তাঁরা ১১ জন ‘তুরস্কের’

তোফায়েল আহমদের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজবাড়ি গ্রামে। তিনি একটি ফার্নিচারের দোকানের কর্মচারী। পাসপোর্টের আবেদন করতে অপেক্ষা করছিলেন জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য। অবশেষে গত মঙ্গলবার তাঁর মোবাইল ফোনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত হয়েছে, এমন বার্তা আসে।

তখন তিনি উৎফুল্ল হয়ে ডাউনলোড করেন জাতীয় পরিচয়পত্র। প্রথমে না দেখেই খুব খুশি হন। কিছুক্ষণ পরেই তাঁর দোকানের মালিককে কার্ডটি দেখালে জানতে পারেন জন্মস্থান সুনামগঞ্জের পরিবর্তে এসেছে তুরস্ক।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় তোফায়েল আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাই আমি পাসপোর্ট করার লাগি সবকিছু রেডি করছি। ঠিক এই সময় আমার আইডি কার্ডে জন্মস্থান আইছে তুরস্ক। প্রথমে আমি কম্পিউটারের দোকানে গিয়া ঠিক করাইছি। পরে শুনি যে কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে ঠিক করালেই এটা সংশোধন হবে না।’

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘আমরাও দেখেছি অনেকেরই পরিচয়পত্রে জন্মস্থান তুরস্ক লেখা আসছে। এটা আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সংশোধন করে দিয়েছি। এখনো যাঁরা ভুলটা নিয়ে আছেন, তাঁরা অফিসে আসলেই আমরা সংশোধন করে দিব।’

এদিকে সুনামগঞ্জ সদর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার অন্তত ১১টি এমন জাতীয় পরিচয়পত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণ করে জাতীয় পরিচয়পত্রে তুরস্ক লেখা থাকায় দুশ্চিন্তায় তাঁরা।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের একজন ভুক্তভোগীর নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আমার পরিবারের একজনের মতো অনেকেরই শুনতাছি আইডি কার্ডে ভুল হইছে। নতুন ভোটাররা স্বাভাবিকভাবেই আইডি কার্ড পাইয়া খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু জন্মস্থান ভুল দেইখা আর খুশি নাই। কেন এমন হলো, তা তদন্ত করা হোক।’

পৌর শহরের মোহাম্মদপুর এলাকার আল মাহমুদ রাজন বলেন, ‘আমার দোকানের দুজন কর্মচারীর আইডি কার্ডে জন্মস্থান লেখা আসছে তুরস্ক আর নিউজিল্যান্ড। তাঁরা বিদেশে যাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধইরা চেষ্টা করতেছে। এখন আইডি কার্ড আইছে ভুল। পাসপোর্ট করতে পারছে না তাঁরা।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার বলছেন, ‘এটা প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে হয়েছে। ইতিমধ্যে সবার আইডি কার্ড সংশোধন করা হয়েছে। কারও জন্মস্থান যদি অন্য কোনো দেশ দেখায়, তাহলে আমাদের অফিসে আসলে আমরা তা সংশোধন করে দিব।’