকেরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ০১
অর্থসংকটে চা-শ্রমিকেরা

ব্যবস্থাপককে মারপিটের অভিযোগ এনে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বৈকুণ্ঠপুর চা-বাগান ১৭ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বাগানের প্রায় সাড়ে ৪০০ শ্রমিক। বাগানের কার্যক্রম, শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বন্ধ থাকায় অর্থ সংকটে ভুগছেন চা-শ্রমিকেরা। অনাহার, অর্ধাহারে দিন কাটছে তাঁদের।

সংকট নিরসনে গত বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ চা বাগানের স্থানীয় নাট্যমন্দিরে মতবিনিময় ও প্রতিবাদ সভা করেছে ‘বৈকুণ্ঠপুর চা বাগান আন্দোলন কমিটি’। এ সময় তারা শিগগির বাগান খুলে দেওয়ার দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, এ চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে আবাসন সুবিধা দেওয়ার কথা। অথচ বাগানের মালিকপক্ষ স্থায়ী চা-শ্রমিক দিলীপ কেউটকে সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। বাসস্থানসংকটে বাধ্য হয়ে নিজের খাজনা দেওয়া ফসলি জমিতে ঘর নির্মাণ করতে ম্যানেজার এবং পঞ্চায়েত কমিটি থেকে মৌখিক অনুমতি নেন তিনি। কিন্তু ঘর নির্মাণের ১৫ দিনের মাথায় মালিকপক্ষ উচ্ছেদের নোটিশ দেন।

এ সময় স্থানীয় চা-শ্রমিকেরা দিলীপের পক্ষে দাঁড়ালে ১২ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা এবং বেশকিছু শ্রমিককে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ৭ ডিসেম্বর মালিকপক্ষ বাগান বন্ধ ঘোষণা করে।

এ চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন চৌহান বলেন, ‘অস্থায়ী চা-শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ, উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা, কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা, মজুরি বৃদ্ধি এবং আবাসন সুব্যবস্থা করতে হবে। ২০১৯ সালে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক ২৫ দফা ইশতেহারের ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদে স্থানীয় আবাসনসংকট নিরসনের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল। আজ তিন বছর পরও ২৫ দফার ১ দফা সমাধানও চা-শ্রমিকেরা চোখে দেখেননি। দ্রুত সেই ২৫ দফা কার্যক্রম করতে হবে।’

বৈকুণ্ঠপুর চা বাগান আন্দোলন কমিটির সভাপতি মনিব কর্মকার বলেন, ‘আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা আমাদের বলেছেন দিলীপ কেউটের ঘর উচ্ছেদ, ২০ জন শ্রমিককে চাকরিচ্যুত এবং প্রত্যেক চা-শ্রমিকের পরিবারকে তিন শতক করে জায়গা দেবে। এসব মেনে নিলে তাঁরা বাগান খুলে দেবেন। আমরা সেটি মানি না।’

এ চা বাগানের ম্যানেজার সামছুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘বাগানের শ্রমিকদের বসবাসের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। কিন্তু শ্রমিক দিলীপ কেউট নিয়ম ভঙ্গ করে বাগানের ভেতরে জনবসতির বাইরে পাকা ঘর নির্মাণ করেন। বিষয়টি আমাদের নজরে এলে আমরা তাঁকে ঘর নির্মাণে বাধা দিই। কিন্তু তিনি আমাদের বাধা শোনেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাগানের নিয়ম ভঙ্গ করা এবং নির্দেশনা অমান্য করায় আমরা তাঁর শ্রমিক কার্ড বাতিল করি। যে কারণে ৭ ডিসেম্বর তিনি (দিলীপ) বাগানের পঞ্চায়েত কমিটিকে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে আমাদের ওপর হামলা চালান। শ্রমিকেরা আমাকে ও আমার ডেপুটি ম্যানেজার মহিউদ্দিনকে মারপিট করেন এবং বাংলো ভাঙচুর করেন।’

ম্যানেজার সামছুল বলেন, ‘বিষয়টি আমি বাগানমালিককে জানালে তিনি বাগান বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বাগানটিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত