Ajker Patrika

ঋণের চক্রে জেলেদের দুর্দিন

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ জুন ২০২২, ১০: ৫০
Thumbnail image

সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধে উপকূলীয় অঞ্চলের দরিদ্র জেলে পরিবার অভাব-অনটন আর চরম হতাশায় দিন পার করছে। সরকারি ত্রাণ হিসেবে যে চাল এসব পরিবারকে দেওয়া হয়, তা দিয়ে দীর্ঘ এই সময়ে চলা কষ্ট হয় তাদের। এ সময় আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধের সময় এনজিওর কিস্তির টাকা আদায় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার দাবি জানান জেলেরা।

জানা গেছে, উপজেলার জেলে সম্প্রদায়ের এখন দুর্দিন। এখানে সরকারি নিবন্ধিত ২ হাজার ২৬ জন সমুদ্রে মাছ শিকারি জেলে রয়েছে। নিবন্ধনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও চার শতাধিক জেলে। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা দ্বিগুণ। এদের মধ্যে ৩২ শতাংশ সার্বক্ষণিক এবং ৬৮ শতাংশ খণ্ডকালীন সাগরে মাছ আহরণে নিয়োজিত। সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকার মধ্যে পরিবার নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যাচ্ছে তাঁদের। তার মধ্যে বিভিন্ন এনজিওর ঋণ আদায়ের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলেরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি তাঁর কাছে জেলেরা বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি আদায় সাময়িক বন্ধের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। তাঁদের দাবি সমুদ্রে আয়ের ওপর তাঁদের জীবিকা নির্ভরশীল। সমুদ্রে মাছ ধরা চালু না হওয়া পর্যন্ত ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন জেলেরা। জেলে সম্প্রদায়ের পক্ষে লিখিত দাবি জানিয়ে স্বাক্ষর করেছেন কৃষ্ণ দাশ, বিষ্ণু দাস, প্রাণ হরি দাশ, সুখলাল দাস ও মধু দাস।

লিখিত অভিযোগে জেলেরা উল্লেখ করেন, মিরসরাই উপজেলার উপকূলীয় এলাকার কর্মহীন জেলে সম্প্রদায় পরিবারের ঘরে ঘরে এখন দুর্দিন চলছে। সংসারের ভরণপোষণের ভার এবং এনজিওর ঋণ পরিশোধের একমাত্র উপায় নির্ভর করে সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর।

মায়ানী ইউনিয়নের জয়নগর জলদাশ পাড়া এলাকার সুখলাল দাস জানান, এনজিও থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। আরেক এনজিও থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে মাসে কিস্তি পরিশোধ করতে হয় ৭ হাজার ৫০০ টাকা।

একই এলাকার প্রাণ হরি জলদাস জানান, তিনি এনজিও থেকে নিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা ঋণ। তাঁকে প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয় ১ হাজার ৩০০ টাকা। ডোমখালী জলদাস পাড়ার বাদল দাস ঋণ নিয়েছেন ৬০ হাজার টাকা। সপ্তাহে কিস্তি পরিশোধ করতে হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা।

মিরসরাই উপকূলের সব জেলের এখন একই অবস্থা। ক্ষুদিরাম জলদাশ, বিকাশ জনদাশ ও সন্তু জলদাশ জানান, সাগরে প্রত্যেক যাত্রায় অর্জিত লাভ থেকে আস্তে আস্তে জেলেরা দাদন পরিশোধ করেন। দিতে দিতে একসময় দাদনের টাকা পরিশোধ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দাদনের দায় থেকে মুক্তি মেলে না জেলেদের।

বোটমালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলেরা সাধারণত মহাজনের দাদন একসঙ্গে পরিশোধ করতে পারেন না। সাগরে নিয়মিত প্রত্যাশামতো মাছ না পেলে জেলেদের খেয়ে-পরে বাঁচা দায় হয়ে যায়। ফলে দেনা পরিশোধ করার সুযোগ হয় না। এখন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ, কিন্তু ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। এভাবে এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তির চাপে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনার সুযোগ থাকায় সাপ্তাহিক কিস্তি সাময়িক বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আমি নিজেও সুপারিশ করেছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘জেলে সম্প্রদায়ের এনজিওর ঋণের কিস্তি আদায় সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখার একটি আবেদন পেয়েছি। আমি এনজিওগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত