Ajker Patrika

৩২ বছর আগের এই দিনে অস্কারে ‘আজীবন সম্মাননা’ পান সত্যজিৎ রায়

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৫: ৫৩
Thumbnail image

দিনটা ১৯৯২ সালের ৩০ মার্চ। বাংলাদেশ সময় তখন মধ্যরাত। বিশ্বের তাবড় সিনেশিল্পীরা উপস্থিত হন বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কারের মঞ্চে। গোলাপি, সুন্দর এক পোশাকে অস্কারের মঞ্চে ওঠেন হলিউডের ইতিহাসে অন্যতম কিংবদন্তি অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন। ঘোষণা করেন সেই বছরের অস্কার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড।

অড্রে হেপবার্ন ঘোষণা করলেন দীর্ঘদেহী, ব্যারিটোন গলার সেই মানুষটির নাম। আর সেই মুহূর্তেই বাঙালির বিশ্বজয় দেখল পুরো পৃথিবী। অস্কারের মঞ্চে সেরার সম্মান পেলেন সত্যজিৎ রায়। পর্দায় যেন ভেসে উঠল সেই ট্রেনের দৃশ্য। অদৃশ্যে এসে দাঁড়াল অপু-দুর্গা। উঠে এল পথের পাঁচালী।

হাসপাতালের বিছানায় অস্কার হাতে সত্যজিৎ রায়। ছবি: সংগৃহীত

অস্কার আনতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেননি সত্যজিৎ। বরং অস্কার নিজে এসেছিল তাঁর কাছে। হাসপাতালের বিছানা থেকে ভিডিও বার্তায়, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছিলেন তিনি। তাঁর হাতের মুঠোয় তখন শক্ত করে ধরা ছিল অস্কারের সোনালি ট্রফিটি।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, যখন অস্কার এল, তখন কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্র পরিচালক মৃত্যুশয্যায়। ১৯৮৩ সালে প্রথমবার হার্ট অ্যাটাক হয় সত্যজিতের। তবু কাজ করা থামাননি তিনি। ১৯৯২ সালে আরও দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাক। এবার আর নিতে পারেনি শরীর। সঙ্গে শ্বাসকষ্টের সমস্যা আরও বাড়ল, দুর্বল হয়ে তিনি ভর্তি হন বেলভিউ হাসপাতালে। আর সেখানেই মাসখানেকের চিকিৎসার পর ২৩ এপ্রিল প্রয়াত হন কিংবদন্তি এই নির্মাতা।

অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন সত্যজিতের নাম ঘোষণা করেন, ভিডিও বার্তায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি। ছবি: ভিডিও থেকেবাংলা চলচ্চিত্রকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন সত্যজিৎ রায়। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কাজ নিয়ে থেকেছেন, কাজ করে গেছেন একনাগাড়ে। কেবল চলচ্চিত্র নির্মাণই নয়; সত্যজিতের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। ভেনিস থেকে কান–বিশ্বের সেরা চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে সেরার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। বাকি ছিল বিশ্বখ্যাত সেই সোনালি ট্রফিটি। সেই সত্যজিৎকেই ১৯৯২ সালে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারে সম্মান জানায় অস্কার। সম্মান জানায় গোটা বিশ্ব।

সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে। দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী ও বাবা সুকুমার রায় এখানেই জন্মান। বাবা প্রসিদ্ধ শিশুসাহিত্যিক আর ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন সুপরিচিত লেখক, চিত্রকর ও দার্শনিক। কিন্তু বাবা ও দাদার পরিচয়ে সত্যজিৎ দাড়ি পড়তে দেননি। প্রথমে ইলাস্ট্রেশন, তারপর ‘সন্দেশ’-এর সম্পাদনা, বিজ্ঞাপনজগতের কাজ, বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকাসহ নানা রকম প্রতিভার স্বাক্ষর দেখিয়েছেন তিনি।

সত্যজিৎ রায়। ছবি: সংগৃহীত১৯৫০ সালে লন্ডন সফরে তিনি ভিত্তোরিও ডি সিকার ‘বাইসাইকেল থিভস’ দেখেছিলেন। এটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘পথের পাঁচালী’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৫৫ সালে আর ১৯৫৬ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে বেশ কয়েকটি শাখায় পুরস্কার জিতেছিল। ষাটের দশকের কলকাতার চিরন্তন জীবনযাপন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় তাঁর অপু ত্রয়ী নিয়ে। ‘পথের পাঁচালী’র পর আসে ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’।

সত্যজিৎ রায় ‘চারুলতা’, ‘নায়ক’, ‘ঘরে-বাইরে’সহ আরও বেশ কয়েকটি প্রশংসিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা ছাড়াও সত্যজিৎ রায় একজন লেখক, চিত্রকর এবং সুরকারও ছিলেন। তিনি ফেলুদা চরিত্র নিয়ে গোয়েন্দা উপন্যাসের একটি জনপ্রিয় সিরিজসহ বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। শুধু ফেলুদা কেন, তাঁর সৃষ্ট অমর চরিত্র হলেন জটায়ু। প্রফেসর শঙ্কুর মতো কিশোর বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলা গল্পের জন্মদাতার নামও সত্যজিৎ রায়।

মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিন আগে সত্যজিৎ রায়কে ভারতরত্ন পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। মৃত্যুর পর তাঁকে মরণোত্তর আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার প্রদান করা হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানিত করে ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়ে। চার্লি চ্যাপলিনের পর দ্বিতীয় ফিল্ম ব্যক্তিত্ব হিসেবে এই সম্মান পান সত্যজিৎ রায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত