Ajker Patrika

অঞ্জু ঘোষের আচরণে মুসলমানের ছাপ, তাই টালিউডে অনেকে এড়িয়ে চলত: চিরঞ্জিত চক্রবর্তী

বিনোদন ডেস্ক
Thumbnail image

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম ব্যবসা সফল সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। বাংলাদেশে সফলতার পর টালিউডেও সিনেমাটির সিক্যুয়েল নির্মিত হয়। দুটি সিনেমায় প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন বাংলাদেশের অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ। ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে হঠাৎ সবকিছু ছেড়ে অন্তরালে চলে যান তিনি। পর্দায় কেন আর তাঁকে দেখতে পাওয়া যায়নি তা নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন টালিউড অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। তিনি মনে করেন, অঞ্জু ঘোষের আচার–আচরণে বাংলাদেশি মুসলমানের ছাপ থাকায় টালিউডে তাঁর সঙ্গে অনেকেই কাজ করতে চাইতেন না! 

টিভি৯ বাংলায় গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেন, ‘আমি যখন অঞ্জুর সঙ্গে কাজ করেছি তখনো ওর ভীষণ ডিমান্ড ছিল। কিন্তু এখানে অনেকেই মনে করতেন, তিনি ঠিক আর চার–পাঁচটা হিন্দুর মতো নন। তাঁর কথাবার্তা, হাঁটাচলা সবখানেই বাংলাদেশি মুসলমানের ছাপ ছিল। সেই জন্যই তিনি একজন বড় মাপের অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চাইতেন না। কুণ্ঠা বোধ করতেন।’ 

সেসময় দুই বাংলা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন শ সিনেমায় অভিনয় করেছেন অঞ্জু ঘোষ ওরফে অঞ্জলি ঘোষ। তাঁর বেশির ভাগ সিনেমাই ব্যবসা সফল হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির একাংশ এখনো মনে করে, অঞ্জু ঘোষ অভিনয়ে থাকলে আরও অনেক সফল বাণিজ্যিক ছবি দর্শকদের উপহার দিতে পারতেন। এরপরও অন্তরালে চলে যান এ অভিনেত্রী। তিনি কেন সিনেমা থেকে সরলেন? এই প্রশ্ন অঞ্জুকে বহুবার করা হয়েছে। অভিমান নিয়ে তাঁর পাল্টা জিজ্ঞাসা, তিনি সরে আসায় কি খুব কিছু আসে যায় দুই বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির?

অঞ্জু ঘোষের উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে—‘সওদাগর’, ‘নরম-গরম’, ‘আবে হায়াত’, ‘রাজ সিংহাসন’, ‘পদ্মাবতী’, ‘রাই বিনোদিনী’, ‘সোনাই বন্ধু’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘আয়না বিবির পালা’, ‘আশা নিরাশা’, ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা’, ‘মালাবদল’ প্রভৃতি। 

‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সিনেমার দৃশ্যে অঞ্জু ঘোষ ও চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত১৯৮৭ সালে প্রধান নারী চরিত্রে সর্বাধিক ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ। মন্দার বাজারে যেগুলো ছিল ব্যবসা সফল। ১৯৮৯ সালে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে জুটি বেঁধে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে হিট সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ উপহার দেন তিনি। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিতে কাজ করার আগে ‘চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা’ ছবিতে অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ। সেই ছবিটি ছিল বাংলাদেশে তৎকালীন সবচেয়ে সফল ছবি। 

১৯৯৬ সালে হঠাৎই বাংলাদেশ ছেড়ে কলকাতায় চলে যান অঞ্জু ঘোষ। কাজ করতে শুরু করেন সেখানকার সিনেমায়। কিন্তু কেন তিনি বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন, সে উত্তর আজও মেলেনি। দীর্ঘ ২২ বছর পর সবশেষ ২০১৮ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির উদ্যোগে এফডিসিতে এসেছিলেন অঞ্জু ঘোষ। কিছুদিন থাকার পর কলকাতায় ফিরে যান। 

অঞ্জু ঘোষ ও চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীতভারতীয় সংবাদমাধ্যম টিভি৯–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনেমা থেকে দূরে সরে যাওয়ার পেছনে চাপা অভিমান নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে অঞ্জু ঘোষ বলেছিলেন, ‘জাতি–জাতি করে একটা হিড়িক উঠেছিল–ও হিন্দু, ও মুসলমান! আমি এর মধ্যে পড়তে চাইনি। ক্যারিয়ারে ৩৫০ ছবিতে অভিনয় করেছি। তার মধ্যে ২০০টি ছবি ছিল বাংলাদেশের। হিন্দুর বাড়ির মেয়ে হয়েও সেই ২০০টা ছবিতেই কলেমা পড়ে অভিনয় করেছি। সেজেছি মুসলমানের বেটি। কিন্তু বাংলাদেশ আমাকে বলল, হিন্দুর বেটি। অন্যদিকে এখানে যখন এলাম আমার গোটা প্রেজেন্টেশন দেখে ভারত বলল, আমি মুসলমানের বেটি। ফলে হলো কী, আমি ওপারে সংখ্যালঘু, এপারেও সংখ্যালঘুই থেকে গেলাম।’

অঞ্জু ঘোষ আরও বলেছিলেন, ‘ওপারে যখনই আমাকে “হিন্দুর মেয়ে” কথাটা বলল, হিন্দু–মুসলমানের এত তফাত করে দিচ্ছিল, যে মনটা আমার ভেঙে গেল। আমি শিল্পী, তাই না! আমার তো কোনো জাতি নেই। আমার পরিচয় আমি কেবলই একজন শিল্পী।’

২০১৯ সালের জুনে বিজেপিতে যোগ দেন অঞ্জু ঘোষ। তখন তাঁর নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। পরে বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অঞ্জু ঘোষ জন্মসূত্রে ভারতীয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত