Ajker Patrika

বনবিড়ালেরা আছে বড় বিপদে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৪, ১২: ১০
বনবিড়ালেরা আছে বড় বিপদে

এক যুগেরও আগের একটি গল্প দিয়ে শুরু করছি। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার একটি গ্রামীণ তিন রাস্তার মোড়। চারপাশে বেশ কয়েকটা টংঘর। যখনকার কথা বলছি, তখনই মোটামুটি ছোটখাটো একটা বাজারে রূপ নিয়েছে জায়গাটি। রাস্তা তিনটার একটা এসেছে ধর্মঘর বাজার থেকে। দক্ষিণেরটা চলে গেছে একেবারে ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রাম মোহনপুরের দিকে। আর উত্তরেরটার গন্তব্য দেবনগর নামের এক গ্রাম ।

সীমান্তের দিকে চলে যাওয়া পথটা ধরে একটু গেলেই বাঁয়ে বেশ কয়েকটা ঘর। এর একটার সামনে ছোট একটা চৌবাচ্চা। বর্ষার সময় বেশ পানি জমে। কুকুর-বিড়াল, গরু-বাছুর তৃষ্ণা মিটিয়ে নেয় এখানে। রাতে হয়তোবা শিয়াল-বনবিড়ালেরাও পান করে। অবশ্য এখন ওই চৌবাচ্চাটা সেখানে আর আছে কি না, বলতে পারব না।

প্রচণ্ড উত্তপ্ত একটা রাত পার হয়ে কেবল ভোর হয়েছে সেদিন। গরম কমেনি একটুও। দিনের কর্মব্যস্ততা শুরু হয়নি। চুপি চুপি আশ্রয় থেকে বের হয়ে এসেছে একটা বনবিড়াল। বেচারা জানে, একবার কেউ দেখে ফেললে আর রেহাই নেই। পিটিয়ে হাড়গোড় এক করবে। কিন্তু গরমে গলাটা শুকিয়ে কাঠ। অন্তত দু-এক ঢোক জল পান না করলেই নয়। ওই তো কাছেই চৌবাচ্চাটা দেখা যাচ্ছে। এক দৌড়ে গিয়ে কয়েক ঢোক পানি পান করে আসবে।

কুষ্টিয়ার এক গ্রামে একটি মদ্দা বনবিড়ালদ্রুত চৌবাচ্চার কাছে চলে এসে চারদিকে একবার দেখে নিয়ে উবু হয়ে মুখ ডুবিয়ে দিল পানিতে। এ সময়ই অঘটনটা ঘটল। হঠাৎ করেই কীভাবে যেন পিছলে পড়ে গেল ভেতরে। কিন্তু চৌবাচ্চার ধারগুলো পানি থেকে কিছুটা উঁচুতে। শত চেষ্টা করেও উঠতে পারছে না। 

হয়তো বনবিড়ালটার তখন নিজের জন্য না, পেটের বাচ্চাগুলোর জন্যই মনটা কেঁদে উঠেছিল। আহহা! এরা যে পৃথিবীর আলো-বাতাসই দেখল না এখনো। এরই মধ্যে কোনো কারণে রাস্তায় বের হয় এক লোক। চৌবাচ্চায় পানির মধ্যে হাঁসফাঁস করতে দেখলেন প্রাণীটিকে। তার ‘টলা টলা’  চিৎকারে  কাছেধারের বাড়িগুলো থেকে দৌড়ে এল মানুষ। অনেক দিন পর  মনের সুখে পিটিয়ে ভূত বানানো যাবে একটা টলাকে।

এখানকার লোকদের কাছে বনবিড়ালের পরিচয় টলা। প্রথমে পানি থেকে তোলা হলো ওটাকে। তারপর শুরু হলো লাঠির বাড়ি। একপর্যায়ে রক্ত ঝরতে শুরু করল শরীর থেকে। আরও কিছুক্ষণ এভাবে পেটালে হয়তো পৃথিবীর মায়াই কাটাতে হতো ওটাকে। তার পরই কীভাবে যেন তার ফুলে ওঠা পেটটা চোখে পড়ল একজনের। হায় হায়, এটার পেটে তো বাচ্চা! লোকটা চেঁচিয়ে উঠতেই অন্যদেরও নজরে পড়ল বিষয়টা। যা হোক, থামল লাঠির বাড়ি। একজনের পরামর্শে টংঘরগুলোর ধারে এনে বেঁধে রাখা হলো । কিছুটা চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলো। কোনোভাবে রক্তাক্ত শরীরটা টেনে টেনে হারিয়ে গেল ঝোপঝাড়ের রাজ্যে।

পরে বনবিড়ালটির ভাগ্যে কিংবা ওটার পেটের বাচ্চাগুলোর ভাগ্যে কী ঘটেছিল, তা জানা সম্ভব হয়নি। একটা সময় নানার বাড়ি দেবনগরে যেতাম প্রচুর। আর যখনই যেতাম, শুনতাম টলার নানা কাহিনি। হয়তো পরিচিত এক বড় ভাই এসে বলল, ‘তুষার, ওইদিন আমাদের পুকুরের ধারে একটা টলা পিটায়ে মাইরা ফেলছি সবাই মিলা। হাঁস-মুরগি খেয়ে বহুত জ্বালাতন করছিল ওটা।’ আবার মামাতো ভাই অর্ণব হয়তো এসে বলল, ‘তুষার ভাইয়া, ওই দিন বড় সাইজের একটা টলা দেখছি। প্রায় কুকুরের কাছাকাছি হইব।’ কিংবা পাশের বাড়ির মামি বললেন, ‘দেখছ, তুমি টলা টলা করো আর আমার সাধের চারটা হাঁসরে মাইরা রাইখা গেছে শয়তানটা।’

প্রায়ই বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে বনবিড়াল পিটিয়ে মারার আর এদের বাচ্চা ধরা পড়ার খবর আসে। মাদি বনবিড়ালটাকে ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে কুষ্টিয়া থেকেব্যস্ততায় কিংবা ব্যস্ততার অজুহাতে এখন নানার বাড়িতে আগের মতো যাওয়া হয় না। তবে হঠাৎ হঠাৎ মানে পড়ে দেবনগরের বনবিড়ালদের কথা, আর মনে পড়ে টলা নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে তর্কের কথা। তাঁদের কথা, ইতানে হাঁস-মুরগি খাইয়া সাফ কইরা লায়। দাম দিতে পারবা? তাইলে আর মারতাম না। অভাবের সংসারে একটা-দুটো মুরগি-হাঁস হারানোও তো তাদের জন্য অনেক ক্ষতি। তাই মরতে হবে টলা বা বন বিড়ালদের। আর তাই দেবনগর আর আশপাশের এলাকায় বন বিড়ালদের এখন দেখা যায় কম। কেবল রাতে মাঝে মাঝে দূর থেকে ভেসে আসা ডাক ক্রমেই হারাতে বসা অস্তিত্বের জানান দিয়ে যায়।
 
খুব স্বাস্থ্যবান একটা বনবিড়াল আবার দেখেছিলাম নরসিংদীর চরসিন্দুরে সরওয়ার পাঠান ভাইদের ওখানে বেড়াতে গিয়ে। ওখানে বন বিড়ালকে বলে বাওরাল। তবে সরওয়ার ভাইদের বাড়ির পাশের একটু নিচে বেশ ঝোপঝাড়ে এখনো বনবিড়ালদের আস্তানা। কখনো-সখনো মুরগি লোপাট হলেও তাঁদের বাড়িতে বনবিড়াল মারা নিষিদ্ধ। সরওয়ার ভাই একবার মেছো বিড়ালের বাচ্চা মনে করে বন বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে এসেছিলেন। ওটাকে পুষেছিলেন। তার খুব বাধ্য ওই বনবিড়ালটার নাম ছিল এলসা। তবে ওটা অন্তত দুই যুগের বেশি আগের কাহিনি। আবার তাঁর নার্সারির ধারের একটা বড় গাছের গুঁড়িতে নিয়মিত নখের ধার পরীক্ষা করে প্রমাণ সাইজের একটার বনবিড়াল।
 
বনবিড়াল সম্পর্কে দু-চারটি তথ্য জানিয়ে রাখছি। আকারে, ওজনে পোষা বিড়ালের দ্বিগুণ বলতে পারেন একে। গায়ে ডোরা নেই, তবে লেজে কালো বলয়ের মতো থাকে। গায়ের রং ধূসর, বাদামি। মুরগি চুরির অপবাদ থাকলেও ওটা কালেভদ্রেই করে, প্রধান খাবার ইঁদুর, পাখি, ব্যাঙ। গাছে চড়ায় দারুণ পারদর্শী হওয়ায় পাখি শিকারেও ওস্তাদ। যদ্দুর জানা যায়, বছরে দুবার বাচ্চা দেয় এরা। জংলি বিড়াল, খাগড়া বিড়াল, জলাভূমির বিড়াল নামেও পরিচিত। 

গোটা বাংলাদেশের বেশির ভাগ গ্রামে এখন এমনই বিপদে বনবিড়ালরা। কিন্তু আগেও তো মুরগি চুরির অপরাধে বন বিড়াল মারা যেত মানুষের হাতে। তখন তো এরা এতটা কমেনি সংখ্যায়। কারণ তখন এদের থাকার পরিবেশ ছিল, এরা সংখ্যায়ও ছিল বেশি। আর এখন আমরা ইচ্ছামতো গ্রামীণ বন ধ্বংস করে বনবিড়ালদের থাকার এমনকি প্রজননের পরিবেশও ধ্বংস করে দিয়েছি। তখন গ্রামের লোকজন নিজেরাই ইট পোড়াত। আর এই ইটের পাঁজায় বাসা বানাত বনবিড়ালেরা, বাচ্চা দিত। এখন তো আর মানুষ এভাবে ইট তৈরি করে না। ফলে নেই টলাদের থাকার জায়গাও। নেই আগের সেই গ্রামীণ বনও। গাছের কোটর, জলার তীরের ঝোপঝাড়েও বাসা বানায় এরা। 

ইচ্ছামতো গ্রামীণ বন ধ্বংস করে বনবিড়ালদের থাকার এমনকি প্রজননের পরিবেশও ধ্বংস করে দিয়েছি আমরা মানুষেরাএদিকে একবার বড় হয়ে গেলে বনবিড়ালদের নাগাল পাওয়া দুঃসাধ্য হলেও বাচ্চাগুলো ধরতে তেমন বেগ পেতে হয় না। লুকানোর জায়গা কমে যাওয়ায় মা বনবিড়ালদের শত সতর্কতা সত্ত্বেও সহজেই খোঁজ পেয়ে যাচ্ছে দুষ্ট ছেলের দল। পরিণতি নিশ্চিত মৃত্যু। 

এভাবেই যদি চলে, তাহলে একসময় মেছো বিড়ালদের মতো গ্রামীণ বন থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে এরাও, তখন বনবিড়াল দেখতে কিংবা এর মউপ মউপ ডাক শুনতেও আমাদের পাড়ি জমাতে হবে দূরের কোনো অরণ্যে। প্রায়ই বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে বনবিড়াল পিটিয়ে মারার আর এদের বাচ্চা ধরা পড়ার ঘটনা চোখে পড়ে পত্রিকায়।

অবশ্য সুন্দরবন, সাঙ্গু-মাতামুহুরি, লাউয়াছড়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সব অরণ্যেই বনবিড়াল এখনো আছে মোটামুটি। মনে পড়ে, বহু বছর আগে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের রেমার জঙ্গলে গিয়ে ওখানকার বিট অফিসের পাশেই ছোট্ট এক গোরস্থান দেখেছিলাম। বিট কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ওখানে বন বিড়ালের আড্ডাখানা।

আশ্চর্য ঘটনা, ঢাকা শহরের সীমানার মধ্যেও খুব অল্প-বিস্তর হলেও এখনো টিকে আছে এরা। তবে ওই সব ঝোপঝাড়ময় জায়গাগুলোও খুব বেশি দিন খালি পড়ে থাকবে না। তখন ঢাকা শহর কিংবা এর আশপাশের জায়গার বনবিড়ালদেরও মানুষের পিটুনি খেয়ে মরতে হবে সন্দেহ নেই। শহর থেকে একটু দূরে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো মোটামুটি ভালোভাবেই টিকে আছে এরা। 

আজ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। এই দিনে আমার চাওয়া—ভালো থাকুক গ্রামীণ বন, পাহাড়ি বন ও ঢাকা শহরের বনবিড়ালেরা। তেমনি ভালো থাকুক গোটা পৃথিবীর বনবিড়ালেরা। আমরা মানুষ যদি একটু সদয় হই, একটু ভালোবাসা দেখাই সুন্দর এই প্রাণীর প্রতি, তাহলেই কেবল এটা সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় পড়েছে হালকা শীত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০৬
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মহান বিজয় দিবসের ছুটির দিনে আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানী ঢাকায় অনুভূত হচ্ছে হালকা শীত। তাপমাত্রাও গতকালের মতো রয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল সোমবার ছিল ১৭ দশমিক ১। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৯ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ পরিষ্কার থাকবে। আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৫ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন তথ্য বলছে, আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি উষ্ণ হয়েছে পৃথিবী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবী ঠিক কতটা উষ্ণ হয়ে উঠেছে—এই প্রশ্নের উত্তর নতুন এক বৈজ্ঞানিক তথ্যভান্ডার সামনে এনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক একদল বিজ্ঞানীর প্রকাশিত নতুন তাপমাত্রা ডেটা-সেট দেখাচ্ছে—শিল্পবিপ্লব শুরুর আগের তুলনায় পৃথিবীর উষ্ণতা হয়তো আমরা এত দিন যতটুকু ভেবেছি, তার চেয়েও বেশি বেড়েছে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, সাধারণত আধুনিক জলবায়ু বিশ্লেষণে ১৮৫০ সালের তাপমাত্রাকে ‘প্রাক-শিল্পযুগ’ বা শিল্পযুগ শুরুর আগের তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী, বিশ্ব এখন প্রাক শিল্প যুগের আগের তুলনায় প্রায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। কিন্তু ‘গ্লোসেট’ (GloSAT) নামে নতুন ডেটা-সেট প্রাক-শিল্পযুগের তাপমাত্রার হিসেবটিকে নিয়ে গেছে আরও পেছনে, ১৭৮১ সাল পর্যন্ত। গবেষকদের মতে, এই বাড়তি সময়কাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যেই বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ২.৫ শতাংশ বেড়েছিল, যা ওই সময়ের মধ্যেও কিছুটা উষ্ণতা বাড়িয়েছিল।

গ্লোসেট ডেটা দেখাচ্ছে—১৮ শতকের শেষভাগ থেকে ১৮৪৯ সাল পর্যন্ত পৃথিবী ১৮৫০–১৯০০ সময়কালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ঠান্ডা ছিল। ফলে সেই সময়ের বিপরীতে বর্তমান উষ্ণতা হিসেব করতে গেলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি আরও বেশি মাত্রায় ঘটেছে। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, প্রাক শিল্প যুগে যে উষ্ণতাটুকু বেড়েছিল, তার সবটাই মানুষের কারণে নয়। ১৮০০ সালের শুরুর দিকে তাম্বোরা সহ একাধিক বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত পৃথিবীকে সাময়িকভাবে ঠান্ডা করে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে সেই শীতলতার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বিরাজ করেছে, সেটিও উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যানেল (আইপিসিসি) আগেই জানিয়েছিল, ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে মানুষের কারণে উষ্ণতা বেড়েছিল ০ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। নতুন গবেষণাগুলো সেই সীমার মাঝামাঝি অবস্থান করছে—প্রায় ০.০৯ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই গবেষণার বড় দিক হলো—পুরোনো তাপমাত্রা রেকর্ড। ইউরোপের বিভিন্ন শহর যেমন, সুইডেনের উপসালা, জার্মানির হোহেনপাইসেনবার্গের মতো স্থানে শত শত বছর ধরে সংরক্ষিত তথ্য এবং ১৮ শতকের জাহাজযাত্রার সময় নথিভুক্ত সামুদ্রিক বায়ুর তাপমাত্রা একত্র করে তৈরি হয়েছে এই বৈশ্বিক চিত্র। যদিও প্রাচীন তথ্যগুলো অসম্পূর্ণ এবং অনিশ্চয়তা বেশি, তবু বিজ্ঞানীদের মতে একটি বিষয় স্পষ্ট—পৃথিবী তখন আরও ঠান্ডা ছিল।

তাহলে এর অর্থ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন তথ্যের প্রেক্ষাপটে প্যারিস চুক্তির মতো বর্তমান জলবায়ু লক্ষ্যগুলো অর্থাৎ প্রাক শিল্প যুগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করে রাখার নৈতিক সিদ্ধান্ত অকার্যকর হয়ে যায় না। এই উপলব্ধি ভবিষ্যৎ ঝুঁকি বোঝা ও মোকাবিলায় আরও সতর্ক হওয়ার বার্তাই দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দূষণ বাড়ছে বাতাসে, যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

অগ্রহায়ণের শেষ দিন আজ। বাতাসে শীতের আমেজ। তবে শীতল আবহাওয়া নিয়ে আসা শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ঢাকার বাতাসে বেড়ে যায় দূষণের মাত্রা। বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ সোমবার ঢাকার অবস্থান ৮ম।

আজ সকাল ৮টা ৪৩ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৫৮, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। শহরটির বায়ুমান ৩৪৬, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— পাকিস্তানের করাচি, কুয়েতের কুয়েত সিটি, মিশরের কায়রো ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২০১, ১৮৯, ১৮৯ ও ১৮১।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় তাপমাত্রা কমতে পারে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

অগ্রহায়ণের বিদায়বেলায় আজ সোমবার সকালবেলা রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। আগের দিন রোববার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকাল ৬টায় সেটি বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮২ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৪ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত