Ajker Patrika

কান চলচ্চিত্র উৎসবে আরিফ ও বিজন

বিনোদন প্রতিবেদক
কান চলচ্চিত্র উৎসবে আরিফ ও বিজন

ঢাকা: গুপী–বাঘা প্রোডাকশন হাউসটির নাম শোনা যায় ‘মাটির প্রজার দেশে’ চলিচ্চত্রের মধ্য দিয়ে। তখন থেকেই চলচ্চিত্র প্রযোজনা নিয়ে সামনের দিকে হাঁটছেন দুই তরুণ বাংলাদেশি–প্রযোজক আরিফুর রহমান ও নির্মাতা বিজন ইমতিয়াজ। একসঙ্গে গড়েছিলেন এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি। দেশ-বিদেশে আলোচনায় ছিল এই প্রোডাকশনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির প্রজার দেশে’। এরপর বিভিন্ন সময়ে ‘রোকাইয়া’সহ আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার খবর জানায় প্রযোজনা সংস্থাটি।

আরও একবার আনন্দ সংবাদ দিল গুপী–বাঘা প্রোডাকশন। প্রযোজক আরিফুর রহমান জানালেন, কানের লা ফেব্রিক ও মার্শে দ্যু ফিল্মে এ বছর তাঁদের প্রযোজনায় দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

কানের এই বিভাগটি কী? কান ছবির উৎসবে আয়োজকদের স্বীকৃত কয়েকটি প্যারালাল বিভাগ থাকে। এর মধ্যে ‘ত্যু লে সিনেমাস দ্যু মন্দ’ (অল দ্য সিনেমাস অব দ্য ওয়ার্ল্ড) পরিচালনা করে ফ্রান্স সরকারের ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট। প্রতিবছর কান উৎসব চলাকালে ‘ত্যু লে সিনেমাস দ্যু মন্দ’ প্যাভিলিয়নে ‘লা ফেব্রিক সিনেমা’ (দ্য সিনেমা ফ্যাক্টরি) আয়োজন করে ইনস্টিটিউটটি। কানের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মে অংশ নেওয়া চলচ্চিত্র পরিবেশক ও এজেন্টদের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের উদীয়মান তরুণ নির্মাতাদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়াই এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য।

৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হিসেবে ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউটের লা ফেব্রিক সিনেমায় নির্বাচিত হয়েছে বিভিন্ন দেশের সম্ভাবনাময় মোট ১০টি ছবির চিত্রনাট্য। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও ফ্রান্সের যৌথ প্রযোজনা ‘একা’। এর ইংরেজি নাম ‘সলো’। এটি বাংলাদেশ থেকে প্রযোজনা করবেন গুপী–বাঘা প্রোডাকশনের আরিফুর রহমান। তবে এটি ভারতীয় ছবি হিসেবে এই বিভাগে স্থান করে নেয়। ছবিটি পরিচালনা করেছেন ভারতীয় সুমন সেন। আরিফুর বলেন, ‘২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে কলকাতায় “একা”র শুটিং শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে এই ছবির কাস্টিং এবং ক্রু নির্বাচনের কাজ চলছে।’

আমরা ক্রমশই মানসিকভাবে দেউলিয়া, মনের দিক থেকে বিচ্ছিন্ন এবং রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছিকয়েক বছর ধরে যে ধরনের ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা ও সহিংস সময় কাটাচ্ছি; তার প্রতিফলন থাকবে আমাদের এই ছবিতে।

আরিফুর রহমান, প্রযোজক

২০১৯ সালে এনএফডিসি ফিল্ম বাজারের কো-প্রোডাকশন মার্কেটে অংশ নিয়েছে ‘একা’। গত বছর টরিনো ফিল্ম ল্যাব নেক্সটে নির্বাচিত হয় এটি। এবার লা ফেব্রিক সিনেমায় জায়গা করে নিল চিত্রনাট্যটি। কলকাতার প্রেক্ষাপটে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় তৈরি হবে এই ছবি।

লা ফেব্রিক সিনেমায় বাংলাদেশ নতুন নয়। ২০১৪ সালে পরিচালক কামার আহমদ সাইমন ও প্রযোজক সারাহ আফরীনের ‘শিকলবাহা’ এবং ২০১৯ সালে পরিচালক মেহেদী হাসান ও প্রযোজক রুবাইয়াত হাসানের ‘স্যান্ড সিটি’ ছবির পাণ্ডুলিপি নির্বাচিত হয় এই কার্যক্রমে। ফলে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র পরিবেশক ও এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি তারা হেঁটেছেন কানের লালগালিচায়।

ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে স্বল্পদৈর্ঘ্যের প্রতিযোগিতা বিভাগে নাম লিখিয়েছিল আরিফুর ও বিজনের আফগানিস্তানের ছবি ‘রোকাইয়া’। আরিফুর বলেন, ‘সাধারণত প্রযোজক হিসেবে বাংলাদেশে টাকা লগ্নিকারীকে বোঝানো হয়, কিন্তু প্রযোজনার ব্যাপারটি আলাদা কিছু। একটি প্রকল্প ভ্রূণ থেকে দর্শকের কাছে যাওয়া পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটি দেখভালের দায়িত্ব থাকে প্রযোজকের ওপর। সুতরাং বলা যায়, চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি, অভিনয়শিল্পী নির্বাচন, বাজারজাত, পরিবেশন, পরিচালনাসহ যাবতীয় বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হয় তাঁর। এই বিষয়গুলোই আত্মস্থ করতে আমি বিদেশে একের পর এক কোর্স করেছি। এর মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানের এশিয়ান ফিল্ম স্কুলে।’
এ ছাড়া তিনি হলিউডের চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন। আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে নামকরা সিনেমা পরিচালক, প্রযোজক ও ব্যবসায়ীদের তত্ত্বাবধানে সিনেমা নিয়ে কর্মশালা করানো হয়। এ ছাড়া নেটফ্লিক্স, স্টেজ ১৩, ওয়ার্নার ব্রাদার্স, অ্যারি, এইচবিওর মতো নামকরা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছেন তরুণ এই সিনেমার ফেরিওয়ালা।

সিনেমা বানাতে গিয়ে প্রযোজকের আরাম কেদারায় বসা তো দূরের কথা, পুরো সময়টায় দৌড়ের ওপরই থাকতে হয়শুধু অর্থ খরচ করলেই প্রযোজক হওয়া যায় না, তাঁকে এই ফিল্মমেকিং প্রক্রিয়ার অংশ হতে হয় খুব সক্রিয়ভাবেইকেউ যদি শুধু টাকা দিয়ে প্রযোজক অথবা সহকারী প্রযোজক হতে চান, সেটা নিয়ে আমি আপত্তি করছি নাশুধু বলছি যে সে ক্ষেত্রে আরেকজন ফিল্মমেকার প্রযোজক থাকা আবশ্যক সিনেমা বানানোর জন্য।

বিজন ইমতিয়াজ, নির্মাতা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত