Ajker Patrika

অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় খুন

পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ২৫
অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় খুন

৬ ফেব্রুয়ারি ভালোবেসেই শ্রাবন্তী আক্তারকে (২০) বিয়ে করেন মো. মাইনুল মীর (২৩)। দুজনের পরিবার রাজি না থাকায় গোপনে ‘কোর্ট ম্যারেজ’ করেন তাঁরা। কিন্তু কে জানত, বিয়ের মাত্র ৬ দিনের মাথায় পুরোনো প্রেমিকার হাতে জীবন দিতে হবে মাইনুলকে। অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছেন এমন খবর জানতে পেরে মাইনুল মীরকে হত্যা করেন ইশরাত জাহান মীম (২০)। গত শনিবার রাতে মীমকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত মাইনুল মীর নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার দক্ষিণ চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় একজন দাঁতের চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত মীমের বাড়ি উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের খিলপাড়া গ্রামে। তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতালে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন।

গ্রেপ্তার মীমের বরাত দিয়ে পলাশ থানার ওসি মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, মীম ও মাইনুল স্থানীয় মুসা বিন হাকিম কলেজে একসঙ্গে পড়তেন। এক সময় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন পর ওই সম্পর্কে ফাটল ধরে।

গত বছরের মাঝামাঝিতে মীম অন্য একজনকে বিয়ে করেন। তিন মাস পর সেই বিয়ে ভেঙে যায়। এরপর আবার মাইনুলের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্ক জোড়া লাগে মীমের। কিন্তু এরই মাঝে শ্রাবন্তীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান মাইনুল।

পরিবারকে না জানিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রাবন্তীকে বিয়ে করেন মাইনুল। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাসায় বসবাস করতে থাকেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার কর্মস্থলে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন মাইনুল। রাতে বাড়িতে ফিরে না আসায় স্ত্রী ও স্বজনেরা কল করে মোবাইল ফোন বন্ধ পান। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে তাঁরা। কিন্তু মাইনুলের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় স্থানীয় কমিশনারকে বিষয়টি অবগত করেন তাঁরা। কমিশনার ঘটনাটি পুলিশকে অবহিত করতে পরামর্শ দেন। গত শুক্রবার সকালে বিষয়টি স্থানীয় পুলিশকে জানানো হয়।

মাইনুলের স্ত্রী পুলিশের কাছে তাঁর সন্দেহের কথা জানিয়ে বলেন, পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করায় বাবা ও ফুপা তার স্বামীর ক্ষতি করতে পারেন। এরপর পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তের অংশ হিসেবে মীমের বাড়িতে যায় পুলিশ। তবে মাইনুলের ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই দাবি করেন তিনি। অবশ্য প্রযুক্তিগত তদন্তে মাইনুলের সঙ্গে মীমের একাধিকবার কথা বলার তথ্য পায় পুলিশ।

মাইনুলের কর্মস্থলের গেটের তালা খোলার পর অভ্যর্থনাকক্ষে মাইনুলকে গলা কাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন চিকিৎসক ডা. শিহাবুল হক। এরপর তিনি দ্রুত পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এরপরই সন্দেহভাজন মীমকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে মীম সব স্বীকার করেন।

মীম পুলিশকে জানান, মাইনুলের বিয়ে করার কথা জানতে পেরেই চেতনানাশক ইনজেকশন কেনেন মীম। একপর্যায়ে মাইনুলের ঘাড়ে ইনজেকশন পুশ করেন তিনি। দু-তিন মিনিটের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়েন মাইনুল। এরপর ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করে মাইনুলের মৃত্যু নিশ্চিত করে ডেন্টাল ক্লিনিক তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যান মীম। এরপর ছুরি, মোবাইল ও সিরিঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেন।

পলাশ থানার ওসি মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, নিহতের বড় ভাই সাইদুর মীর বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। সেই মামলায় মীমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত