Ajker Patrika

স্মরণ /দিলদারকে নিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া গল্প

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
দিলদারকে নিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া গল্প

মা-বাবার দেওয়া নাম ছিল দেলোয়ার হোসেন। চলচ্চিত্রে এসে হয়ে যান দিলদার। বদলে যাওয়া এই নামেই ঠাঁই করে নেন দর্শকের হৃদয়ে। চার দশকের কম সময়ে দিলদার দেখা দিয়েছেন ৫০০-র বেশি সিনেমায়। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে রাজত্ব করতে হয়। কীভাবে কমেডিয়ানের গণ্ডি ডিঙিয়ে হয়ে উঠতে হয় একচ্ছত্র নায়ক। তাঁর মৃত্যুর পর বাংলা সিনেমায় ওইভাবে কমেডি চরিত্র আর আসেনি। বিভিন্ন সময় অনেকে চেষ্টা করেছেন দিলদারের বিকল্প তৈরির। কিন্তু সব চেষ্টা হয়েছে ব্যর্থ। তাই মৃত্যুর এত বছর পরেও দিলদার এখনো সমান প্রাসঙ্গিক। সমান জনপ্রিয়। আজ বাংলা সিনেমার এই হাসিমুখের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রয়াণ দিবসে রইল তাঁকে নিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া কিছু গল্প।

নায়ক-নায়িকার চেয়ে জনপ্রিয়

ঢালিউডে কমেডিয়ান হিসেবে দিলদার ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ‘কমেডি’ শব্দের প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। নির্মাতারা বলতেন, সিনেমায় গল্প, রোমান্স, অ্যাকশন, সাসপেন্স লাগবে আর লাগবে দিলদার। সে সময়টায় এতটাই অপরিহার্য ছিলেন তিনি। জনপ্রিয়তাও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন অনেক নায়ক-নায়িকাকে। নির্মাতা মালেক আফসারী একদিন উত্তরায় শুটিং করছিলেন। নায়ক-নায়িকার অটোগ্রাফ নিতে ভিড় করছিল অনেকে। হট্টগোল দেখে নায়ক-নায়িকা দুজনেই বিরক্ত হচ্ছিলেন। এর মধ্যে শুটিং সেটে আসে দিলদারের গাড়ি। ‘চাল্লি আসছে’ বলে চিৎকার করে উঠল সবাই। নায়ক-নায়িকাকে ফেলে দিলদারের গাড়ি ঘিরে ফেলল অটোগ্রাফ নিতে। এদিকে নায়ক-নায়িকা বসে থাকলেন বেজার মুখে।

ফিরিয়ে দিয়েছিলেন নায়িকারা

তোজাম্মেল হক বকুলের ‘আব্দুল্লাহ’ সিনেমায় নায়ক হন দিলদার। নির্মাতার কাছে নায়কের প্রস্তাব পেয়ে অবাক হয়েছিলেন তিনি। বলেন, ‘আপনি কি আমার পেটে লাথি দিতে আসছেন?’ অনেক অনুরোধের পর রাজি হন দিলদার। তবে তাঁর বিপরীতে কে হবেন নায়িকা? এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল জটিলতা। প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মৌসুমী, শাবনূরসহ বেশ কয়েকজন নায়িকা। এরপর নূতনের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যান নির্মাতা। সম্মতি জানান তিনি। এরপর থেকে নূতনের কাছে অনেক ফোন আসতে শুরু করে, তিনি যেন সিনেমাটি না করেন! কিন্তু দমে যাননি নূতন। সিনেমাটি তৈরির পরেও নির্মাতা ও প্রযোজক ছিলেন ভয়ের মধ্যে। কেন দিলদারকে নিয়ে এই ঝুঁকি নিয়েছেন, হলমালিকদের কাছ থেকেও শুনতে হয়েছে এমন প্রশ্ন। তবে মুক্তির পর বদলে যায় দৃশ্যপট। প্রথম দিন থেকে হলে ভিড় জমায় দর্শক। প্রযোজক জানান, সে সময় আব্দুল্লাহ প্রায় ৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল।

সিনেমার গানও গেয়েছেন

নাসরিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন দিলদার। মালেক আফসারীর ‘লাল বাদশা’তেও অভিনয়ের কথা ছিল নাসরিনের। কিন্তু সে সময় তাঁর সঙ্গে দিলদারের মনোমালিন্য চলছে। নাসরিনের কথা শুনে দিলদার সাফ জানিয়ে দেন, তিনি থাকলে এ সিনেমায় অভিনয় করবেন না। পরবর্তী সময়ে এ সিনেমায় তাঁর বিপরীতে নতুন একজনকে নেওয়া হয়। শুটিংয়ের আগে দিলদারকে নির্মাতা জানিয়েছিলেন, তাঁর লিপে গান থাকবে। শুটিংয়ের সময় তাই জানতে চান, গান কোথায়? তখন নির্মাতা জানান, গান তো আপনাকে ও নাসরিনকে কেন্দ্র করে বানানোর কথা ছিল। নতুন অভিনেত্রী কাজ করছে, তাই গান থাকছে না। এ কথা শুনে বিরক্ত হন দিলদার। জানিয়ে দেন, গান না থাকলে তিনি আর শিডিউল দেবেন না। নির্মাতা সে সময় তাঁকে শর্ত দেন, গান থাকবে, যদি তিনি নিজে গাইতে পারেন। পরবর্তী সময়ে দিলদার কণ্ঠ দেন ‘শুধু ডিম দিয়ে পরিচয়’ গানটিতে। বেশ জনপ্রিয়ও হয় তাঁর কণ্ঠে এ গান।

মাতিয়ে রাখতেন শুটিং সেট

পর্দায় অভিনয় দিয়ে যেমন দর্শকদের মাতিয়ে রাখতেন, তেমনি শুটিং সেটেও হাসিখুশি থাকতেন দিলদার। সহশিল্পীদের সাহস জোগাতেন ভালো কাজ করার জন্য। দুলারির সঙ্গে জুটি হয়ে অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন দিলদার। ‘দাঙ্গা’ তার মধ্যে অন্যতম, সিনেমাটি ভারতেও রিমেক হয়। টালিউডের ওই সিনেমায়ও ছিলেন দিলদার। তখনো দুলারি ভারতের কোনো সিনেমায় অভিনয় করেননি, বিদেশের মাটিতে গিয়ে তাই অনেকটা ভয়ে ছিলেন। সে সময় তাঁকে সাহস দেন দিলদার। বলেন, দেশের সিনেমায় পারলে ভারতে কেন সে পারবে না! শুটিংয়ে গিয়েও দুলারিকে অনেক সাপোর্ট করেন দিলদার। শুটিংয়ের ফাঁকে দুলারিকে নিয়ে গিয়েছিলেন নিউমার্কেটে। অনেকে তাঁকে জিজ্ঞেস করছিল, ইনি আপনার কী হয়? মজা করে দিলদার তাঁকে স্ত্রী বলেই পরিচয় দেন। দুজনের উচ্চতার পার্থক্য দেখে সবাই বেশ মজা পাচ্ছিল। দুলারি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, সবাইকে কেন এমনটা বলছেন? দিলদার উত্তর দেন, ‘সমস্যা কী! সবাই তো মজা পাচ্ছে।’ শুধু ক্যামেরার সামনে নয়, পর্দার বাইরেও সবাইকে আনন্দ দিতে পছন্দ করতেন তিনি।

ছিলেন পরিবারকেন্দ্রিক

সিনেমায় ব্যস্ত থাকলেও পরিবারের প্রতি সমান দায়িত্বশীল ছিলেন দিলদার। কখনোই রাত ১০টার পরে শুটিং সেটে থাকতেন না। ফিরে যেতেন বাড়িতে। পরিবারের অর্থনৈতিক দিকটাও সব সময় মাথায় রাখতেন। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জীবদ্দশায় দুটি বাড়ি করে গেছেন। এখনো সেই বাড়ির ভাড়ার টাকায় চলেন তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগম। চেষ্টা করেন গরিব মানুষদের সাধ্যমতো সহায়তা করার। দিলদারের দুই মেয়ে মাসুমা আক্তার ও জিনিয়া আফরোজ—দুজনেই প্রতিষ্ঠিত। তাঁরাও খেয়াল রাখেন মায়ের। এক সাক্ষাৎকারে রোকেয়া বেগম জানান, দিলদার সব সময় সত্য কথা বলতেন। খারাপ মানুষদের থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিতেন সবাইকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি: পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা অবরোধ বৈষম্যবিরোধীদের

মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যাকাণ্ড: ‘আমি জড়িত না, ফাঁইসা গেছি’— অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতা রবিনের দাবি

চাকরি হারাচ্ছেন পুলিশের দুই ডজন কর্মকর্তা

শিক্ষকের যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব, গায়ে পেট্রল ঢেলে ছাত্রীর প্রতিবাদ

খুলনায় সাবেক যুবদল নেতা হত্যা: মামলা হলেও গ্রেপ্তার নেই, নেপথ্যে ৭ কারণ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত