Ajker Patrika

স্ত্রী আমাকে বাংলাদেশে আসতে নিষেধ করেছিল

নাজিম আল শমষের
আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ১৪: ৫২
Thumbnail image

৪০ বছর পর আন্তর্জাতিক মানের কোচ পেয়েছে বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক ফেডারেশন। নতুন কোচ চো সাং ডং দীর্ঘ ৩২ বছর দক্ষিণ কোরিয়া জাতীয় দলের কোচিং করিয়েছেন। তাদের এনে দিয়েছেন অলিম্পিকে সোনাও। বাংলাদেশকে অলিম্পিকে সোনা জেতানোর স্বপ্ন দেখছেন অভিজ্ঞ এই কোচ। দোভাষী নজরুল ইসলামের সহযোগিতায় আজকের পত্রিকা'কে সেই স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন কোরিয়ান চো সাং ডং

প্রশ্ন: বাংলাদেশে এসেছেন ২০ দিনের বেশি, কেমন লাগছে এখানে?
চো সাং ডং: প্রথমে ভেবেছিলাম অনেক কঠিন হবে এই দেশে থাকাটা। এখানে এসে ফেডারেশন থেকে একটা অ্যাপার্টমেন্ট পেয়েছি। মোটামুটি সব ঠিক থাকলেও খাবারে একটু কষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ আর কোরিয়ার খাবারের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। প্রথমে ভেবেছিলাম, খেতেই পারব না। একটু সংকোচ ছিল। খাবার ভালো হলেই না বাচ্চাদের অনুশীলন করিয়ে শান্তি! ফেডারেশন অবশ্য কোরীয় রান্না জানা একজন রাঁধুনি জোগাড় করে দিয়েছে। সে-ও শুরুতে কী রান্না করবে, বুঝত না। বয়সের কারণে আমার নিজেরও ইংরেজি চর্চাটা একটু কম। আর অভ্যাসগত কারণে যখন নেতিবাচকতা চলে আসে, তখন অনেক সমস্যা তৈরি হয়।

প্রশ্ন: আসার আগে বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটুকু ধারণা ছিল?
চো সাং ডং: এই দেশ সম্পর্কে এখন ভালোই অভিজ্ঞতা হয়েছে বলতে গেলে। বিশ্বের বড় বড় টুর্নামেন্টে গিয়েছি। চারবার অলিম্পিকে গিয়েছি। সোনা জিতিয়েছি। পদক কীভাবে জিততে হয়, সে অভিজ্ঞতা আমার আছে। সৌভাগ্যবশত আমি এখন বাংলাদেশের কোচ। অথচ এই দেশে আসব কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। আমার স্ত্রী না করেছিল আমাকে আসতে। বলেছিল, কেন তুমি যাবে, ওরা তো গরিব! বলেছিল, অসুখ হলে আমাকে দেখার কেউ থাকবে না। স্ত্রী আমাকে না করেছিল বাংলাদেশে আসতে। কিন্তু আমি ভেবেছি, আমার কাছে যে অভিজ্ঞতা আছে, সেটা অনেক মূল্যবান। যতই সমস্যা থাকুক না কেন, আমি চাই বাংলাদেশকে অনেক ওপরে নিয়ে যেতে। আমি কোরিয়ান ফেডারেশনের কাছে এখানে আসার বিষয়টা গোপন রেখেছি। শুধু দূতাবাস ছাড়া কেউ জানে না। হয়তো বাংলাদেশে অনেক সমস্যা আছে, কিন্তু আমি একবার হলেও নিজেকে পরখ করে দেখতে চাই। তরুণ কোচদের শেখাতে চাই। অলিম্পিক কিংবা এশিয়ান গেমসে সোনার পদক হাতে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের দেখতে চাই।

প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত খেলোয়াড়দের কেমন দেখলেন?
চো সাং ডং: একজন খেলোয়াড়ের কাছে নেতৃত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। খেলোয়াড়দের দরকার মানসিক মনোযোগ। প্রয়োজনে হয়তো অনেক সময় কঠিন কথা বলতে হয় আমাকে। সবকিছু অভিজ্ঞতা থেকেই বলি। ৩২ বছর ধরে কোচিং করাচ্ছি। অলিম্পিক, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে গিয়েছি। অভিজ্ঞতার ঝুলি মন্দ নয়। এ সময়টাতে কোন বিষয়ে জোর দেওয়ার কারণে পদক এসেছে, সেটা আমার ভালোই জানা। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের এ বিষয়ে জানতে হবে।

প্রশ্ন: পদকের স্বপ্ন দেখছেন। সেই স্বপ্ন সত্যি করতে হলে এখন আপনার কী প্রয়োজন? 
চো সাং ডং: এক বছর পর্যন্ত খেলোয়াড়েরা কতটুকু উন্নতি করতে পারবে, সেটা ভালোই জানা আছে আমার। দুই বছরে তাদের অবস্থা কী হবে, সেটাও জানি। বাংলাদেশের পুরোনো খেলোয়াড় যারা আছে, তারা অনেক ভুলের মধ্যে ছিল। তাই তাদের নতুন করে শেখানো অনেক কঠিন। দ্রুত উন্নতি চাইলে অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হবে। বলতে গেলে সবকিছুই পাল্টে ফেলতে হবে। নতুন করে শুরু করলেই কেবল সম্ভব। এখন আমার পরিকল্পনা তাই শিশু-কিশোর জিমন্যাস্টদের নিয়ে নতুন করে শেখানো। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে শেখানোরেও একটা ব্যাপার আছে। আমরা যেখানে এখন অনুশীলন করছি (জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার জিমনেসিয়াম), সেখানে জায়গা অনেক কম। ন্যূনতম ২৫ মিটার জায়গার প্রয়োজন। দৌড়ানো বেশ কঠিন। জিমন্যাস্টদের অন্তত দুটো পিটের দরকার, অথচ পিট নেই এখানে। পিট ছাড়া অনুশীলন করলে খেলোয়াড়দের চোটে পড়ার প্রবণতা থাকে। আমি চাই ফেডারেশন এই চাওয়াগুলো দ্রুত পূরণ করুক। 

প্রশ্ন: সম্ভাবনাময় কোনো খেলোয়াড় পেয়েছেন? 
চো সাং ডং: গত সপ্তাহে ১৩-১৪ বছরের কয়েকজন খেলোয়াড়কে দেখেছি। তাদের নিয়ে আমি আশাবাদী।

প্রশ্ন: কত দিনের মধ্যে বাংলাদেশ পদক জিততে পারে?
চো সাং ডং: এটা মুখে বলা কঠিন। আগে খেলোয়াড়দের দেখতে হবে। এরপর এক বছর হবে মৌলিক প্রশিক্ষণ। দ্বিতীয় বছরে হবে বিশেষ প্রশিক্ষণ। তৃতীয় বছরে ওরা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শুরু করবে। তখন মানুষ বাংলাদেশ দল সম্পর্কে জানতে শুরু করবে। চতুর্থ বছরে লক্ষ্য থাকবে এশিয়ান গেমস। অন্তত এক বছর না গেলে দল পাঠাতে চাই না। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দলের সুনাম নষ্ট হবে।

খেলা সম্পর্কিত সাক্ষাৎকার:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত