Ajker Patrika

ধানের নতুন জাত, হিট শকেও ফলন কমবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধানের নতুন জাত, হিট শকেও ফলন কমবে না

ঢাকা: সম্প্রতি হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে ইরি–বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধানগাছ পুড়ে গেছে অথবা চিটা হয়েছে। কৃষিবিদরা বলছেন, আকস্মিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির (হিট শক) কারণেই এমনটি হয়েছে। তবে বিপুল সংখ্যক কৃষকের এমন অভিজ্ঞতা এটিই প্রথম। এটিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে বন্যা ও নতুন নতুন রোগবালাইয়ের পাশাপাশি এটিকে কৃষকদের জন্য আরেকটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এর মধ্যে একটি সুখবর দিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) গবেষকরা। উচ্চ তাপ সহনশীল একটি ধানের জাত উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছেন তারা। গবেষকরা এ জাতের নাম দিয়েছেন ‘হিট শক’। ধানটি জাতীয় বীজ বোর্ডে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

গবেষকরা বলছেন, দেশে প্রচলিত জাতগুলো ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। ধানে ফুল ফোটার সময় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর বেশি হলে চিটা হয়ে যায়। বর্তমানে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ায় প্রায়ই ধানে চিটা পাচ্ছেন কৃষকরা।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, বৈশ্বিক জলবায়ু উষ্ণায়নের বিষয়টি মাথায় রেখেই ২০১৩ সাল থেকে উচ্চ তাপমাত্রা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন সংস্থাটির তিন জন গবেষক। উচ্চ তাপসহিষ্ণু এন২২ (ঘ২২) জাতের সঙ্গে বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় ব্রি ধান-২৮–কে মিলিয়ে মার্কার অ্যাসিস্টেড ব্যাকক্রসিং পদ্ধতির মাধ্যমে একটি অগ্রগামী সারি নির্বাচন করেন তারা। এই সারি ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায়ও ভালো ফলন দিতে সক্ষম।

এ বিষয়ে গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য বারির উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা সমন্বয়ক ড. মুন্নুজান বলেন, আমরা ৭ বছর আগে গবেষণা শুরু করি। গবেষণায় উঠে আসা নতুন সারিটিকে আমরা বারবার ট্রায়াল করছি। আমরা তাপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা দিয়ে পরীক্ষা করেছি। এই তাপমাত্রায়ও ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।

সারিটি বর্তমানে আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষণ পর্যায়ে রয়েছে। ফলন ও অন্য বৈশিষ্ট্য গ্রহণযোগ্য হলে এটিকে জাত হিসেবে অনুমোদনের জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডে আবেদন করা হবে বলেও জানান এ বিজ্ঞানী।

বারির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির বলেন, এখন হিট শকে ধান নষ্ট হচ্ছে। আমাদের উদ্ভাবিত সারিটি ১২টি স্থানে পরীক্ষমূলকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে। সেখানে ভালো ফলন পেলেই এটিকে জাত হিসেবে রূপ দেওয়ার পাশাপাশি কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হবে। আগামী বছরের মধ্যে এই ধান কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। দেশীয় অন্য জাতগুলোরও উচ্চ তাপ সহনশীল ভ্যারাইটি উদ্ভাবনে কাজ চলছে বলে জানান ড. শাহজাহান।

সম্প্রতি দেশজুড়ে হিট শকে ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ তাপ সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনের খবর পেয়েই গবেষণার অগ্রগতি পরিদর্শনে ১৮ এপ্রিল বারির গবেষণা মাঠে যান কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। এই সময় গবেষকরা কৃষিমন্ত্রীকে নতুন জাতটির সম্পর্কে জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত