Ajker Patrika

বাংলাদেশে লোকালয়ে শিয়ালের আক্রমণ বাড়ছে

এএফপি
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭: ০৩
একসময়কার লাজুক প্রাণী হিসেবে পরিচিত শিয়াল এখন মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকে। ছবি: এএফপি
একসময়কার লাজুক প্রাণী হিসেবে পরিচিত শিয়াল এখন মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকে। ছবি: এএফপি

বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করে জাহান পরিবার। এই পরিবারের কেউ কখনো কাছ থেকে শিয়াল দেখেনি। তবে গত নভেম্বরের এক সকালে চার বছরের মুসকানকে ধানখেতে ধাওয়া করে এবং তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এক পাগলা শিয়াল। প্রাণীটির কামড়ে মারাত্মকভাবে আহত হয় শিশুটি। পরে গ্রামবাসী শিয়ালটিকে পিটিয়ে মারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে বনভূমি কমে যাওয়ায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের ওপর শিয়ালের আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। সাধারণত লাজুক প্রাণী হিসেবে পরিচিত শিয়াল। দিনে দিনে এদের আবাস্থল সংকুচিত হচ্ছে এবং এরা লোকালয়ে চলে আসছে। আর কখনো কখনো মানুষদের কামড়াচ্ছে।

মুসকান এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও দ্রুত চিকিৎসার কারণে সে সুরক্ষিত আছে, তবে তার মুখে কামড়ের দাগ রয়েছে এবং একটি চোখ ফুলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে রয়েছে।

সংবাদ সংস্থা এএফপিকে মুসকানের তার খালা ইশরাত জাহান জানান, ‘এটা দিনদুপুরে ঘটেছে। এক শিয়াল তাকে মাটিতে ফেলে ক্ষতবিক্ষত করেছে। পরে গ্রামবাসী সেটিকে মেরে ফেলে। তবে সবাই এখনো সেই ঘটনা ভুলতে পারেনি।

ঢাকার একটি হাসপাতালের বেডে মায়ের কোলে আহত মুসকান। ছবি: এএফপি
ঢাকার একটি হাসপাতালের বেডে মায়ের কোলে আহত মুসকান। ছবি: এএফপি

গোল্ডেন জ্যাকাল বা সোনালি শিয়াল নেকড়ের মতো দেখতে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এরা বাস করে। আকারে এরা গ্রে-হাউন্ড কুকুরের সমান, তবে ওজন আরও কম। মুসকানের ওপর যে শিয়াল হামলা করে, সেটি ছিল অস্বাভাবিক। শিয়াল নিশাচর প্রাণী। তবে এই শিয়াল দিনের বেলায় মুসকানের ওপর হামলা করেছে।

ঢাকার ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী গবেষক জোহেব মাহমুদ বলেন, গত আট বছর ধরে সোনালি শিয়ালের আচরণ নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। এই পর্যবেক্ষণে মাহমুদ দেখেন যে, বনভূমি কমে যাওয়ায় শিয়ালের আচরণে পরিবর্তন এসেছে।

তিনি আরও বলেন, একসময়কার লাজুক প্রাণী হিসেবে পরিচিত শিয়াল এখন মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং দিনের বেলায়ও বের হয়।

নগরায়ণ এবং ব্যাপক পরিমাণে গাছ কাটার কারণে শিয়ালদের মূল বাসস্থানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরে বাংলাদেশ প্রায় ১৭ হাজার ৮০০ হেক্টর (৪৪ হাজার একর) বনাঞ্চল হারিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন শহরের প্রায় তিন গুণের সমান।

গবেষক মাহমুদ সতর্ক করে বলেন, ‘যত দিন বনভূমি ধ্বংসের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, তত দিন শিয়ালের আক্রমণ বন্ধ হবে না।’

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। তাই এখন আরও বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যার সম্মুখীন হচ্ছে দেশটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে শিয়াল তাদের বাসস্থল হারাচ্ছে ও খাদ্য সংকটে ভুগছে, যা তাদের লোকালয়ে কাছে আসতে বাধ্য করছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে ব্যাপক বন্যা হয়, যার ফলে বহু মানুষের ঘরবাড়ি পানিতে ভেসে যায়। এসব এলাকার শেয়ালারও তাদের বাসস্থান হারিয়েছে। তাই এরা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে মানুষকে কামড়াচ্ছে।

শেয়ালের কামড়ে আহত নীলফামারীর ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যার কারণে শেয়ালরা তাদের আবাস্থল হারিয়েছে ও খাদ্যসংকটে ভুগছে। তাই এরা আমাদের গ্রামে এসে ১২ জনেরও বেশি লোককে কামড়িয়েছে।

আরণ্যক পরিবেশবাদী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাকিবুল হাসান মুকুল বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের মৌসুমি বন্যাকে আরও তীব্র করে তুলছে। এর ফলে মানুষ তাদের ভূমি হারাচ্ছে এবং আরও বেশি বনভূমি উজাড় করছে। এতে মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর সংঘর্ষ বাড়ছে।’

সংকটে বন্যপ্রাণী

শিয়াল কত জন মানুষকে কামড়িয়েছে এমন নির্দিষ্ট তথ্য বা জরিপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। তবে বিভিন্ন হাসপাতালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর এ রকম হামলার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। মুন্সিগঞ্জ জেলার এক হাসপাতালের অধ্যক্ষ দেবান নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, শেয়ালের কামড়ে আহত হয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে তাদের হাসপাতালে এক দিনে ২০ জন রোগী ভর্তি হয়। এভাবে এক দিনে এত শেয়ালের হামলার ঘটনা আগে কখনো হয়নি।

অপরদিকে দিনাজপুরে আরেক হাসপাতালের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিয়মিতভাবে শেয়ালের কামড়ে আহত রোগীদের চিকিৎসা করছি। শেয়ালগুলো এখন মুক্তভাবে ফসলি জমিতে ঘুরছে।’

গোল্ডেন জ্যাকালরা সাধারণত শান্ত প্রকৃতির, মানুষের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখে না। তবে এরা র‍্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত হলে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। কুকুরের মধ্যে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। যদি আক্রান্ত প্রাণী মানুষের রক্ত শোষণ করে, তাহলে এটি মানবদেহে ছড়িয়ে যায়।

মুসকানকে গত মাসে কামড়ানো হয়েছিল, কিন্তু দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার কারণে তাকে জলাতঙ্ক থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। কিন্তু তার আঘাত খুব গভীর এবং তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য মাসের পর মাস হাসপাতালে থাকতে হবে।

হাসপাতালের এক চিকিৎসক আরিফুল বাসার এএফপিকে বলেন, ‘আমরা র‍্যাবিস ভ্যাকসিন দিয়ে রক্ষা করতে পারি, তবে বেশির ভাগ সময়ই শিয়াল মানুষের গোশত ছিঁড়ে ফেলে, যার ফলে তাদের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।’

গত মাসে আহত হওয়ার পর জলাতঙ্ক সংক্রমণ প্রতিরোধে তিন দিন চিকিৎসা নেয় মুসকান। এরপর আঘাতের চিকিৎসার জন্য এক মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিল শিশুটি। ওই আক্রমণের ঘটনায় এখনো সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা নিয়ে যা জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ১৭
আবহাওয়া অধিপ্তরের কার্যালয়, আগারগাঁও। ফাইল ছবি
আবহাওয়া অধিপ্তরের কার্যালয়, আগারগাঁও। ফাইল ছবি

দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। তবে এর প্রভাবে আজ দেশের কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই। অবশ্য ঢাকার আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে।

আজ বুধবার সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পরবর্তী ছয় ঘণ্টার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থেকে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। সারা দিনের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৩ শতাংশ। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় কোনো বৃষ্টি হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে।

গতকালের পূর্বাভাসে আজকের বৃষ্টি সম্পর্কে জানানো হয়েছিল, চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ না-ও নিতে পারে। এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ভারতের তামিলনাড়ুর দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। তবে সারা দেশে আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। ফলে তাপমাত্রাও খুব একটা কমবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা কম, আবহাওয়া থাকবে শুষ্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ০০
ঢাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা কম, আবহাওয়া থাকবে শুষ্ক

কার্তিক মাস আসার পর সারা দেশে বৃষ্টি প্রায় হচ্ছেই না। এর সঙ্গে বেড়েছে গরম। আজ মঙ্গলবারও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রায় একই রকম থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পরবর্তী ছয় ঘণ্টার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থেকে মেঘলা আকাশ থাকতে পারে। সারা দিনের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় কোনো বৃষ্টি হয়নি।

এ ছাড়া সারা দেশে আজকের আবহাওয়াও প্রায় একই রকম শুষ্ক থাকতে পারে। তবে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামে কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে। গতকাল সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তরে আজকের সারা দেশের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যত্র আবহাওয়া আংশিক মেঘলা আকাশসহ প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর, দূষণে শীর্ষে দিল্লি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে আছে। বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সোমবার সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১৫২। গতকাল রোববার সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটেও বায়ুমান একই ছিল।

বায়ুদূষণের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় আজ ৭ম স্থানে রয়েছে ঢাকা। গতকালও একই অবস্থানে ছিল এই রাজধানী শহরটি।

আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির বায়ুমান আজ ৩০৩, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— পাকিস্তানের লাহোর, ভারতের মুম্বাই, উজবেকিস্তানের তাসখন্দ ও ভারতের কলকাতা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৯৭, ১৭৭, ১৫৮ ও ১৫৬।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে নিম্নচাপ, গতিপথ কোন দিকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ১৪
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে নিম্নচাপ,
গতিপথ কোন দিকে

বর্ষাকাল বিদায় নিয়েছে। প্রকৃতিতে চলছে এখন হেমন্তকাল। কিন্তু আবহাওয়ার আচরণ অনেকটাই গ্রীষ্মকালের মতো। কয়েক দিন ধরে সকালে সূর্যের তাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা গড়িয়ে দুপুর থেকে বিকেলের আগপর্যন্ত এর তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি শক্তিশালী হয়ে পরিণত হতে পারে নিম্নচাপে।

নিম্নচাপ সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ২১ অক্টোবর একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তীতে এটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, মধ্য অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায়ের পর বৃষ্টি কমে গেছে। লঘুচাপ বা নিম্নচাপের প্রভাব কেটে গেলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের আমেজ পড়বে সারা দেশে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজ সোমবার সকাল ৭টার পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় সকালে তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গতকাল রোববার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫, আর সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টাঙ্গাইলে ৩৫ দশমিক ৭ সেলসিয়াস। সারা দেশে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

কার্তিক মাসে এই তাপমাত্রা স্বাভাবিক কিনা জানতে চাইলে আজ সোমবার সকালে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যে ধরনের গরম পড়ছে সেটি বৃষ্টি কমে যাওয়ার জন্য হয়েছে। সাধারণত অক্টোবর মাসের এই সময় মৌসুমি বায়ু বিদায়ের পর বৃষ্টি কম হয়। তখন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়।

লঘুচাপ বা নিম্নচাপ সৃষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আগে সাগরে বা উপকূলীয় এলাকায় অনেক সময় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে যে গরম পড়েছে, এর সঙ্গে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়া না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। আপাতত মনে হচ্ছে কালকের (২১ অক্টোবর) মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি পরে নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের তামিলনাড়ু উপকূলের দিকে যেতে পারে। তবে লঘুচাপটি নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার আগপর্যন্ত এর গতিপথ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। আর নিম্নচাপের প্রভাব কেটে গেলে দেশের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমে শীতের আমেজ পড়বে।

হাফিজুর রহমান আরও বলেন, সূর্যের দক্ষিণায়ন (দক্ষিণ দিকে হেলে পড়া) এখনো পুরোপুরি হয়নি। এই দক্ষিণায়ন হলে দিনের ব্যাপ্তি আরও কমবে, তাপমাত্রা তখন কমে শীতও বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত