Ajker Patrika

ইবি ছাত্রী ঊর্মির মৃত্যু হত্যা নাকি আত্মহত্যা

রাশেদুজ্জামান, মেহেরপুর
ইবি ছাত্রী ঊর্মির মৃত্যু হত্যা নাকি আত্মহত্যা

নিশাত তাসনীম ঊর্মির মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যা দাবি করে তাঁর স্বজনেরা হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করেছেন। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আটক করা হয় ঊর্মির স্বামী ও শ্বশুরকে। ওই দিন রাতেই হত্যা মামলার পর তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

নিশাত তাসনীম ঊর্মির মা লাইলা আরজুমান বানু জানান, ঊর্মির সঙ্গে আশফাকুজ্জামান প্রিন্সের পরিচয় সপ্তম শ্রেণি থেকে। তারপর তাঁদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এইচএসসি পাসের পর ঊর্মি ভর্তি হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন থেকেই প্রিন্স বিয়ের জন্য ঊর্মিকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু তাঁদের বিয়েতে মত ছিল না পরিবারের। অবশেষে মেয়ের জেদের কাছে হার মানতে হয় গাংনীর চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবা গোলাম কিবরিয়া ও মা লাইলা আরজুমান বানুকে। ২০১৭ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের ঘরে ১৩ মাসের একটি ফুটফুটে সন্তান রয়েছে।

লাইলা আরজুমান বানু জানান, সন্তান জন্মের পর থেকেই দুজনের দূরত্ব বাড়তে থাকে। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রিন্স মাদকাসক্ত। প্রায়ই রাতে তিনি নেশা করে বাড়ি ফিরে ঊর্মিকে নির্যাতন করতেন। স্বামীর মন রক্ষা করতে বাবা-মায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত সম্পদের দলিলও কিছুদিন আগে নিয়ে যান প্রিন্স। সেই দলিল দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রাইভেট কার কিনেছেন। তাতেও স্বামীর মন রক্ষা হয়নি।

লাইলা আরজুমান বানু বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মেয়ের শ্বশুর হাশেম শাহ আমাদের ফোন দেন, মেয়ে অসুস্থ, হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। দ্রুত আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখি, মেয়ের শরীর ওড়না দিয়ে ঢাকা। ওড়না খুলতেই দেখি মেয়ে মারা গেছে।’ হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন এটি আত্মহত্যা বলে দাবি করেন। পুলিশ এসে দেখতে পায়, তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

ঊর্মির বাবা গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘ঘটনার কিছুক্ষণ আগেও মেয়ে ও নাতির সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয়েছে। আমার মেয়ে যদি মানসিকভাবে বিপদগ্রস্তই থাকত, তাহলে ভিডিও কলে এত সাবলীলভাবে কথা বলত না। আর কেউ ঘরের গ্রিলের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করবে, এটি মেনে নেওয়া যায় না। আমি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’

এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই ঊর্মির স্বামী আশফাকুজ্জামান প্রিন্স, শ্বশুর হাশেম শাহ ও শাশুড়ি রিক্তা খাতুনকে আসামি করে গাংনী থানায় হত্যা মামলা করেন গোলাম কিবরিয়া। এ মামলায় স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

মেহেরপুরের গাংনী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনোজিৎ কুমার নন্দী জানান, লাশের শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যায়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার পর স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অপর আসামি ঊর্মির শাশুড়ি রিক্তা খাতুনকে গ্রেপ্তারের 
চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত