Ajker Patrika

শুকিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ গোলার্ধ, ঘনিয়ে আসছে বিপদ 

শুকিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ গোলার্ধ, ঘনিয়ে আসছে বিপদ 

জীবনের জন্য পানি সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমরা খুব কম মানুষই জানি যে, পৃথিবীর মাত্র ১ ভাগ পানি মানুষ, অন্যান্য স্থলচর প্রাণী ও গাছপালার জন্য উপযোগী। বাকি পানি হয় সমুদ্রে না হয় দুই মেরুতে জমাট বাঁধা বরফে বন্দী। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সহজলভ্য ১ শতাংশ পানির বৈশ্বিক যে বিন্যাস তাতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। এতে জলবায়ু, কৃষিসহ অন্যান্য খাতে বিপদের আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

নতুন এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ তুলনামূলক দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। গবেষণা অনুসারে, ২০০১ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দক্ষিণ গোলার্ধ উত্তর গোলার্ধের চেয়ে বেশি দ্রুত শুকিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই অবস্থার কারণ হিসেবে জলবায়ু চক্র এল নিনোকে দায়ী করেছেন। সাধারণত কয়েক বছর পরপর পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ উষ্ণ হয়ে উঠে।

বেষণাটি বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বৃষ্টিপাত, নদী কিংবা অন্যান্য উৎস থেকে যে পরিমাণ পানি পাওয়া যায় এবং যে পরিমাণ পানি বাষ্পীভবন বা গাছের প্রস্বেদনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে চলে যায় তার পার্থক্যের বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। পাশাপাশি স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া চিত্র, নদী বা অন্যান্য স্রোতস্বতীর প্রবাহের পরিমাপ ইত্যাদি আমলে নিয়েই তাঁরা কাজ করেছেন। 

দক্ষিণ গোলার্ধে পৃথিবীর স্থলভাগের মাত্র এক-চতুর্থাংশ অবস্থিত। কিন্তু গবেষণা বলছে, এই অঞ্চল শুকিয়ে যাওয়া বিশ্বের পরিবেশের পাশাপাশি অর্থনীতির ওপরও প্রভাব ফেলবে। গবেষণা অনুসারে, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকার অধিকাংশ, অস্ট্রেলিয়ার মধ্য ও উত্তর-পূর্বাংশে পানির সহজলভ্যতা আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে। তবে দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণাংশে অবশ্য এখনো পানির সহজলভ্যতা রয়েছে। 

গবেষণা থেকে আরও দেখা গেছে, উত্তর গোলার্ধেও পানির সহজলভ্যতা কমছে তবে এখনো তা কমবেশি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলেছেন, মানুষের প্রভাবের কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে উন্নত সেচ ব্যবস্থা, বাঁধ ও খাদ্য উৎপাদনে উন্নত প্রযুক্তির কারণে এমনটা সম্ভব হয়েছে। তবে এসব প্রভাব দক্ষিণ গোলার্ধে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভূপৃষ্ঠের মাত্র এক-চতুর্থাংশ এই গোলার্ধে হলেও বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষই এই অংশে বাস করে। 

দক্ষিণ গোলার্ধ শুকিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো বৈশ্বিক বিপর্যয় নেমে আসা। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেইন ফরেস্ট আমাজন এই অঞ্চলে অবস্থিত। যা আবার বিশ্বের জলবায়ুর অন্যতম নিয়ন্ত্রক। এ ছাড়া বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের সবচেয়ে বড় আবাস এই অঞ্চলটি। এখানে রয়েছে বিশ্বের বিপুল পরিমাণ আদিবাসী জনগোষ্ঠী। 

শুষ্ক হয়ে গেলে এই অঞ্চলে দাবানল, অগ্নিকাণ্ডের পরিমাণ বাড়বে। কৃষিজ উৎপাদন কমবে। তার চেয়েও বড় কথা হলো শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে বনভূমি এবং মাটিতে আবদ্ধ কয়েক বিলিয়ন টন কার্বন প্রকৃতিতে অবমুক্ত হবে। পরিবেশগত ও জনমিতিক ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকা শুকিয়ে গেলে বিশ্ব বাজারে কৃষিপণ্যের সরবরাহে সংকট তৈরি হবে। কারণ দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো সয়াবিন, চিনি, মাংস, কফি ও অন্যান্য ফলফলাদির অন্যতম উৎপাদক। 

আফ্রিকা শুকিয়ে গেলেও বিশ্বের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হাজির করবে। কারণ, এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি জলবায়ু জোন রয়েছে এবং এই অঞ্চলেরও আর্থসামাজিক ভূমিকা রয়েছে। সব মিলিয়ে এই অঞ্চল শুকিয়ে গেলে বিশ্বের খাদ্যশৃঙ্খলে টান পড়বে। খরার পরিমাণ বাড়ায় এই অঞ্চলে ক্ষুধা, দারিদ্র্যের হার বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ

পর্যটন শুরু কাল: সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চালাবেন না মালিকেরা

ময়মনসিংহের নান্দাইল: শত বছরের হাইত উৎসবে মাছশিকারিদের ঢল

সোয়া লাখের বদলে ৭৫০০ শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র, বেশির ভাগই শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান

অনিশ্চয়তায় ঢাকা বিআরটি কোম্পানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সারা দেশে হতে পারে বৃষ্টি, কোথাও কম কোথাও বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ২৫
সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। এ আবহাওয়াতে সাধারণ মানুষ ছাতা নিয়ে বের হচ্ছে নিজেদের গন্তব্যে। কড়ইতলা, রাজশাহী সদর, রাজশাহী, ২১ মার্চ ২০২৫। ছবি: মিলন শেখ।
সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। এ আবহাওয়াতে সাধারণ মানুষ ছাতা নিয়ে বের হচ্ছে নিজেদের গন্তব্যে। কড়ইতলা, রাজশাহী সদর, রাজশাহী, ২১ মার্চ ২০২৫। ছবি: মিলন শেখ।

শরৎ পেরিয়ে চলছে হেমন্তকাল। তবে কার্তিক মাসের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও এখনো শীতের তেমন লক্ষ্মণ নেই; বরং দেশের কোথাও কোথাও বেশ গরম পড়ছে। বিশেষ করে দিনের বেলা আবহাওয়া থাকছে বেশ উষ্ণ। তবে আজ শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব বিভাগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দুপুর পর্যন্ত আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এর সঙ্গে বৃষ্টিসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। এই অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯১ শতাংশ। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল নরসিংদীতে ৩৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঢাকায় আজকের সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে এবং আগামীকালের সূর্যোদয় ভোর ৬টা ৫ মিনিটে।

এদিকে আজ সারা দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ

পর্যটন শুরু কাল: সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চালাবেন না মালিকেরা

ময়মনসিংহের নান্দাইল: শত বছরের হাইত উৎসবে মাছশিকারিদের ঢল

সোয়া লাখের বদলে ৭৫০০ শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র, বেশির ভাগই শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান

অনিশ্চয়তায় ঢাকা বিআরটি কোম্পানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাবান্ধা থেকে টেকনাফ—সবুজ স্বপ্নে হাঁটছেন রিহাব হোসেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
দেশের উত্তর প্রান্ত তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে দক্ষিণ প্রান্ত টেকনাফ জিরো পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন রিহাব হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
দেশের উত্তর প্রান্ত তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে দক্ষিণ প্রান্ত টেকনাফ জিরো পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন রিহাব হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

সবুজ ও দূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে পায়ে হেঁটে দেশের উত্তর প্রান্ত তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে দক্ষিণ প্রান্ত টেকনাফ জিরো পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন গ্রিন ভয়েস হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রিহাব হোসেন।

১৬ অক্টোবর ‘প্রাকৃতিক জীবনকে হ্যাঁ বলুন, দূষণকে না বলুন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে তিনি যাত্রা শুরু করেন। উদ্দেশ্য, দেশের মানুষকে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতন করা এবং প্রতিটি জেলায় একটি করে গাছ রোপণ করে সবুজ বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া।

রিহাব ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রিন ভয়েসের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন, গাছ রোপণ করেছেন এবং স্থানীয় মানুষের উষ্ণ আতিথেয়তা পেয়েছেন। পথচলায় তিনি দেখেছেন তেঁতুলিয়ার কুয়াশা, ভোজোনপুরের নদীপাড়, বোদার মানুষের সহমর্মিতা, দিনাজপুরের অতিথিপরায়ণতা, জয়পুরহাটের আন্তরিকতা, বগুড়ার সবুজ মায়া, সিরাজগঞ্জের অতিথিপরায়ণ মানুষ এবং মানিকগঞ্জের প্রাণবন্ত তরুণসমাজের সহযোগিতা।

এ পর্যন্ত তিনি ১৪ দিনে প্রায় ৫৯২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ঢাকায় পৌঁছেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন, এক দিন বিশ্রামের পর শুক্রবার সকালে পুনরায় টেকনাফের উদ্দেশে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করবেন।

রিহাব হোসেন বলেন, ‘এই পদযাত্রা শুধুই হাঁটা নয়, এটি প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার নিঃশব্দ শপথ। পথে পথে মানুষের আন্তরিকতা আমাকে অনুপ্রাণিত করে এগিয়ে যেতে। অনেকেই জোর করে খেতে দিয়েছেন, বিশ্রামের জায়গা করে দিয়েছেন; এ যেন পুরো বাংলাদেশের ভালোবাসার যাত্রা।’

রিহাব প্রতিদিন গড়ে ৫০ কিলোমিটার পথ হাঁটছেন, কাঁধে ২০ থেকে ২২ কেজি ওজনের ব্যাগ নিয়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পুরো যাত্রাটি শেষ করতে তাঁর ২২ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে, যার শেষে তিনি বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ প্রান্ত টেকনাফে পৌঁছাবেন।

গ্রিন ভয়েস বিশ্বাস করে, রিহাবের এই পদযাত্রা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পরিবেশ-সচেতনতার জাগরণ ঘটাবে এবং একটি সবুজ বাংলাদেশ গঠনে নতুন অনুপ্রেরণা জোগাবে।

সবুজ থাকুক হৃদয়ে, পরিবর্তন শুরু হোক পথ থেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ

পর্যটন শুরু কাল: সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চালাবেন না মালিকেরা

ময়মনসিংহের নান্দাইল: শত বছরের হাইত উৎসবে মাছশিকারিদের ঢল

সোয়া লাখের বদলে ৭৫০০ শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র, বেশির ভাগই শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান

অনিশ্চয়তায় ঢাকা বিআরটি কোম্পানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জলবায়ু পরিবর্তনে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার: ল্যানসেট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জলবায়ু পরিবর্তনে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার: ল্যানসেট

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বাংলাদেশ এক নজিরবিহীন স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। ‘দ্য ল্যানসেট কাউন্টডাউন অন হেলথ অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এর সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ২০২৪ সালেই তাপজনিত শ্রম উৎপাদনশীলতা কমে বাংলাদেশের সম্ভাব্য আয় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের জিডিপির ৫ শতাংশের সমান। তাপপ্রবাহের কারণে বছরে প্রত্যেক ব্যক্তি গড়ে ২৮ দশমিক ৮ দিন অতিরিক্ত গরমের মুখোমুখি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ২ দিন কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের ফল।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (সি৩ ইআর), ল্যানসেট কাউন্টডাউন গ্লোবাল টিম এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন ইউনিট যৌথভাবে আয়োজন করে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ অর্থনীতিবিদ ড. সৌর দাশগুপ্ত।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন সরাসরি জনস্বাস্থ্যে পড়ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে পানির লবণাক্ততা, তাপজনিত চাপ ও পানির নিরাপত্তাহীনতা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী বলেন, ‘আমরা সাভারকে নিয়ন্ত্রিত বায়ুমান অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছি। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক চুলা চালুর উদ্যোগ নিয়েছি, যা গৃহস্থালি বায়ুদূষণ কমাবে। আমাদের লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করা।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারজানা মিশা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। তাই জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যকে একটি মূল স্তম্ভ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম বলেন, ‘স্বাস্থ্য আমাদের জলবায়ু কার্যক্রমের মূল কেন্দ্রবিন্দু। স্থানীয় প্রেক্ষাপটে সমাধান তৈরি ও অংশীদারত্ব জোরদার করাই এখন সময়ের দাবি।’

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দ্রুত ও সমন্বিত জাতীয় পদক্ষেপ ও বৈশ্বিক সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্জন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং দেশ ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও জীবিকা সংকটে পড়বে।

প্রতিবেদন বলছে, ১৯৯০-এর দশক থেকে তাপপ্রবাহের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব দ্রুত বেড়েছে। তাপজনিত কারণে ২০২৪ সালে ২৯ বিলিয়ন সম্ভাব্য কর্মঘণ্টা ক্ষতি হয়েছে, যা ১৯৯০-এর দশকের তুলনায় ৯২ শতাংশ বেশি। এই ক্ষতির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতে। মোট ক্ষতি হওয়া সময়ের ৬৪ শতাংশই এ খাতের শ্রমিকদের। বাংলাদেশে বায়ুদূষণ এখনো অকালমৃত্যুর প্রধান কারণ। ২০২২ সালে সূক্ষ্ম বস্তুকণার (পিএম ২.৫) সংস্পর্শে এসে ২ লাখ ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা ২০১০ সালের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ৯০ হাজার মৃত্যুর সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো সরাসরি দায়ী, যার মধ্যে ৩০ হাজার মৃত্যু ঘটেছে কয়লা পোড়ানোর কারণে। ঘরোয়া বায়ুদূষণে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ৭৪ জন মারা যায়, যা নারী ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ওপর বেশি প্রভাব ফেলে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রাব্বী সাদেক আহমেদ ও ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিক অ্যাডভাইজার ওয়াসিস পেরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ

পর্যটন শুরু কাল: সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চালাবেন না মালিকেরা

ময়মনসিংহের নান্দাইল: শত বছরের হাইত উৎসবে মাছশিকারিদের ঢল

সোয়া লাখের বদলে ৭৫০০ শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র, বেশির ভাগই শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান

অনিশ্চয়তায় ঢাকা বিআরটি কোম্পানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের লাহোর, ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৫৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহর বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষস্থান নিয়ে আছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের লাহোরের অবস্থা অতিমাত্রায় বিপজ্জনক। ঢাকার বাতাসও সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে আছে ঢাকা। প্রতিবছর শীতকাল শুরুর আগেই ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ১৫৭। সে হিসেবে বাতাসের মান ‘সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর’।

একিউআই মানদণ্ড অনুসারে, ১৫১ থেকে ২০০ স্কোরকে ‘সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বিবেচনা করা হয়। এই স্তরে সাধারণ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা অসুস্থতা অনুভব করতে পারেন এবং সংবেদনশীল গোষ্ঠীর (যেমন শিশু, বয়স্ক এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগী) জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে, এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।

আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের লাহোর ৫৭১ একিউআই স্কোর নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ (Hazardous) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।

বিশ্বের শীর্ষ ১০ দূষিত শহরের তালিকার বাকি শহরগুলো হলো—

(বায়ুমানের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে র‍্যাঙ্কিংয়ে পরিবর্তন হতে পারে)

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি (৪৫৩, খুবই অস্বাস্থ্যকর)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে চীনের বেইজিং (১৯৫, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)। চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি (১৬৫, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর) এবং পঞ্চম স্থানে ইরাকের বাগদাদ (১৬৩, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।

শীর্ষ দশের অন্যান্য শহর:

৬. ঢাকা, বাংলাদেশ (১৫৭)

৭. দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত (১৫৭)

৮. রিয়াদ, সৌদি আরব (১৫৪)

৯. চেংদু, চীন (১৫৩)

১০. কুয়েত সিটি, কুয়েত (১১৯)

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ

পর্যটন শুরু কাল: সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চালাবেন না মালিকেরা

ময়মনসিংহের নান্দাইল: শত বছরের হাইত উৎসবে মাছশিকারিদের ঢল

সোয়া লাখের বদলে ৭৫০০ শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র, বেশির ভাগই শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান

অনিশ্চয়তায় ঢাকা বিআরটি কোম্পানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত