Ajker Patrika

‘পোয়া’ শব্দটি এবং শিল্পমন্ত্রীর রাজকীয় জীবন

সম্পাদকীয়
‘পোয়া’ শব্দটি এবং শিল্পমন্ত্রীর রাজকীয় জীবন

‘কেজি’, ‘কিলোমিটার’ ইত্যাদি শব্দের দাপটে সেই কবে ‘সের’, ‘মাইল’ শব্দগুলো বিদায় নিয়েছে। বাজারে গেলে এখন কেউ আর বলে না, ‘তিন সের আলু দিন’ কিংবা ‘পাঁচ সের চাল দিন’। এই  পরিবর্তনটা এখন পোক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু এরই মধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুরের মানুষ নতুন করে আবার ‘সের’ শব্দটার কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছে ‘পোয়া’ শব্দটি। ‘আড়াই শ গ্রাম’ বললে যা বোঝায়, তা হয়তো ‘পোয়া’ বললে বোঝায় না, কিন্তু ‘আড়াই শ গ্রাম’ কথাটা তো চালু হয়ে গিয়েছিল। এখন তাকে হটিয়ে দিয়েছে ‘পোয়া’। বাংলাদেশের অন্তত একটি অঞ্চলে এ রকম একটি ‘বিপ্লব’ ঘটে গেছে।

কিন্তু কেন ঘটল এই ‘বিপ্লব?’ এটাকে কি কোনো মহিমান্বিত জয়ের সূচনা হিসেবে অভিহিত করা যাবে? নাকি এটা বিপজ্জনক কোনো সত্য? লুকোছাপা না করে স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। কারণ যা-ই হোক না কেন, জনগণের হাতে টাকা নেই। যে টাকা আছে, তা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।

মিঠাপুকুরের কথাই বলি। কয়েকজন ক্রেতা প্রথমে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। যখন তাঁদের কেউ কেউ বেগুনের দাম ২০ টাকা শুনেছেন, তখন কতটা খুশি হয়েছিলেন, সেটা যে কেউ অনুভব করতে পারবেন। তাঁরা তখন বিজয়ীর বেশে বিক্রেতাকে বেগুন দিতে বলেছেন। আধা কেজি বেগুনের দাম তাহলে ‘১০ টাকা!’—এই হিসাবে মেটানোর চেষ্টা করেছেন দাম। কিন্তু তাতে আকাশ থেকে পড়েছেন বিক্রেতা। আর তখনই কেবল জানা গেছে, বেগুন এখন বিক্রি হচ্ছে ‘পোয়া’ দরে; অর্থাৎ এক পোয়া বেগুনের দাম চাওয়া হচ্ছে, এক সের বা এক কেজি হিসাবে নয়।

কেন এই হঠাৎ পরিবর্তন? স্রেফ লজ্জা। দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় বিক্রেতারা এক কেজি পণ্যের দাম চাইতে লজ্জা পাচ্ছেন। তাঁরা বুঝতে পারছেন, কেজি হিসেবে দাম বললে পুরো বাজারের মাথা গরম হয়ে যেতে পারে। তার চেয়ে দাম কম করে হাঁকলে ক্রেতার মনে খানিকটা স্বস্তি ফিরে আসতেও পারে!

এটাকে ভাবনার দৈন্য নামে আখ্যায়িত করা যায়, আবার নিছক বাস্তবতা বলেও কথাটিকে গুরুত্ব দেওয়া যায়। এর সঙ্গে যখন আমাদের একজন মন্ত্রীর বলা কিছু কথা মেলাতে যাওয়া হয়, তখন চক্কর দিয়ে ওঠে মাথা। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূন বলেছেন, ‘আমরা রাজকীয়ভাবে চলি। ব্রিটিশ মিনিস্টারও আমার মতো চলে না।’ এ কথা বলে তিনি নিজের বিলাসব্যসনের যে ফিরিস্তি তুলে ধরেন, তাতে বোঝা যায়, তিনি তাঁর জীবনযাপন প্রণালি দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন প্রণালিকে মাপতে চাইছেন। সবিনয়ে শিল্পমন্ত্রীকে আমরা অনুরোধ করব, অযথা হাস্যকর কথা বলে মানুষের মনের দুঃখ বাড়াবেন না। সাধারণ মানুষের তিনটা করে গাড়ি নেই, তার ড্রাইভার নেই, তাকে কোনো পুলিশ এসে স্যালুট দেয় না। পারলে ‘পোয়া’ থেকে আবার ‘কেজি’ দরে কেনার যোগ্যতা ফিরিয়ে দিন আমজনতাকে। কথামালা বহু হয়েছে, জনগণের জন্য কাজ করবেন কবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত