Ajker Patrika

‘এসব উদাসীনতা সে হেসেই উড়িয়ে দিত’

মীর রাকিব হাসান
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২১, ১৩: ০৩
Thumbnail image

আমাদের সিনেমার গানের রাজা, সম্রাট যা-ই বলি, সেটা এন্ড্রু কিশোর। তার মতো শিল্পী, সর্বোপরি ভালো মনের মানুষ খুব কমই আছে। ওর সঙ্গে আমার হাজার হাজার গান আছে। সেটা আমি গুনে বলতে পারব না। কিশোরের সঙ্গে ঠিক কত আগে পরিচয়, সেই সালটাও আমি এখন মনে করতে পারি না। কিশোর আমাকে বলত, রাজশাহীতে আমার একটা অনুষ্ঠানে আমার গান শুনতে গিয়ে নাকি দর্শকের ভিড়ে পুলিশের লাঠির বাড়ি খেতে হয়েছিল তাঁকে। আমি তাকে বলতাম, সেই কিশোর আজ কোথায় দেখো! আজ তোমার গান আমি চোখ বুজে শুনি। তোমার গান শুনে অবসর কাটে। বয়সে ছোট হলেও আমাদের এত এত কাজ হয়েছে, অসাধারণ সব সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আমাদের বন্ধুত্ব না হয়ে উপায় ছিল না। গানের মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আমরা যেমন বন্ধু ছিলাম, তেমনি ভাইবোনের মতো ছিলাম। কতশত স্মৃতি যে মনে পড়ে। শুধু রেকর্ডিংয়ে যে অজস্র স্মৃতি আছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। ও ছিলেন স্বভাবরসিক, পরিমিত জীবনযাপন করত। হাজার হাজার জনপ্রিয় গান তার, কখনোই এ নিয়ে কোনো দম্ভ দেখিনি। বরং আমরা কথা তুললে লাজুক হাসিতে অন্য প্রসঙ্গে চলে যেত।

আমাদের এত এত কাজ হয়েছে যে আমরা একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠেছিলাম। বহু দেশে একসঙ্গে অনুষ্ঠানে গিয়েছি। এক মঞ্চে গান গেয়েছি। দর্শকের করতালি পেয়েছি। বহু সিনেমায় একসঙ্গে ডুয়েট গান গেয়েছি। সেসব স্মৃতি কখনোই ভোলার নয়। কিশোর যখন অসুস্থ হলো, তাকে বললাম, তুমি ভালো চিকিৎসা নাও। ও যখন সিঙ্গাপুরে গেল তারও মাস তিনেক আগে বলেছিলাম, তুমি গুরুত্ব দিচ্ছ না কেন? দেশের বাইরে গিয়ে ভালো চিকিৎসা নাও। সে কিছুতেই গেল না। দেশেই চিকিৎসা নিল।

জানি, সবই ওপরওয়ালার ইচ্ছে। তবু আমার কেন যেন আফসোস হয়, মনে হয় সে যদি আরও একটু আগে চিকিৎসা নেওয়া শুরু করত, হয়তো এভাবে চলে যেতে হত না। ওকে আমরা আবারও ফিরে পেতাম গানে। নিজের প্রতি ওর এসব উদাসীনতা হেসেই উড়িয়ে দিত। এখনো আমার বিশ্বাস হয় না কিশোর নেই। মনে হয়, দেখা হচ্ছে না অনেক দিন, হুট করেই আবার দেখা হয়ে যাবে নতুন কোনো গানের রেকর্ডিংয়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত