মো. রাকিবুল ইসলাম
কিছুদিন যাবৎ বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে ও রাজনীতিসচেতন সর্বসাধারণের মাঝে বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমেরিকার ঘোষিত নতুন ভিসা নীতি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে আজ আমি একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির আওতায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কেউ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করলে কিংবা দায়ী থাকলে তাকে ও তার পরিবারকে আমরা ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করতে পারি।’ এই নীতির ব্যাখ্যায় মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ডোনাল্ড লু আরও বলেন, ‘আমরা কাউকে নিষেধাজ্ঞা দিইনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাদানকারী যে কাউকে ভিসার নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।
এটা হতে পারে সরকারের কোনো সদস্য, হতে পারে বিচার বিভাগীয় কেউ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেউ অথবা বিরোধীদলীয় কোনো সদস্যও হতে পারে।’ অর্থাৎ মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ডোনাল্ড লুর কথা থেকে এটা অন্তত পরিষ্কার যে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব একটি আশঙ্কাজনক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং সেটি এই ভিসা নীতি যুক্ত করা থেকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এই ভিসা নীতিকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করছে এবং এই ভিসা নীতি পরবর্তী নির্বাচনে নিজ দলকে কীভাবে সুবিধা দেবে ও অন্য পক্ষকে কীভাবে অসুবিধায় ফেলবে, সেটা নিজেদের মতো করে মনগড়া ব্যাখ্যা করছে। এ যেন ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার মতো ব্যাপার।
মূল সংকট সমাধানে না গিয়ে চলছে কথার রাজনীতি। যেমন আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, বিএনপির বিরুদ্ধেই মার্কিন ভিসা নীতি হয়েছে। আবার বিএনপির নেতারা দাবি করছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই এবং যারা আগে সরকারের অন্যায় আদেশ পালন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেছেন, যারা নির্বাচনে জোরজবরদস্তি করবে, মার্কিন সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে—এটা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিষয়। এ বিষয়ে তাদের আপত্তি নেই। এখান থেকে বোঝাই যাচ্ছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এখনো পরস্পরকে দোষারোপ করছে, যদিও ডোনাল্ড লু পরিষ্কার বলেছেন যে এই নীতি সুস্পষ্ট কারও বিরুদ্ধে নয়। এটা সরকারি অথবা বিরোধী দল যে কারও জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। তাই কোনো দলেরই মনে মনে সুখী হওয়ার কোনো সংগত কারণ নেই। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো সংকটের মূলে যাওয়ার চেষ্টা করছে না।
আমাদের নির্বাচন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট আগে থেকেই ছিল। আশি ও নব্বইয়ের দশকের সামরিক সরকারের অধীনের নির্বাচনগুলো, ১৯৯৪ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মাগুরা-২ আসনের উপনির্বাচন, দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশ্বাসের সংকট জন্ম দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগসহ রাজনৈতিক দলগুলো পর্যন্ত এখন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সর্বশেষ মার্কিন ভিসা নীতি যার প্রমাণ। প্রতিষ্ঠানের প্রতি ব্যক্তির আস্থা গড়ে ওঠে মূলত চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। অতীত অভিজ্ঞতা, কর্তব্য পালনে সুনাম, কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের আচরণ এবং প্রতিশ্রুত কথা ও কাজের মধ্যে মিল। আমরা যদি আমাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলগুলোকে এই চারটি সূচকে মূল্যায়ন করি, তাহলে আমরা কী পাই? সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। সর্বশেষ কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনও যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।
নির্বাচন কমিশনের মূল কর্তব্য হচ্ছে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা, রয়েছে সেখানেও অস্বস্তি। বাংলাদেশের কোনো নির্বাচন কমিশনই ভারতের টি এন সেশনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মতো সর্বজনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, চতুর্থ সূচক কথা ও কাজের সম্মিলন; সেখানেও নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখাতে পারেনি। জাতীয় নির্বাচন ইভিএম নাকি ব্যালটে হবে, এ বিষয়ে কমিশন নিজের কথা রাখতে পারেনি। ফলে প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বহু বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। এর সর্বশেষ সংস্করণ মার্কিন ভিসা নীতি। অপরদিকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও জনগণের আস্থা হারাচ্ছে।
ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস তলানিতে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পালনে সচেষ্ট নয়। তাই লক্ষ করলে দেখা যাবে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী বাদে সাধারণের সম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল মূল্যস্ফীতি, পরিবেশ বিপর্যয়, ডলার-সংকট, অর্থ পাচার কিংবা দুর্নীতি দমনের মতো জনসম্পৃক্ত ইস্যুগুলো বাদ দিয়ে মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দাবি ও অন্যান্য ইস্যুতে বেশি সরব ছিল।
আবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ অর্থ পাচার, দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয়ে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে বারবার। এভাবে সরকারি ও বিরোধী দল দুপক্ষই সাধারণের আস্থা হারিয়েছে। জনসাধারণের কথা চিন্তা করে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বিশ্বাসের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপায় সৃষ্টি করা দরকার ছিল, সেটি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি শঙ্কা ও সংকট তৈরি হয়েছে। তবে আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই মোচন করতে হবে। একটা কথা বলে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্রসহ এই অঞ্চলে যাদের স্বার্থ রয়েছে এমন প্রাসঙ্গিক শক্তিশালী দেশগুলোর দূতাবাস মারফত বারবার তারা বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় থাকুক দেখতে চায়, এ কথা ব্যক্ত করছে; তবে কী উপায়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালন-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়, এ বিষয়ে মতামত প্রদান করেনি কিংবা কোনো ইঙ্গিত করেনি। এখন এই পরিস্থিতিতে যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন-প্রক্রিয়া নিয়ে নিজেরা সমঝোতায় না আসতে পারে, তবে নতুন কোনো সংকট তৈরি হলে দেশের অর্থনীতি ও জনসাধারণ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তার দায় কে নেবে?
একটা কথা মনে রাখা দরকার যে নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না। কোনো দল বা গোষ্ঠী যদি মনে করে পশ্চিমা দেশগুলোর গৃহীত পদক্ষেপ কেবলমাত্র সরকারি দল কিংবা কেবলমাত্র বিরোধী দলগুলোকে আক্রান্ত করবে, তবে সেটা হবে চরম ভুল। অর্থনৈতিক অবস্থা, ভূরাজনীতি এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি মিলিয়ে আমরা একটি জাতীয় সংকটের মুখোমুখি। এই সংকটকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হলে সব পক্ষকে আরও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচনী সংকট সমাধানে সংলাপের বিকল্প নেই।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সংলাপ। কোনো সন্দেহ নেই মার্কিন ভিসা নীতি সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। নতুন করে সংকট বৃদ্ধি করতে না চাইলে সংলাপ জরুরি।
এ ক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এগিয়ে আসতে পারেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সংলাপের ব্যবস্থা করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। তাই প্রয়োজনে তাঁর উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে আসুক। এলোমেলো মন্তব্য ও কথার লড়াই বন্ধ করে রাজনৈতিক দলগুলো সংকটের মূলে আলোকপাত করবে—পুরো জাতি এই প্রতীক্ষায়। বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন কমিশন ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নির্বাচনী সহিংসতাবিহীন এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করে। সর্বসাধারণের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশা অনুধাবন করে সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক—এই কামনা।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
কিছুদিন যাবৎ বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে ও রাজনীতিসচেতন সর্বসাধারণের মাঝে বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমেরিকার ঘোষিত নতুন ভিসা নীতি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে আজ আমি একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির আওতায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কেউ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করলে কিংবা দায়ী থাকলে তাকে ও তার পরিবারকে আমরা ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করতে পারি।’ এই নীতির ব্যাখ্যায় মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ডোনাল্ড লু আরও বলেন, ‘আমরা কাউকে নিষেধাজ্ঞা দিইনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাদানকারী যে কাউকে ভিসার নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।
এটা হতে পারে সরকারের কোনো সদস্য, হতে পারে বিচার বিভাগীয় কেউ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেউ অথবা বিরোধীদলীয় কোনো সদস্যও হতে পারে।’ অর্থাৎ মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ডোনাল্ড লুর কথা থেকে এটা অন্তত পরিষ্কার যে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব একটি আশঙ্কাজনক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং সেটি এই ভিসা নীতি যুক্ত করা থেকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এই ভিসা নীতিকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করছে এবং এই ভিসা নীতি পরবর্তী নির্বাচনে নিজ দলকে কীভাবে সুবিধা দেবে ও অন্য পক্ষকে কীভাবে অসুবিধায় ফেলবে, সেটা নিজেদের মতো করে মনগড়া ব্যাখ্যা করছে। এ যেন ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার মতো ব্যাপার।
মূল সংকট সমাধানে না গিয়ে চলছে কথার রাজনীতি। যেমন আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, বিএনপির বিরুদ্ধেই মার্কিন ভিসা নীতি হয়েছে। আবার বিএনপির নেতারা দাবি করছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই এবং যারা আগে সরকারের অন্যায় আদেশ পালন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেছেন, যারা নির্বাচনে জোরজবরদস্তি করবে, মার্কিন সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে—এটা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিষয়। এ বিষয়ে তাদের আপত্তি নেই। এখান থেকে বোঝাই যাচ্ছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এখনো পরস্পরকে দোষারোপ করছে, যদিও ডোনাল্ড লু পরিষ্কার বলেছেন যে এই নীতি সুস্পষ্ট কারও বিরুদ্ধে নয়। এটা সরকারি অথবা বিরোধী দল যে কারও জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। তাই কোনো দলেরই মনে মনে সুখী হওয়ার কোনো সংগত কারণ নেই। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো সংকটের মূলে যাওয়ার চেষ্টা করছে না।
আমাদের নির্বাচন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট আগে থেকেই ছিল। আশি ও নব্বইয়ের দশকের সামরিক সরকারের অধীনের নির্বাচনগুলো, ১৯৯৪ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মাগুরা-২ আসনের উপনির্বাচন, দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশ্বাসের সংকট জন্ম দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগসহ রাজনৈতিক দলগুলো পর্যন্ত এখন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সর্বশেষ মার্কিন ভিসা নীতি যার প্রমাণ। প্রতিষ্ঠানের প্রতি ব্যক্তির আস্থা গড়ে ওঠে মূলত চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। অতীত অভিজ্ঞতা, কর্তব্য পালনে সুনাম, কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের আচরণ এবং প্রতিশ্রুত কথা ও কাজের মধ্যে মিল। আমরা যদি আমাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলগুলোকে এই চারটি সূচকে মূল্যায়ন করি, তাহলে আমরা কী পাই? সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। সর্বশেষ কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনও যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।
নির্বাচন কমিশনের মূল কর্তব্য হচ্ছে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা, রয়েছে সেখানেও অস্বস্তি। বাংলাদেশের কোনো নির্বাচন কমিশনই ভারতের টি এন সেশনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মতো সর্বজনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, চতুর্থ সূচক কথা ও কাজের সম্মিলন; সেখানেও নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখাতে পারেনি। জাতীয় নির্বাচন ইভিএম নাকি ব্যালটে হবে, এ বিষয়ে কমিশন নিজের কথা রাখতে পারেনি। ফলে প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বহু বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। এর সর্বশেষ সংস্করণ মার্কিন ভিসা নীতি। অপরদিকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও জনগণের আস্থা হারাচ্ছে।
ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস তলানিতে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পালনে সচেষ্ট নয়। তাই লক্ষ করলে দেখা যাবে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী বাদে সাধারণের সম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল মূল্যস্ফীতি, পরিবেশ বিপর্যয়, ডলার-সংকট, অর্থ পাচার কিংবা দুর্নীতি দমনের মতো জনসম্পৃক্ত ইস্যুগুলো বাদ দিয়ে মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দাবি ও অন্যান্য ইস্যুতে বেশি সরব ছিল।
আবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ অর্থ পাচার, দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয়ে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে বারবার। এভাবে সরকারি ও বিরোধী দল দুপক্ষই সাধারণের আস্থা হারিয়েছে। জনসাধারণের কথা চিন্তা করে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বিশ্বাসের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপায় সৃষ্টি করা দরকার ছিল, সেটি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি শঙ্কা ও সংকট তৈরি হয়েছে। তবে আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই মোচন করতে হবে। একটা কথা বলে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্রসহ এই অঞ্চলে যাদের স্বার্থ রয়েছে এমন প্রাসঙ্গিক শক্তিশালী দেশগুলোর দূতাবাস মারফত বারবার তারা বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় থাকুক দেখতে চায়, এ কথা ব্যক্ত করছে; তবে কী উপায়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালন-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়, এ বিষয়ে মতামত প্রদান করেনি কিংবা কোনো ইঙ্গিত করেনি। এখন এই পরিস্থিতিতে যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন-প্রক্রিয়া নিয়ে নিজেরা সমঝোতায় না আসতে পারে, তবে নতুন কোনো সংকট তৈরি হলে দেশের অর্থনীতি ও জনসাধারণ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তার দায় কে নেবে?
একটা কথা মনে রাখা দরকার যে নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না। কোনো দল বা গোষ্ঠী যদি মনে করে পশ্চিমা দেশগুলোর গৃহীত পদক্ষেপ কেবলমাত্র সরকারি দল কিংবা কেবলমাত্র বিরোধী দলগুলোকে আক্রান্ত করবে, তবে সেটা হবে চরম ভুল। অর্থনৈতিক অবস্থা, ভূরাজনীতি এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি মিলিয়ে আমরা একটি জাতীয় সংকটের মুখোমুখি। এই সংকটকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হলে সব পক্ষকে আরও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচনী সংকট সমাধানে সংলাপের বিকল্প নেই।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সংলাপ। কোনো সন্দেহ নেই মার্কিন ভিসা নীতি সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। নতুন করে সংকট বৃদ্ধি করতে না চাইলে সংলাপ জরুরি।
এ ক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এগিয়ে আসতে পারেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সংলাপের ব্যবস্থা করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। তাই প্রয়োজনে তাঁর উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে আসুক। এলোমেলো মন্তব্য ও কথার লড়াই বন্ধ করে রাজনৈতিক দলগুলো সংকটের মূলে আলোকপাত করবে—পুরো জাতি এই প্রতীক্ষায়। বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন কমিশন ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নির্বাচনী সহিংসতাবিহীন এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করে। সর্বসাধারণের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশা অনুধাবন করে সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক—এই কামনা।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪