
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২৫তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। সম্প্রতি তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইলিয়াস শান্ত।
ইলিয়াস শান্ত

প্রশ্ন: জুলাই-আগস্টের সেই উত্তপ্ত দিনগুলোতে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি কেমন ছিল, শুরুতে সে সম্পর্কে জানতে চাই।
অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব: জুলাই-আগস্টে দেশের অন্য বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি যেমন ছিল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও অনেকটা তেমনই ছিল। তবে এখানে কিছু ভিন্নমাত্রাও ছিল। আমাদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একেবারে শুরু থেকে বিভিন্ন ফর্মে এখানে অংশ নিয়েছেন। এ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তাঁদের অসম্ভব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীষণ দৃঢ়তা দেখেছি। এককথায় এটা অত্যন্ত উদ্দীপনামূলক একটা সময় ছিল। একই সঙ্গে তাঁদের যে সাহসিকতা... তাঁরা খুব কঠিন একটা সময়ের মধ্যে ছিলেন। আন্দোলনের সময় ক্যাম্পাসে তৎকালীন সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের প্রচণ্ড আধিপত্য ছিল। তাঁদের হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তবুও শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত সাহস নিয়ে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। একই সঙ্গে শিক্ষকদের একটা অংশও এই অন্যায়-অনাচার এবং শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাঁদের সংখ্যা যদিও খুব বেশি ছিল না... তবে আমি বলব এসব শিক্ষক শুধু এই জুলাই-আগস্ট নয়, অনেক লম্বা সময় ধরে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। সামগ্রিকভাবে বলব, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এবং আরও ব্রডলি বললে রাজশাহী শহরের স্কুল-কলেজ, রুয়েট-মেডিকেল কলেজসহ সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে এ অঞ্চলের হয়ে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন।
প্রশ্ন: আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কতজন হতাহত হয়েছেন?
সালেহ হাসান নকীব: তৎকালীন সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের হামলা এবং একই সঙ্গে সে সময়ের পুলিশ বাহিনীর যে তৎপরতা; বলতে গেলে তারা অনেকটাই একে অপরের সহায়ক ভূমিকায় ছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের হামলা হয়েছে। তাঁরা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরে ডজনখানেক শিক্ষার্থী জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে হতাহত হয়েছেন।
প্রশ্ন: কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের এ সংগ্রাম আপনি কীভাবে দেখছেন?
সালেহ হাসান নকীব: এটা হওয়ারই ছিল। তবে ঠিক কোন ফর্মে এটা পরিণতি লাভ করবে, সে ব্যাপারে অস্পষ্টতা ছিল। আসলে বাংলাদেশে গত দেড় যুগ ধরে যে ধরনের শাসন চলছিল, তাতে জনগণের একটি বড় অংশ নানানভাবে নিগৃহীত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে, অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন, অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ওপর জেল-জরিমানা-মামলা এগুলো সমানতালে চলেছে। ফলে যাঁদের বুদ্ধি-বিবেক ছিল এবং যাঁরা ন্যায়-অন্যায়ের ভেদাভেদ করতে পারতেন, তাঁদের ভেতরে একধরনের অসন্তোষ সব সময় ছিল। স্পেশালি শেষ যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, যেটা কোনো মানদণ্ডেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা যায় না; সেগুলোও মানুষের ভেতরে জমে থাকা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শিক্ষার্থীরা শুরু করেছিলেন কোটা নিয়ে। এরপর এটা ধাপে ধাপে এক দফার আন্দোলনে পৌঁছে যায়। মূলত যেটা হয়েছে, যখন এ দেশের মানুষ দেখল, আমাদের বাচ্চাদের একেবারে নির্মমভাবে রাস্তাঘাটে হত্যা করা হচ্ছে, তখন তাঁদের ভেতরে পুঞ্জীভূত যে অভিযোগ ও ক্ষোভ ছিল, সেটার একটা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যখন একবার মানুষ ভয়টা কাটিয়ে রাস্তায় নেমে যায়, তখন আসলে তাদের দমিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আমি যেটা বলব, এ বিপ্লবকে যদি কেউ বিশ্লেষণ করতে চান, তাহলে তাঁর এটা ভুললে চলবে না, এ ঘটনাটা আসলে জুলাই-আগস্টের ঘটনা নয়। এটার পেছনে অনেক ইতিহাস আছে এবং সবকিছু মিলিয়ে এমন একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। যখন শিক্ষার্থীদের ডাকে জনতা রাস্তায় নেমে এলো, তখন এটা একটা চূড়ান্তরূপ লাভ করে। তবে এর ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে।
প্রশ্ন: এখন পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে রয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কোটাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা কী?
সালেহ হাসান নকীব: পোষ্য কোটা নিয়ে আমি ১০-১৫ বছর ধরে চিন্তাভাবনা করছি। তারও আগে, আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখনো এই কোটা নিয়ে ভেবেছি। আমি এই পোষ্য কোটা রাখার পেছনে কোনো শক্তিশালী নৈতিক ভিত্তি অথবা যুক্তি দেখি না। তারপরও যেটা বাস্তবতা, সেটা হচ্ছে এ কোটাব্যবস্থা এখানে চলমান রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন যে দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছেন, আমি আমার একেবারে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে মনে করি তাঁরা যে কথাবার্তা বলছেন সেগুলোর পেছনে শক্তিশালী যুক্তি আছে। আমি মনে করি, তাঁরা অযৌক্তিক কোনো বার্তা বলছেন না।
প্রশ্ন: আমরা শুনেছি, সাবেক একজন উপাচার্য তাঁর ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এই কোটা প্রথা চালু করেছিলেন। সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত হলো, পরবর্তীকালে নাকি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ কোটা প্রথায় রাবিকে অনুসরণ করেছে...
সালেহ হাসান নকীব: এই কথা বাজারে চালু আছে। তবে এটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। আসলে বিভিন্ন ফর্মে এই ধরনের কোটা সম্ভবত বাংলাদেশে আরও আগে থেকেই ছিল। এটা শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, বিভিন্ন ফর্মে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছিল। হতে পারে যেটা, এটাকে একটা কাঠামোবদ্ধ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একজন উপাচার্য এরকম ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু সম্ভবত আপনারা খতিয়ে দেখলে জানতে পারবেন, এটা আগে থেকেই ছিল। কাগজে-কলমে এটাকে একটা জায়গায় নিয়ে আসার বিষয়টা হয়তো পরে ঘটেছে, কিন্তু জিনিসটা আগেই ছিল।
আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, একজন উপাচার্য এ কোটাপ্রথা চালু করেছেন বলে যে একধরনের রটনা আছে, এই রটনা যাঁরা শুরু করেছেন তাঁরা নিজেরাও কখনো পোষ্য কোটা বাতিল করেননি। বরং তাঁদের অনেকে নিজেদের সন্তানদের জন্য এই পোষ্য কোটার সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। ব্যাপারটা আসলে ঠিক যেভাবে বলা হয়, ততখানি সরল না। তবে আমি যেটা বলছিলাম, আমার নিজের বুদ্ধি-বিবেকের জায়গা থেকে, ন্যায়পরাণয়তার জায়গা থেকে এটা থাকার জন্য শক্তিশালী কোনো যুক্তি কখনো খুঁজে পাইনি।
প্রশ্ন: আপনি উপাচার্য হওয়ার আগে পোষ্য কোটা নিয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন। এখন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রনেতারাও এ কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। পোষ্য কোটা বাতিল করা যাচ্ছে না কেন?
সালেহ হাসান নকীব: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। এই জায়গাতেই আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার ভেতরে আছি। আমি একেবারে অকপটে স্বীকার করছি, এই মুহূর্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সমস্যার মধ্যে রয়েছি। তার কারণ হচ্ছে, প্রায় ৫০ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই পোষ্য কোটার সুবিধাভোগী। এই সুবিধা তাঁরা এত দীর্ঘ সময় ধরে চর্চা করেছেন যে, এখন এটাকে পুরোপুরি তুলে দেওয়াটা তাঁদের অনেকের কাছে খুব বড় একটা ধাক্কা বলে মনে হচ্ছে।
সম্প্রতি আমি আমাদের শিক্ষক সমিতির কাছ থেকে একটা চিঠি পাই। যেখানে বলা হয়েছে, সর্বসম্মতিক্রমে পোষ্য কোটা যে শুধু থাকবে তাই নয়, আমরা যে তিন শতাংশের কথা বলেছিলাম এটাকে যেন ৫ শতাংশে নিয়ে গিয়ে অবিলম্বে কার্যকর করা হয়। ফলে বুঝতেই পারছেন, এই যে নানাবিধ ইন্টারেস্ট এবং নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা, এগুলো আমাদের একটা সিদ্ধান্তে যেতে বা ঐকমত্যে পৌঁছাতে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।
আমি যেটা ফিল করছি, আমার ওপর যে চাপ রয়েছে; সেটা হচ্ছে, যেহেতু আমি এই মুহূর্তে প্রশাসনের দায়িত্বে আছি... এখানে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি, আমি কী মনে করি, সেটা এক জায়গা। একই সঙ্গে পুরো প্রতিষ্ঠানটাকে কী করে সচল রাখা যায়; শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠন এবং অন্য দিকগুলোকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়; এটাও আমার চিন্তা করতে হচ্ছে। কাজেই পোষ্য কোটার স্টেকহোল্ডারদের ভেতরে এখন যে একটা ঐকমত্য দরকার, সেটা স্পষ্ট। এখন এ ঐকমত্য কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং একই সঙ্গে মতবিরোধের পার্থক্যটা কীভাবে আরও কমিয়ে নিয়ে এসে একটা সুন্দর সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়, সেটা নিয়েই আলোচনা চলমান রয়েছে। এটা নিয়ে অনেকে দিনরাত কাজ করছেন। কাজ চলছে। আমরা আশা করছি, একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারব, যেটা হয়তো ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
প্রশ্ন: ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে আপনাদের পদক্ষেপ অভিভাবক ও ভর্তি-ইচ্ছুকদের মধ্যে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতিতে এর বাইরে আর নতুন কোনো পরিবর্তন আসছে কি না?
সালেহ হাসান নকীব: আমার কাছে এটাকেই বড় পরিবর্তন বলে মনে হয়েছে। এর আগে আমরা কখনো বিকেন্দ্রীকরণে যাইনি। এই প্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তার পরীক্ষাগুলো বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে নেওয়ার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটার বাস্তবায়ন আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। পরীক্ষাগুলো সুন্দরভাবে শেষ করতে হবে। এটার চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে। আপনারা জানেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। এর কারণও আপনাদের অজানা থাকার কথা নয়। শিক্ষক নিয়োগে যেসব ভয়ংকর অনিয়ম হয়েছে, সেটার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রক্রিয়াই বিতর্কিত করে ফেলা হয়েছে। এর ফলে যেটা হয়েছে, আমাদের প্রবীণ শিক্ষকরা অবসরে চলে যাচ্ছেন, কিন্তু আমরা তাঁদের রিপ্লেসমেন্ট পাচ্ছি না। কাজেই এটা নিয়েও খুব সতর্কভাবে এগোচ্ছি, আমরা একটা নতুন পদ্ধতিতে যাব। সেখানে আমাদের যাতে ত্রুটি-বিচ্যুতি না হয় এবং যেন সুনামের সঙ্গেই এ পরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি। সম্প্রতি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একটা সভা হয়েছে। সেখানে পোষ্য কোটা, ভর্তি পরীক্ষাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমাদের যে সিদ্ধান্ত; সেটা হচ্ছে, ভর্তি পরীক্ষার যে তারিখগুলো নির্ধারণ করেছিলাম, এটাকে টার্গেট করেই সামনে এগিয়ে যাব।
প্রশ্ন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নিয়ে একটা আলোচনা হয়েছে। দলীয় রাজনীতিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অংশগ্রহণ নিয়েও বিধিনিষেধ আরোপের কথা শোনা যাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দলীয় রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে?
সালেহ হাসান নকীব: এখানে আমি যে বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছি; সেটা হচ্ছে, আমার শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে দেখতে চায়। ইনফ্যাক্ট আপনারা দেখেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে এমন একটা ভিউ তৈরি হয়েছিল; ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের মতো কথাও উঠেছে। পরে আমি জেনেছি, এখানে কিছু কৌশলগত ব্যাপার ছিল।
আসল কথা হচ্ছে, ছাত্ররাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলেছে, এই ধরনের অপরাজনীতি আমি মনে করি না আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসার সুযোগ আছে। রাজনীতি নিয়ে আমার ছাত্র-ছাত্রী এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই একটা সুষ্ঠু ধারা ঠিক করবেন, যেটা মেজরিটির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সে ধরনের একটি ধারায় কীভাবে আসা যায়, সেটা নিয়ে কাজ চলমান আছে। একই সঙ্গে আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে বারবারই বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করেছি। তাঁদের পরামর্শগুলো আমরা একসঙ্গে করে বিচার-বিশ্লেষণ করছি। আমাদের এই কাজ এত দিনে শেষ হয়ে যেত, যদি আমরা পোষ্য কোটা নিয়ে এখন যে ডামাডোলের মধ্যে রয়েছি, সেখানে না পড়তাম।
কথা হচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ফর্মে রাজনীতি হবে অথবা হবে না; সেটা আমার ছাত্র-ছাত্রীরা এবং যাঁরা এর সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট তাঁরাই ঠিক করবেন। আর কী হবে না, সেটা আমি বলতে পারি। সেটা হলো সিট-দখল, সিট-বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-নিপীড়ন, আধিপত্য বিস্তারের যে প্রবণতা; এই জিনিসগুলোর বিরুদ্ধে আমরা সবাই একমত হব। এই জিনিসগুলো আর কখনো ক্যাম্পাসে ফিরতে দেব না। এই বিষয়ে আমাদের খুবই দৃঢ় একটা অবস্থান থাকবে। ছাত্ররাজনীতির নামে এ ধরনের যে গুন্ডামি এবং অপরাজনীতি চলেছে, সেটা আর ক্যাম্পাসে আসতে দেব না।
প্রশ্ন: ১৯৮৯ সালের পর থেকে নানা কারণে রাকসু নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও করোনার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাবির এখন পরিকল্পনা কী?
সালেহ হাসান নকীব: আমার দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকে রাকসু নির্বাচন টপ-প্রায়োরিটিতে আছে। কারণ, শিক্ষার্থীদের বহু কথা থাকে। সেই কথাগুলো একটা নির্বাচিত ভ্যালিড বডির কাছ থেকে এলে বিশ্ববিদ্যালয় চালানোও সহজ হয়। জবাবদিহির ব্যাপারটাও নিশ্চিত হয়। আমার ছাত্র-ছাত্রীরা একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাঁদের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। এখানে তাঁদের দায়বদ্ধতা থাকবে এবং তাঁরা আমাদের জানাবেন ছাত্রসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা; তাঁরা কী চান। আমি মনে করি, একটা সুস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই প্রক্রিয়া খুবই জরুরি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে এটার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একটা হোমওয়ার্ক করা দরকার। সে কাজটাই রাকসুর ট্রেজারার করে যাচ্ছেন। আমাদের ইচ্ছা, ইনশাআল্লাহ শিক্ষার্থীদের রাকসু দিতে পারব।
প্রশ্ন: রাকসু নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে?
সালেহ হাসান নকীব: আমি চেয়েছিলাম দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের মতো একটা জায়গায় পৌঁছে যাব। তবে এর থেকে কিছু কম-বেশি সময় লাগতে পারে। কিন্তু খুব কম-বেশি হবে বলে মনে হয় না। আমাদের সবার যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে এটা করতে পারব।
প্রশ্ন: প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে তরুণ প্রজন্ম মাদকাসক্তি, অনলাইন জুয়া এবং অন্যান্য নেশার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো একাডেমিক বা কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস চালু করা যায় কি না?
সালেহ হাসান নকীব: আপনারা জেনে খুশি হবেন, এই মুহূর্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে-নিঃসংকোচে কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস এবং খেলাধুলার যে কার্যক্রম, এগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি দুই বিভাগের খেলা নিয়ে ক্যাম্পাসে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। এটা নিয়ে আমি খুবই মর্মাহত; আমাদের শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণ কোনো কোনো সময় সীমা ছাড়িয়ে যায়। তবে এখন আবার খেলাধুলা পুরোদমে চলছে। প্রতিদিনই কালচারাল, এক্সট্রা-কারিকুলার এবং কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি সারা দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে। আমি এটাকে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারে আশাবাদী। এর জন্য যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, সেটা করব। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি সুন্দর করতে হয়, তাহলে এ ধরনের অ্যাক্টিভিটির কোনো বিকল্প নেই। আমরা চাই, ছেলেমেয়েরা পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে এখান থেকে বেরিয়ে যাক।
প্রশ্ন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা এবং এখান থেকেই ১৯৯৮ সালে কর্মজীবন শুরু করেছেন। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে আরও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনার শিক্ষাজীবন ও উজ্জ্বল কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
সালেহ হাসান নকীব: নিজের সম্পর্কে বলাটা খুব একটা শোভা পায় না। এটা নিয়ে কথাবার্তা অন্যরাই বলবেন। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে পদার্থবিজ্ঞানকে ভালোবেসেছিলাম। এই ভালোবাসাই আমার জীবনের অন্যতম বড় শক্তির উৎস। আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করি, যেটা এই মহাবিশ্বের যত বড় বড় রহস্য এবং যত চমকপ্রদ ঘটনা আছে, সবকিছুর সঙ্গে জড়িত। আমার ফিজিক্স পড়তে, জানতে এবং এটা নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। এটা আমার জীবনের খুব বড় ভালোবাসার জায়গা। নিজকে পরিচয় দেওয়ার সময় বলি, আমি ছাত্র। কারণ, ছাত্রত্বের চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। ডিগ্রি, পুরস্কার, সাইটেশন, নাম্বার অব পাবলিকেশন্স, দেশে-বিদেশে কতটুকু নাম আছে না-আছে; ছাত্রত্ব এ সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। কারণ একজন ছাত্র সব সময় শেখে। এই শেখার আনন্দের চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু নেই।
আমি কতটুকু কী করেছি, সেটা আমার ফিল্ডে যাঁরা কাজ করেন তাঁরাই মূল্যায়ন করবেন। আমি যত দিন বেঁচে আছি, এই কাজের ভেতরেই থাকতে চাই।
প্রশ্ন: সুপারকন্ডাক্টিভিটি এবং কম্পিউটেশনাল ফিজিক্স নিয়ে আপনার গবেষণার আগ্রহ। এ বিষয়গুলো কীভাবে জনকল্যাণে ভূমিকা রাখছে?
সালেহ হাসান নকীব: সুপারকন্ডাক্টিভিটি নিয়ে যদি বলি, হাই-টেম্পারেচার সুপারকন্ডাক্টিভিটি নিয়ে ২৮-২৯ বছর কাজ করছি। আমাদের আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে, হয়তো সামনের দশকে দেখতে পাব, সুপারকন্ডাক্টিভিটি কী করে সমস্ত পৃথিবীর প্রযুক্তির ওপর তার দখলটা নিয়ে আসছে।
এখন আমরা বাস করি সেমিকন্ডাক্টরের যুগে। এই যে চিপ, মাইক্রোচিপ; এসব ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস দাঁড়িয়ে আছে সেমিকন্ডাক্টিং ইন্ডাস্ট্রির ওপর।
সুপারকন্ডাক্টিভিটি নিয়ে আমাদের যে কাজ, সে কাজগুলো যদি একেবারে মার্কেট লেভেলে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এ জগতের চেহারা অনেকখানি পাল্টে যাবে। কারণ অতি পরিবাহীর যে অদ্ভুত সব ফিজিক্যাল প্রোপার্টিজ আছে, তাতে এখন আমরা যে সংকটগুলোর মধ্যে আছি, এখানে সবচেয়ে বড় সংকট হলো এনার্জি ক্রাইসিস। শক্তির একটা সংকট। তেল-গ্যাস এগুলো পুরিয়ে যাবে। ফসিল ফুয়েল পরিবেশের ওপর বিরূপ ভূমিকা রাখে। যদি সুপারকন্ডাক্টিং পাওয়ার সিস্টেম নিয়ে আসা যায়, তাহলে আমরা এমন অনেক বড় বড় ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখতে পাব। এ ছাড়া শুধু ট্রান্সমিশন বা ম্যাটল্যাবের মতো ব্যাপার না, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের কথা বলি, কিউবিটের কথা বলি; এসবের সঙ্গেও সুপারকন্ডাক্টিভিটি প্রযুক্তি ভীষণভাবে জড়িত। সুপারকন্ডাক্টরটাকে আরেকটু ইউজার ফ্রেন্ডলি করতে পারলে তথ্যপ্রযুক্তির জায়গা থেকেও একটা বড় বিপ্লব ঘটে যাবে।
আর কম্পিউটেশনাল ফিজিকসে যেটা করি, সেটা হলো, ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন। আপনি কোনো একটা বিষয় ল্যাবে তৈরি না করে, ফিজিকস ব্যবহার করে এবং কম্পিউটেশন করে বিভিন্ন প্রপার্টি প্রেডিক্ট করতে পারেন। এর ফলে প্রস্তুতকারকরা আগে থেকেই একটা তথ্য পান যে কোন কাজ কোন ধরনের ম্যাটেরিয়াল দিয়ে এবং কোন ধরনের প্রোডাক্ট তৈরি করা যায়। এই কাজগুলো আমরা করি। কাজেই এগুলো সব জীবনঘনিষ্ঠ। এগুলোর অনেক প্রয়োগ আছে।

প্রশ্ন: সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশনের র্যাংকিং প্রকাশিত হয়েছে। এ তালিকায় ১ হাজারের মধ্যে আছে দেশের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। এই পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাবির অবস্থান ১ হাজার ১ থেকে ১ হাজার ২০০-এর মধ্যে। র্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
সালেহ হাসান নকীব: র্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে শিক্ষা কার্যক্রমকে উন্নত করার কোনো বিকল্প নেই। আমরা বারবার গবেষণার কথা বলি; কিন্তু একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, আমাদের যে গ্র্যাজুয়েটরা বের হবেন, তাঁরা যেন ভালো ট্রেনিং নিয়ে বের হন। যদি আপনি সাসটেইনেবল র্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে চান, তাহলে পঠন-পাঠন ও গবেষণা; প্রত্যেকটি জায়গাতে গুরুত্ব দিতে হবে। কোর্স কারিকুলামকে আধুনিক দুনিয়ার সঙ্গে মিল রেখে উন্নত করা, গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো এবং যাঁরা যোগ্য তাঁদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা বারবার যে ভুলটা করে আসছি সেটা হলো, যোগ্য মানুষগুলোকে ঠিক জায়গাতে নিয়ে আসতে পারিনি। এর ফলে যেটা হয়েছে, হয়তো বরাদ্দ দিয়েছি, কিন্তু কাকে দিয়েছি, কতটুকু দিয়েছি; যাঁকে দিয়েছি তিনি এই বরাদ্দের কতটুকু সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারবেন, এই জায়গাগুলো দেখিনি। আমি বলব, বরাদ্দ আরও দরকার। ক্লাসরুমের শৃঙ্খলা এবং কোর্স কারিকুলাম আধুনিকায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হব। আসলে শিক্ষার্থীরা যেভাবে জীবনযাপনের মাধ্যমে লেখাপড়া করেন, এই সংকটের মধ্যে তাঁরা যেটুকু করেন, সেটাও কম নয়। হলের এই পরিবেশ, এই খাবার; এরপরও তাঁরা যেটুকু করছেন, সেটারও প্রশংসা করতে হবে।

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
সালেহ হাসান নকীব: বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি বহুতলবিশিষ্ট ভবনের নির্মাণকাজ চলমান। এই কাজও জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রায় থেমে গিয়েছিল। সেটাকে আবার সচল করা হয়েছে। বুঝতেই পারছেন, একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর কাজ থেমে যাওয়াটা কীসের ইন্ডিকেশন। আসলে গণ-অভ্যুত্থান হলে একটি হলের নির্মাণকাজ থেমে যাবে; এমন তো হওয়া উচিত না। নিশ্চয়ই কোনো কারণ ছিল বলেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেগুলো আবার সচল করেছি। এখন অনেক বড় একটা একাডেমিক ভবনের কাজ প্রায় অর্ধেক হয়ে পড়ে আছে। এই বিষয়গুলোর ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরেও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে, যেগুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে খুব শিগগির বসব। এই মুহূর্তে তিন ভাগের এক ভাগ শিক্ষার্থীকে আবাসন সুবিধা দিতে পেরেছি। এটাকে অন্তত দ্বিগুণ করার একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। কবে সবাইকে আবাসন দিতে পারব জানি না। কিন্তু এই মুহূর্তে আবাসনের যে সুবিধা রয়েছে, সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। এ ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। কাজ চলমান রয়েছে।
প্রশ্ন: আবাসিক হলগুলোতে খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খাবারের মধ্যে বিভিন্ন সময় নানা কিছু পাওয়া যায়। কীভাবে খাবারের মানে উন্নতি করা যায়?
সালেহ হাসান নকীব: খাবারের মান উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বাজেট। আমাদের উত্তরবঙ্গের হলগুলোতে যেসব শিক্ষার্থী থাকেন, তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশের পক্ষে উচ্চমূল্য দিয়ে ডাইনিং চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে যে বাজেটে এটা চলছে, তাতে আমাদের ভর্তুকি ছাড়া খুব ভালো কিছু আইটেম রাখাও সম্ভব নয়। আবার এই মুহূর্তে ভর্তুকির জন্য কোনো অ্যালোকেশনও নেই।
আমাদের যে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আছে, সেটাকে সচল করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে সেখানে আমিও একটা আবেদন রাখতে চাই। আমাদের লাখ লাখ অ্যালাইমনাই পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। তাঁরা সবাই মিলে যদি একটু করেও কনট্রিবিউট করেন, তাহলে অন্তত আমাদের শিক্ষার্থীদের তিনবেলা খাবারের মান নিয়ে অত চিন্তা করতে হয় না। অনেক পথ আছে, একটা হচ্ছে ভর্তুকির জন্য আবেদন করা। যেটার ব্যাপারে আমি খুব আশাবাদী বলব না, কিন্তু আমাদের যাঁরা অ্যালামনাস আছেন, তাঁদের এখানে কনট্রিবিউট করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তাঁদের এগিয়ে আসা উচিত।

প্রশ্ন: বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে? বিগত সময়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।
সালেহ হাসান নকীব: প্রত্যেকটি ফ্যাকাল্টির গবেষণার ধরন আলাদা। কৃষি অনুষদে যে গবেষণাগুলো হচ্ছে, সেটা মাটি ও মানুষের খুব কাছাকাছি। তারা উন্নত জাত, গবাদি পশু পালন; এগুলো নিয়ে মিনিংফুল কাজ করছে। এই মুহূর্তে হাঁস-মুরগির টিকা নিয়ে একটা বড় প্রজেক্ট চলছে। ফিজিকস এবং কেমিস্ট্রি বিভাগে ন্যানো পাবলিকেশন, থিউরিটিক্যাল কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিকস; এগুলো নিয়ে কাজ চলছে। বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস যে বিভাগগুলো আছে, সেখানে সাপের বিষ, টক্সিসিটি, ক্যানসার ড্রাগ—এসব নিয়ে অনেক গবেষক কাজ করছেন। ফিশারিজ বিভাগও খুব তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করছে। ইঞ্জিনিয়ারিং যে ফ্যাকাল্টি আছে, তারা বিগ ডেটা অ্যানালাইসিস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিভিন্ন অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট; এগুলো নিয়ে কাজ করছে। কলা ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদেও আমাদের দেশের বিভিন্ন সমস্যা, আবাসন, জলবায়ু; এগুলো মানুষের ওপর কী ইম্প্যাক্ট ফেলছে সে-সংক্রান্ত কিছু প্রজেক্ট চলছে। সামাজিক সমস্যা, নারী নির্যাতন; এগুলো নিয়েও কাজ হচ্ছে। কাজ হচ্ছে, কিন্তু এ কাজের পরিমাণ আরও বেশি হওয়া উচিত। যেটুকু হচ্ছে, সেটুকু আমি মনে করি না পর্যাপ্ত। আমরা যদি একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে চাই, তাহলে কাজের গুণগত মান এবং পরিমাণ সবই বাড়াতে হবে।
প্রশ্ন: শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গবেষণার জন্য যে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। গবেষণার জন্য বরাদ্দ আরও বাড়ানো সম্ভব কি না?
সালেহ হাসান নকীব: এটার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। সম্প্রতি আমি এবং আমাদের হিসাব শাখার পরিচালক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম। গবেষণার ব্যাপারে একটা খসড়া সেখানে দিয়ে এসেছি। ইউজিসির মিটিংয়েও গবেষণা বাজেট বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। কথা হচ্ছে, আমাদের এই প্রশাসনের বয়স মাত্র সাড়ে তিন মাস। এটা খুব অল্প সময়। কিন্তু এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছি। কিছু আশ্বাসও পেয়েছি। বাকিটা সময়ই বলবে, কতটুকু সাপোর্ট নিয়ে আসতে পারব।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
সালেহ হাসান নকীব: আজকের পত্রিকার জন্য শুভকামনা রইল।
প্রশ্ন: জুলাই-আগস্টের সেই উত্তপ্ত দিনগুলোতে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি কেমন ছিল, শুরুতে সে সম্পর্কে জানতে চাই।
অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব: জুলাই-আগস্টে দেশের অন্য বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি যেমন ছিল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও অনেকটা তেমনই ছিল। তবে এখানে কিছু ভিন্নমাত্রাও ছিল। আমাদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একেবারে শুরু থেকে বিভিন্ন ফর্মে এখানে অংশ নিয়েছেন। এ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তাঁদের অসম্ভব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীষণ দৃঢ়তা দেখেছি। এককথায় এটা অত্যন্ত উদ্দীপনামূলক একটা সময় ছিল। একই সঙ্গে তাঁদের যে সাহসিকতা... তাঁরা খুব কঠিন একটা সময়ের মধ্যে ছিলেন। আন্দোলনের সময় ক্যাম্পাসে তৎকালীন সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের প্রচণ্ড আধিপত্য ছিল। তাঁদের হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তবুও শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত সাহস নিয়ে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। একই সঙ্গে শিক্ষকদের একটা অংশও এই অন্যায়-অনাচার এবং শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাঁদের সংখ্যা যদিও খুব বেশি ছিল না... তবে আমি বলব এসব শিক্ষক শুধু এই জুলাই-আগস্ট নয়, অনেক লম্বা সময় ধরে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। সামগ্রিকভাবে বলব, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এবং আরও ব্রডলি বললে রাজশাহী শহরের স্কুল-কলেজ, রুয়েট-মেডিকেল কলেজসহ সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে এ অঞ্চলের হয়ে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন।
প্রশ্ন: আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কতজন হতাহত হয়েছেন?
সালেহ হাসান নকীব: তৎকালীন সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের হামলা এবং একই সঙ্গে সে সময়ের পুলিশ বাহিনীর যে তৎপরতা; বলতে গেলে তারা অনেকটাই একে অপরের সহায়ক ভূমিকায় ছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের হামলা হয়েছে। তাঁরা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরে ডজনখানেক শিক্ষার্থী জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে হতাহত হয়েছেন।
প্রশ্ন: কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের এ সংগ্রাম আপনি কীভাবে দেখছেন?
সালেহ হাসান নকীব: এটা হওয়ারই ছিল। তবে ঠিক কোন ফর্মে এটা পরিণতি লাভ করবে, সে ব্যাপারে অস্পষ্টতা ছিল। আসলে বাংলাদেশে গত দেড় যুগ ধরে যে ধরনের শাসন চলছিল, তাতে জনগণের একটি বড় অংশ নানানভাবে নিগৃহীত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে, অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন, অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ওপর জেল-জরিমানা-মামলা এগুলো সমানতালে চলেছে। ফলে যাঁদের বুদ্ধি-বিবেক ছিল এবং যাঁরা ন্যায়-অন্যায়ের ভেদাভেদ করতে পারতেন, তাঁদের ভেতরে একধরনের অসন্তোষ সব সময় ছিল। স্পেশালি শেষ যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, যেটা কোনো মানদণ্ডেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা যায় না; সেগুলোও মানুষের ভেতরে জমে থাকা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শিক্ষার্থীরা শুরু করেছিলেন কোটা নিয়ে। এরপর এটা ধাপে ধাপে এক দফার আন্দোলনে পৌঁছে যায়। মূলত যেটা হয়েছে, যখন এ দেশের মানুষ দেখল, আমাদের বাচ্চাদের একেবারে নির্মমভাবে রাস্তাঘাটে হত্যা করা হচ্ছে, তখন তাঁদের ভেতরে পুঞ্জীভূত যে অভিযোগ ও ক্ষোভ ছিল, সেটার একটা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যখন একবার মানুষ ভয়টা কাটিয়ে রাস্তায় নেমে যায়, তখন আসলে তাদের দমিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আমি যেটা বলব, এ বিপ্লবকে যদি কেউ বিশ্লেষণ করতে চান, তাহলে তাঁর এটা ভুললে চলবে না, এ ঘটনাটা আসলে জুলাই-আগস্টের ঘটনা নয়। এটার পেছনে অনেক ইতিহাস আছে এবং সবকিছু মিলিয়ে এমন একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। যখন শিক্ষার্থীদের ডাকে জনতা রাস্তায় নেমে এলো, তখন এটা একটা চূড়ান্তরূপ লাভ করে। তবে এর ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে।
প্রশ্ন: এখন পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে রয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কোটাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা কী?
সালেহ হাসান নকীব: পোষ্য কোটা নিয়ে আমি ১০-১৫ বছর ধরে চিন্তাভাবনা করছি। তারও আগে, আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখনো এই কোটা নিয়ে ভেবেছি। আমি এই পোষ্য কোটা রাখার পেছনে কোনো শক্তিশালী নৈতিক ভিত্তি অথবা যুক্তি দেখি না। তারপরও যেটা বাস্তবতা, সেটা হচ্ছে এ কোটাব্যবস্থা এখানে চলমান রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন যে দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছেন, আমি আমার একেবারে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে মনে করি তাঁরা যে কথাবার্তা বলছেন সেগুলোর পেছনে শক্তিশালী যুক্তি আছে। আমি মনে করি, তাঁরা অযৌক্তিক কোনো বার্তা বলছেন না।
প্রশ্ন: আমরা শুনেছি, সাবেক একজন উপাচার্য তাঁর ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এই কোটা প্রথা চালু করেছিলেন। সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত হলো, পরবর্তীকালে নাকি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ কোটা প্রথায় রাবিকে অনুসরণ করেছে...
সালেহ হাসান নকীব: এই কথা বাজারে চালু আছে। তবে এটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। আসলে বিভিন্ন ফর্মে এই ধরনের কোটা সম্ভবত বাংলাদেশে আরও আগে থেকেই ছিল। এটা শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, বিভিন্ন ফর্মে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছিল। হতে পারে যেটা, এটাকে একটা কাঠামোবদ্ধ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একজন উপাচার্য এরকম ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু সম্ভবত আপনারা খতিয়ে দেখলে জানতে পারবেন, এটা আগে থেকেই ছিল। কাগজে-কলমে এটাকে একটা জায়গায় নিয়ে আসার বিষয়টা হয়তো পরে ঘটেছে, কিন্তু জিনিসটা আগেই ছিল।
আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, একজন উপাচার্য এ কোটাপ্রথা চালু করেছেন বলে যে একধরনের রটনা আছে, এই রটনা যাঁরা শুরু করেছেন তাঁরা নিজেরাও কখনো পোষ্য কোটা বাতিল করেননি। বরং তাঁদের অনেকে নিজেদের সন্তানদের জন্য এই পোষ্য কোটার সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। ব্যাপারটা আসলে ঠিক যেভাবে বলা হয়, ততখানি সরল না। তবে আমি যেটা বলছিলাম, আমার নিজের বুদ্ধি-বিবেকের জায়গা থেকে, ন্যায়পরাণয়তার জায়গা থেকে এটা থাকার জন্য শক্তিশালী কোনো যুক্তি কখনো খুঁজে পাইনি।
প্রশ্ন: আপনি উপাচার্য হওয়ার আগে পোষ্য কোটা নিয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন। এখন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রনেতারাও এ কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। পোষ্য কোটা বাতিল করা যাচ্ছে না কেন?
সালেহ হাসান নকীব: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। এই জায়গাতেই আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার ভেতরে আছি। আমি একেবারে অকপটে স্বীকার করছি, এই মুহূর্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সমস্যার মধ্যে রয়েছি। তার কারণ হচ্ছে, প্রায় ৫০ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই পোষ্য কোটার সুবিধাভোগী। এই সুবিধা তাঁরা এত দীর্ঘ সময় ধরে চর্চা করেছেন যে, এখন এটাকে পুরোপুরি তুলে দেওয়াটা তাঁদের অনেকের কাছে খুব বড় একটা ধাক্কা বলে মনে হচ্ছে।
সম্প্রতি আমি আমাদের শিক্ষক সমিতির কাছ থেকে একটা চিঠি পাই। যেখানে বলা হয়েছে, সর্বসম্মতিক্রমে পোষ্য কোটা যে শুধু থাকবে তাই নয়, আমরা যে তিন শতাংশের কথা বলেছিলাম এটাকে যেন ৫ শতাংশে নিয়ে গিয়ে অবিলম্বে কার্যকর করা হয়। ফলে বুঝতেই পারছেন, এই যে নানাবিধ ইন্টারেস্ট এবং নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা, এগুলো আমাদের একটা সিদ্ধান্তে যেতে বা ঐকমত্যে পৌঁছাতে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।
আমি যেটা ফিল করছি, আমার ওপর যে চাপ রয়েছে; সেটা হচ্ছে, যেহেতু আমি এই মুহূর্তে প্রশাসনের দায়িত্বে আছি... এখানে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি, আমি কী মনে করি, সেটা এক জায়গা। একই সঙ্গে পুরো প্রতিষ্ঠানটাকে কী করে সচল রাখা যায়; শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠন এবং অন্য দিকগুলোকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়; এটাও আমার চিন্তা করতে হচ্ছে। কাজেই পোষ্য কোটার স্টেকহোল্ডারদের ভেতরে এখন যে একটা ঐকমত্য দরকার, সেটা স্পষ্ট। এখন এ ঐকমত্য কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং একই সঙ্গে মতবিরোধের পার্থক্যটা কীভাবে আরও কমিয়ে নিয়ে এসে একটা সুন্দর সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়, সেটা নিয়েই আলোচনা চলমান রয়েছে। এটা নিয়ে অনেকে দিনরাত কাজ করছেন। কাজ চলছে। আমরা আশা করছি, একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারব, যেটা হয়তো ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
প্রশ্ন: ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে আপনাদের পদক্ষেপ অভিভাবক ও ভর্তি-ইচ্ছুকদের মধ্যে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতিতে এর বাইরে আর নতুন কোনো পরিবর্তন আসছে কি না?
সালেহ হাসান নকীব: আমার কাছে এটাকেই বড় পরিবর্তন বলে মনে হয়েছে। এর আগে আমরা কখনো বিকেন্দ্রীকরণে যাইনি। এই প্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তার পরীক্ষাগুলো বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে নেওয়ার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটার বাস্তবায়ন আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। পরীক্ষাগুলো সুন্দরভাবে শেষ করতে হবে। এটার চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে। আপনারা জানেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। এর কারণও আপনাদের অজানা থাকার কথা নয়। শিক্ষক নিয়োগে যেসব ভয়ংকর অনিয়ম হয়েছে, সেটার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রক্রিয়াই বিতর্কিত করে ফেলা হয়েছে। এর ফলে যেটা হয়েছে, আমাদের প্রবীণ শিক্ষকরা অবসরে চলে যাচ্ছেন, কিন্তু আমরা তাঁদের রিপ্লেসমেন্ট পাচ্ছি না। কাজেই এটা নিয়েও খুব সতর্কভাবে এগোচ্ছি, আমরা একটা নতুন পদ্ধতিতে যাব। সেখানে আমাদের যাতে ত্রুটি-বিচ্যুতি না হয় এবং যেন সুনামের সঙ্গেই এ পরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি। সম্প্রতি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একটা সভা হয়েছে। সেখানে পোষ্য কোটা, ভর্তি পরীক্ষাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমাদের যে সিদ্ধান্ত; সেটা হচ্ছে, ভর্তি পরীক্ষার যে তারিখগুলো নির্ধারণ করেছিলাম, এটাকে টার্গেট করেই সামনে এগিয়ে যাব।
প্রশ্ন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নিয়ে একটা আলোচনা হয়েছে। দলীয় রাজনীতিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অংশগ্রহণ নিয়েও বিধিনিষেধ আরোপের কথা শোনা যাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দলীয় রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে?
সালেহ হাসান নকীব: এখানে আমি যে বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছি; সেটা হচ্ছে, আমার শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে দেখতে চায়। ইনফ্যাক্ট আপনারা দেখেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে এমন একটা ভিউ তৈরি হয়েছিল; ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের মতো কথাও উঠেছে। পরে আমি জেনেছি, এখানে কিছু কৌশলগত ব্যাপার ছিল।
আসল কথা হচ্ছে, ছাত্ররাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলেছে, এই ধরনের অপরাজনীতি আমি মনে করি না আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসার সুযোগ আছে। রাজনীতি নিয়ে আমার ছাত্র-ছাত্রী এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই একটা সুষ্ঠু ধারা ঠিক করবেন, যেটা মেজরিটির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সে ধরনের একটি ধারায় কীভাবে আসা যায়, সেটা নিয়ে কাজ চলমান আছে। একই সঙ্গে আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে বারবারই বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করেছি। তাঁদের পরামর্শগুলো আমরা একসঙ্গে করে বিচার-বিশ্লেষণ করছি। আমাদের এই কাজ এত দিনে শেষ হয়ে যেত, যদি আমরা পোষ্য কোটা নিয়ে এখন যে ডামাডোলের মধ্যে রয়েছি, সেখানে না পড়তাম।
কথা হচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ফর্মে রাজনীতি হবে অথবা হবে না; সেটা আমার ছাত্র-ছাত্রীরা এবং যাঁরা এর সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট তাঁরাই ঠিক করবেন। আর কী হবে না, সেটা আমি বলতে পারি। সেটা হলো সিট-দখল, সিট-বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-নিপীড়ন, আধিপত্য বিস্তারের যে প্রবণতা; এই জিনিসগুলোর বিরুদ্ধে আমরা সবাই একমত হব। এই জিনিসগুলো আর কখনো ক্যাম্পাসে ফিরতে দেব না। এই বিষয়ে আমাদের খুবই দৃঢ় একটা অবস্থান থাকবে। ছাত্ররাজনীতির নামে এ ধরনের যে গুন্ডামি এবং অপরাজনীতি চলেছে, সেটা আর ক্যাম্পাসে আসতে দেব না।
প্রশ্ন: ১৯৮৯ সালের পর থেকে নানা কারণে রাকসু নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও করোনার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাবির এখন পরিকল্পনা কী?
সালেহ হাসান নকীব: আমার দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকে রাকসু নির্বাচন টপ-প্রায়োরিটিতে আছে। কারণ, শিক্ষার্থীদের বহু কথা থাকে। সেই কথাগুলো একটা নির্বাচিত ভ্যালিড বডির কাছ থেকে এলে বিশ্ববিদ্যালয় চালানোও সহজ হয়। জবাবদিহির ব্যাপারটাও নিশ্চিত হয়। আমার ছাত্র-ছাত্রীরা একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাঁদের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। এখানে তাঁদের দায়বদ্ধতা থাকবে এবং তাঁরা আমাদের জানাবেন ছাত্রসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা; তাঁরা কী চান। আমি মনে করি, একটা সুস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই প্রক্রিয়া খুবই জরুরি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে এটার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একটা হোমওয়ার্ক করা দরকার। সে কাজটাই রাকসুর ট্রেজারার করে যাচ্ছেন। আমাদের ইচ্ছা, ইনশাআল্লাহ শিক্ষার্থীদের রাকসু দিতে পারব।
প্রশ্ন: রাকসু নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে?
সালেহ হাসান নকীব: আমি চেয়েছিলাম দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের মতো একটা জায়গায় পৌঁছে যাব। তবে এর থেকে কিছু কম-বেশি সময় লাগতে পারে। কিন্তু খুব কম-বেশি হবে বলে মনে হয় না। আমাদের সবার যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে এটা করতে পারব।
প্রশ্ন: প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে তরুণ প্রজন্ম মাদকাসক্তি, অনলাইন জুয়া এবং অন্যান্য নেশার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো একাডেমিক বা কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস চালু করা যায় কি না?
সালেহ হাসান নকীব: আপনারা জেনে খুশি হবেন, এই মুহূর্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে-নিঃসংকোচে কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস এবং খেলাধুলার যে কার্যক্রম, এগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি দুই বিভাগের খেলা নিয়ে ক্যাম্পাসে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। এটা নিয়ে আমি খুবই মর্মাহত; আমাদের শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণ কোনো কোনো সময় সীমা ছাড়িয়ে যায়। তবে এখন আবার খেলাধুলা পুরোদমে চলছে। প্রতিদিনই কালচারাল, এক্সট্রা-কারিকুলার এবং কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি সারা দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে। আমি এটাকে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারে আশাবাদী। এর জন্য যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, সেটা করব। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি সুন্দর করতে হয়, তাহলে এ ধরনের অ্যাক্টিভিটির কোনো বিকল্প নেই। আমরা চাই, ছেলেমেয়েরা পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে এখান থেকে বেরিয়ে যাক।
প্রশ্ন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা এবং এখান থেকেই ১৯৯৮ সালে কর্মজীবন শুরু করেছেন। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে আরও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনার শিক্ষাজীবন ও উজ্জ্বল কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
সালেহ হাসান নকীব: নিজের সম্পর্কে বলাটা খুব একটা শোভা পায় না। এটা নিয়ে কথাবার্তা অন্যরাই বলবেন। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে পদার্থবিজ্ঞানকে ভালোবেসেছিলাম। এই ভালোবাসাই আমার জীবনের অন্যতম বড় শক্তির উৎস। আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করি, যেটা এই মহাবিশ্বের যত বড় বড় রহস্য এবং যত চমকপ্রদ ঘটনা আছে, সবকিছুর সঙ্গে জড়িত। আমার ফিজিক্স পড়তে, জানতে এবং এটা নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। এটা আমার জীবনের খুব বড় ভালোবাসার জায়গা। নিজকে পরিচয় দেওয়ার সময় বলি, আমি ছাত্র। কারণ, ছাত্রত্বের চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। ডিগ্রি, পুরস্কার, সাইটেশন, নাম্বার অব পাবলিকেশন্স, দেশে-বিদেশে কতটুকু নাম আছে না-আছে; ছাত্রত্ব এ সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। কারণ একজন ছাত্র সব সময় শেখে। এই শেখার আনন্দের চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু নেই।
আমি কতটুকু কী করেছি, সেটা আমার ফিল্ডে যাঁরা কাজ করেন তাঁরাই মূল্যায়ন করবেন। আমি যত দিন বেঁচে আছি, এই কাজের ভেতরেই থাকতে চাই।
প্রশ্ন: সুপারকন্ডাক্টিভিটি এবং কম্পিউটেশনাল ফিজিক্স নিয়ে আপনার গবেষণার আগ্রহ। এ বিষয়গুলো কীভাবে জনকল্যাণে ভূমিকা রাখছে?
সালেহ হাসান নকীব: সুপারকন্ডাক্টিভিটি নিয়ে যদি বলি, হাই-টেম্পারেচার সুপারকন্ডাক্টিভিটি নিয়ে ২৮-২৯ বছর কাজ করছি। আমাদের আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে, হয়তো সামনের দশকে দেখতে পাব, সুপারকন্ডাক্টিভিটি কী করে সমস্ত পৃথিবীর প্রযুক্তির ওপর তার দখলটা নিয়ে আসছে।
এখন আমরা বাস করি সেমিকন্ডাক্টরের যুগে। এই যে চিপ, মাইক্রোচিপ; এসব ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস দাঁড়িয়ে আছে সেমিকন্ডাক্টিং ইন্ডাস্ট্রির ওপর।
সুপারকন্ডাক্টিভিটি নিয়ে আমাদের যে কাজ, সে কাজগুলো যদি একেবারে মার্কেট লেভেলে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এ জগতের চেহারা অনেকখানি পাল্টে যাবে। কারণ অতি পরিবাহীর যে অদ্ভুত সব ফিজিক্যাল প্রোপার্টিজ আছে, তাতে এখন আমরা যে সংকটগুলোর মধ্যে আছি, এখানে সবচেয়ে বড় সংকট হলো এনার্জি ক্রাইসিস। শক্তির একটা সংকট। তেল-গ্যাস এগুলো পুরিয়ে যাবে। ফসিল ফুয়েল পরিবেশের ওপর বিরূপ ভূমিকা রাখে। যদি সুপারকন্ডাক্টিং পাওয়ার সিস্টেম নিয়ে আসা যায়, তাহলে আমরা এমন অনেক বড় বড় ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখতে পাব। এ ছাড়া শুধু ট্রান্সমিশন বা ম্যাটল্যাবের মতো ব্যাপার না, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের কথা বলি, কিউবিটের কথা বলি; এসবের সঙ্গেও সুপারকন্ডাক্টিভিটি প্রযুক্তি ভীষণভাবে জড়িত। সুপারকন্ডাক্টরটাকে আরেকটু ইউজার ফ্রেন্ডলি করতে পারলে তথ্যপ্রযুক্তির জায়গা থেকেও একটা বড় বিপ্লব ঘটে যাবে।
আর কম্পিউটেশনাল ফিজিকসে যেটা করি, সেটা হলো, ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন। আপনি কোনো একটা বিষয় ল্যাবে তৈরি না করে, ফিজিকস ব্যবহার করে এবং কম্পিউটেশন করে বিভিন্ন প্রপার্টি প্রেডিক্ট করতে পারেন। এর ফলে প্রস্তুতকারকরা আগে থেকেই একটা তথ্য পান যে কোন কাজ কোন ধরনের ম্যাটেরিয়াল দিয়ে এবং কোন ধরনের প্রোডাক্ট তৈরি করা যায়। এই কাজগুলো আমরা করি। কাজেই এগুলো সব জীবনঘনিষ্ঠ। এগুলোর অনেক প্রয়োগ আছে।

প্রশ্ন: সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশনের র্যাংকিং প্রকাশিত হয়েছে। এ তালিকায় ১ হাজারের মধ্যে আছে দেশের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। এই পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাবির অবস্থান ১ হাজার ১ থেকে ১ হাজার ২০০-এর মধ্যে। র্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
সালেহ হাসান নকীব: র্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে শিক্ষা কার্যক্রমকে উন্নত করার কোনো বিকল্প নেই। আমরা বারবার গবেষণার কথা বলি; কিন্তু একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, আমাদের যে গ্র্যাজুয়েটরা বের হবেন, তাঁরা যেন ভালো ট্রেনিং নিয়ে বের হন। যদি আপনি সাসটেইনেবল র্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে চান, তাহলে পঠন-পাঠন ও গবেষণা; প্রত্যেকটি জায়গাতে গুরুত্ব দিতে হবে। কোর্স কারিকুলামকে আধুনিক দুনিয়ার সঙ্গে মিল রেখে উন্নত করা, গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো এবং যাঁরা যোগ্য তাঁদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা বারবার যে ভুলটা করে আসছি সেটা হলো, যোগ্য মানুষগুলোকে ঠিক জায়গাতে নিয়ে আসতে পারিনি। এর ফলে যেটা হয়েছে, হয়তো বরাদ্দ দিয়েছি, কিন্তু কাকে দিয়েছি, কতটুকু দিয়েছি; যাঁকে দিয়েছি তিনি এই বরাদ্দের কতটুকু সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারবেন, এই জায়গাগুলো দেখিনি। আমি বলব, বরাদ্দ আরও দরকার। ক্লাসরুমের শৃঙ্খলা এবং কোর্স কারিকুলাম আধুনিকায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হব। আসলে শিক্ষার্থীরা যেভাবে জীবনযাপনের মাধ্যমে লেখাপড়া করেন, এই সংকটের মধ্যে তাঁরা যেটুকু করেন, সেটাও কম নয়। হলের এই পরিবেশ, এই খাবার; এরপরও তাঁরা যেটুকু করছেন, সেটারও প্রশংসা করতে হবে।

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
সালেহ হাসান নকীব: বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি বহুতলবিশিষ্ট ভবনের নির্মাণকাজ চলমান। এই কাজও জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রায় থেমে গিয়েছিল। সেটাকে আবার সচল করা হয়েছে। বুঝতেই পারছেন, একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর কাজ থেমে যাওয়াটা কীসের ইন্ডিকেশন। আসলে গণ-অভ্যুত্থান হলে একটি হলের নির্মাণকাজ থেমে যাবে; এমন তো হওয়া উচিত না। নিশ্চয়ই কোনো কারণ ছিল বলেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেগুলো আবার সচল করেছি। এখন অনেক বড় একটা একাডেমিক ভবনের কাজ প্রায় অর্ধেক হয়ে পড়ে আছে। এই বিষয়গুলোর ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরেও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে, যেগুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে খুব শিগগির বসব। এই মুহূর্তে তিন ভাগের এক ভাগ শিক্ষার্থীকে আবাসন সুবিধা দিতে পেরেছি। এটাকে অন্তত দ্বিগুণ করার একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। কবে সবাইকে আবাসন দিতে পারব জানি না। কিন্তু এই মুহূর্তে আবাসনের যে সুবিধা রয়েছে, সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। এ ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। কাজ চলমান রয়েছে।
প্রশ্ন: আবাসিক হলগুলোতে খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খাবারের মধ্যে বিভিন্ন সময় নানা কিছু পাওয়া যায়। কীভাবে খাবারের মানে উন্নতি করা যায়?
সালেহ হাসান নকীব: খাবারের মান উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বাজেট। আমাদের উত্তরবঙ্গের হলগুলোতে যেসব শিক্ষার্থী থাকেন, তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশের পক্ষে উচ্চমূল্য দিয়ে ডাইনিং চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে যে বাজেটে এটা চলছে, তাতে আমাদের ভর্তুকি ছাড়া খুব ভালো কিছু আইটেম রাখাও সম্ভব নয়। আবার এই মুহূর্তে ভর্তুকির জন্য কোনো অ্যালোকেশনও নেই।
আমাদের যে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আছে, সেটাকে সচল করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে সেখানে আমিও একটা আবেদন রাখতে চাই। আমাদের লাখ লাখ অ্যালাইমনাই পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। তাঁরা সবাই মিলে যদি একটু করেও কনট্রিবিউট করেন, তাহলে অন্তত আমাদের শিক্ষার্থীদের তিনবেলা খাবারের মান নিয়ে অত চিন্তা করতে হয় না। অনেক পথ আছে, একটা হচ্ছে ভর্তুকির জন্য আবেদন করা। যেটার ব্যাপারে আমি খুব আশাবাদী বলব না, কিন্তু আমাদের যাঁরা অ্যালামনাস আছেন, তাঁদের এখানে কনট্রিবিউট করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তাঁদের এগিয়ে আসা উচিত।

প্রশ্ন: বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে? বিগত সময়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।
সালেহ হাসান নকীব: প্রত্যেকটি ফ্যাকাল্টির গবেষণার ধরন আলাদা। কৃষি অনুষদে যে গবেষণাগুলো হচ্ছে, সেটা মাটি ও মানুষের খুব কাছাকাছি। তারা উন্নত জাত, গবাদি পশু পালন; এগুলো নিয়ে মিনিংফুল কাজ করছে। এই মুহূর্তে হাঁস-মুরগির টিকা নিয়ে একটা বড় প্রজেক্ট চলছে। ফিজিকস এবং কেমিস্ট্রি বিভাগে ন্যানো পাবলিকেশন, থিউরিটিক্যাল কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিকস; এগুলো নিয়ে কাজ চলছে। বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস যে বিভাগগুলো আছে, সেখানে সাপের বিষ, টক্সিসিটি, ক্যানসার ড্রাগ—এসব নিয়ে অনেক গবেষক কাজ করছেন। ফিশারিজ বিভাগও খুব তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করছে। ইঞ্জিনিয়ারিং যে ফ্যাকাল্টি আছে, তারা বিগ ডেটা অ্যানালাইসিস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিভিন্ন অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট; এগুলো নিয়ে কাজ করছে। কলা ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদেও আমাদের দেশের বিভিন্ন সমস্যা, আবাসন, জলবায়ু; এগুলো মানুষের ওপর কী ইম্প্যাক্ট ফেলছে সে-সংক্রান্ত কিছু প্রজেক্ট চলছে। সামাজিক সমস্যা, নারী নির্যাতন; এগুলো নিয়েও কাজ হচ্ছে। কাজ হচ্ছে, কিন্তু এ কাজের পরিমাণ আরও বেশি হওয়া উচিত। যেটুকু হচ্ছে, সেটুকু আমি মনে করি না পর্যাপ্ত। আমরা যদি একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে চাই, তাহলে কাজের গুণগত মান এবং পরিমাণ সবই বাড়াতে হবে।
প্রশ্ন: শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গবেষণার জন্য যে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। গবেষণার জন্য বরাদ্দ আরও বাড়ানো সম্ভব কি না?
সালেহ হাসান নকীব: এটার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। সম্প্রতি আমি এবং আমাদের হিসাব শাখার পরিচালক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম। গবেষণার ব্যাপারে একটা খসড়া সেখানে দিয়ে এসেছি। ইউজিসির মিটিংয়েও গবেষণা বাজেট বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। কথা হচ্ছে, আমাদের এই প্রশাসনের বয়স মাত্র সাড়ে তিন মাস। এটা খুব অল্প সময়। কিন্তু এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছি। কিছু আশ্বাসও পেয়েছি। বাকিটা সময়ই বলবে, কতটুকু সাপোর্ট নিয়ে আসতে পারব।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
সালেহ হাসান নকীব: আজকের পত্রিকার জন্য শুভকামনা রইল।

সমাবর্তনে বক্তব্য দেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এ ছাড়া ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দা মাদিহা মোরশেদ এবং ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান সমাবর্তনে স্নাতকদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
৮ ঘণ্টা আগে
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়েন প্রায় ৯৭ শতাংশ আবেদনকারী। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সুযোগ পাওয়া ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনেকে ক্লাসে উপস্থিত হন না এবং নির্ধারিত পাঠ্য পড়েন না বলে অভিযোগ করেছেন...
১৪ ঘণ্টা আগে
‘শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি অভিজ্ঞতারও আরেক নাম।’ এই বিশ্বাস থেকে নতুন দিগন্তে পা রাখলেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) একদল তরুণ শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়ার ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থী...
১৫ ঘণ্টা আগে
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হবে। চলবে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন ফি জমা দেওয়া যাবে।
১৮ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) অষ্টম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ কনফারেন্স সেন্টারে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও ইউল্যাবের আচার্যের প্রতিনিধি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সমাবর্তন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন এবং সভাপতিত্ব করেন। এবারের সমাবর্তনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ইনফর্মড মাইন্ডস, ইন্সপায়ার পাথস’।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম।
সমাবর্তনে বক্তব্য দেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এ ছাড়া ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দা মাদিহা মোরশেদ এবং ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান সমাবর্তনে স্নাতকদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ভ্যালেডিক্টোরিয়ান অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন তাশিন হক; যিনি ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রোগ্রাম থেকে ৩.৮৬ সিজিপিএ অর্জন করে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
এ ছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পর্যায় থেকে দুজন শিক্ষার্থী স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
এ বছর ইউল্যাব থেকে মোট ১ হাজার ৫০৮ জন শিক্ষার্থী সনদ পান, যার মধ্যে ১ হাজার ১১১ জন স্নাতক এবং ৩৯৭ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) অষ্টম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ কনফারেন্স সেন্টারে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও ইউল্যাবের আচার্যের প্রতিনিধি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সমাবর্তন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন এবং সভাপতিত্ব করেন। এবারের সমাবর্তনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ইনফর্মড মাইন্ডস, ইন্সপায়ার পাথস’।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম।
সমাবর্তনে বক্তব্য দেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এ ছাড়া ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দা মাদিহা মোরশেদ এবং ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান সমাবর্তনে স্নাতকদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ভ্যালেডিক্টোরিয়ান অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন তাশিন হক; যিনি ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রোগ্রাম থেকে ৩.৮৬ সিজিপিএ অর্জন করে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
এ ছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পর্যায় থেকে দুজন শিক্ষার্থী স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
এ বছর ইউল্যাব থেকে মোট ১ হাজার ৫০৮ জন শিক্ষার্থী সনদ পান, যার মধ্যে ১ হাজার ১১১ জন স্নাতক এবং ৩৯৭ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী।

আমাদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একেবারে শুরু থেকে বিভিন্ন ফর্মে এখানে অংশ নিয়েছেন। এ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তাঁদের অসম্ভব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীষণ
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়েন প্রায় ৯৭ শতাংশ আবেদনকারী। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সুযোগ পাওয়া ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনেকে ক্লাসে উপস্থিত হন না এবং নির্ধারিত পাঠ্য পড়েন না বলে অভিযোগ করেছেন...
১৪ ঘণ্টা আগে
‘শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি অভিজ্ঞতারও আরেক নাম।’ এই বিশ্বাস থেকে নতুন দিগন্তে পা রাখলেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) একদল তরুণ শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়ার ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থী...
১৫ ঘণ্টা আগে
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হবে। চলবে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন ফি জমা দেওয়া যাবে।
১৮ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়েন প্রায় ৯৭ শতাংশ আবেদনকারী। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সুযোগ পাওয়া ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনেকে ক্লাসে উপস্থিত হন না এবং নির্ধারিত পাঠ্য পড়েন না বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যাপকেরা।
‘ক্লাসরুম সোশ্যাল কমপ্যাক্ট কমিটি’ নামে সাতজন অধ্যাপকের একটি দল হার্ভার্ডের শ্রেণিকক্ষ সংস্কৃতি নিয়ে একটি প্রতিবেদনে এ কথা জানান। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হলেও বেশির ভাগ সময় নিজের মুঠোফোন বা অন্যান্য ডিভাইসে বেশি মনোযোগ দেন। ক্লাসে চলমান আলোচনায় অংশ নিতে অনীহা দেখান। আবার অনেক সময় ভিন্নমত প্রকাশের ভয়ে চুপ থাকেন। আবার অনেক সময় হোমওয়ার্ক বা পাঠ্যবই না পড়ায় আলোচনায় অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন না।
৭ অধ্যাপকের এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এত কিছুর পরও শিক্ষার্থীরা সহজে ভালো ফল পেয়ে যাচ্ছেন। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত নম্বর প্রদান বা ‘গ্রেড ইনফ্লেশন’-এর প্রবণতা চলছে।
শিক্ষকেরা বলছেন, অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে খুব বেশি কথা না বলেই কিংবা কোনো অর্থবহ আলোচনায় অংশ না নিয়েই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করছেন। নিজেদের মতাদর্শগত বলয়ের মধ্যে আটকে থাকায় এই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জিং বা ভিন্নধর্মী ধারণার সঙ্গে জড়াতে অনিচ্ছুক বা অক্ষম হয়ে পড়ছেন।
রক্ষণশীল সমালোচকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, হার্ভার্ড ও অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উদারপন্থী পক্ষপাতকে (liberal bias) ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতে দিয়েছে। ফলে কার্যত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়েছে। এই উদ্বেগ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে পরিবর্তন আনার জন্য রিপাবলিকানদের উদ্যোগকে আরও জোরদার করেছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে, গত জানুয়ারিতে হার্ভার্ড কমিটির প্রতিবেদনটি যেন পরোক্ষভাবে এই সমালোচনার কিছু সত্যতা স্বীকার করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্লাসে উপস্থিত না থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন মতাদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গির সহপাঠীদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ হারাচ্ছে।
অধ্যাপকদের এই কমিটির বক্তব্যের যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে বলে মনে করেন হার্ভার্ডের প্রি-মেড বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওমোসেফে নোরুওয়া। তিনি বলেন, ‘রেকর্ডেড লেকচারের কারণে সশরীরে ক্লাস ফাঁকি দেওয়া সহজ হয়েছে। ক্লাসে না গিয়েও যদি ভালো গ্রেড পাওয়া যায় বলে তাঁরা ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।’
তিনি আরও জানান, একবার এমন একটি কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে আলোচনা হয়েছিল ‘আমরা কি এখনো গৃহযুদ্ধ লড়ছি?’ তা নিয়ে। সেই ক্লাসের আলোচনা ছিল ‘চিন্তাশীল ও শিক্ষণীয়’। তবে ক্লাসের বাইরে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন।
নোরুওয়া বলেন, ‘আমার প্রথম দুই বছর ছিল খুবই রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ।’ তিনি জানান, হার্ভার্ডে উদারপন্থী মতাদর্শের আধিপত্য আছে। তাঁর মতো যাঁদের চিন্তাভাবনায় উদার ও রক্ষণশীল, উভয় দৃষ্টিভঙ্গির মিশ্রণ রয়েছে, তাঁদের জন্য পরিবেশটি কখনো কখনো অস্বস্তিকর হতে পারে।
এ বছর পরিস্থিতি ‘কিছুটা শান্ত ও স্বস্তিদায়ক’ বলে যোগ করেন তিনি।
হার্ভার্ডের ‘ইকোনমিকস ১০: প্রিন্সিপলস অব ইকোনমিকস’ ক্লাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় কোর্সগুলোর একটি। এই টার্মে ৭৬১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। একটি ঐতিহাসিক কাঠের প্যানেলে ঘেরা থিয়েটারে তাঁদের ক্লাস হয়। অধ্যাপক মঞ্চে এক পাশ থেকে অন্য পাশে হাঁটেন, যেন শেক্সপিয়ারের নাটকের অভিনেতা।
থিয়েটারে ঢুকলেই চোখে পড়ে অর্কেস্ট্রা আসনের সারি, যেগুলোর সামনে বড় অক্ষরে লেখা ‘DEVICE FREE SECTION’। অর্থাৎ মোবাইল বা অন্য কোনো ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ। সেই সারির বেশির ভাগ আসনই ফাঁকা থাকে।
অর্থনীতির অধ্যাপক ডেভিড লাইবসন হার্ভার্ডের ওই প্রতিবেদন তৈরির কমিটির সহসভাপতিও ছিলেন। তিনি বলেন, এসব সমস্যা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। সেই ১৯৮০-র দশক থেকে। যখন তিনি নিজেও হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী ছিলেন, তখন থেকে এ ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
তাঁর ভাষায়, ‘দ্বিধা, দেরি করা এবং অতিরিক্ত সময়সূচি তৈরি করা’—তিনটি বিষয়ই হার্ভার্ডে এবং আমার ধারণা অনুযায়ী বেশির ভাগ স্কুলেই, শিক্ষাজীবনের অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য হয়ে আছে।’
এটি পরিবর্তনের সময় এসেছে বলে মনে করেন তিনি। অধ্যাপক লাইবসন বলেন, ‘যখন তুমি তোমার ফোনে মন দিচ্ছ, তখন তুমি আসলে আমার ভাবনাগুলো শুনছ না।’
কমিটির প্রতিবেদন হার্ভার্ডের শিক্ষা সংস্কৃতির কিছু কঠিন সত্য তুলে ধরেছে বলে মন্তব্য করেন হার্ভার্ডের ফ্যাকাল্টি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের ডিন হোপি হোয়েকস্ট্রা।
এ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায়, হার্ভার্ড এবং এর অধ্যাপকেরা ফল সেশনে শিক্ষার্থীদের মুক্তমনা এবং শিক্ষাগতভাবে সক্রিয় করতে কাজ করছেন। কিছু শিক্ষক এখন উপস্থিতি নেওয়া শুরু করেছেন। শিক্ষার্থীদের ফোন বা ল্যাপটপের পরিবর্তে হাতে লিখে নোট নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মত প্রকাশ করতে ভয় পেলে তা কাটিয়ে উঠতে অধ্যাপকেরা এমন নিয়ম চালু করছেন, যেখানে অন্যদের বক্তব্য বাইরে শেয়ার করা যাবে না।
পাশাপাশি হার্ভার্ড শিক্ষার্থীদের মুক্তমনা হওয়ার দক্ষতা যাচাই করার জন্য পরীক্ষা নিচ্ছে। ২০২৪ সালে তাঁদের আবেদনপত্রে এ-সম্পর্কিত একটি নতুন প্রশ্ন যোগ করা হয়েছে। এতে প্রার্থীদের ১৫০ শব্দে কারও সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সময়কার কথা তুলে ধরতে বলা হয়েছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৭ অধ্যাপকের এই ‘ক্লাসরুম কমপ্যাক্ট কমিটি’ কাজ শুরু করে। সে সময় গাজায় ইসরায়েলি অভিযান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তীব্র এবং কখনো কখনো সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কমিটির দায়িত্ব ছিল সংলাপ বাড়ানোর উপায় খোঁজা এবং ‘হার্ভার্ডে শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য কী?’ এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তর বের করা।
কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. লাইবসন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্লাস এড়িয়ে গেলে তারা চ্যালেঞ্জিং বা বিতর্কিত ধারণাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছে। এমনকি যখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত থাকে, অনেক সময় দেখা যায়, তারা পড়াশোনা না করেও এমন ভান করে যেন করেছে, ফলে শ্রেণিকক্ষের আলোচনা যথাযথ ফলপ্রসূ হয় না। এভাবে সবার সময় নষ্ট হয়, আর প্রায়ই দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীই পুরো আলোচনাকে টেনে নিয়ে যায়।’
প্রতিবেদনে কমিটি উল্লেখ করেছে, শ্রেণিকক্ষ এমন জায়গা হওয়া উচিত, যেখানে মতবিনিময়ের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু ২০২৪ সালের বসন্তে হার্ভার্ডের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সিনিয়র শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও বিশ্বাস সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারেন, যা আগের বছরের ৪৬ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
শিক্ষার্থীরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ভয়ে এ কাজ করেন। তাঁরা আশঙ্কা করেন, কথা বললে হয়তো বোকা শোনাবে। অনেকের ধারণা, ভালো গ্রেড পেতে হলে অধ্যাপকের মতামতের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান মেলাতে হবে। আর তাঁরা কৌতূহল বা শেখার আগ্রহে নয়, বরং মূলত কোথায় ভালো গ্রেড পাওয়া সহজ হবে, সেটা দেখে ক্লাস বেছে নিচ্ছিলেন।
অন্যদিকে হার্ভার্ডের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বিভাগের ডিন অ্যামান্ডা ক্লেবাহ জানান, গ্রেড ইনফ্লেশন, যা কোভিড মহামারির আগেই গুরুতর সমস্যা ছিল, তা এখন আরও বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট গ্রেডের প্রায় ৪০ শতাংশ ছিল ‘এ’। এখন সেই হার প্রায় ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে এবং এর অর্ধেক বৃদ্ধি পেয়েছে অনলাইনে বা রিমোট ক্লাসের সময়কালে।
ড. ক্লেবাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। শিক্ষকেরা সেটা বুঝতে পারেন। তাই তাঁরা কোর্সগুলোকে কম চাপযুক্ত করার চেষ্টা করেন।’
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, অনেক অধ্যাপক আশঙ্কা করেন, যদি তাঁরা কঠোরভাবে নম্বর দেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেতিবাচক মূল্যায়ন পেতে পারেন। ফলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলাদা করে তুলতে বেশি ক্লাবে যোগ দিচ্ছেন, অতিরিক্ত কোর্স নিচ্ছেন বা একটি বিষয়ের বদলে দুটি বিষয়ে কনসেন্ট্রেশন (বিশেষায়ন) করছেন।
অধ্যাপকেরা লিখেছেন, ‘কেউ কেউ বহির্গামী কার্যকলাপে (extracurricular commitments) ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণকে তাদের সময়ের আরও পরিপূর্ণ, অর্থবহ ও উপকারী ব্যবহার বলে মনে করে।’
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি শিক্ষার্থীরাই আসল সমস্যা
সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবিদদের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি, দৃঢ়পন্থী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিক্ষাগত ফল হ্রাস।
মহামারির সময়ে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অনুপস্থিতি তীব্রভাবে বেড়েছে। অধ্যাপকেরা উদ্বিগ্ন যে, শিক্ষার্থীরা পুরো বই পড়ার মতো ধৈর্য ধরে রাখতে পারছে না। জাতীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পরিমাপ করা শিক্ষাগত অর্জনও দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
কানসাস ইউনিভার্সিটির উচ্চশিক্ষাবিষয়ক অধ্যাপক লিসা উলফ-ওয়েন্ডেল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসা অর্থপূর্ণ হতে হবে। এটা এমন কিছু হতে হবে, যা তাঁরা কেবল তাঁদের ডর্মরুমে একাই করতে পারবে না।’
ক্লাসে লেকচার সব সময় আকর্ষণীয় না-ও হতে পারে, কিন্তু আগে শিক্ষার্থীদের যেতে হতো (বা সহপাঠীর নোট ধার করতে হতো)। এখন যেহেতু অনেক লেকচার অনলাইনে দেখা যায়, তাই অধ্যাপকেরা আরও কঠোর চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে আকৃষ্ট করার জন্য, যোগ করেন ড. উলফ-ওয়েন্ডেল।
তাহলে ক্লাসে আসার পেছনে আর কি গুরুত্বপূর্ণ কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে ওয়েন্ডেল বলেন, ‘এটি একটি পারস্পরিক সম্পর্ক।’
হার্ভার্ডে কিছু শিক্ষার্থী এই ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। তাঁরা মনে করেন, সমস্যা মূলত তাঁদের।
তাঁরা বলেন, আইন বা ফাইন্যান্সের মতো ক্ষেত্রের ইন্টার্নশিপ এবং পরবর্তী চাকরির প্রতিযোগিতা তীব্র। তাই তাঁদের আর কোনো উপায় নেই। বরং তাঁরা ক্লাবে উল্লেখযোগ্য সময় বিনিয়োগ করতে বাধ্য, যা তাঁদের আগ্রহ ও দক্ষতা প্রদর্শন করবে এবং সেসব হার্ভার্ড শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা করবে যাঁরা ‘এ’ গ্রেড পাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, হার্ভার্ডে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই তাঁদের সবকিছু সামলানোর শিল্পে পারদর্শী হতে হয়েছিল কারণ এটিই তাঁদের এখানে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।
লং আইল্যান্ডের পাবলিক স্কুল উইলিয়াম ফ্লয়েড হাই স্কুলের ক্লাস ভ্যালাডিক্টোরিয়ান (সেরা একাডেমিক ফলাফল অর্জনকারী শিক্ষার্থী) জোশুয়া শুল্টজার হার্ভার্ডে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এক্সট্রা-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ এবং পড়াশোনার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে বড় হয়েছি। যখন আপনি এমন একটি স্কুলে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছেন যেখানে প্রায় সবাই সহপাঠ্যক্রমিক কাজ করে। তাঁরা যে তা চালিয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।’
শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে হার্ভার্ডও আংশিকভাবে দোষী হতে পারে। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা একই সময়ে দুটি ক্লাস ‘এনরোল’ করতে পারে।
ড. লাইবসন শিক্ষার্থীদের বলেন, সরাসরি উপস্থিত থেকে শেখা ভিডিও দেখে শেখার চেয়ে ভালো। তবে তিনি একই সঙ্গে ডাবল-শিডিউলিং প্রথাকে সমর্থন করেন কারণ হার্ভার্ডের অনেক ক্লাসই একই সময়ে চলে।
‘যদি আমরা একই সময়ে ভর্তি নেওয়া অনুমোদন না দিতাম, তবে অনেক শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়ত’, যোগ করেন তিনি।
যে শিক্ষার্থীরা তাঁর লেকচারে আসে, তাঁদের জন্য ড. লাইবসন শ্রেণিকক্ষের আলোচনাকে আরও খোলামেলা করার চেষ্টা করেন। তিনি সিলেবাসে সতর্কতা অন্তর্ভুক্ত করেন, অন্য শিক্ষার্থীর ভিন্নমত থাকতে পারে এবং ক্লাসে মন্তব্যগুলো বাইরে শেয়ার করার সময় বক্তাকে চিহ্নিত করার সম্ভাবনা আছে বলে সতর্ক করেন।
শিক্ষার্থী জোশুয়া শুল্টজার বলেন, শিক্ষার্থীদের আরও মুক্তমনা হতে উৎসাহ দেওয়া একটি মহান লক্ষ্য হতে পারে, তবে হার্ভার্ডের পরিবেশ শুধু সমস্যার একটি অংশমাত্র। একইভাবে, বর্তমানের অত্যন্ত বিভক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশও সমস্যার একটি অংশ।
তিনি আরও বলেন, ‘এটাই বিশ্বের বাস্তবতা।’

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়েন প্রায় ৯৭ শতাংশ আবেদনকারী। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সুযোগ পাওয়া ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনেকে ক্লাসে উপস্থিত হন না এবং নির্ধারিত পাঠ্য পড়েন না বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যাপকেরা।
‘ক্লাসরুম সোশ্যাল কমপ্যাক্ট কমিটি’ নামে সাতজন অধ্যাপকের একটি দল হার্ভার্ডের শ্রেণিকক্ষ সংস্কৃতি নিয়ে একটি প্রতিবেদনে এ কথা জানান। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হলেও বেশির ভাগ সময় নিজের মুঠোফোন বা অন্যান্য ডিভাইসে বেশি মনোযোগ দেন। ক্লাসে চলমান আলোচনায় অংশ নিতে অনীহা দেখান। আবার অনেক সময় ভিন্নমত প্রকাশের ভয়ে চুপ থাকেন। আবার অনেক সময় হোমওয়ার্ক বা পাঠ্যবই না পড়ায় আলোচনায় অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন না।
৭ অধ্যাপকের এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এত কিছুর পরও শিক্ষার্থীরা সহজে ভালো ফল পেয়ে যাচ্ছেন। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত নম্বর প্রদান বা ‘গ্রেড ইনফ্লেশন’-এর প্রবণতা চলছে।
শিক্ষকেরা বলছেন, অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে খুব বেশি কথা না বলেই কিংবা কোনো অর্থবহ আলোচনায় অংশ না নিয়েই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করছেন। নিজেদের মতাদর্শগত বলয়ের মধ্যে আটকে থাকায় এই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জিং বা ভিন্নধর্মী ধারণার সঙ্গে জড়াতে অনিচ্ছুক বা অক্ষম হয়ে পড়ছেন।
রক্ষণশীল সমালোচকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, হার্ভার্ড ও অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উদারপন্থী পক্ষপাতকে (liberal bias) ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতে দিয়েছে। ফলে কার্যত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়েছে। এই উদ্বেগ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে পরিবর্তন আনার জন্য রিপাবলিকানদের উদ্যোগকে আরও জোরদার করেছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে, গত জানুয়ারিতে হার্ভার্ড কমিটির প্রতিবেদনটি যেন পরোক্ষভাবে এই সমালোচনার কিছু সত্যতা স্বীকার করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্লাসে উপস্থিত না থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন মতাদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গির সহপাঠীদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ হারাচ্ছে।
অধ্যাপকদের এই কমিটির বক্তব্যের যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে বলে মনে করেন হার্ভার্ডের প্রি-মেড বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওমোসেফে নোরুওয়া। তিনি বলেন, ‘রেকর্ডেড লেকচারের কারণে সশরীরে ক্লাস ফাঁকি দেওয়া সহজ হয়েছে। ক্লাসে না গিয়েও যদি ভালো গ্রেড পাওয়া যায় বলে তাঁরা ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।’
তিনি আরও জানান, একবার এমন একটি কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে আলোচনা হয়েছিল ‘আমরা কি এখনো গৃহযুদ্ধ লড়ছি?’ তা নিয়ে। সেই ক্লাসের আলোচনা ছিল ‘চিন্তাশীল ও শিক্ষণীয়’। তবে ক্লাসের বাইরে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন।
নোরুওয়া বলেন, ‘আমার প্রথম দুই বছর ছিল খুবই রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ।’ তিনি জানান, হার্ভার্ডে উদারপন্থী মতাদর্শের আধিপত্য আছে। তাঁর মতো যাঁদের চিন্তাভাবনায় উদার ও রক্ষণশীল, উভয় দৃষ্টিভঙ্গির মিশ্রণ রয়েছে, তাঁদের জন্য পরিবেশটি কখনো কখনো অস্বস্তিকর হতে পারে।
এ বছর পরিস্থিতি ‘কিছুটা শান্ত ও স্বস্তিদায়ক’ বলে যোগ করেন তিনি।
হার্ভার্ডের ‘ইকোনমিকস ১০: প্রিন্সিপলস অব ইকোনমিকস’ ক্লাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় কোর্সগুলোর একটি। এই টার্মে ৭৬১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। একটি ঐতিহাসিক কাঠের প্যানেলে ঘেরা থিয়েটারে তাঁদের ক্লাস হয়। অধ্যাপক মঞ্চে এক পাশ থেকে অন্য পাশে হাঁটেন, যেন শেক্সপিয়ারের নাটকের অভিনেতা।
থিয়েটারে ঢুকলেই চোখে পড়ে অর্কেস্ট্রা আসনের সারি, যেগুলোর সামনে বড় অক্ষরে লেখা ‘DEVICE FREE SECTION’। অর্থাৎ মোবাইল বা অন্য কোনো ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ। সেই সারির বেশির ভাগ আসনই ফাঁকা থাকে।
অর্থনীতির অধ্যাপক ডেভিড লাইবসন হার্ভার্ডের ওই প্রতিবেদন তৈরির কমিটির সহসভাপতিও ছিলেন। তিনি বলেন, এসব সমস্যা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। সেই ১৯৮০-র দশক থেকে। যখন তিনি নিজেও হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী ছিলেন, তখন থেকে এ ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
তাঁর ভাষায়, ‘দ্বিধা, দেরি করা এবং অতিরিক্ত সময়সূচি তৈরি করা’—তিনটি বিষয়ই হার্ভার্ডে এবং আমার ধারণা অনুযায়ী বেশির ভাগ স্কুলেই, শিক্ষাজীবনের অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য হয়ে আছে।’
এটি পরিবর্তনের সময় এসেছে বলে মনে করেন তিনি। অধ্যাপক লাইবসন বলেন, ‘যখন তুমি তোমার ফোনে মন দিচ্ছ, তখন তুমি আসলে আমার ভাবনাগুলো শুনছ না।’
কমিটির প্রতিবেদন হার্ভার্ডের শিক্ষা সংস্কৃতির কিছু কঠিন সত্য তুলে ধরেছে বলে মন্তব্য করেন হার্ভার্ডের ফ্যাকাল্টি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের ডিন হোপি হোয়েকস্ট্রা।
এ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায়, হার্ভার্ড এবং এর অধ্যাপকেরা ফল সেশনে শিক্ষার্থীদের মুক্তমনা এবং শিক্ষাগতভাবে সক্রিয় করতে কাজ করছেন। কিছু শিক্ষক এখন উপস্থিতি নেওয়া শুরু করেছেন। শিক্ষার্থীদের ফোন বা ল্যাপটপের পরিবর্তে হাতে লিখে নোট নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মত প্রকাশ করতে ভয় পেলে তা কাটিয়ে উঠতে অধ্যাপকেরা এমন নিয়ম চালু করছেন, যেখানে অন্যদের বক্তব্য বাইরে শেয়ার করা যাবে না।
পাশাপাশি হার্ভার্ড শিক্ষার্থীদের মুক্তমনা হওয়ার দক্ষতা যাচাই করার জন্য পরীক্ষা নিচ্ছে। ২০২৪ সালে তাঁদের আবেদনপত্রে এ-সম্পর্কিত একটি নতুন প্রশ্ন যোগ করা হয়েছে। এতে প্রার্থীদের ১৫০ শব্দে কারও সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সময়কার কথা তুলে ধরতে বলা হয়েছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৭ অধ্যাপকের এই ‘ক্লাসরুম কমপ্যাক্ট কমিটি’ কাজ শুরু করে। সে সময় গাজায় ইসরায়েলি অভিযান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তীব্র এবং কখনো কখনো সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কমিটির দায়িত্ব ছিল সংলাপ বাড়ানোর উপায় খোঁজা এবং ‘হার্ভার্ডে শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য কী?’ এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তর বের করা।
কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. লাইবসন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্লাস এড়িয়ে গেলে তারা চ্যালেঞ্জিং বা বিতর্কিত ধারণাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছে। এমনকি যখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত থাকে, অনেক সময় দেখা যায়, তারা পড়াশোনা না করেও এমন ভান করে যেন করেছে, ফলে শ্রেণিকক্ষের আলোচনা যথাযথ ফলপ্রসূ হয় না। এভাবে সবার সময় নষ্ট হয়, আর প্রায়ই দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীই পুরো আলোচনাকে টেনে নিয়ে যায়।’
প্রতিবেদনে কমিটি উল্লেখ করেছে, শ্রেণিকক্ষ এমন জায়গা হওয়া উচিত, যেখানে মতবিনিময়ের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু ২০২৪ সালের বসন্তে হার্ভার্ডের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সিনিয়র শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও বিশ্বাস সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারেন, যা আগের বছরের ৪৬ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
শিক্ষার্থীরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ভয়ে এ কাজ করেন। তাঁরা আশঙ্কা করেন, কথা বললে হয়তো বোকা শোনাবে। অনেকের ধারণা, ভালো গ্রেড পেতে হলে অধ্যাপকের মতামতের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান মেলাতে হবে। আর তাঁরা কৌতূহল বা শেখার আগ্রহে নয়, বরং মূলত কোথায় ভালো গ্রেড পাওয়া সহজ হবে, সেটা দেখে ক্লাস বেছে নিচ্ছিলেন।
অন্যদিকে হার্ভার্ডের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বিভাগের ডিন অ্যামান্ডা ক্লেবাহ জানান, গ্রেড ইনফ্লেশন, যা কোভিড মহামারির আগেই গুরুতর সমস্যা ছিল, তা এখন আরও বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট গ্রেডের প্রায় ৪০ শতাংশ ছিল ‘এ’। এখন সেই হার প্রায় ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে এবং এর অর্ধেক বৃদ্ধি পেয়েছে অনলাইনে বা রিমোট ক্লাসের সময়কালে।
ড. ক্লেবাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। শিক্ষকেরা সেটা বুঝতে পারেন। তাই তাঁরা কোর্সগুলোকে কম চাপযুক্ত করার চেষ্টা করেন।’
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, অনেক অধ্যাপক আশঙ্কা করেন, যদি তাঁরা কঠোরভাবে নম্বর দেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেতিবাচক মূল্যায়ন পেতে পারেন। ফলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলাদা করে তুলতে বেশি ক্লাবে যোগ দিচ্ছেন, অতিরিক্ত কোর্স নিচ্ছেন বা একটি বিষয়ের বদলে দুটি বিষয়ে কনসেন্ট্রেশন (বিশেষায়ন) করছেন।
অধ্যাপকেরা লিখেছেন, ‘কেউ কেউ বহির্গামী কার্যকলাপে (extracurricular commitments) ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণকে তাদের সময়ের আরও পরিপূর্ণ, অর্থবহ ও উপকারী ব্যবহার বলে মনে করে।’
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি শিক্ষার্থীরাই আসল সমস্যা
সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবিদদের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি, দৃঢ়পন্থী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিক্ষাগত ফল হ্রাস।
মহামারির সময়ে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অনুপস্থিতি তীব্রভাবে বেড়েছে। অধ্যাপকেরা উদ্বিগ্ন যে, শিক্ষার্থীরা পুরো বই পড়ার মতো ধৈর্য ধরে রাখতে পারছে না। জাতীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পরিমাপ করা শিক্ষাগত অর্জনও দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
কানসাস ইউনিভার্সিটির উচ্চশিক্ষাবিষয়ক অধ্যাপক লিসা উলফ-ওয়েন্ডেল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসা অর্থপূর্ণ হতে হবে। এটা এমন কিছু হতে হবে, যা তাঁরা কেবল তাঁদের ডর্মরুমে একাই করতে পারবে না।’
ক্লাসে লেকচার সব সময় আকর্ষণীয় না-ও হতে পারে, কিন্তু আগে শিক্ষার্থীদের যেতে হতো (বা সহপাঠীর নোট ধার করতে হতো)। এখন যেহেতু অনেক লেকচার অনলাইনে দেখা যায়, তাই অধ্যাপকেরা আরও কঠোর চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে আকৃষ্ট করার জন্য, যোগ করেন ড. উলফ-ওয়েন্ডেল।
তাহলে ক্লাসে আসার পেছনে আর কি গুরুত্বপূর্ণ কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে ওয়েন্ডেল বলেন, ‘এটি একটি পারস্পরিক সম্পর্ক।’
হার্ভার্ডে কিছু শিক্ষার্থী এই ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। তাঁরা মনে করেন, সমস্যা মূলত তাঁদের।
তাঁরা বলেন, আইন বা ফাইন্যান্সের মতো ক্ষেত্রের ইন্টার্নশিপ এবং পরবর্তী চাকরির প্রতিযোগিতা তীব্র। তাই তাঁদের আর কোনো উপায় নেই। বরং তাঁরা ক্লাবে উল্লেখযোগ্য সময় বিনিয়োগ করতে বাধ্য, যা তাঁদের আগ্রহ ও দক্ষতা প্রদর্শন করবে এবং সেসব হার্ভার্ড শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা করবে যাঁরা ‘এ’ গ্রেড পাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, হার্ভার্ডে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই তাঁদের সবকিছু সামলানোর শিল্পে পারদর্শী হতে হয়েছিল কারণ এটিই তাঁদের এখানে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।
লং আইল্যান্ডের পাবলিক স্কুল উইলিয়াম ফ্লয়েড হাই স্কুলের ক্লাস ভ্যালাডিক্টোরিয়ান (সেরা একাডেমিক ফলাফল অর্জনকারী শিক্ষার্থী) জোশুয়া শুল্টজার হার্ভার্ডে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এক্সট্রা-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ এবং পড়াশোনার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে বড় হয়েছি। যখন আপনি এমন একটি স্কুলে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছেন যেখানে প্রায় সবাই সহপাঠ্যক্রমিক কাজ করে। তাঁরা যে তা চালিয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।’
শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে হার্ভার্ডও আংশিকভাবে দোষী হতে পারে। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা একই সময়ে দুটি ক্লাস ‘এনরোল’ করতে পারে।
ড. লাইবসন শিক্ষার্থীদের বলেন, সরাসরি উপস্থিত থেকে শেখা ভিডিও দেখে শেখার চেয়ে ভালো। তবে তিনি একই সঙ্গে ডাবল-শিডিউলিং প্রথাকে সমর্থন করেন কারণ হার্ভার্ডের অনেক ক্লাসই একই সময়ে চলে।
‘যদি আমরা একই সময়ে ভর্তি নেওয়া অনুমোদন না দিতাম, তবে অনেক শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়ত’, যোগ করেন তিনি।
যে শিক্ষার্থীরা তাঁর লেকচারে আসে, তাঁদের জন্য ড. লাইবসন শ্রেণিকক্ষের আলোচনাকে আরও খোলামেলা করার চেষ্টা করেন। তিনি সিলেবাসে সতর্কতা অন্তর্ভুক্ত করেন, অন্য শিক্ষার্থীর ভিন্নমত থাকতে পারে এবং ক্লাসে মন্তব্যগুলো বাইরে শেয়ার করার সময় বক্তাকে চিহ্নিত করার সম্ভাবনা আছে বলে সতর্ক করেন।
শিক্ষার্থী জোশুয়া শুল্টজার বলেন, শিক্ষার্থীদের আরও মুক্তমনা হতে উৎসাহ দেওয়া একটি মহান লক্ষ্য হতে পারে, তবে হার্ভার্ডের পরিবেশ শুধু সমস্যার একটি অংশমাত্র। একইভাবে, বর্তমানের অত্যন্ত বিভক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশও সমস্যার একটি অংশ।
তিনি আরও বলেন, ‘এটাই বিশ্বের বাস্তবতা।’

আমাদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একেবারে শুরু থেকে বিভিন্ন ফর্মে এখানে অংশ নিয়েছেন। এ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তাঁদের অসম্ভব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীষণ
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
সমাবর্তনে বক্তব্য দেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এ ছাড়া ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দা মাদিহা মোরশেদ এবং ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান সমাবর্তনে স্নাতকদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
৮ ঘণ্টা আগে
‘শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি অভিজ্ঞতারও আরেক নাম।’ এই বিশ্বাস থেকে নতুন দিগন্তে পা রাখলেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) একদল তরুণ শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়ার ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থী...
১৫ ঘণ্টা আগে
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হবে। চলবে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন ফি জমা দেওয়া যাবে।
১৮ ঘণ্টা আগেতাকি বিন মহসিন

‘শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি অভিজ্ঞতারও আরেক নাম।’ এই বিশ্বাস থেকে নতুন দিগন্তে পা রাখলেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) একদল তরুণ শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়ার ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন দুই সপ্তাহব্যাপী শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ভিত্তিক স্টুডেন্ট আউটবাউন্ড প্রোগ্রামে। এই আয়োজন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত একাডেমিক সমঝোতা স্মারকের ধারাবাহিক অংশ।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রোগ্রামটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এরপরই অনুষ্ঠিত হয় ক্যাম্পাস ট্যুর, অফিশিয়াল ফটোসেশন এবং এসইউবি ও ইন্তির প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রতীকী পতাকা হস্তান্তর অনুষ্ঠান।
স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন মো. ইয়াহিয়া আরমান, আলামিন হোসেন, ফারদিন আলম, দিয়া তারান্নুম, কামরুন নাহার পিয়া, ফাহমিদা খানম উম্মি, মাশরিহা ওয়াহিদ, সানজিদা মৌ, অর্চি, তামিম ও তাকি বিন মহসিন।
আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও অভিজ্ঞতা
এই প্রোগ্রামে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি চীনের জিয়ামেন নানইয়াং কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছেন। একসঙ্গে শেখা, কাজ করা এবং সংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যমে তাঁরা গড়ে তুলছেন এক বৈশ্বিক বন্ধুত্বের বন্ধন।
দুই সপ্তাহব্যাপী এই সফরে শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন বিজনেস, রোবোটিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আই) এবং অন্যান্য সমসাময়িক বিষয়ের সার্টিফিকেট কোর্সে। পাশাপাশি তাঁরা মালয়েশিয়ার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন ঘুরে দেখবেন, যা তাঁদের জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

তত্ত্বাবধান ও নেতৃত্বে
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার ফারহানা শারমিন এবং আউটরিচ অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক। তাঁরা পুরো প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধান এবং শিক্ষার্থীদের শেখার প্রতিটি ধাপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইন্তি ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির সভাপতি ও কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, এ প্রোগ্রামটি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি, পেশাগত দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য এটি হবে এক বাস্তবভিত্তিক অনুপ্রেরণা, যা তাঁদের ভাবনায় ও জীবনে নতুন আলো ছড়াবে।

‘শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি অভিজ্ঞতারও আরেক নাম।’ এই বিশ্বাস থেকে নতুন দিগন্তে পা রাখলেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) একদল তরুণ শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়ার ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন দুই সপ্তাহব্যাপী শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ভিত্তিক স্টুডেন্ট আউটবাউন্ড প্রোগ্রামে। এই আয়োজন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত একাডেমিক সমঝোতা স্মারকের ধারাবাহিক অংশ।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রোগ্রামটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এরপরই অনুষ্ঠিত হয় ক্যাম্পাস ট্যুর, অফিশিয়াল ফটোসেশন এবং এসইউবি ও ইন্তির প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রতীকী পতাকা হস্তান্তর অনুষ্ঠান।
স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন মো. ইয়াহিয়া আরমান, আলামিন হোসেন, ফারদিন আলম, দিয়া তারান্নুম, কামরুন নাহার পিয়া, ফাহমিদা খানম উম্মি, মাশরিহা ওয়াহিদ, সানজিদা মৌ, অর্চি, তামিম ও তাকি বিন মহসিন।
আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও অভিজ্ঞতা
এই প্রোগ্রামে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি চীনের জিয়ামেন নানইয়াং কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছেন। একসঙ্গে শেখা, কাজ করা এবং সংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যমে তাঁরা গড়ে তুলছেন এক বৈশ্বিক বন্ধুত্বের বন্ধন।
দুই সপ্তাহব্যাপী এই সফরে শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন বিজনেস, রোবোটিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আই) এবং অন্যান্য সমসাময়িক বিষয়ের সার্টিফিকেট কোর্সে। পাশাপাশি তাঁরা মালয়েশিয়ার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন ঘুরে দেখবেন, যা তাঁদের জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

তত্ত্বাবধান ও নেতৃত্বে
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার ফারহানা শারমিন এবং আউটরিচ অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক। তাঁরা পুরো প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধান এবং শিক্ষার্থীদের শেখার প্রতিটি ধাপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইন্তি ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির সভাপতি ও কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, এ প্রোগ্রামটি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি, পেশাগত দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য এটি হবে এক বাস্তবভিত্তিক অনুপ্রেরণা, যা তাঁদের ভাবনায় ও জীবনে নতুন আলো ছড়াবে।

আমাদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একেবারে শুরু থেকে বিভিন্ন ফর্মে এখানে অংশ নিয়েছেন। এ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তাঁদের অসম্ভব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীষণ
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
সমাবর্তনে বক্তব্য দেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এ ছাড়া ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দা মাদিহা মোরশেদ এবং ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান সমাবর্তনে স্নাতকদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
৮ ঘণ্টা আগে
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়েন প্রায় ৯৭ শতাংশ আবেদনকারী। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সুযোগ পাওয়া ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনেকে ক্লাসে উপস্থিত হন না এবং নির্ধারিত পাঠ্য পড়েন না বলে অভিযোগ করেছেন...
১৪ ঘণ্টা আগে
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হবে। চলবে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন ফি জমা দেওয়া যাবে।
১৮ ঘণ্টা আগেশিক্ষা ডেস্ক

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হবে। চলবে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন ফি জমা দেওয়া যাবে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নায়েব মো. গোলাম জাকারিয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১০ জানুয়ারি। মডিউল ‘এ’ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরিতে সকাল এবং বিকেল দুই শিফটে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এবার প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা থাকছে না। কেবল লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তিযোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা হবে। তবে আগের মতো মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। ভর্তি পরীক্ষায় দুই ক্যাটাগরি তথা প্রকৌশল বিভাগসমূহ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং কৌশল বিভাগসমূহ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং স্থাপত্য বিভাগের ক্ষেত্রে আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩০০ ও ১ হাজার ৫০০ টাকা। ভর্তির জন্য নির্বাচিত ও অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের নামসহ মেধাক্রম (সম্ভাব্য) ৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হবে।
ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা এখানে ক্লিক করে বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তিটি দেখতে পারবেন।

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হবে। চলবে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন ফি জমা দেওয়া যাবে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নায়েব মো. গোলাম জাকারিয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১০ জানুয়ারি। মডিউল ‘এ’ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরিতে সকাল এবং বিকেল দুই শিফটে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এবার প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা থাকছে না। কেবল লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তিযোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা হবে। তবে আগের মতো মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। ভর্তি পরীক্ষায় দুই ক্যাটাগরি তথা প্রকৌশল বিভাগসমূহ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং কৌশল বিভাগসমূহ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং স্থাপত্য বিভাগের ক্ষেত্রে আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩০০ ও ১ হাজার ৫০০ টাকা। ভর্তির জন্য নির্বাচিত ও অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের নামসহ মেধাক্রম (সম্ভাব্য) ৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হবে।
ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা এখানে ক্লিক করে বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তিটি দেখতে পারবেন।

আমাদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একেবারে শুরু থেকে বিভিন্ন ফর্মে এখানে অংশ নিয়েছেন। এ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তাঁদের অসম্ভব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীষণ
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
সমাবর্তনে বক্তব্য দেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এ ছাড়া ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দা মাদিহা মোরশেদ এবং ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান সমাবর্তনে স্নাতকদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
৮ ঘণ্টা আগে
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়েন প্রায় ৯৭ শতাংশ আবেদনকারী। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সুযোগ পাওয়া ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনেকে ক্লাসে উপস্থিত হন না এবং নির্ধারিত পাঠ্য পড়েন না বলে অভিযোগ করেছেন...
১৪ ঘণ্টা আগে
‘শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি অভিজ্ঞতারও আরেক নাম।’ এই বিশ্বাস থেকে নতুন দিগন্তে পা রাখলেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) একদল তরুণ শিক্ষার্থী। মালয়েশিয়ার ইন্তি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থী...
১৫ ঘণ্টা আগে