Ajker Patrika

সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা ঠিক না হলে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়: পরিবেশ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৭
‘ঢাকার জলাধার পুনরুদ্ধার: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে কথা বলছেন পরিবেশ উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘ঢাকার জলাধার পুনরুদ্ধার: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে কথা বলছেন পরিবেশ উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ঢাকার জলাধার পুনরুদ্ধার: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ঢাকার জেলা প্রশাসককে ৪০টি পুকুর উদ্ধারের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খাল খননের উদ্যোগ নেওয়ার ফলে এবারের বর্ষায় জলাবদ্ধতা কিছুটা কম হয়েছে, ফলে চরম জলাবদ্ধতার শিকার হতে হয়নি ঢাকাকে। তবে খালগুলো ড্রেজিং করার মাত্র দুই মাসের মধ্যেই আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমিনবাজার বর্জ্য প্রকল্পকে দৃষ্টান্ত ধরে বিদেশি কোনো সংস্থার কাছে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়ে উন্নত কোনো মডেল বাস্তবায়ন করা যায় কিনা, তা নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।

রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, সিলেটের ৬টি পাথর মহল থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন চলছে। ২০০৯ সালে এ বিষয়ে মামলা করা হয়, যদিও বেশিরভাগ গণমাধ্যম বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেনি। ২০২০ সালে কয়েক জায়গায় পাথর উত্তোলন বন্ধ হলেও পরে আবার চালু হয়। জনগণের চাপের মুখেই শেষ পর্যন্ত সিলেটে পাথর তোলা বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, নদী ও পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের সহযোগিতা ও রাজনৈতিক ঐক্য অপরিহার্য। রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়া এসব অবৈধ দখল ও উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব নয়।

চলনবিল প্রসঙ্গে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে চলনবিল সুরক্ষার জন্য আদেশ জারি করে এর সীমানা নির্ধারণ করা হবে, যাতে ভরাট বন্ধ রাখা যায়। বর্তমানে আড়িয়াল বিল, চলনবিল এবং বেলার বিল নিয়ে কাজ চলছে।

হাওর প্রসঙ্গে তিনি জানান, হাওর সুরক্ষা আদেশ জারি করা হয়েছে। হাওরের ভেতরে কীভাবে হাউসবোটগুলো পরিচালিত হবে, তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। আপাতত হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওর সুরক্ষায় কাজ চলছে।

নদী প্রসঙ্গে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, দেশের নদীর তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে সুন্দরবন ও পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলো এখনো শনাক্ত করা যায়নি। এজন্য নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটকে ঝুঁকিপূর্ণ নদীর তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর সীমান্তবর্তী নদীগুলোর তালিকা প্রণয়নের কাজও করা হবে।

যত বাধাই আসুক বাকখালী নদীকে দখলমুক্ত করা হবে মন্তব্য করে পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, নদী উচ্ছেদ কার্যক্রম পাঁচ দিনের জন্য পরিকল্পনা করা হলেও তীব্র বিরোধিতার কারণে তিন দিন কাজ করা গেছে, বাকি দুই দিন বাধার মুখে স্থগিত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও বাধা এসেছে। এটা কেন হলো, কার পৃষ্ঠপোষকতায় দখল হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।

‘ঢাকার জলাধার পুনরুদ্ধার: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ বিষয়ে কি নোট উপস্থাপনায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের আধ্যাপক মু. মোসলেহ উদ্দীন হাসান বলেন, বাংলাদেশে জলাভূমি ও নদী রক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ হলো অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে না পারা। সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব, প্রভাবশালী ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের দখলবাজি, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভুল নীতি, অনিয়ন্ত্রিত ভূমি ব্যবসা, দুর্নীতি, সহিংসতা এবং অর্থায়নের সংকট এ খাতকে জটিল করেছে। নীতিনির্ধারকদের কাছে এটি অগ্রাধিকার না পাওয়াও সমস্যাকে বাড়াচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তবে ইতিবাচক দিকও আছে। জলাভূমি নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, বড় পরিসরে চিন্তার সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং অনেক জায়গায় দখলদার উচ্ছেদ হয়েছে। দেশীয় পেশাজীবী, আবাসন ও শিল্প খাতের সক্ষমতা, দেশি-বিদেশি অর্থায়নের সুযোগ, জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা এবং চলমান অবকাঠামো প্রকল্প ভবিষ্যতে জলাভূমি রক্ষায় সম্ভাবনা জাগাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২০৫০ সাল নাগাদ ইনফ্লুয়েন্সারদের চেহারা কেমন হবে, ধারণা দিলেন গবেষকেরা

প্রিজন ভ্যান থামিয়ে ছাগল-কাণ্ডের মতিউরকে অনৈতিক সুবিধা, ১১ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ভয়েস ওভার ওয়াই-ফাই, সুবিধা কী

মেডিকেল কলেজ: মানের ঘাটতিতে হবে বন্ধ

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যাচ্ছেন না মোদি, কী বার্তা দিচ্ছে দিল্লি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত