Ajker Patrika

আমার ক্যারিয়ারের পেছনে ডিরেক্টরদের অবদান অনেক 

খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২২, ১৪: ১৬
আমার ক্যারিয়ারের পেছনে ডিরেক্টরদের অবদান অনেক 

সজল তখন লঞ্চে। ঢাকায় ফিরছিলেন। বাবাকে নিয়ে গিয়েছিলেন দাদাবাড়ি পটুয়াখালী। সন্ধ্যা তখন। বাবার সঙ্গে লঞ্চ ভ্রমণে মনটাও ভীষণ ভালো ছিল সজলের। রিং বাজতেই ফোন তুললেন। কথা বললেন মন খুলে। নতুন সিনেমায় অভিনয় করছেন আবদুন নূর সজল। নাম ‘সংযোগ’। আবু সাইয়ীদ বানাচ্ছেন। সিনেমাটি নিয়েই শুরু হলো আলাপ।

সংযোগসিনেমায় আপনার সংযোগ কীভাবে হলো?
নির্মাতা আবু সাইয়ীদ ভাইয়ের সঙ্গে বেশ আগে থেকেই ‘সংযোগ’ সিনেমাটি নিয়ে কথা হচ্ছিল। বছর দশেক আগে তাঁর একটি ফিকশনে কাজ করেছিলাম। আমার করা যত ভালো ফিকশন আছে, তার মধ্যে ওই ফিকশন একটা। ১০ বছর আগেই যে কনটেন্টটি করেছিলাম, সেটি এখনো আধুনিক। সাইয়ীদ ভাইয়ের গল্প বলা, ডিরেকশন—সব সময়ই আমার খুব পছন্দের। তাঁর ‘সংযোগ’ সিনেমায় অভিনয়ের অফার পাওয়ার পর আমি শুধু গল্পটা শুনতে চেয়েছিলাম। গল্প আর চরিত্রটি শুনলাম। ভালো লাগল। এভাবেই কাজ শুরু।

কী ধরনের গল্প নিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘সংযোগ’। কিছুটা ধারণা দেওয়া যায়?
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির পাশাপাশি এই সময়ের সমাজ বাস্তবতা নিয়ে এই সিনেমার গল্প। আমি অভিনয় করছি একজন উদ্ভাবকের চরিত্রে। আমি আসলে লাকি যে এ রকম একটি গল্প, চরিত্র আমার কাছে এসেছে।

‘সংযোগ’ সিনেমাটি তৈরি হচ্ছে গণ-অর্থায়নে। বাংলাদেশে এ ধারণা অনেকটাই নতুন। স্বাধীন সিনেমার ক্ষেত্রে এদেশে গণ-অর্থায়নকে কতটা সম্ভাবনাময় মনে করেন?
হয়তো এ কনসেপ্টটা আমাদের জন্য নতুন। তবে গণ-অর্থায়ন বা ক্রাউন্ড ফান্ডিংয়ের সিনেমা কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। সারাবিশ্বে তৃণমূল পর্যায় থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সিনেমা তৈরি হচ্ছে। সেগুলো বিশ্বজুড়ে প্রশংসাও পাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশিরাও পিছিয়ে থাকব কেন! গণ-অর্থায়নে ‘সংযোগ’-এর মতো একটা সিনেমার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যে সিনেমাটি সামাজিকবার্তা বহন করছে, এটা তো নিশ্চয়ই সম্ভাবনার। আর আমি বরাবরই নতুন যেকোনো কিছুর সঙ্গে থাকি।

আবদুন নূর সজলপরের প্রশ্নটা এ প্রসঙ্গেই। একসময় আপনি মূলত ‘রোমান্টিক হিরো’ ছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে নানা ধরনের চরিত্রে নিজেকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছেন। এটি অভিনেতা হিসেবে আপনাকে কতখানি সমৃদ্ধ করছে?
আমার কাছে বরাবরই একটা জিনিস মনে হয়, যাঁরা অভিনয় ভালোবাসেন, এ শিল্পটাকে ভালোবাসেন, তাঁরা সবাই চান ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে কাজ করতে। আমার শুরু থেকে আগ্রহ ছিল ভিন্ন চরিত্রে কাজ করার। কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত আমার কাছে অত বৈচিত্রময় চরিত্র আসত না। একইরকম চরিত্র পেতাম। যে কারণে মাঝে এক-দেড় বছর কোনো কাজ করিনি। তখন চাওয়া এটাই ছিল, যেন ভিন্ন চরিত্রে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়। ভালো কনটেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তৈরি হয়।

এখন সময়টাও ভালো। অনেক এক্সপেরিমেন্টাল কাজ হচ্ছে। মানুষের পছন্দের জায়গাও বদলেছে। অনেক রকমের প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। নতুন পুরোনো সবাই বিভিন্ন রকমের এক্সপেরিমেন্ট করছেন। তো সেই জায়গা থেকে আমি বলব আমরা যাঁরা অভিনেতা, তাঁদের জন্য এটা সুসংবাদই বটে।

সবচেয়ে ভালো বিষয়, একটা সময় যে নির্মাতারা খুব ভালো কাজ করতেন, তাঁরা আবারও কাজ শুরু করেছেন। এটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক বড় সুসংবাদ। কারণ যত যা-ই বলি না কেন, আমরা যাঁরা অভিনয় করি, তাঁরা কিন্তু যে কোনো প্রজেক্টে একটা উপকরণের মতো। প্রজেক্টটা অবশ্যই একজন ডিরেক্টরের। ডিরেক্টর যখন কাজটি সুন্দর করে করেন, তখন আমাদের অভিনয় প্রশংসিত হয়।

গল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো আপনি সবার আগে গুরুত্ব দেন? গল্প, চরিত্র, সহ-অভিনেতা নাকি পরিচালক?
আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি পায় সামাজিকবার্তা। সেটার জন্য যে অনেক বড় পরিসরে কাজ করতে হবে, সেটাও আমি বলি না। একটা পরিবারে কিন্তু অনেক রকমের সমস্যা থাকে, একটা সম্পর্কেও সমস্যা থাকে। নাটক বা সিনেমায় সেই সমস্যাগুলোর যদি সমাধানের পথ দেখানো যায়। কিংবা যে দৃষ্টিভঙ্গির ভেতর দিয়ে আমরা এসেছি, সেখান থেকেও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কোনো জায়গা যদি একটা ফিকশন বা একটা সিনেমার মধ্য দিয়েও বলা যায়; সেটা আমার কাছে মনে হয় অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। সেই সাথে যে গল্পে মাটির গন্ধ আছে, আমাদের নিজস্ব কালচারের প্রেজেন্টেশনস আছে, শ্রমজীবী মানুষের গল্প—এসব কাজ আমাকে টানে। আমাদের তো কৃষিপ্রধান দেশ। খেটে খাওয়া, শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই এখানে বেশি। একজন রিকশাচালক থেকে শুরু করে একজন কৃষক, মুদি দোকানদার, মুচি, ফ্যাক্টরি শ্রমিক থেকে শুরু করে যাঁরা আছেন, এ রকম অনেক পেশা আছে। আমি পাঁচটা-সাতটা বললাম। তো এই মানুষগুলোর যে গল্প, তাঁদের যে ক্রাইসিস, সেই ক্রাইসিসের উত্তরণের যে পথ, এসব যে চিত্রনাট্যে পাই, সেগুলোতে কাজ করতে সব সময়ই ভালো লাগে।

এরপর সজল একটা গল্প শোনালেন। এবারের পটুয়াখালী সফরেরই ঘটনা। হঠাৎ এক বৃদ্ধ লোক এগিয়ে এলেন সজলের দিকে। ভালোভাবে দেখলেন। যেন কত দিন তাঁকে দেখার অপেক্ষায় ছিলেন লোকটি। মাথায় হাত বুলিয়ে সজলকে আদর করলেন। গল্প-আড্ডায় সজল জানতে পারলেন, বৃদ্ধ একসময় চা বিক্রি করতেন। দোকান ছিল। নিজের ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য দোকানটি বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছেলের আর বিদেশ যাওয়া হয়নি। বৃদ্ধের জীবনের এই করুণ ঘটনা আর সজলের ‘বর্তমান’ নাটকটি মিলে গেছে একই বিন্দুতে। ওই নাটকেও সজল চা বিক্রেতার চরিত্র করেছিলেন। চরিত্রটি বিদেশ যাওয়ার জন্য দোকানপাট সব খুইয়ে শেষ পর্যন্ত সফল হয় না ওই বৃদ্ধের ছেলের মতো। নাটকটি দেখেছেন বৃদ্ধ। নিজের জীবনের সঙ্গে নাটকের এমন অদ্ভুত মিল দেখে বৃদ্ধ অবাক যেমন হয়েছেন, পেয়েছেন সান্ত্বনাও। তাই চোখের সামনে সজলকে দেখে প্রাণভরে দোয়া করেছেন তাঁর জন্য। ঘটনার বর্ণনা শেষ করে সজল বললেন, আর কী লাগে বল! এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে!

 

প্রায় দুই যুগের অভিনয় ক্যারিয়ার আপনার। সিনেমার সংখ্যা এত কম কেন?
সিনেমার ক্ষেত্রে আমার যে গল্পগুলো ভালো লাগছে, আমি কিন্তু সেটাতেই সম্পৃক্ত হচ্ছি। আমার কোনো তাড়া নেই। এ বছর এটা করতে হবে, পরের বছর এটা করতে হবে— নট লাইক দ্যাট। আমি কিন্তু ওয়েট করতেই থাকি একটা ভালো কাজের জন্য। চরিত্রের ক্ষেত্রেও যেমন, নেগেটিভ চরিত্রেও আমি পিছপা হই না। সামনে হয়তো আমার একটা সিনেমাও আসবে নেগেটিভ চরিত্রের। একজন অভিনেতা হিসেবে চরিত্রের মতো হয়ে উঠতে পারাটাই আমার কাজ।

নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করলে কি ‘হিরো ইমেজ’ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না?
সব চরিত্র কি পজিটিভ হয়? আমাদের মানুষদের মধ্যে কি সবাই পজিটিভ? যাঁর মধ্যে ভালোর পরিমাণ বেশি, মন্দের পরিমাণ কম, তাঁকে আমরা ভালো বলি। যাঁর মধ্যে মন্দের পরিমাণ বেশি, ভালোর পরিমাণ কম, তাঁকে আমরা মন্দ বলি। কিন্তু একজন মন্দ মানুষের ভেতরেও যে ভালো গুণ থাকে না, তা কিন্তু নয়। পরিমাণটা হয়তো কম-বেশি থাকে। তো এই ধরনের চরিত্র কেন করব না? কারণ এটা তো খুব সহজ-স্বাভাবিক চরিত্র, যেগুলো আশপাশেই দেখা যায়।

আবদুন নূর সজলইন্ডাস্ট্রিতে আপনি সবার পছন্দের লোক। সবার সঙ্গেই আপনার ভালো সম্পর্ক। আপনাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক-বিবাদ নেই। রহস্যটা বলবেন?
আমি এ ইন্ডাস্ট্রিতে ২০-২২ বছর কাজ করে ফেলেছি। এত বছর যে কাজ করতে পেরেছি, এটার কারণ— সবার সহযোগিতা। আমি অনেক মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ, সৃষ্টিকর্তা তো আছেনই, আমার পরিবার তো আছেই, তাছাড়াও ডিরেক্টর, প্রডাকশন বয়, মেকআপ আর্টিস্ট, ডিওপি, লাইটম্যান, সাংবাদিক— সবাই আমাকে এত সাপোর্ট করেন, আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। তা নাহলে আমি যে পরিমাণ আলাভোলা, এতদিন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে পারতাম না।

এটা সবাই বলেন, আপনার সঙ্গে কাজ করে আরাম পাওয়া যায়। আপনি কোনো পেইন দেন না, কোনো ট্যানট্রাম নেই। আপনি সেটে থাকলে রিলাক্সে থাকেন সবাই। এ বিষয়টি কি আপনি মেইনটেইন করেন?
দায়বদ্ধতা আসলে। একজন যদি তাঁর কাজের জন্য আমাকে সিলেক্ট করেন, তিনি তার বিনিময়ে আমাকে পারিশ্রমিক দিচ্ছেন, সেই জায়গা থেকে তো আসলে সৎ থেকে আমার কাজটা করা উচিত। এই সৎ কীভাবে হবে? আমি আমার কাজটিতে যতটুকু পারি মনোযোগি থাকব। যতটুকু পারি কো-অপারেটিভ থাকব। এটাই তো স্বাভাবিক। আমি কিন্তু আলাদা করে কিছু করি না।

মানে আলাদা করে কোনো মেইনটেইনের গল্প নেই। আপনার স্বভাবটাই এমন…

হ্যাঁ, সেটাই তো হওয়া উচিত।

লঞ্চ চলছে। কখনও হুইসেল, কখনও নদীর পারের গ্রাম থেকে ভেসে আসা মাইকিংয়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে ফোনের এপাশ থেকেও। সজলের কেবিনে ঢুঁ দিল লঞ্চের কোনো কর্মী। খাবার নিয়ে এসেছে বোধহয়। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে, দু-একটা সওয়াল করে, আবার কথা শুরু করেন সজল

আপনার বাসায় দেখেছি, বইয়ের ভালো কালেকশন আছে। ছোটখাটো লাইব্রেরি বলা যায়। এক সাক্ষাৎকারেও পড়েছি, বই পড়তে ভালোবাসতেন আপনি। এমনও হয়েছে, নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানে দাঁড়িয়েই অনেক বই শেষ করেছেন…

ছোটবেলা থেকেই আমার বই পড়ার অভ্যাস ছিল। সেটার কারণ ছিলেন একজন মামা, যিনি আমাকে ছোটবেলা থেকে পড়াতেন। নামটাও বলি—উনার নাম হচ্ছে ফিরোজ। দুটো জিনিসের প্র্যাকটিস উনি ছোটবেলা থেকেই করে দিয়েছিলেন। তারমধ্যে একটা— বই পড়ার অভ্যাস। পড়া শুরু হয়েছিল কমিকস দিয়ে। পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো হলে কমিকস পাব, এ রকম একটা বিষয় ছিল।

কিন্তু আসলে ক-টা বই-ই বা পাব! যখন বইয়ের দোকানে নিয়ে যেত, পুরো বছরের খাতা-বই একসঙ্গে কেনার জন্য, তখন হয়তো এক ঘণ্টা সময় পাওয়া যাবে, এই এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে যত পারি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ফেলব। আর যেগুলো পড়া সম্ভব হচ্ছে না, সেগুলো কিনে নেব। এ-ই ছিল টার্গেট। তো ওখান থেকেই আসলে পড়ার অভ্যাস।

শুরুর দিকে পড়তাম রাকিব হাসান, সেবা প্রকাশনী। তারপর আনোয়ার হোসেন। সবচেয়ে বেশি বইয়ের পোকা আমি হইছিলাম হুমায়ূন আহমেদের কারণে। আমার কাছে মোটামুটি ভালো একটা হুমায়ূন আহমেদ সমগ্র আছে। তারপর জাফর ইকবাল, শীর্ষেন্দু, সমরেশ— সবার বই-ই পড়া হইছে।

আবদুন নূর সজলফিরোজ মামার কথা বলছিলেন। উনি দুটি জিনিসের অভ্যাস করে দিয়েছিলেন। একটা বই পড়া। আরেকটা কী?
আরেকটা বিষয় ছিল, পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো হলে ওই যে মামার কথা বললাম, ফিরোজ মামা, উনি থিয়েটারের শো দেখাতে নিয়ে যেতেন। আমার এখনও মনে আছে, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’ নামে একটা নাটক ছিল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের। এই নাটকটা আমি ছোটবেলায় ২২ বার দেখছি। আমি কিন্তু একই চরিত্র অনেককে করতে দেখেছি। মাখন চরিত্রে হায়াত কাকুকেও (আবুল হায়াত) দেখেছি, যুবরাজ ভাইকেও (খালেদ খান) দেখেছি করতে। লাইলি চরিত্র, এটাতে আমি নিমা আপাকে (নিমা রহমান) দেখেছি, সারা আন্টিকে (সারা যাকের) দেখেছি, বিপাশা আপাকেও (বিপাশা হায়াত) করতে দেখেছি। তখন বিষয়টা ছিল, রেজাল্টটা ভালো করতে হবে, কারণ ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’ দেখতে হবে। এই নাটকটি এত ভালো লাগত যে, ওই সময় যতগুলো মঞ্চের নাটক হতো, সেই ‘সাত ঘাটের কানাকড়ি’, ‘কঞ্জুস’, ‘যৈবতী কন্যার মন’—মোটামুটি সব দেখছি।

এই যে বই পড়া কিংবা মঞ্চে নাটক দেখা—এগুলো অভিনয়ে কতটা হেল্প করেছে আপনাকে?
এটা আসলে ওইভাবে ডিফাইন করতে পারব না, বই পড়া কিংবা নাটক দেখা—এসবের কারণেই আমি অভিনয়ে এসেছি কিনা! বা ভালো অভিনয় করতে এগুলো কতটা কাজে লেগেছে, লেগেছে নিশ্চয়ই, কিন্তু কতটা সাহায্য করেছে এভাবে ডিফাইন করা কঠিন। যেসব ডিরেক্টরদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁরা প্রত্যেকে আমাকে শিখাইছেন। বিশেষভাবে আমি তিনজনের নাম মেনশন করতে চাই—আফজাল হোসেন, হুমায়ূন ফরীদি, আরেকজন হচ্ছেন আমাদের সেলিম আল দীন স্যার।

আমার মনে আছে, প্রথম যে সিরিয়ালটি করেছিলাম, তার নাম ‘হীরাফুল’। ওটা ছিল আফজাল হোসেনের ডিরেকশন, আর সেলিম আল দীন স্যারের লেখা। এমনিতে খুব কঠিন একটা লেখা আর খুব কঠিন একটা ডিরেকশনের মধ্যে কাজ করতে যাচ্ছি, তখন অ্যাকটিংয়ের তেমন কিছু বুঝিও না। আমার পেছনে আফজাল আঙ্কেল ভীষণ এফোর্ট দিতেন। নাটকটি যখন অনএয়ারে এল, আমাকে একদিন সেলিম আল দীন স্যার ফোন করেছিলেন। তিনি যদিও আমাদের ক্যাম্পাসেরই, কিন্তু আমার কাছে ফোনটা এসেছিল মাত্রার (আফজাল হোসেনের প্রতিষ্ঠান, মাত্রা) অফিস থেকে। মাত্রার অফিস থেকে ইউজুয়ালি আফজাল আঙ্কেলই ফোন করেন। আমি ভেবেছিলাম, তিনিই ফোন করেছেন। তাঁর সঙ্গে আমি এর আগে বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। আমি একটু দুষ্টুও ছিলাম, আফজাল আঙ্কেলকে জ্বালাইতাম ভীষণ। ফোন করে যখন বলছিলেন, হীরাফুল দেখলাম। ভালো করেছো। তুমি না তুই বলেছেন, মনে নেই। আমি বলছিলাম, আপনি যেমনটা বলছেন, তেমনভাবেই তো করছি। এখানে আমার তেমন কৃতিত্ব নেই। তখন তিনি বললেন, ‘আদনান চরিত্রটাকে আমি যেভাবে দেখতে চেয়েছিলাম, সেভাবেই পেয়েছি। বরং একটু বেটার পেয়েছি।’ এটা শুনে আমি কিছুক্ষণ কনফিউজড। প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা সজল তুমি কি আমাকে চিনতে পেরেছ?’ আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘আফজাল আঙ্কেল’। তখন বললেন, ‘না, আমি সেলিম আল দীন বলছি।’ এটা শোনার পর আমি যেখানে ছিলাম, সেখানে সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেছি। উনি তো আমার ক্যাম্পাসের টিচার। উনি এবার কথাগুলো আবার বললেন। সাহস দিলেন, ‘এর পরের লটে যখন স্ক্রিপ্টটা আসবে, যদি কোনোকিছু বুঝতে না পারো, বা কোনো হেল্প লাগে, তুমি আমার কাছে এসো, আমি তোমাকে বুঝিয়ে দেব।’

এটা তো আপনার জন্য বড় প্রাপ্তি তখন…
শুধু তা-ই নয়, ঠিক এই সময়ে এসে অভিনয়ের প্রতি আমার আগ্রহের জায়গা তৈরি হয়। এর আগে কিন্তু অভিনয় নিয়ে আমার তেমন কোনো প্ল্যান ছিল না। আমি যে এখানে কাজ করব রেগুলার, তেমনও বিষয় ছিল না। তখন আমি জাহাঙ্গীরনগরে পড়তাম, একটা ছোট জবও করতাম। আফজাল আঙ্কেল উনার বাসায় নিয়ে পর্যন্ত আমাকে ডায়লগ স্ক্যান করা শিখাইছেন। সংলাপে কোন জায়গায় গ্যাপ দিতে হবে, পজ দিতে হবে—এগুলো সব উনার শেখানো।

আবদুন নূর সজলহুমায়ূন ফরীদির সঙ্গে অভিজ্ঞতা কেমন?
ফরিদী আঙ্কেলের সাথে সিন করতে গেলাম, সেটা আরেক অভিজ্ঞতা। এমনও হয়েছে ডায়লগের একটা জায়গায় লেখা আছে, উনি বলে দিলেন, একটা কাজ কর, তুই এখানে একটা গ্যাপ দে। গ্যাপ দিয়ে এরপর এই সংলাপটা বল। বললাম। দীপংকর দীপনের শুট। উনি কাট করলেন। তারপর বললেন, এভাবে না। একটা টেক গেল। সেকেন্ড টেক। উনি কিন্তু ওই দৃশ্যে নিজেও অ্যাকটিং করতেছেন। উনি বললেন, এভাবে না করে এখানে একটা ‘হু’ অ্যাড কর। বললাম। বলার পরে উনি আবার কাট করলেন। তিনবারের পর উনি আবার বললেন, শুরুর দিকে আরেকটা জিনিস অ্যাড কর। তারপর বল। উনাকেই কিন্তু অ্যাকটিং করতে হচ্ছে তিনবার করে।

উনার সঙ্গে আমার যতবার কথা হতো, উনার ডিরেকশনেও কাজ করতেছি। অনেক ছোট ছোট জিনিস, ওখানে ও রকম করিস না, এভাবে কর, এভাবে ওপর থেকে ডায়লগ বল। এ রকম বহু কিছু আছে। উনি আমাকে বকতেনই সারাক্ষণ। এমনও হতো, আমার একটা নাটক অনএয়ার হওয়ার পর, উনি ফোন করে বললেন, এ নাটকটা তুই কেন করছিস? এইটা তো কোনো অ্যাকটিং হইলো না। এ রকম কথা অনেক বলছেন উনি।

আমি জানতাম, ফরীদি আঙ্কেল ফোন করা মানে এখন বকা খাবো। একদিন চ্যানেল ওয়ানের একটা শোতে গেছিলাম। সেখানে যে সব ডিরেক্টর বা অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁদের বাইটস নিয়ে আসতো। আই নেভার এক্সপেক্ট যে, ওখানে ফরিদী আঙ্কেলের বাইটস আসবে। শো হোস্ট করছিলেন তানিয়া হোসেইন। তো এ রকম শোয়ের মাঝখানে হঠাৎ করে বলল, সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য, চলো আমরা স্ক্রিনে দেখি। হঠাৎ দেখি ফরিদী আঙ্কেল। তাঁকে দেখে তো আমার হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু হলো। এখন তো আমি বকা খাব। ফরিদী আঙ্কেল বললেন, ‘শোন, তোকে কখনও বলা হয়নি। আমি তোর ফ্যান’। এই কথা শোনার পর তাঁকে থ্যাঙ্কু পর্যন্ত বলতে পারিনি। (এতটাই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম) বাকি পুরাটা শো আমি ‘হ্যাঁ, না, আচ্ছা’ ছাড়া আর কিছু বলেত পারিনি। আমি ওই কথা সারাজীবন ভুলতে পারিনি।

এজন্য আমি বলি, আমার পেছনে এ রকম অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা আসলে সত্যি একদমই আমাকে হাতে ধরে ধরে শিখাইছেন। আমি তো আসলে কিছু শিখে আসিনি।

এখন যারা আপনার সঙ্গে কাজ করেন, তাঁদের অভিজ্ঞতাও আপনার সঙ্গে নিশ্চয় এ রকমই। আপনি যথেষ্ট হেল্প করেন।
আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা উল্টা। আমার সঙ্গে নুতন যাঁরা কাজ করতে আসেন, আমি কিন্তু ওদের কাছ থেকেও শিখি। দেখা যায়, নতুন একজন এত সুন্দরভাবে ডায়লগ স্ক্যান করেন অনেক সময়। তখন মনে হয়, আচ্ছা, এভাবেও তো হতে পারে।

শেখার জায়গাটা আপনি ওপেন রাখছেন একেবারে…
আমার কাছে ওপেন। আমি সবসময়ই শিখি। আমি খুবই ডিরেক্টরস আটিস্ট। ডিরেক্টরদের সাথে যাদের যে প্রজেক্ট আমি করি, আমি চেষ্টা করি, তাঁরাও চেষ্টা করেন, যাতে কথা বলে বুঝে নিতে পারি আগে থেকে, যে চরিত্রটি করতে যাচ্ছি… যতরকমের গাইডলাইন থাকে আমি সব আগে থেকে তাঁদের কাছ থেকে নেওয়ার চেষ্টা করি। তারপর যতটুকু পারা যায়, এক্সিকিউট করি ক্যামেরার সামনে। কিন্তু আমার পেছনে ডিরেক্টরদের অবদান অনেক।

[কথা কি আর শেষ হয়! সে তো নদীর মতো। স্রোতের মতো। বয়ে চলে। সজলের সঙ্গে আরও অনেক বিষয়ে কথা হলো। রয়ে গেল আরও অনেক না বলা কথা…]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাজাখস্তানে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানালেন নিশো

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৩
আফরান নিশো। ছবি: সংগৃহীত
আফরান নিশো। ছবি: সংগৃহীত

৮ ডিসেম্বর ছিল অভিনেতা আফরান নিশোর জন্মদিন। প্রতিবছরের মতো এবারও তাঁর ভক্তরা দিনটি উদ্‌যাপন করলেন বিশেষ আয়োজনে। তবে ‘দম’ সিনেমার শুটিংয়ে কাজাখস্তানে থাকায় অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, এই আয়োজনে উপস্থিত থাকতে পারবেন না নিশো। শেষ পর্যন্ত সবাইকে চমকে দিয়ে ভক্তদের সঙ্গে নিজের জন্মদিন উদ্‌যাপনে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি।

কাজাখস্তানে শুটিং শেষ হয়েছে ৬ ডিসেম্বর। দেশে ফিরেই ভক্তদের আমন্ত্রণে নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হাজির হন নিশো। এদিন তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দম সিনেমার পরিচালক রেদওয়ান রনি ও নায়িকা পূজা চেরি। স্বাভাবিকভাবে উঠে আসে দম সিনেমার প্রসঙ্গ। নির্মাতা জানালেন, কতটা কঠিন পরিস্থিতির মাঝে শুটিং করেছেন তাঁরা। একদিন পাহাড়ে শুটিং করতে গিয়ে হাত কেটে যায় নিশোর। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, শুটিং হয়েছে দুর্গম এলাকায়। তবু থেমে যাননি নিশো, আহত অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যের শুটিং চালিয়ে গেছেন।

দম সিনেমার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে নিশো বলেন, ‘আমরা সবাই চাই গল্প, চাই পারফরম্যান্স। দম সিনেমার মতো একটি গল্পের দায়িত্ব আমার কাঁধে, এটা আমার কাছে আশীর্বাদের মতো। এটা যদি ঠিকমতো পালন করতে না পারি, তাহলে কীভাবে হবে? আমি জানি, একজন সিনিয়র হিসেবে টিমের স্পিড অনেকটাই আমার ওপর নির্ভর করে। তখন এই হাত কাটা, পা কাটা, সেখানে মেডিকেল সাপোর্ট এল কি এল না, এসব কোনো বিষয় না। এ ছাড়া আমাদের খুব টাইট শিডিউল ছিল। সেখানে ১০ মিনিটের একটা বিরতি মানে শিডিউল ফেল করা। আমি দাবি নিয়ে বলতে পারি, এই সিনেমায় টিমের সবাই যতটা কষ্ট নিয়ে কাজ করেছে, এত কষ্ট কোনো প্রোডাকশনে করতে হয়নি। অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল সেখানে।’

নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কাজাখস্তানের শুটিং শেষ করেছে দম টিম। নিশো বলেন, ‘বয়স ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বটা বেড়ে যায়। এখানে নিজেকে শুধু অভিনেতা হিসেবে ভাবিনি। ভেবেছি, আমিও নির্মাতার একটি অংশ। আমরা যে ওয়েদারে কাজ করেছি, সেখানে ২টার সময় সূর্যের আলো থাকে না। আমরা কখনোই ভাবি নাই, সানলাইট ২টার সময় চলে যায়। এত জটিলতার পরেও আমরা এক দিনও বেশি শুটিং করি নাই। নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ করেছি। সিনেমাসংশ্লিষ্টদের কাছে আমরা আমাদের কথা রেখেছি।’

দম সিনেমার গল্প নিয়ে এখনই বিস্তারিত বলতে চান না এই অভিনেতা। শুধু জানালেন, বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিতে এ ধরনের গল্প নিয়ে আগে কাজ হয়নি। তিনি আশা করেন, গল্পটি সবাই উপভোগ করবে এবং সিনেমাটি দেখার পর সবাই গর্ব করবে যে এটি বাংলাদেশের সিনেমা।

কাজাখস্তানে শুটিং শেষে এবার দমের শুটিং হবে দেশে। কয়েকটা দিন বিশ্রাম নিয়ে আবার লাইট, ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন অভিনয়শিল্পীরা। নিশো, পূজা চেরির সঙ্গে এতে আরও অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরী। আগামী বছর রোজার ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে দম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংগীত নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা জানতে চান হামিন আহমেদ

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
হামিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
হামিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

এই সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। এরপর বেজে উঠবে নির্বাচনী ঘণ্টা। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পরিকল্পনা জানাচ্ছে, যা প্রকাশ করা হবে নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে। এমন সময়ে সংগীত নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা জানতে চাইলেন মাইলস ব্যান্ডের প্রধান সংগীতশিল্পী হামিন আহমেদ। শুধু তা-ই নয়, সংগীত ও সংস্কৃতি নিয়ে ইতিবাচক পরিকল্পনা না থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট না দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল ফেসবুকে হামিন আহমেদ লেখেন, ‘জাতীয় নির্বাচন কিছুদিন পরেই। সংগীতস্রষ্টা, শিল্পী এবং সংগীতপ্রেমীরা জানতে চান—ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য আপনার সাংস্কৃতিক ও সংগীতভিত্তিক ইশতেহার কী? বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দল সংগীত নিয়ে তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি। অন্য সবকিছু নিয়ে করেছে, কিন্তু সংগীত নিয়ে নয়! আমরা জানতে চাই (সংগীত নিয়ে পরিকল্পনা)।’

আরও একটি পোস্টে হামিন তুলে ধরেন বাংলাদেশে গান শোনা মানুষের পরিসংখ্যান। সেখানে হামিন লেখেন, ‘২০২৫ সালে বাংলাদেশে রেডিও, পডকাস্ট ও অন্যান্য মাধ্যমে গান শোনা লোকের সংখ্যা জনসংখ্যার প্রায় ২৮.৪০ শতাংশ। এআই বলছে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৫১.৯১ মিলিয়নে পৌঁছাবে; যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ যদি বলে, বাংলাদেশে সংগীতের বিরোধিতাকারী দল/প্রার্থীদের ভোট দেব না, তাহলে কী হবে বলে আপনার মনে হয়? এই ক্ষমতা উপলব্ধি করুন।’

বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (বামবা) সভাপতির দায়িত্বে থাকা হামিন আহমেদের এই পোস্ট ইতিমধ্যে ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশের অনেক সংগীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, ব্যান্ড সদস্য ও সংগীতপ্রেমীরা পোস্টটি শেয়ার করে নিজেদের সমর্থন জানাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কথা হয় হামিন আহমেদের সঙ্গে। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে অনেক দিন ধরে সহশিল্পীদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। আমরা খেয়াল করলাম, রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সবকিছু আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হলেও মিউজিক বা আর্ট কালচার নিয়ে কখনোই কিছু বলা হয় না। অথচ এমন কোনো অনুষ্ঠান নেই, যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান-বাজনা হয় না। কেন মিউজিশিয়ানরাই বারবার সাফার করবে। এক পক্ষ বলবে বন্ধ করে দেব, আরেক পক্ষ বলবে চালু রাখব। তারা কী চাইছে, সেটা স্পষ্ট করা দরকার। সবাই তো মিউজিশিয়ানদের কাছেও ভোট চাইবে। বাংলাদেশে ২ থেকে ৩ কোটি মানুষ গান গাওয়া ও শোনার সঙ্গে জড়িত। কেউ যদি মিউজিক বন্ধ করে দিতে চায়, তাকে তো এই মানুষগুলো ভোট দেবে না। কারণ, কারও পক্ষ থেকে মিউজিক নিয়ে কোনো পরিকল্পনার কথা শোনা যায়নি।’

হামিন আহমেদ আরও বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের যে সময়, সেটা যেকোনো সময়ের চেয়ে দুর্যোগপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর ও চক্রান্তমূলক। বিভিন্ন শো ক্যানসেল হচ্ছে, আবার শোনা যাচ্ছে, গান-বাজনা বন্ধ করতে হবে ইত্যাদি। এখনই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি না। আমরা জানতে চাই, যে দলগুলো নির্বাচনে যাচ্ছে, আমাদের জন্য তাদের স্ট্র্যাটেজি কী? আর্ট কালচার নিয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা কী? সংস্কৃতি কীভাবে এগোবে, এই বিষয়ে কী ভাবছে তারা? এখনো এ বিষয়ে ঘোষণা আসেনি কোনো দলের পক্ষ থেকে। আমরা সেটাই স্পষ্ট জানতে চাইছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিজয়ের মাসে সুমীর চার গান

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
সুমী শারমীন,সাব্বির জামান ও প্রিয়াঙ্কা গোপ। ছবি: সংগৃহীত
সুমী শারমীন,সাব্বির জামান ও প্রিয়াঙ্কা গোপ। ছবি: সংগৃহীত

বিজয়ের মাসে নতুন চার গান নিয়ে আসছেন গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী সুমী শারমীন। চারটি গানই লিখেছেন সুমী, দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, বাকি দুটি গান গেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গোপ ও সাব্বির জামান। গানগুলো সুর করেছেন শান সায়েক ও সাব্বির জামান।

সুমী গেয়েছেন ‘রোদ্দুর কোলাহল’ ও ‘কোনো এক বিকেলে’ শিরোনামের দুটি গান। রোদ্দুর কোলাহল গানটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন শান সায়েক। কোনো এক বিকেলের সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন সাব্বির জামান। অন্যদিকে প্রিয়াঙ্কা গোপ গেয়েছেন ‘বিজয় রাঙানো সুখ’ শিরোনামের গান। এটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন শান সায়েক; সাব্বির জামান গেয়েছেন নিজের সুর ও সংগীতায়োজনে ‘ভালোবাসি তোমায়’ শিরোনামের গান। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন লোকেশনে গানগুলোর মিউজিক ভিডিওর শুটিং হয়েছে।

গানগুলো নিয়ে সুমী শারমীন বলেন, ‘প্রতিটি গানেই জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। গানগুলো নিয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী। চারটি গানেরই সুর শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যাবে—এতটুকু আমি নিশ্চিত বলতে পারি।’

প্রিয়াঙ্কা গোপ বলেন, ‘বিজয় রাঙানো সুখ গানটির কথা যেমন চমৎকার, গানের সুরও সহজ-সরল। সাধারণত এই ধরনের গান আমার গাওয়া হয় না। কিন্তু এই গান গেয়ে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।’

সাব্বির জামান বলেন, ‘সুমী আপার গানের কথাগুলো সাবলীল ও গভীরতায় পূর্ণ। তাঁর লেখনীর গুণেই সুর করাটা সহজ হয়ে যায়। এই গানগুলোর সুর সত্যিই মনে গেঁথে যাওয়ার মতো।’

প্রিয়াঙ্কা গোপের গাওয়া গানটি প্রকাশিত হবে এনিগমা টিভি ইউটিউব চ্যানেলে এবং সাব্বিরের গানটি আলফা আই ইউটিউব চ্যানেলে। সুমী শারমীনের গাওয়া গান দুটিও প্রকাশিত হবে ইউটিউবে, চ্যানেলের নাম শিগগির শ্রোতাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে আপত্তি কেট উইন্সলেটের

বিনোদন ডেস্ক
কেট উইন্সলেট। ছবি: সংগৃহীত
কেট উইন্সলেট। ছবি: সংগৃহীত

সৌন্দর্য ধরে রাখতে অনেকে এখন প্লাস্টিক সার্জারির আশ্রয় নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা বেড়েছে হলিউডের নতুন অভিনেত্রীদের মধ্যে। বিষয়টির সমালোচনা করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট। সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেট বলেছেন, ‘এ প্রজন্মের অভিনেত্রীরা ইনস্টাগ্রামে আরও বেশি লাইক পাওয়ার জন্য নিজেদের নিখুঁত দেখানোর প্রতি মগ্ন হয়ে পড়েছে। এটা আমাকে খুব বিরক্ত করে।’

শুধু প্লাস্টিক সার্জারি নয়, ওজন কমানোর জন্য অনেকে নানা রকম ওষুধ সেবন করেন। এটি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে কেট উইন্সলেট বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে, তার আত্মসম্মান নির্ধারিত হবে শুধুই তার চেহারা দিয়ে, তাহলে সেটা ভয়ানক। অনেকে ওজন কমানোর জন্য ওষুধ খাচ্ছে। বোটক্স ও ফিলারের পেছনে প্রচুর অর্থ খরচ করছে। এসব তাদের কাছে নেশার মতো হয়ে গেছে। নিজেদের শরীর ও চেহারা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট হতে পারছে না। কিন্তু আসলে এসব ওষুধ যে তাদের কতটা ক্ষতি করছে, সে ব্যাপারে তারা সচেতন নয়। নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি প্রচণ্ড অবহেলা করছে তারা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে।’

কেট উইন্সলেট জানান, বার্ধক্য রোধের জন্য তিনি কখনো এসব উপায় অবলম্বনের চিন্তাও করেননি। অভিনেত্রী জানান, শুধু তিনি নন, হেলেন মিরেন, টনি কোলেট, আন্দ্রেয়া রাইজবোরো, সিগর্নি ওয়েভার—সবাই হলিউডের প্লাস্টিক সার্জারির প্রবণতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন। কেট উইন্সলেট বলেন, ‘যখন হাতে-মুখে বয়সের ছাপ পড়ে যায়, সেটা দেখতে আমার খুবই ভালো লাগে। এটাই তো জীবন। বয়স অনুযায়ী চেহারা বদলায়। আমার চোখে সবচেয়ে সুন্দরী নারী যারা, তাদের অনেকের বয়স ৭০ বছরের বেশি। এখনকার অনেক নারীর সৌন্দর্য সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই, এটা আমাকে হতাশ করে।’

কৃত্রিমতায় কোনো সৌন্দর্য নেই, নকলের আশ্রয় না নিয়ে সব সময় যেটা বাস্তব, সেটাই প্রকাশ করতে হবে—নতুন অভিনেত্রীদের প্রতি এটাই পরামর্শ কেট উইন্সলেটের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত