Ajker Patrika

গুম থেকে সুরক্ষা

সম্পাদকীয়
গুম থেকে সুরক্ষা

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ছিল ৩০ আগস্ট। এর আগের দিন, অর্থাৎ ২৯ আগস্ট গুম থেকে সব নাগরিকের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে অন্তর্ভুক্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে গুম প্রতিরোধে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের ওপর আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা তৈরি হলো। গুম প্রতিরোধে জাতিসংঘের এ সনদটি পাস হয় ২০০৬ সালে। পরের বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে সনদটি স্বাক্ষরের জন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোর জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর থেকে সনদটি কার্যকর হয়েছে। এই সনদে ৯৮টি রাষ্ট্র স্বাক্ষর করেছে। অনুসমর্থন জানিয়েছে ৭৫টি রাষ্ট্র।

জাতিসংঘ বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও এত দিন এই সনদে স্বাক্ষর করেনি বাংলাদেশ। গত সরকারের বিরুদ্ধে গুমের অনেক অভিযোগ আছে। শেখ হাসিনার সরকার স্বেচ্ছাচারী শাসন অব্যাহত রাখার জন্য বিরোধী মত দলনে যতগুলো পথ বেছে নিত, তার মধ্যে একটি গুম।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সনদে সই করার মধ্য দিয়ে মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট হলো। এটা একটা বড় অগ্রগতি। এ জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। দেশবাসীর অন্য সব প্রত্যাশা পূরণেও এই সরকার আন্তরিকতার পরিচয় দেবে—এটা আশা করাই যায়।

বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এই সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে মানবাধিকার নিয়ে শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘গুম বাংলাদেশে অহরহ ঘটেছে। যেটা এযাবৎকাল অস্বীকার করা হচ্ছিল। যাঁরা গুমের শিকার হয়েছেন, তাঁরা একটা সুরক্ষা পাবেন। সরকারি পর্যায় থেকে ফ্যাসিবাদ কায়েম রাখার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে বিরুদ্ধমত দমন করার জন্য গুম করে ফেলা হতো। সেটাতেও একটা শক্ত বার্তা গেল যে এসব আর হবে না। গুম তো করার কথা না। সরকারি বাহিনীর গুম করার লাইসেন্স নেই। তার আইনগত এখতিয়ার নেই। এটা বন্ধ থাকা উচিত ছিল।’

এ পর্যন্ত কতজন গুমের শিকার হয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে মতপার্থক্য আছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের দেওয়া তথ্যমতে, এই সংখ্যা ১৫৮। আবার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ৭০০ জনের ওপরে মানুষ এখন পর্যন্ত গুমের কারণে নিখোঁজ হয়ে আছেন।

ইতিমধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ওই কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস এবং মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন।

এই তদন্ত কমিশন পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, সিআইডি, বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, এনএসআই, প্রতিরক্ষা বাহিনী, ডিজিএফআই, কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের হাতে জোর করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্য জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত