Ajker Patrika

নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি

মেডিকেল কলেজ: মানের ঘাটতিতে হবে বন্ধ

  • শিক্ষকের সংখ্যাসহ শর্ত মানছে না অনেক কলেজ।
  • শঙ্কার মধ্যে আছে ২০ টির মতো।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০: ১৭
মেডিকেল কলেজ: মানের ঘাটতিতে হবে বন্ধ

গত দুই দশকে দেশে ৭০টির বেশি সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এসব কলেজের অধিকাংশই শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান পুরোপুরি বজায় রাখতে পারছে না। এ নিয়ে শিক্ষাবিদসহ বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। এমন প্রেক্ষাপটে চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলোর যথাযথ মান নিশ্চিত করতে সরকার নতুন মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু করেছে। চলতি মাসেই মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করার পর ২০টির কাছাকাছি সরকারি ও বেসরকারি কলেজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

চিকিৎসা শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর হাজার হাজার চিকিৎসক তৈরি হলেও সার্বিকভাবে চিকিৎসাসেবার মানের তেমন উন্নয়ন হচ্ছে না। শিক্ষার মান নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে। তাঁরা শিক্ষার মান ও প্রশিক্ষণ উন্নয়নের জন্য বিদ্যমান অবস্থা পর্যালোচনার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন।

স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের মেডিকেল কলেজের গ্রহণযোগ্য মান নিশ্চিত করতে একটি মূল্যায়ন পদ্ধতি (ম্যাট্রিকস) স্থির করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী এবং এ পদ্ধতির মাধ্যমে কলেজগুলোর মূল্যায়ন করা হবে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা, নিজস্ব ক্যাম্পাস থাকা না থাকা, শিক্ষায়তন ও হাসপাতালের অবকাঠামো, ব্যাংক হিসাব, শিক্ষার্থী অনুপাতে হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা, রোগী ভর্তির হার, গবেষণা কার্যক্রম ইত্যাদির ওপর। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই মূল্যায়নের ভিত্তিতেই আগামী শিক্ষাবর্ষে কলেজগুলোর ভর্তির আসন অনুমোদন দেওয়া হবে।

প্রতি শিক্ষাবর্ষে আসন অনুমোদনের জন্য বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোকে নির্দিষ্ট চেকলিস্ট অনুযায়ী পরিদর্শন করা হয়। সেই পরিদর্শন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় আসনের অনুমোদন দেয়। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন ম্যাট্রিকসের মাধ্যমে কলেজগুলোর সার্বিক মান আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। প্রসঙ্গত, ম্যাট্রিকস হচ্ছে, কর্মী বা প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা বা মান মূল্যায়নের একটি কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতি। এতে প্রতিটি মানদণ্ডের জন্য নম্বর নির্ধারণ করা হয়। সব ক্ষেত্রে প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে মোট স্কোর পাওয়া যায়। মোট স্কোর থেকে বোঝা যাবে কোন প্রতিষ্ঠান কতটা মানসম্পন্ন। আগামীতে এর ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীসংখ্যা কমানো বা বাড়ানো হবে এবং কিছু কলেজ বন্ধও করা হতে পারে।

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

সংখ্যা ও মানে মেডিকেল শিক্ষা

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১০৪টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি এবং ৬৭টি বেসরকারি। শুধু ২০০৫ সালের পর থেকেই ২৪টি সরকারি এবং ৪৫টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। এর বাইরে দেশে একটি সরকারি ডেন্টাল কলেজ চালু আছে এবং আরও দুটি কলেজের অনুমোদন রয়েছে। বেসরকারি ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা ১২টি। আটটি সরকারি এবং ১৫টি বেসরকারি মেডিকেলে ডেন্টাল ইউনিটও আছে। সরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য স্বতন্ত্র কোনো আইন নেই। তবে ২০২২ সালে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন কার্যকর করেছে সরকার। ২০২২ সালের আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা, ২০১১’ (সংশোধিত) অনুযায়ী চলতে হতো। অভিযোগ রয়েছে, বেশির ভাগ বেসরকারি কলেজে নানা ধরনের ঘাটতি রয়েছে। সর্বশেষ, ২০২৪ সালের শুরুতে ৬টি বেসরকারি কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন বাতিল করা হয়। এর মধ্যে দুটি কলেজের নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।

অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বেসরকারি কলেজের জন্য নিজস্ব জমি, আলাদা কলেজ ও হাসপাতাল ভবন থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইনে কলেজ ও হাসপাতালের ফ্লোর স্পেস, মৌলিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক, হাসপাতালের শয্যা, রোগী ভর্তির হারসহ বিভিন্ন অপরিহার্য শর্ত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঝুঁকিতে থাকা কলেজগুলো অবকাঠামোগত শর্ত পূরণ করছে না। তাদের শিক্ষকের অভাব রয়েছে, নির্ধারিত শিক্ষাক্রম যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না এবং হাসপাতাল প্রয়োজনীয় শর্ত না মেনে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজই শর্ত পূরণে ব্যর্থ।

সরকারি কলেজও সমস্যামুক্ত নয়

বিদ্যমান ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষকের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। এখন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকসহ মোট পদের ৪৩ শতাংশ শূন্য। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সরকারি কলেজগুলোর অনুমোদিত ৬ হাজার ৩৮৪টি পদের মধ্যে ২ হাজার ৭২৫টি খালি। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি (৬৪ শতাংশ) অধ্যাপক পদে। নতুন প্রতিষ্ঠিত এবং বড় শহরের বাইরের মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষকসংকট সবচেয়ে বেশি। কিন্তু অবকাঠামো, শিক্ষক ও প্রশিক্ষণ সুবিধার ঘাটতির মধ্যেও ২০২৪ সালে সরকার এসব প্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা বাড়িয়েছে।

যেসব মেডিকেল কলেজ কম নম্বর পাবে , তাদের শিক্ষার্থী ভর্তি কমিয়ে দেওয়া হবে এবং নতুন ভর্তি বন্ধ হতে পারে । অধ্যাপক সায়েদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবকাঠামো, জনবল ও হাসপাতাল না থাকার কারণে দেশের সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত ছয়টি সরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এসব কলেজে স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই, ক্লাস হয় সদর হাসপাতাল বা ভাড়া ভবনে। তাদের যথেষ্টসংখ্যক শিক্ষক ও মানসম্মত ল্যাবেরও অভাব রয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতায় মান রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

ম্যাট্রিকস দিয়ে যেভাবে মূল্যায়ন

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কলেজগুলোর কাছে আমরা আইন ও বিধি অনুযায়ী কী কী চাই এবং তাদের কী কী আছে, ঘাটতি কিসে তার একটা গাণিতিক প্রকাশ হচ্ছে ম্যাট্রিকস। এতে শিক্ষার্থীদের জন্য জমি, শিক্ষক অনুপাত, অবকাঠামো, ক্লাসরুম, শিক্ষা, গবেষণা ইত্যাদির ওপর স্কোরিং করা হবে। এখন একটা চেকলিস্টের আলোকে কলেজগুলো ভিজিট করা হয়। ম্যাট্রিকসে সব শর্তের জন্য নির্দিষ্ট নম্বর থাকবে।’

অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন আরও বলেন, কলেজগুলোর মানের পার্থক্য কতখানি তা বোঝা যাবে কোনটি কত নম্বর পায়, তা দেখে। ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই ম্যাট্রিকসের আলোকে মূল্যায়ন করা হবে। এ মাসেই কাজ শেষ হতে পারে। সাধারণত অক্টোবরে মেডিকেলে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

মূল্যায়নের পর কোনো কলেজ বন্ধ হওয়ার বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘কোনো কলেজ বন্ধ হবে কি হবে না, সে সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় পরে নেবে। মানসম্মত চিকিৎসক তৈরির বিষয়টি আমাদের অঙ্গীকার। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

চিকিৎসা শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা যেসব দেশের চিকিৎসা শিক্ষার মান ভালো, সেগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবস্থার পার্থক্য তুলে ধরে একটি গ্রহণযোগ্য মানমাত্রা তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁদের মতে, এ থেকেই বোঝা যাবে দেশের চিকিৎসা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার প্রকৃত অবস্থা।

চিকিৎসা শিক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) সাবেক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক এ বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আজকের পত্রিকার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘ম্যাট্রিকস চালু করা একটি ভালো উদ্যোগ। তবে এটি কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঠিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ কলেজকে শুধু সতর্কীকরণ নোটিশ দিলে চলবে না। কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবস্থাটি যথাযথভাবে মনিটর এবং প্রয়োজনমতো সংস্কার করতে হবে। গত কয়েক দশকে চিকিৎসা শিক্ষার মান ঠিক রাখার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর আগ্রহ দেখা যায়নি। দেশের বহু সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার মান গ্রহণযোগ্য নয়।’

বহু বছর আগে ডিগ্রি নেওয়া জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদেরও পেশা-সংক্রান্ত জ্ঞানে হালনাগাদ থাকার ওপর জোর দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘চিকিৎসা শিক্ষাজীবনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এটি ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত রাখতে হবে।’

সরকার যেভাবে ব্যবস্থা নেবে

গত ২৮ আগস্ট অবসরোত্তর ছুটিতে যান স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী। তাঁর সময়েই মেডিকেল কলেজ মূল্যায়নের জন্য ম্যাট্রিকস চূড়ান্ত করা হয়। এ বিষয়ে তিনি ২৯ আগস্ট আজকের পত্রিকাকে বলেন, মেডিকেল কলেজ বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। ম্যাট্রিকসের ভিত্তিতে কলেজগুলোর মূল্যায়ন করা হবে। যেসব কলেজ খুব কম নম্বর পাবে, তাদের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘যেসব মেডিকেল কলেজ কম নম্বর পাবে, তাদের শিক্ষার্থী ভর্তি কমিয়ে দেওয়া হবে এবং নতুন ভর্তি বন্ধ হতে পারে। বড় ঘাটতি থাকলে কলেজ বন্ধও করা হতে পারে। এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট কমিটি। স্বচ্ছতার জন্য ম্যাট্রিকসের ফল সবার জন্য প্রকাশ করা হবে।’

সরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য বর্তমানে কোনো আইন না থাকার পরিপ্রেক্ষিতে সেসব প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন বিষয়ে ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আইন তৈরি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তবে একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য যেসব শর্ত অভিন্ন, সেগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্যও বিবেচনায় আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি

  • তফসিল ঘোষণা হতে পারে আজ অথবা আগামীকাল।
  • সিইসির ভাষণ রেকর্ড ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ আজ।
  • প্রথমবারের মতো ভোটের আগের দিনও ছুটি থাকতে পারে।
  • তফসিলের পর বেআইনি সমাবেশ, আন্দোলন কঠোরভাবে দমন।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ বুধবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করবে কমিশন। এরপর জাতির উদ্দেশে দেওয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের ভাষণ রেকর্ড করা হবে। তিনি আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারে দেওয়া ভাষণে তফসিল ঘোষণা করতে পারেন। সব ঠিক থাকলে ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে ১২ ফেব্রুয়ারি।

আগামী ৫, ৮ ও ১২ ফেব্রুয়ারির যেকোনো দিন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন। পরে কমিশন জানায়, ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোট হবে। এর মধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট করার বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতিও নিয়েছিল ইসি। সেখান থেকে সরে ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। দিনটি বৃহস্পতিবার। ভোট গ্রহণের পর ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। ভোটের পরের দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় তাঁরা সেই সুযোগ পাবেন। এ জন্য ১২ ফেব্রুয়ারিকে ভোটের দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার বলে আসছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে ঈদ উৎসবের মতো। ফলে এবারই প্রথম ভোটের আগের দিন ১১ ফেব্রুয়ারি বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হতে পারে। ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন সাধারণ ছুটি থাকবে। পরের দুই দিন ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্র, শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।

ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানান, জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি তফসিল ঘোষণা করবেন। আজ সেই ভাষণ রেকর্ড করা হবে। আর নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, তফসিল ঘোষণায় ভাষণের সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আজ সন্ধ্যায় অথবা বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করা হবে।

সূত্র জানায়, সিইসির ভাষণ রেকর্ড করার বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিটিভির একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে গিয়েছিল। আজ দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে কমিশন। এরপর সিইসির ভাষণ রেকর্ড করার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে আজ বিকেলেও তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। বিভিন্ন বিষয়ে ২০টির মতো পরিপত্র জারি করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি নিয়োগ, মনিটরিং সেল এবং আইনশৃঙ্খলা-বিষয়ক সেল গঠনের সব প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর ধারাবাহিকভাবে এগুলো জারি করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল নির্বাচন কমিশন। জাতীয় সংসদ ভোটের সঙ্গে গণভোটের ঘোষণা আসায় অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানো, গোপন কক্ষের সংখ্যা বাড়ানো এবং বাজেট বাড়ানোর বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হয়েছে কমিশনকে। এরই মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আইনবিধি সংশোধন, রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, অধিকাংশ ছাপার কাজ, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সব বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকও হয়েছে।

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হওয়ায় ভোট দিতে একজন ভোটারের কত সময় লাগবে, সেই ধারণা নিতে গত ২৯ নভেম্বর ভোটের মহড়া করে ইসি। এই অভিজ্ঞতা থেকে ভোটের সময় ১ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। এবার সকাল সাড়ে ৭টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় শেষ হবে। আগের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ জানান, আচরণবিধি প্রতিপালনে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে প্রতিটি উপজেলায় দুজন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এরপর ভোটের পাঁচ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানো হবে। তফসিল ঘোষণার পর ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে পোস্টার সরাতে। এ সময়ের মধ্যে পোস্টার না সরালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি ও আধা সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নেওয়া হবে। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের এসব পদে দায়িত্ব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

একই দিন সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এবং গতকাল প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিইসি। রেওয়াজ অনুযায়ী, আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর সিইসির তফসিল ঘোষণার ভাষণ রেকর্ড করা হবে।

তফসিলের পর বেআইনি জনসমাবেশ করলে কঠোরভাবে দমন

তফসিল ঘোষণার পর সব ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, আন্দোলন পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গতকাল পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর হয়—এটিই সরকারের মূল লক্ষ্য। এ কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত যেকোনো ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন আন্দোলন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যাঁরা বেআইনিভাবে সভা-সমাবেশে অংশ নেবেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখন নির্বাচনমুখী সময়ে আছি। এ কারণে, সবার যা কিছু দাবিদাওয়া আছে, তা নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। আশা করব, এ সময়ের মধ্যে কেউ দাবিদাওয়া নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি বা স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত করবেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন এনায়েত হোসেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

শপথ নিয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাঁর খাসকামরায় তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী।

শপথ অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতি, বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গত ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের ২২ জন অতিরিক্ত বিচারপতিকে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ১২ নভেম্বর ২১ জনের শপথ অনুষ্ঠিত হলেও অসুস্থতার কারণে বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেন শপথ নিতে পারেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৭
ইউরোফাইটার টাইফুন। ছবি: এএফপি
ইউরোফাইটার টাইফুন। ছবি: এএফপি

ইতালি থেকে জঙ্গি বিমান ইউরোফাইটার টাইফুন কিনছে বাংলাদেশ। এ জন্য দেশটির প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাতা লিওনার্দো এসপিএর সঙ্গে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বা আগ্রহপত্র সই হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকায় বিমানবাহিনীর সদর দপ্তরে এই সম্মতিপত্র সই হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে।

ইউরোফাইটার টাইফুন (মাল্টি রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট—এমআরসিএ) কিনতে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছিল। এরই অংশ হিসেবে আজ লিওনার্দো এসপিএর সঙ্গে আগ্রহপত্র সই করল বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।

আইএসপিআর জানিয়েছে, বিমানবাহিনীর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এলওআই সই অনুষ্ঠানের সময় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল আহসানসহ দুই দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিমান বাহিনীর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এলওআই সই অনুষ্ঠানের সময় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো উপস্থিত ছিলেন। ছবি: আইএসপিআর
বিমান বাহিনীর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এলওআই সই অনুষ্ঠানের সময় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো উপস্থিত ছিলেন। ছবি: আইএসপিআর

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ফেসবুক পেজে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সম্মুখসারিতে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অত্যাধুনিক এমআরসিএর অংশ হিসেবে এই এলওআইয়ের আওতায় লিওনার্দো ইউরোফাইটার টাইফুন জঙ্গি বিমান সরবরাহ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মৎস্য ভবন এলাকায় নতুন এক সেফ হাউসের বর্ণনা দিলেন হাসনাত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩২
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর মৎস্য ভবন এলাকায় করা সেফ হাউসের বর্ণনা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ তিনি এই বর্ণনা দেন।

এই মামলায় ২২তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ জবানবন্দিতে বলেন, গত বছরের ১৭ জুলাই তিনি ও সমন্বয়ক সারজিস আলম তাঁর মামার বাসায় যান। তবে ডিজিএফআই সদস্যরা রাতে সেখান থেকে তাঁদের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় উঠিয়ে নিয়ে যান। তাঁরা যাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে সেখানে আনিসুল হক (সাবেক আইনমন্ত্রী), আরাফাত (সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত) ও নওফেল (সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী) প্রবেশ করেন। ডিজিএফআই সদস্যরা তাঁদের সঙ্গে দুজনকে বৈঠক করতে চাপ দেন। তবে সমন্বয়ক নাহিদ-আসিফের সঙ্গে কথা না বলে তাঁরা বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানান। বৈঠক না করায় ডিজিএফআই সদস্যরা রাতেই তাঁদের মৎস্য ভবন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাঝে একটি গোপন স্থানে নিয়ে যান; যা সেফ হাউস নামে পরিচিত। সেখানে ডিজিএফআইসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। যিনি জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন, তিনি ফোন করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের নিউজ পরিবর্তন এবং স্ক্রল সংশোধনের নির্দেশ দিচ্ছিলেন। সে অনুযায়ী টিভি চ্যানেলগুলো সংবাদ প্রচার করছিল এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক মর্মে দেখানোর চেষ্টা করছিল। হাসনাত নামে একজন মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, যে বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল, তা বাইরে থেকে পরিত্যক্ত মনে হলেও ভেতরে ছিল আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত। ১৭ জুলাই রাত প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ফজরের সময় তাঁদের ডেকে তুলে আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। আন্দোলন প্রত্যাহার করে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে এবং সেটি সংবাদ সম্মেলন করে জাতির কাছে জানাতে তাঁদের চাপ দেওয়া হয়। তবে সে সময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তাঁরা অন্য সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা তাঁদের ফোন ব্যবহার করে সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগযোগ করে তাঁদের অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তাঁর ফোন থেকে সমন্বয়ক হাসিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর অবস্থান জানতে চাইলে হাসিব চানখাঁরপুলে আন্দোলনে থাকার কথা জানান। ডিজিএফআই তাঁকে কিছুক্ষণের মধ্যে চানখাঁরপুল থেকে সেফ হাউসে তুলে আনে। সেখানে তাঁদের তিনজনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। হাসিব মাদ্রাসার ছাত্র হওয়ায় তাঁকে শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়।

হাসনাত জবানবন্দিতে আরও বলেন, আটক অবস্থায় তাঁদের দেশবাসীর কাছে ভিলেন বানানোর উদ্দেশ্যে তাঁরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন মর্মে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা খবর প্রচার করা হয়। তাঁদের যখনই মিডিয়ার সামনে আনা হচ্ছিল, তখনই বলছিলেন, পূর্বঘোষিত শাটডাউন কর্মসূচি ও আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কিন্তু সময় টিভি, একাত্তর টিভি ও ডিবিসি তাঁদের বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিল। ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় ডিজিএফআইয়ের ডিজিসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ওই সেফ হাউসে এসে শেষবারের মতো তাঁদের বৈঠক করে আন্দোলন প্রত্যাহার করতে চাপ দেন। এসবি, এনএসআই, ডিজিএফআই, ডিবিসহ সব গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে আন্দোলন দমনের ক্রেডিট নেওয়ার প্রতিযোগিতা দেখা যায়। তাঁরা তিনজন সিদ্ধান্ত নেন, প্রেস কনফারেন্স করে দাবি জানাতে দিলে তাঁরা পদ্মায় যাবেন।

হাসনাত বলেন, পদ্মায় গিয়ে তাঁরা প্রেস কনফারেন্সে বলেন, সরকারের সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি। শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে তাঁরা কোনো সংলাপ করতে পারেন না এবং পূর্বঘোষিত শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তবে মিডিয়া তাঁদের বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ প্রচার করে। শাটডাউন কর্মসূচি যেন প্রত্যাহার করা হয়, সে জন্য মিডিয়ার সামনেই সেনা কর্মকর্তা হাসনাত তাঁদের চাপ দেন। তাঁরা অস্বীকৃতি জানালে তাঁদের আবার সেফ হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখেন, তাঁদের বক্তব্য সম্পূর্ণ বিকৃতভাবে প্রচার করে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে মর্মে খবর পরিবেশিত হতে থাকে। প্রেস কনফারেন্সের তাঁদের কথা কেটে দিয়ে শুধু দাবিগুলো প্রচারিত হয়। সেদিন রাতে তাঁদের ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়।

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তৎকালীন আইজিপি, বেরোবি প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও যারা সরাসরি গুলি করেছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান হাসনাত আবদুল্লাহ। সেই সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় দায়ী সবার বিচার চান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত