Ajker Patrika

ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখতে বলেছিলেন বাবুল

রাশেদ নিজাম, ঢাকা
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২২, ১২: ০০
ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখতে বলেছিলেন বাবুল

স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে খুনের আগে ঘটনাস্থলের আশপাশের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বন্ধ রাখতে বলেছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। তাঁর নির্দেশমতো সব ক্যামেরা বন্ধ রাখা হলেও দুটি ক্যামেরা খুনিদের অগোচরে থেকে যায়। এতেই ফাঁস হয়ে যায় রোমহর্ষ সেই খুনের ঘটনা।

মিতু হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রে থাকা আসামি এহতেসামুল হক ভোলা কারাগারে থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক আবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করেন। ভোলার আবেদনপত্রটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‍্যাবের মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছেও পাঠানো হয়।

২০১৬ সালে ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারসহ সাতজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ১০ অক্টোবর এ মামলার ধার্য দিন রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে মিতু খুনের সঙ্গে বাবুল আক্তারসহ ৯ জন আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে নুরুন্নবী ও রাশেদ পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাঁদের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি আসামিরা হলেন মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা, এহতেসামুল হক ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়া।

২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর যশোরের বেনাপোল থেকে এহতেসামুল হক ওরফে ভোলাকে তৃতীয়বারের মতো গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফি উদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। সেখানে দাবি করেন, সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের নির্দেশেই তাঁর স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে হত্যা করেছিলেন মুছা।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, খুনের মিশন সফল করতে কী কী করতে হবে, সেই ব্যাপারে বাবুল মুসাকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানান ভোলা। এর আগে ২০১৬ সালের ২৮ জুন মিতু খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় বাবুল আক্তারের ‘সোর্স’ হিসেবে পরিচিত ভোলাকে। সে সময় তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় পয়েন্ট ৩২ বোরের পিস্তলটি; যা মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানায় পুলিশ। হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পাশাপাশি ভোলার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও একটি মামলা করা হয়েছিল। এরপর প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগের পর ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরে জামিন পান ভোলা। ওই দিনই অন্য একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ছিলেন ভোলা। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো আবেদনে তিনি বলেন, স্ত্রীকে খুন করার জন্য এক বছর ধরে মুছাকে নির্দেশনা দিয়ে আসছিলেন বাবুল আক্তার। হত্যার দুই দিন আগে মুছাকে বলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে যদি কাজ না হয়, তাহলে মুছা ও তাঁর সঙ্গীদের গুম নয়তো ক্রসফায়ার দেওয়া হবে। এরপর থেকে স্ত্রী কখন বাসা থেকে বের হন, কোনো স্থানে কোনো সময় খুন করলে ভালো হবে, এমন নির্দেশনা দিতে থাকেন তিনি।

ভোলার দাবি, মিতু হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুজ্জামান, বিভিন্ন সময় বাবুল আক্তারের পক্ষ থেকে ভোলা এবং বাকি আসামিদের মুখ না খোলার হুমকি দিয়েছেন। তাঁকে রিমান্ডে এসে দফায় দফায় পরিবারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। আদালতে মামলার হাজিরা দেওয়ার সময় বাড়াবাড়ি করলে বাবুল আক্তারের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারকে ধ্বংস করার হুমকিও কামরুজ্জামান দিয়েছেন বলে সেই আবেদনে উল্লেখ করেন ভোলা।

ভোলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অবসরে যাওয়া এডিসি কামরুজ্জামান বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত