Ajker Patrika

ভূমিকম্প ঝুঁকি: পরীক্ষা করা হবে সিলেটের ৪২ হাজার ভবন

প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ জুন ২০২১, ০০: ০৪
ভূমিকম্প ঝুঁকি: পরীক্ষা করা হবে সিলেটের ৪২ হাজার ভবন

সিলেট: সিলেটে ১০ দিনের ব্যবধানে সাতবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। রিখটার স্কেলে পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হলে সিলেটের ৮০ ভাগ ভবনই ধসে পড়বে। আর সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলে এ অঞ্চলের প্রায় ৯৫ ভাগ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যাবে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ঝুঁকি এড়াতে নগরীর সব ভবন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে মাঠে নামছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বিশেষজ্ঞ দল। সিলেট সিটি করপোরেশন ও শাবিপ্রবির বিশেষজ্ঞ দলটি শিগগিরই নগরীর সব ভবন পরীক্ষার কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

গত বুধবার (৯ জুন) বিকেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বৈঠকে নগরীর প্রায় ৪২ হাজার ভবন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মেয়র আরিফুল হক বলেন, এই মুহূর্তে বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণার চেয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকির শহরে মানুষকে বাঁচানো বা ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে আগামী ছয় মাসের মধ্যে নগরীর সব ভবনের সক্ষমতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন জমা দেবেন। চিহ্নিত করবেন ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় যত ভবন আছে, সব পরীক্ষা করা হবে। সিসিক এর সমন্বয়ে আমরা এই কাজটি করব। কিন্তু এটা আমাদের পক্ষে একা করা সম্ভব না। তাই সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও ছাত্রদেরও নেওয়া হবে। সবাই মিলে কাজটি করব। এ ক্ষেত্রে সব ভবন পরীক্ষা শেষ করতে হয়তো ছয় থেকে আট মাস সময় লাগতে পারে।’

গবেষকেরা বলছেন, সিলেটের ঠিক পাশাপাশি অবস্থিত বিপজ্জনক ডাউকি ফল্ট লাইনে ছয় মাত্রার বেশি ভূমিকম্পের আশঙ্কা কম। তাই সম্ভাব্য দুর্যোগের এই মাত্রা ধরে নিয়েই কর্মপরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জহির বিন আলম বলেন, ‘ভূমিকম্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ফল্ট সেটি ডাউকি। সে হিসেবে এই ফল্ট যেকোনো সময় ছয় মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি করার শক্তি রাখে। তাই এখন গবেষণার চেয়ে মানুষকে বাঁচানো বা ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সেদিকে লক্ষ্য দেওয়া জরুরি।’

গত ২৯ ও ৩০ মে পাঁচ দফা ও ৭ জুন ফের দুই দফা ভূমিকম্পের পর দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন। সম্ভাব্য দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে এরই মধ্যে গত ৩০ মে থেকে বন্ধ থাকা ছয়টি মার্কেটসহ ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মালিকের কাছে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ।

ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল সিলেট। ভূমিকম্প নিয়ে এখানে আতঙ্ক থাকলেও নেই সচেতনতা। কোনো নিয়মনীতি না মেনেই গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল ভবন। মানা হচ্ছে না বিল্ডিং কোড। জলাশয় ভরাট-টিলা কাঁটা চলছে অহরহ।

সাম্প্রতিক কয়েকটি ছোট ভূমিকম্পের কারণে বড় ধরনের ভূমিকম্পের শঙ্কার কথাও বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেটে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এই অঞ্চলের প্রায় ৮০ ভাগ স্থাপনা ধসে পড়তে পারে। এতে প্রাণ হারাবে প্রায় ১২ লাখ মানুষ এবং ক্ষতি হবে ১৭ হাজার কোটি টাকার।

ফরাসি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম ১৯৯৮ এর জরিপ অনুযায়ী ‘সিলেট অঞ্চল’ সক্রিয় ভূকম্পন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ৭ মাত্রার ভূমিকম্পেই সিলেট হতে পারে ধ্বংসস্তূপ। ১৮৩৩, ১৮৮৫, ১৮৯৭, ১৯০৫, ১৯৩০, ১৯৩৪, ১৯৪৭ ও ১৯৫০ সালের বড় ভূকম্পনের মধ্যে দুটিরই উৎপত্তিস্থল ছিল (এপি সেন্টার) সিলেটের জৈন্তার ভূগর্ভে। একই উৎপত্তিস্থল থেকে ঘটে যাওয়া ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে সিলেট অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেটি ভূকম্পনের ইতিহাসে ‘দ্য গ্রেট আসাম আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮ এর বেশি। এই ভূমিকম্পের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তনসহ সিলেট ও আসাম অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক পরিবর্তন ঘটে।

১৯৫০ সালে আসামে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কারণে সিলেট অঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষতি হয়ছিল। এই ভূমিকম্পটি ‘আসাম-তিব্বত আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮.৬। গবেষক দলের সদস্য শাবিপ্রবির অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, ভূমিকম্পের দিক থেকে সিলেট মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও তাৎক্ষণিক ক্ষতি হ্রাস ও উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য সিলেটে আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি নেই। ভূমিকম্পের ঝুঁকি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্টদের এখনই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, যে টেকনোটিক প্লেটে সিলেট অঞ্চল অবস্থিত, তা ক্রমেই উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে। প্রতি ১০০ বছরে তা এক মিটার সরছে। এ কারণে সিলেট অঞ্চলের ভূমিকম্পের ঝুঁকি দিনদিন আরও বাড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...