Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

অভিনয়ের বিশালতা এক জীবনে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়: আলমগীর

অভিনেতা আলমগীরের বাসায়; ছবি: সংগৃহীত

আজ ৩ এপ্রিল। অভিনেতা আলমগীরের জন্মদিন। আগে ঘটা করে জন্মদিন পালন করলেও, এখন পরিবারের সঙ্গেই কাটে দিনটি। টেলিফোনে কথা হলো আলমগীরের সঙ্গে, এবারের জন্মদিন উদ্‌যাপন নিয়ে বললেন তিনি। গত বছরেও জন্মদিনের ঠিক আগে কথা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে, তাঁর বাসায়। আলমগীরের সঙ্গে খান মুহাম্মদ রুমেলের কথোপকথনের অংশবিশেষ রইল এই প্রতিবেদনে

খান মুহাম্মদ রুমেল

আজ ৩ এপ্রিল। আলমগীরের জন্মদিন। না, মুঘল সম্রাট আলমগীর নন, তিনি নায়ক আলমগীর। অবশ্য এক অর্থে তিনিও সম্রাট। বাংলা চলচ্চিত্রের সম্রাট! জন্মদিনের শুভক্ষণে ফোন করি তাঁকে। একবার রিং বাজতেই রিসিভ করেন তিনি। সেই চিরপরিচিত ভরাট কণ্ঠ।

—হ্যালো!

—শুভ জন্মদিন!

—অনেক ধন্যবাদ। কেমন আছো?’ ফোনের অপর প্রান্তে তাঁর হাসি টের পাওয়া যায়।

—জি ভালো আছি। ৭৫ পেরোলেন আজ। কেমন লাগছে?

—৭৫ হয়ে গেছে আমার? বলো কি!

—জি

—ভালো লাগছে। ভালোই তো একটা দীর্ঘ জীবন পেলাম।

—জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো উচ্ছ্বাস কাজ করে?

—আমি তো এখনো সতেজ ও সুস্থ আছি। সুতরাং, কিছুটা ভালো লাগা তো কাজ করেই। তবে জন্মদিনে বিশেষ কোনো উৎসব নেই। ঘরোয়াভাবে কাটছে আজকের দিন। বাইরের কেউ আসবে না। হয়তো আজকে ছেলেমেয়েরা আসবে। তারা নিশ্চয়ই একটা কেক কাটবে। আমার এক মেয়ে দেশের বাইরে থাকে। ঈদ করতে ঢাকায় এসেছে। তার মেয়েরও জন্মদিন ১২ এপ্রিল। নানা–নাতি মিলে কেক কাটব। এই তো!

—এর বাইরে আর কিছু না?

—নাহ, আর কী? কত জন্মদিন তো চলে গেছে ব্যস্ততার ফাঁকে, টেরই পাইনি!

—জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?

—স্মৃতির কি আর শেষ আছে? তবে ছোটবেলায় ঘটা করে জন্মদিন পালন হতো। অনেক বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন আসত। এখন আর ওসব করি না। ঘরোয়াভাবে পরিবারের সঙ্গে কাটাই।...

সংক্ষিপ্ত কথোপকথন শেষ হলো। মনে পড়ে গেল গত বছর তাঁর জন্মদিনের ঠিক আগে বাসার ড্রয়িং রুমে বসে দীর্ঘ আলাপ হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। সেই এপ্রিলে চরম গরম ছিল। তীব্র তাপে পুড়ছিল চারপাশ। নির্দিষ্ট সময়ের আধা ঘণ্টা আগে পৌঁছে পায়চারি করছিলাম বাসার নিচে। খোঁজ পেয়ে তিনি ডেকে পাঠান। ঘরে ঢুকতেই গম্ভীর মুখ জিজ্ঞাসা—নিচে হাঁটাহাঁটি করছ কেন?

—না মানে আমার তো আরও আধা ঘণ্টা পরে আসার কথা। তাই সময় কাটানোর জন্য নিচে অপেক্ষা করছিলাম।

গাম্ভীর্যের মুখোশ খুলে এবার হাহা করে হাসেন তিনি।

—ভারি অদ্ভূত ছেলে তো তুমি? বলো কী জানতে চাও?

—জানতে চাই না তেমন কিছু। আপনার সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা দিতে চাই।

কথা শুনে একটু থামেন তিনি। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকেন দেয়ালে টাঙানো নিজের একটা ছবির দিকে। সুন্দর গোছানো বিশাল ড্রয়িং রুমে দেয়ালে দেয়ালে আলমগীরের তারুণ্যের ছবি। এক পাশের দেয়ালজুড়ে কাঠের কারুকাজ করা হারমোনিয়াম, তানপুরা ও ফিল্মি ক্যামেরার ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটি দেখে বোঝা যায় রুনা লায়লা আলমগীরের যুগলবন্দী জীবনকে ইঙ্গিত করছে এই কারুকাজ। তার নিচে থরে থরে সাজানো নানা পুরস্কার। তার মধ্যে অনেকগুলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পদক। দেয়াল থেকে চোখ ফিরিয়ে প্রশ্ন করি আলমগীরকে।

—পাঁচ দশকের বেশি সময়ের চলচ্চিত্রযাত্রায় পেছন ফিরলে অর্জনের খাতায় কী দেখেন?

ছোট করে একটুখানি হাসেন তিনি। বলেন, ‘অর্জন কী আছে? অর্জন তো কিছু নেই! যেটা স্বপ্ন দেখে, তার আশপাশে তো যেতে পারে না মানুষ। আমরা যখন যাত্রা শুরু করি, তখন চলচ্চিত্রের উড়ব উড়ব ভাব। তারপর আমরা যখন মধ্য গগণে, তখন চলচ্চিত্র উড়ছিল। কিন্তু এখন তো চলচ্চিত্র ভালো নেই। ভালো আছি কী করে বলব।’

—কোনো গ্রাফ তো আর সরল রেখায় চলে না। আপ অ্যান্ড ডাউন থাকে। এখন হয়তো একটু ডাউন। আবার চলচ্চিত্রের ওপরে ওঠার সম্ভাবনা কতটুকু দেখেন আপনি?

—আমি আশাবাদী লোক। এখন রাত চলছে। ভোর হবে আবার। সে আশা করি। কিন্তু একটু ভয় লাগে। আমরা সবাই মিলে হয়তো চেষ্টা করছি। কিন্তু মুষ্টিমেয় কয়েকজন শিল্পী, কলাকুশলী, প্রযোজক ও পরিচালক মিলে কী করবে। আমাদের সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল লাগবে। মাল্টিপ্লেক্স তো একটা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির পরিচয় হতে পারে না!

—আপনি বলেছিলেন মানুষ এক জীবনে স্বপ্ন ছুঁতে পারে না। কিন্তু স্বপ্ন তাড়া করে....

—হ্যাঁ, তাড়া তো আমি করেছি। এখনো করে চলেছি। দীলিপ কুমারের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে অনেকবার। তিনি আমাকে বলেছেন, আলমগীর আমি অ্যাকটিংয়ের Aটাও এখনো শিখতে পারিনি। দীলিপ কুমার যদি এ কথা বলেন, তাহলে ভাব আমাদের অবস্থা কোথায়? অভিনয়ের যে বিশালতা, সেটা এক জনমে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। অভিনেতা হিসেবে নিজেকে খুব বেশি নম্বর দিতে পারি না। দুই–তিন নম্বর হয়তো দেব, দশের মধ্যে।

—এই যে আপনি অভিনেতা হিসেবে নিজেকে দুই–তিন নম্বর দিচ্ছেন, আপনি দীলিপ কুমারের কথা বলছেন, এই যে একটা অতৃপ্তি, স্বপ্ন তাড়া করতে এই অতৃপ্তিই কি একজন শিল্পীকে এগিয়ে নেয়?

—হ্যাঁ, তাই হয়েছে গত পঞ্চাশ বছর ধরে। ধরো, একটা শট দিয়ে এলাম। পরে এসে ভাবছি, এটা এভাবে না করে ওভাবেও করতে পারতাম। এই যে ভাবনা, আমার কিন্তু রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেল।

অভিনেতা আলমগীর; ছবি: সংগৃহীত
অভিনেতা আলমগীর; ছবি: সংগৃহীত

—আপনার নায়িকাদের নিয়ে বলুন। আপনার সময়ের সব নায়িকার সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে শাবানা–আলমগীর জুটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। দর্শক জুটি তৈরি করে নাকি পরিচালক তৈরি করেন, নাকি গল্পের প্রয়োজনেই হয়?

—আসলে এটা কেউ তৈরি করে না। এটা হয়ে যায়। আমি আর শাবানা প্ল্যান করে কোনো সিনেমা করিনি। আমার প্রথম সিনেমা রিলিজ হয় ১৯৭৩ সালে। আমি শুটিং শুরু করেছি ’৭২-এর ২৬ জুন। প্রথম সিনেমা রিলিজের আগে আরও চার–পাঁচটা সিনেমা হয়ে যায় আমার। শাবানার সঙ্গে আমার প্রথম সিনেমা ‘দস্যুরানী’ এরপর ‘অতিথি’, ‘জয় পরাজয়’। তিনটাই সুপার হিট হয়েছিল। পরিচালকেরা তো গল্প অনুযায়ী নায়ক–নায়িকা নেন। কিন্তু প্রডিউসারেরা চান সেলেবল কমোডিটি। তখন প্রডিউসারেরা বলতে থাকলেন, এমন গল্প নেন যেখানে আলমগীর-শাবানাকে নেওয়া যায়। আমাদের সময় আমরা সবাই কাজপাগল ছিলাম। প্রেমটেম করার সময় ছিল না আমাদের। এর ওপর পরিচালকদের চোখ, মারাত্মক চোখ। আমি ডায়লগ বাদ দিয়ে হিরোইনের সঙ্গে কথা বলছি, বকা শুনতে হতো, খুব বকা শুনতে হতো। শাবানা, কবরী ও ববিতা মানুষ হিসেবে অসাধারণ, শিল্পী হিসেবেও অসাধারণ। আসলে তাঁদের সম্পর্কে মন্তব্য করা আমার সাজে না। কারণ, তাঁরা তিনজনই নায়িকা হিসেবে আমার সিনিয়র। হ্যাঁ, রোজিনা সম্পর্কে বলতে পারি। রোজিনা একটা কাজপাগলা মেয়ে ছিল। ও আর কিছু বুঝত না। সিনেমা করতে হবে, ভালো অভিনয় করতে হবে...ও জীবন দিয়ে কাজ করত। শাবানাও প্রচণ্ড সিরিয়াস অভিনেত্রী। ববিতাও মোটামুটি সিরিয়াস অভিনেত্রী...হাহাহা

—মোটামুটি সিরিয়াস কেন?

—ফূর্তিবাজ ছিলেন। হুল্লোড় করতেন। উনি আমাদের খুব স্নেহ করতেন। আর ববিতাকে চেনা কিন্তু খুব কঠিন। ববিতার সামনে সব সময় একটা পর্দা থাকে। পর্দা ক্রস করতে পারলে সে খুব ভালো বন্ধু। তবে পর্দা ক্রস করার পারমিশন পাওয়া খুব কঠিন। কিন্তু তাঁদের অভিনয় যাচাই করার মতো ক্ষমতা আমার নেই।

গল্পে গল্পে কেটে যায় অনেক সময়। জিজ্ঞেস করি, অন্তরালের জীবনে থাকতে সুচিত্রা সেন হাতে গোনা যে কয়েকজন মানুষকে দেখা দিতেন, তাঁদের মধ্যে আপনিও ছিলেন, কীভাবে?

অভিনেতা আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
অভিনেতা আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

—সময়টা ঠিক মনে নেই। আমি কলকাতায় সিনেমা করতে যাই। ঢাকার আরও কয়েকজন আর্টিস্ট ছিলেন। শুটিংয়ের আগে আমি স্টুডিও দেখতে গেলাম। একটা মেকাপ রুম ছিল, যেটা উত্তম কুমার ব্যবহার করতেন। ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এমন সময় মনে হলো, সুচিত্রা সেন তো বেঁচে আছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে দেখা হলো না, সুচিত্রা সেনের সঙ্গে তো দেখা করার চেষ্টা করতে পারি। একপ্রকার যুদ্ধ করে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছি। অনেককে বলেছি, সুচিত্রা সেনের সঙ্গে দেখা চাই। সবার এক কথা, যা চাও করে দেব, কিন্তু এটা সম্ভব না। বারীন ব্যানার্জি নামের আমার এক বন্ধু তাঁর গাড়ি করে সুচিত্রা সেনের বাড়ির গেটে পৌঁছে দিলেন। দারোয়ানকে দিয়ে আমার কার্ড পাঠালাম। পেছনে লিখে দিলাম—দিদি আমি বাংলাদেশ থেকে আলমগীর। তোমার দর্শন প্রার্থনীয়। কিছুক্ষণ পর দারোয়ান একটা কাগজে ফোন নম্বর লিখে নিয়ে এল। পরদিন সকাল ১০টায় কল করতে বলেছেন। পরদিন কল করলাম। কথা হলো। কিন্তু তিনি দেখা দেবেন না। জোরাজুরি করতে থাকলে তিনি বললেন, পরের বার এলে দেখা হবে। আমি বললাম, দিদি উত্তর কুমারও আমাকে বলেছিলেন পরেরবার এলে দেখা হবে। কিন্তু দেখাটা আর হয়নি। তখন কাজ হলো। তিনি আমাকে সময় দিতে রাজি হলেন। তবে বললেন, এসো, সময় পনেরো মিনিট। বাট নো ফ্রেন্ডস, নো ক্যামেরা। সেই পনেরো মিনিট হয়ে গেল এক ঘণ্টা। তারপর তো আমি তার ছোট ভাই হয়ে গিয়েছিলাম।

আলমগীরের সঙ্গে আড্ডায় সময়টা যেন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে। তবু কথা শেষ হয় না। কিন্তু একসময় তো থামতে হয়। আমিও থামি।

বাইরে বের হয়ে রাস্তায় নামি। তাতানো রোদ কমে গিয়ে রাস্তাজুড়ে বিছিয়ে কমলা রঙের আলো। বইছে আরামদায়ক বাতাস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫, আহত ৪০ জনেরও বেশি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওজন কমিয়ে শুটিংয়ে বাঁধন, মুক্তির অপেক্ষায় আরও দুই সিনেমা

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত
আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত

চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেন না অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ‘রেহেনা মরিয়ম নূর’-এর রেহেনা, ‘গুটি’র সুলতানা কিংবা ‘এশা মার্ডার’ সিনেমার পুলিশ কর্মকর্তা লীনা চরিত্রেও দেখা গেছে পুরো প্রস্তুত হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন অভিনেত্রী। এবার তানিম নূরের ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ সিনেমায় সুরমা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ১৮ কেজি ওজন কমালেন বাঁধন। আজ থেকে শুরু হবে এই সিনেমার শুটিং। এ ছাড়া ইতিমধ্যে তিনি শেষ করেছেন রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘মাস্টার’ ও রুবাইয়াত হোসেনের ‘দ্য ডিফিকাল্ট ব্রাইড’ সিনেমার শুটিং।

গত শুক্রবার বনলতা এক্সপ্রেস সিনেমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় জানানো হয়, এতে অভিনয় করছেন বাঁধন। গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঁধন জানালেন, নতুন এই সিনেমার জন্য প্রস্তুত হতে তাঁকে কমাতে হয়েছে ১৮ কেজি ওজন। বাঁধন জানালেন, ওজন কমানোর এই পথ সহজ ছিল না তাঁর জন্য। ফেসবুকে বাঁধন লেখেন, ‘৭৮ কেজি থেকে ৬০ কেজি—এই যাত্রা সহজ ছিল না। মানসিক স্বাস্থ্য সংগ্রাম, অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও জেনেটিক কারণে ওজন বেড়েই যাচ্ছিল। কিন্তু সঠিক চিকিৎসকের নির্দেশনা, ডিসিপ্লিন এবং আত্মবিশ্বাসের জোরে আমি মাত্র ৬ মাসে ১৮ কেজি ওজন কমাতে পেরেছি। এটি শুধু ওজন কমানো নয়—এটি নিরাময়, শক্তি এবং আত্মসম্মানেরও প্রতীক; এখনো এগিয়ে চলছি।’

বাঁধন জানান, এই যাত্রায় সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তাঁর মেয়ে। মেয়েই তাঁকে শরীরচর্চা করতে, জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকতে এবং প্রতিদিন নিজেকে বিশ্বাস করতে অনুপ্রাণিত করেছে। এর আগে বনলতা এক্সপ্রেস সিনেমার সংবাদ সম্মেলনে বাঁধন জানান, এই সিনেমায় যুক্ত হওয়ার অন্যতম প্রেরণা ছিল তাঁর মেয়ে। বাঁধন বলেন, ‘তানিম নূর যখন এই চরিত্রের কথা বলল, তখন আমার মেয়ে সবার আগে বলেছে, তুমি এটি করো। কারণ আমাকে নাকি সব সময় সিরিয়াস আর অবসাদগ্রস্ত চরিত্রে দেখা যায়। ও চায় উৎসব-এর মতো সিনেমায় আমি কাজ করি। তাই এই চিত্রনাট্য আমার কাছে এগিয়ে ছিল।’

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘কিছুক্ষণ’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে বনলতা এক্সপ্রেস। এতে বাঁধনের বিপরীতে আছেন চঞ্চল চৌধুরী। আরও দেখা যাবে মোশাররফ করিম, ইন্তেখাব দিনার, জাকিয়া বারী মম, শরিফুল রাজ, সাবিলা নূর ও শ্যামল মাওলাকে। আগামী বছর রোজার ঈদে মুক্তি পাবে এই সিনেমা।

আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত
আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে শুক্রবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত জানালেন, সম্পূর্ণ কাজ শেষে মাস্টার সিনেমাটি এখন সবাইকে দেখানোর জন্য প্রস্তুত। গত বছর এপ্রিলে শেষ হয়েছিল সরকারি অনুদানে নির্মিত এই সিনেমার শুটিং। রাজনৈতিক থ্রিলার ঘরানার মাস্টারের শুটিং-পরবর্তী কাজ হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরা। একটি উপজেলার স্থানীয় রাজনীতি এই সিনেমার প্রেক্ষাপট। এতে বাঁধনকে দেখা যাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) চরিত্রে। আরও অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দিন খান, জাকিয়া বারী মম প্রমুখ। নির্মাতা জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেওয়ার পর দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে মাস্টার।

আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত
আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত

এ বছরের মাঝামঝি সময়ে বাঁধন শেষ করেছেন দ্য ডিফিকাল্ট ব্রাইড সিনেমার কাজ। ১৩ ডিসেম্বর ফ্রান্সে শুরু হওয়া লেস আর্কস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ওয়ার্ক-ইন-প্রোগ্রেস প্রোগ্রামে এই সিনেমার প্রকল্পটি প্রদর্শিত হবে। আগামী বছরের মার্চ নাগাদ শেষ হবে সম্পূর্ণ কাজ। রুবাইয়াত হোসেনের পরিচালনায় এতে বাঁধনের সহশিল্পী রিকিতা নন্দিনী শিমু, সুনেরাহ বিনতে কামাল, জাইনিন করিম চৌধুরী প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫, আহত ৪০ জনেরও বেশি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন ওয়েব ফিল্মে বিদ্যা সিনহা মিম

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: সংগৃহীত
বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: সংগৃহীত

গত মাসেই বিদ্যা সিনহা মিম জানিয়েছিলেন, নতুন বছরটা হবে তাঁর প্রত্যাবর্তনের বছর। সেভাবেই এগোচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে শেষ করেছেন সাইফ চন্দনের নাম চূড়ান্ত না হওয়া একটি সিনেমার শুটিং। এবার যুক্ত হলেন নতুন ওয়েব ফিল্মে। পরিচালনা করবেন কাজী আসাদ। প্রাথমিকভাবে সিনেমার নাম রাখা হয়েছে ‘লাইফ লাইন’। নতুন বছরে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পাবে এটি।

১৩ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই ওয়েব ফিল্মের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন মিম। মিম জানান, গল্পটা তাঁর ভালো লেগেছে। আরও জানান, গল্প ভালো না লাগায় এত দিন কাজ করা হয়নি তাঁর। মিম বলেন, ‘অনেকেই জানতে চান, কাজ কম করছি কেন? কারণ গল্পটাই মিলছিল না ঠিকভাবে। গল্প বা কাজের প্রস্তাব তো অনেক আসে, কিন্তু গল্প বা আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো ভালো লাগছিল না। কাজী আসাদ যখন এই গল্পটা শোনালেন এবং আমি চরকিতে তাঁর আগের কাজ দেখলাম, আমার মনে হলো কাজটা করা দরকার।’

এই ওয়েব ফিল্মে একদম নতুনভাবে উপস্থাপন করা হবে মিমকে। কাজী আসাদ বলেন, ‘বিদ্যা সিনহা মিম আমাদের ইন্ডাস্ট্রির একজন পরীক্ষিত, মেধাবী এবং গ্ল্যামারাস অভিনেত্রী। সচরাচর তাঁকে গ্ল্যামার লুকেই দেখি। কিন্তু মজাটাই ওখানে যে তাঁকে কীভাবে ভেঙে নতুন ধরনের চরিত্রে দর্শকদের সামনে হাজির করা যায়। আমরা সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি। আশা করছি দর্শকেরা আমার কথা মিলিয়ে নিতে পারবেন।’

এখনই গল্প নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না নির্মাতা। শুধু জানালেন, এটি নির্মিত হবে ইমোশনাল ড্রামা ঘরানায়। গল্প লিখেছেন মাহমুদুল হাসান টিপু ও কাজী আসাদ। নির্মাতার সঙ্গে চিত্রনাট্য করেছেন আসাদুজ্জামান আবীর। এ মাসের শেষ দিকে শুরু হবে শুটিং। এই সিনেমায় মিমের সহশিল্পীদের নাম শিগগির ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে চরকি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫, আহত ৪০ জনেরও বেশি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বছরের শেষ সিনেমা ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
সিনেমার দৃশ্যে ইমতিয়াজ বর্ষণ
সিনেমার দৃশ্যে ইমতিয়াজ বর্ষণ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিনেমা মুক্তির হার কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এ বছর এখন পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে ৪৬টি সিনেমা। বছরের শেষ ভাগে সিনেমা মুক্তির সংখ্যা বাড়লেও ডিসেম্বরে এসে কমেছে। এ মাসে মুক্তি পেয়েছে একটি সিনেমা। গত শুক্রবার মুক্তির ঘোষণা এল আরও এক সিনেমার। ২৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে আহমেদ হাসান সানি পরিচালিত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’। এই সিনেমা দিয়ে শেষ হচ্ছে বছর।

এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি সিনেমার গল্পে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান, রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং যুগ যুগ ধরে চলে আসা রাজনৈতিক অস্থিরতার নানা প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন নির্মাতা। গত মাস থেকে সিনেমার প্রচার শুরু হয়েছে। গানের পর ট্রেলার প্রকাশের মধ্য দিয়ে ঘোষণা করা হলো সিনেমার মুক্তির তারিখ।

আহমেদ হাসান সানি একজন সংগীতশিল্পী। বিজ্ঞাপনচিত্র বানিয়ে নির্মাতা হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন। ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’ তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। সানি বলেন, ‘রাজনৈতিক আলাপের অভ্যাসটা জরুরি। মানুষ যত রাজনৈতিকভাবে সচেতন হবে, তত দেশকে নিয়ে ভাবতে শিখবে। আমরা সারা জীবন দেখে এসেছি হোটেলে, বাসে, রেস্টুরেন্টে বড় করে লেখা থাকে, এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ। রাজনৈতিক আলাপ করাকে ট্যাবু হিসেবে দেখেছি আমরা। এই ট্যাবুকে ভাঙার লক্ষ্যে সিনেমাটি করা।’

সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। আরও আছেন আজাদ আবুল কালাম, তানভীর অপূর্ব, এ কে আজাদ সেতু, কেয়া আলমসহ অনেকে। প্রযোজনা করেছেন খালিদ মাহমুদ তূর্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫, আহত ৪০ জনেরও বেশি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুবিন গর্গের মৃত্যুর চার্জশিট দাখিল, চারজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ

বিনোদন ডেস্ক
জুবিন গর্গ। ছবি: সংগৃহীত
জুবিন গর্গ। ছবি: সংগৃহীত

সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর মারা যান আসামের জনপ্রিয় সংগীতিশিল্পী জুবিন গর্গ। তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দুর্ঘটনার কথা জানালেও অনেকেই ষড়যন্ত্রের আঁচ পেয়েছিলেন। কেউ কেউ দাবি করছিলেন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে জুবিনকে। রহস্য উন্মোচনে একাধিক তদন্ত দল গঠনের নির্দেশ দেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। গত শুক্রবার আসাম পুলিশের বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) আড়াই হাজার পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেছে, যেখানে চারজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দাখিল করা চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালের আয়োজক শ্যামকানু মোহন্ত, জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, ব্যান্ডের ড্রামার শেখর জ্যোতি গোস্বামী এবং গায়িকা অমৃতপ্রভা মোহন্ত। এ ছাড়া জুবিন গর্গের চাচাতো ভাই পুলিশ কর্মকর্তা সন্দীপন গর্গের বিরুদ্ধেও অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তের শুরুতেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

জুবিন গর্গের মৃত্যু তদন্তের জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে এসআইটি (দ্য স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম) গঠন করে আসাম সরকার। ভারতীয় একাধিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন মাসে প্রায় ৩০০ জনকে জেরা করেছেন তদন্তকারীরা। একটি টিম সিঙ্গাপুরে গিয়েও তথ্য-প্রমাণাদি সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ার পরই জুবিনের সমাধিস্থলে ফুল, মোমবাতি হাতে ভিড় জমিয়েছিলেন ভক্তরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জুবিনের স্ত্রী গরিমা সাইকিয়া।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি তিনি, ভেঙে পড়েন কান্নায়। এ সময় গরিমা বলেন, ‘আমি ভাবতেই পারছি না, জুবিনের মতো মানুষকেও কেউ নিজের স্বার্থে খুন করতে পারে! গোটা জীবন যে মানুষটা অন্যের জন্য বিলিয়ে দিল। নিজের সময়, অর্থ, মন—সবটাই তো চিরকাল বিলিয়ে গেছে সে। গত তিন মাস এসআইটি প্রচুর পরিশ্রম করেছে। যার ফলাফল মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে মিলে গেছে। এখন বাকি সব নির্ভর করছে বিচারব্যবস্থার ওপর। দোষী সাব্যস্তদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫, আহত ৪০ জনেরও বেশি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত