Ajker Patrika

প্রতিশোধস্পৃহা কাম্য নয়

সম্পাদকীয়
প্রতিশোধস্পৃহা কাম্য নয়

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে তাদের দলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল। উচ্চ শিক্ষাঙ্গনগুলোয় সন্ত্রাস সৃষ্টির পাশাপাশি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তারা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদক কারবার, শিক্ষার্থী নির্যাতন, ক্যানটিনে ফ্রি খাওয়া, নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যে তারা তা করেনি।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থী দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন। গত কয়েক দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের গাছে বেঁধে নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে রোববার আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

মূলত আগের ঘটনায় যেসব সাধারণ শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাঁদেরই একটি অংশ ক্রুদ্ধ হয়ে এ কাজটি করছেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীর আরেকটি অংশ এসব ঘটনায় বিরক্তি প্রকাশ করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘কোনো শিক্ষার্থীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন। ...’

এমনিতেই দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন বলে কিছু নেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যসহ প্রায় ৭৮ প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের অধিকাংশ প্রাধ্যক্ষ। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম। এখন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চলবে না। ছাত্রলীগের নামে কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী যে নির্যাতনের শিকার হবেন না, তার নিশ্চয়তা কি আছে?

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব সাধারণ শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের রাগ থাকতেই পারে। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো, প্রতিশোধস্পৃহা। নিপীড়িত যে কেউ সুযোগ পেলে একসময়ের নিপীড়নকারীর ওপর চড়াও হন।

কিন্তু সহজাত প্রবৃত্তি দিয়ে তো সমাজ, রাষ্ট্র চলতে পারে না। শিক্ষার্থীদের কাছে এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। কারণ তাঁরাই তো একসময় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু তাঁরাই যদি প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা অব্যাহত রাখেন, তাহলে ভালো কিছু হবে না। এই অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার বিষয়টিও তো আন্দোলনের লক্ষ্যের মধ্যে ছিল।

এই অভ্যুত্থানের পর সংস্কার কথাটা বেশি আলোচিত হচ্ছে। পুরো সিস্টেমের সংস্কার দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিপীড়নের শিকার হন, তার কারণ চিহ্নিত করতে হবে। যে কারণগুলো বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকে অন্তর্হিত হলে কোনো সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এক পক্ষ অন্য পক্ষের সঙ্গে প্রতিশোধের রাজনীতি করতে পারবে না।

আমরা চাই, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ অরাজক পরিস্থিতির দ্রুত অবসান হোক। এ জন্য দ্রুততার সঙ্গে উপাচার্যসহ অন্যান্য প্রশাসনিক পদে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। প্রশাসনিক তৎপরতা জারি থাকলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না। এ ধরনের ঘটনা রোধে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত