Ajker Patrika

ইলেকট্রিক ট্রাক্টর যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমন ব্যয়সাশ্রয়ী

ডয়চে ভেলে
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১: ৪২
ইলেকট্রিক ট্রাক্টর যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমন ব্যয়সাশ্রয়ী

কৃষিক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার তেমন বাড়ছে না৷ জার্মানির এক কোম্পানি ইলেকট্রিক ট্রাক্টর তৈরি করে সেই ঘাটতি পূরণ করতে চাইছে৷ এক চাষি সেই প্রণালি কাজে লাগিয়ে সুবিধা পাচ্ছেন৷

ডিজেল ট্রাক্টরের বিকট শব্দ ও কালো ধোঁয়া অনেকেরই পরিচিত৷ তার পাশেই ইলেকট্রিক ট্রাক্টর থাকলে পার্থক্য সহজেই চোখে পড়ে৷ কারণ, সেটি থেকে একেবারেই কোনো ধোঁয়া বার হয় না৷

বাভেরিয়া রাজ্যের ইয়োহানা ও টাডেউস বাইয়ার সেই ট্রাক্টর ডিজাইন করেছেন৷ কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিপ্লব আনতে এটাই তাঁদের অবদান৷

১৬০ হর্সপাওয়ারের টাডুস নামের প্রোটোটাইপ মিউনিখের উপকণ্ঠে এক অরগ্যানিক খামারে কাজে লাগানো হচ্ছে৷ একবার চার্জ দিলে এই ট্রাক্টর পাঁচ থেকে আট ঘণ্টা কাজে লাগানো যেতে পারে৷ মূল আইডিয়া অবশ্য একেবারে নতুন নয়৷ টাডেউস বলেন, ‘আমার পরিবার চাষবাস করে এসেছে৷ কম বয়সে এবং পরেও আমি সেই কাজে অনেক সাহায্য করেছি৷ সেখানে অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে দেখেছি৷ মনে হয়েছে, গ্রিডে চালান দেওয়ার বদলে সেই বিদ্যুৎ সেখানেই ব্যবহার করা অনেক শ্রেয়৷'

ডিজেল-চালিত ট্রাক্টরের তুলনায় বিদ্যুৎ-চালিত ট্রাক্টরের মূল্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হতে পারে৷ তবে সেটির ডেভেলপরদের মতে, সেই বিনিয়োগের দ্রুত সুফল পাওয়া যায়৷ টাডেউস বাইয়ার বলেন, ‘ট্রাক্টর যত দিন চালু থাকে, সে সময়কালে মূল ব্যয়ের উৎস জ্বালানি৷ এ ক্ষেত্রে নিজস্ব উদ্যোগে উৎপাদিত বিদ্যুতের কল্যাণে জ্বালানির ব্যয় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কম৷ ফলে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ঘণ্টা কাজে লাগানোর পরেই বাড়তি ব্যয় উঠে আসে৷'

ফ্রানৎস ওবারআইসেনবুখনার বিদ্যুতচালিত ট্রাক্টরটিকে প্রথমবার বাস্তব পরিবেশে পরীক্ষা করছেন৷ তাঁর খামারের ছাদের সৌর প্যানেল তাঁর বিদ্যুতের চাহিদার প্রায় পুরোটাই মেটাতে পারে৷ খামারের মালিক ফ্রানৎস ওবারআইসেনবুখনার বলেন, ‘‘জ্বালানির ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হওয়াকে আমি গুরুত্ব দেই, কারণ, সেটা আমাকে আরও আর্থিক নিরাপত্তা দেয়৷ এর অর্থ, গ্রিডে বাজারমূল্য ওঠানামা করলেও আমার তেমন কিছু এসে যায় না৷'

ইলেকট্রিক ট্রাক্টর তাঁকে সম্ভবত আরও স্বাবলম্বী করে তুলবে৷ ডিজেলের উচ্চমূল্যের কারণে তাঁকে বিচলিত হতে হবে না৷ ব্যাটারিচালিত টাডুস ট্রাক্টরের আরেকটি সুবিধা রয়েছে৷ ফ্রানৎস বলেন, ‘ইলেকট্রিক মোটরের রক্ষণাবেক্ষণ অনেক সহজ, ক্ষয়ও কম হয়৷ তাছাড়া দুর্গন্ধ বা কালো ধোঁয়াও বের হয় না৷ আমাকে বায়ুদূষণ রোধে কিছু করতে হয়না, কারণ এগুলি নির্মল৷'

একটা অসুবিধা অবশ্য রয়েছে৷ মাঠে লাঙল চালানো বা কঠিন কোনো কাজের জন্য ব্যাটারি যথেষ্ট শক্তি দিতে পারে না৷ টাডুস কোম্পানির টাডেউস বাইয়ার মনে করিয়ে দেন, ‘৫০০ হর্স পাওয়ারের ট্রাক্টর একটানা উচ্চমাত্রায় চালু থাকে৷ তাই ব্যাটারি এর বিকল্প হতে পারে না৷ কমপক্ষে অদূর ভবিষ্যতে ও বর্তমান প্রযুক্তির সাহায্যে সেটা সম্ভব নয়৷ তাই এ ক্ষেত্রে ফুয়েল সেল বা ডিজেল জেনারেটর সমাধানসূত্র হতে পারে৷'

ইয়োহানা বাইয়ার নতুন ট্রাক্টরের বিপণনের বিষয়টি দেখাশোনা করেন৷ প্রথমদিকে ক্রেতা পেতে তাঁকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল৷ কিন্তু কৃষিক্ষেত্রে জার্মান সরকারের ডিজেল ভর্তুকির মেয়াদ শেষ হতে চলায় আরও বেশি চাষি বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা করছেন৷ ইয়োহানা বলেন,‘‘সূচনা পর্বের পর মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে, নতুন প্রশ্নও শুনতে পাচ্ছি৷ নতুন প্রযুক্তি ও সেটির নানা সুবিধার প্রশংসা আমরা স্পষ্ট বাড়তে দেখছি৷ বিশেষ করে আর্থিক সাশ্রয় আকর্ষণীয় হচ্ছে৷'

প্রথম সারির যান প্রস্তুতকারকেরাও বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রের যন্ত্রপাতিগুল বিদ্যুৎ-চালিত করে তোলার উদ্যোগে শামিল হচ্ছেন৷ চাষি হিসেবে ফ্রানৎস ওবারআইসেনবুখনার আরও এক ধাপ এগোনোর কথা ভাবছেন৷ তিনি নিজের সৌর উৎপাদন প্রণালির সম্পূরক হিসেবে টাডুস ব্যাটারি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন৷ দিনের একটা বড় সময় জুড়ে ট্রাক্টর ব্যবহার করা হয় না৷ তাই তাঁর বাসা ও খামারের ভবনগুলোতে ট্রাক্টর অব্যবহৃত বিদ্যুৎ পাঠাতে পারে৷

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত