জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। উপাচার্য পদে দায়িত্ব গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয় নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইলিয়াস শান্ত।
ইলিয়াস শান্ত
দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থা কেমন দেখেছেন?
বিগত সরকারের সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। এতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে বিপর্যয় নেমে আসে। গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে বিগত সরকার ক্যাম্পাসগুলোতে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়েছে। একটি বিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে পরিস্থিতি যতটা না খারাপ ভেবেছি, দায়িত্ব গ্রহণের পর দুরবস্থা আরও বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। বিগত সময়ে এখানে আমরা দেখেছি, একাডেমিক বিষয়ের পাঠদানের চেয়ে অবকাঠামো নির্মাণের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কাজে বিগত সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ লোপাটের মতো ঘটনাগুলো মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে চাইলেই হুট করে সবকিছুতে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের দাবি এবং সময়ের চাহিদা অনুযায়ী একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজকে প্রত্যাশা অনুযায়ী এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এ কাজ চালিয়ে নিতে আমাদের নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরেও সময় দিতে হচ্ছে। কাজের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ক্যাম্পাসে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে আসবে বলে বিশ্বাস করি।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার সংগ্রামকে কীভাবে দেখছেন?
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বড় বেনিফিশিয়ারি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন স্বৈরাচার সরকারের পতনের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাসহ সাধারণ জনতার মুক্তি মিলেছে। সবাই এখন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে। এটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন ভীতিহীন পরিবেশ ফিরে এসেছে, বিগত সময়ে যেটা ছিল না। আপনি রিকশাচালক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন অফিসের সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কথা বলুন, বিগত সময়ে সত্যের পক্ষে কথা বলা সবার জন্য হুমকি ছিল। কিন্তু আপনি দেখবেন, এখন প্রত্যেকে কথা বলছে। ফলে সরকার পতনের মাধ্যমে দলমত-নির্বিশেষে সবার মুক্তি মিলেছে। যদিও দীর্ঘদিনের দুর্নীতি-অপশাসনে সর্বস্তরে রয়েছে ক্ষতবিক্ষত অবস্থা। সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও নির্ভয়ে কথা বলতে পারা যে স্বস্তির, তা আছে। এখান থেকে আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। এই যাত্রা একটা সূচনাবিন্দু থেকে শুরু হয়। সেটি এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে।
ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রম কেমন দেখছেন?
আন্দোলন চলাকালীন ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি প্রায় সব কটি ছাত্রসংগঠন বৈষম্যবিরোধীদের ব্যানারে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এই ধারাবাহিকতা দীর্ঘ সময় বিরাজমান ছিল। আন্দোলন-পরবর্তী বিভিন্ন ইস্যুতে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো বর্তমানে তাদের নিজস্ব ব্যানারে অংশ নিচ্ছে। জাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, কিছু কিছু সংগঠন বলছে সংস্কার করার পর নির্বাচন দিতে। আবার কেউ কেউ বলছে, অনতিবিলম্বে নির্বাচন হওয়া উচিত। এই যে তাদের ভিন্ন বক্তব্য, এটা নির্বাচন বিষয়ে একটা সংকট সৃষ্টি করছে। প্রত্যেকে তার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে। আমরা চাই, জাকসুতে ছাত্রসংগঠনগুলো যেহেতু সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবে, সে জায়গা থেকে তারা এ বিষয়ে একটা অভিন্ন মত পোষণ করতে পারবে। তবে সময় নিয়ে তাদের ভিন্নতা থাকলেও ছাত্রসংগঠনগুলো জাকসু নির্বাচন চায়, এই ইস্যুতে তাদের মতের ভিন্নতা নেই।
পোষ্য কোটা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলকালাম ঘটে। পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক বিক্ষোভের পর এই কোটাব্যবস্থা বাতিল হয়। ‘পোষ্য কোটা’ হঠাৎ এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কেন?
কোটায় ভর্তি হয়ে অনেকে ক্যাম্পাসে নানা অপকর্ম, নাশকতা ও গণরুম সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের প্রভাবশালী অনেক নেতা মেধার পরিবর্তে এ পোষ্য কোটার সুযোগে ক্যাম্পাসে এসেছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। এরপর হলে হলে বাকি খেয়ে টাকা না দেওয়াসহ যত অপকর্ম আছে, সব অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের এই অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা ক্ষোভের সঞ্চার করেছে বলে মনে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আরেকটি বিষয় বলেছে, পোষ্য থেকে যারা আসে, তাদেরকে ভর্তির শর্ত শিথিল করে ভর্তি করানো হয়। তাদের কথা হলো, সাধারণ শিক্ষার্থী নিজেদের মেধায় ভর্তিযুদ্ধে প্রমাণ করে ভর্তি হচ্ছে। অন্যদিকে কিছু শিক্ষার্থী কোটায় ভর্তি হওয়ার ফলে মেধাবীদের সঙ্গে অসম মেধার যে একটা সংযোগ ঘটে, তা একটা ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। তারা বলেছে, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তান হয়ে এ ধরনের কোটার সুবিধা নেওয়া বৈষম্যমূলক।
তবে শিক্ষার্থীদের বিপরীতেও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বক্তব্য রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য হলো, পৃথিবীর সব প্রতিষ্ঠানেই প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে যেহেতু পোষ্যের ব্যবস্থাপনা নিয়ে দাবি উঠেছে, সে ক্ষেত্রে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি এবং পোষ্য ভর্তির সুযোগ বাতিল করে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার বিধান চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন আয়োজনের অগ্রগতি কতটুকু?
জাকসু নিয়ে আমরা একটা রোডম্যাপ দিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাকসু নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। কেউ সংস্কারের পরে নির্বাচনের পক্ষে, আবার কেউ এখনই নির্বাচনের পক্ষে। জাকসুতে নতুন কিছু পদ সৃষ্টির পক্ষে সবাই।
সিন্ডিকেট সভায় গঠনতন্ত্র সংস্কারের মাধ্যমে নতুন এই পদগুলো সৃষ্টি করতে হবে। এরপর হয়তো আমরা জাকসুর তফসিল ঘোষণা করতে পারব। কারণ, নির্ধারিত পদের সংখ্যা না জানলে তফসিল ঘোষণা করা সম্ভব নয়। জাসকু বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা অসম্ভব ধৈর্য আর সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছে। তাদের সহায়তায় আমরা জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে একটা সময়সীমা নির্ধারণ করতে পেরেছি। আগামী ২১ মে তারিখের মধ্যে এ নির্বাচন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘ সাত বছর পর ২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জাবির ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর সমাবর্তন আয়োজনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কি সম্ভব হবে?
চলতি বছরই আমরা সপ্তম সমাবর্তন আয়োজন করব বলে একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সমাবর্তন প্রতিবছরই করা উচিত। তা সম্ভব না হলে অন্তত দুই বছর পর সমাবর্তন আয়োজন করা উচিত। বছরের পর বছর সমাবর্তন আয়োজন বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা ভুলেই যায় যে সমাবর্তন বলে কিছু আছে। নতুন প্রশাসন আশা করছে, এ বছর সপ্তম সমাবর্তন আয়োজন করা গেলে পরে প্রতিবছরই সমাবর্তনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব হবে। নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজনে সুবিধা রয়েছে। সেটা হচ্ছে, আমাদের যে একাডেমিক ক্যালেন্ডার রয়েছে, সেটা পালন করার বাধ্যবাধকতা তৈরি করে। সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিক সনদ প্রদানের যে বিষয়টা, সেটাও নিশ্চিত করা যায়।
নতুন দায়িত্ব গ্রহণের কোন বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জ মনে হয়েছে?
বিগত সরকারের সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতির এ জায়গাটা নানামুখী। বিশেষ করে একটা হলো শিক্ষা কার্যক্রম, অন্যটি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন, সে সময়কার পুলিশ এবং সর্বোপরি পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা। যার কারণে জাবির অনেক শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে। সাভার অঞ্চলে অনেকে প্রাণ হারিয়েছে। সরকারের সামান্য বাজেটে ভুক্তভোগী এসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। তবু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে জাবির পক্ষ থেকে হতাহতদের পরিবারগুলোকে এখন পর্যন্ত ৩৭ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১০০ কোটি ঘাটতি বাজেটের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের জন্য এটাও একটা চ্যালেঞ্জের জায়গা।
জুলাই-আগস্টের সেই উত্তপ্ত দিনগুলোতে জাবি ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি কেমন ছিল? জাবির কতজন শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছেন?
এই আন্দোলনে অংশ নিয়ে আমাদের শতাধিক শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, আমাদের ক্যাম্পাসে দায়িত্বরত গণমাধ্যমকর্মী, এমনকি শিক্ষকেরাও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আন্দোলনে চোখ হারিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন, এমন শিক্ষকও রয়েছেন। আন্দোলন চলাকালে জাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাভার এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরাও এসে যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, এমন দুজন হলেন আলিফ আহমেদ সিয়াম ও মো. শ্রাবণ গাজী। এ ছাড়া বৃহত্তর সাভার এলাকায় প্রায় ২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর বাইরে হাজারের অধিক আন্দোলনকারী হতাহত হয়েছেন। সাভার এলাকায় নারকীয় তাণ্ডবটা হয়েছে ৫ আগস্ট বিকেলে। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সারা দেশের মানুষ যখন উল্লাস করছিল, ঠিক তখন সাভার এলাকায় পুলিশ ও সরকারসমর্থিত দুর্বৃত্তদের নেতৃত্বে এখানে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চলেছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় এক ছাত্রীর মৃত্যুর পর ক্যাম্পাসে এমন সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এরপর থেকে প্যাডেলচালিত রিকশা চললেও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, এটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। এ বিষয়ে বিকল্প নিরাপদ কোনো যানের ভাবনা আপনাদের আছে কি না।
জাবি ছাত্রী আফসানা কারিম রাচির মৃত্যুটি মর্মান্তিক। এ ঘটনার পর আমাদের মনে হয়েছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হওয়াই উচিত। রাচির পরিবারের পক্ষ থেকেও এই দাবি করা হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সঙ্গে আমরা বিকল্প হিসেবে প্যাডেলচালিত রিকশার ব্যবস্থা করেছি। তবু আমি বলব, এটা প্রয়োজনের তুলনা অপ্রতুল। এর পাশাপাশি আমরা আরও কিছু বিকল্প চিন্তাভাবনা করেছি। প্যাডেলচালিত রিকশার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে নিরাপদ আরও কিছু যানের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে আমাদের কাজ এগিয়ে চলছে। একটা কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা কাজ করছে। ইতিমধ্যে ১২-১৬ সিটের কয়েকটি ইলেকট্রনিক কার্ট গাড়ি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। ঝুঁকি রয়েছে, এমন যানবাহন আর আমরা ক্যাম্পাসে আনব না। নতুন যানের পাশাপাশি আমরা ক্যাম্পাসের সড়কগুলোতে স্পিডব্রেকার স্থাপন, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। খুব শিগগির আমরা এ বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখতে পাব।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গত ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি এ পরীক্ষা শেষ হয়। ভর্তি পরীক্ষায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন এসেছে কি?
এবারের ভর্তি পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা বাতিল করা হয়েছে। উপাচার্যের কোটা বলে একটা কোটা চালু ছিল। এটা আমার বিবেচনায় বৈষম্যমূলক মনে হয়েছে। এটাও বাতিল করেছি। আমি মনে করি, ভিসি এমন কোনো জান্তা নন, যার কোটা থাকতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার যে ১০ ইউনিট ছিল, সেটাকে আমরা কমিয়ে ৭ ইউনিটে নিয়ে এসেছি। এ সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন সময় বাঁচাতে পারবে, অন্যদিকে তাদের অর্থেরও সাশ্রয় হবে। ভর্তি আবেদন ফি যৌক্তিক হারে কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ করেছি। আরেকটা যেটা করেছি, একসঙ্গে একাধিক ইউনিটে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে বরাদ্দ করা মোট আসনকে সমহারে বণ্টন করে মেধাতালিকা প্রস্তুত করেছি। আগে দেখা গেছে, একটা শিফট থেকে অনেক বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে, অন্য শিফট থেকে কম সুযোগ পাচ্ছে। সমহারে বণ্টনের ফলে বৈষম্য কমে এটায় একটা সমতা আসবে।
একাধিক স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে নেওয়া হচ্ছে। জাবির এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না।
হ্যাঁ, ভবিষ্যতে আমাদের অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার একটা পরিকল্পনা আছে। এতে করে পরীক্ষা একাধিক শিফটে না নিয়ে একবারে শেষ করা যাবে। আপনি দেখবেন, এখন একাধিক শিফটে পরীক্ষার নেওয়ার সঙ্গে কিন্তু একটা বৈষম্যমূলক ভাবনা জড়িয়ে আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ঢাবি, রাবি ও চবি যদি জাবির সঙ্গে অভিন্ন মত পোষণ করে, তাহলে আমরা একে অপরের পরীক্ষাগুলো এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কেন্দ্রে আয়োজন করতে পারি। শুধু এগুলো নয়, নির্ভর করা যায় অন্য যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। যেসব প্রতিষ্ঠান ভর্তি পরীক্ষার যে গোপনীয়তা, সেটা রক্ষা করতে পারছে বলে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, সেখানেও ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্র করা যেতে পারে। ভর্তি পরীক্ষার যদি এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়, তাহলে দেখবেন একটা বড় ধরনের পরিবর্তন চলে আসবে। আমাদেরও এ বিষয়ে আগ্রহ আছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে তো আমাদের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এমন পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণের বিষয়ে উপাচার্য পরিষদের পরবর্তী সভায় আলোচনা করব। সেখানে সম্মতি পেলে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নিয়ে একটা আলোচনা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদেরও দলীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপের কথা শোনা যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দলীয় রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে?
শিক্ষার্থীরা শুরুতে বিষয়টা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। একাধিক ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের কাছে এসেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আমাদের জানিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আপনি জানেন এই বিশ্ববিদ্যালয় ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩’ দ্বারা পরিচালিত। এই আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির ব্যাপারে উল্লেখ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো প্রাপ্তবয়স্ক। তারা রাষ্ট্রের ভোটারও। আপনি জানেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সর্বশেষ আমরা ২০২৪ সালে দেখেছি। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে ছাত্র নেতৃত্বের গুণাবলি।
তবে সরকারের লেজুড়বৃত্তি এ ছাত্ররাজনীতিকে বিতর্কিত করেছে; বিশেষ করে বিগত সরকারের আমলে ছাত্রলীগ দলীয় ব্যানারে বিভিন্ন অপকর্ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের এই আচরণ ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে দেশবাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝেও এ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যার কারণে ছাত্ররাজনীতির এত ঐতিহ্য থাকার পরও শুধু এসব দুঃসহ অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের অভিমানী ও ক্ষুব্ধ করেছে। সংগত কারণে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের দাবি থাকতে পারে। তবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ছাত্রশৃঙ্খলা অধ্যাদেশের বাইরে যেতে পারি না। ছাত্রশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ, ২০১৮ এর ৫ নং ধারার ‘ক’ এ বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জাকসু, হল সংসদ, এ ছাড়া প্রশাসনের অনুমতিপ্রাপ্ত সংগঠন ছাড়া এর বাইরে কোনো সংগঠনের কর্মতৎপরতার সুযোগ থাকবে না। তার মানে হলো নিবন্ধিত সংগঠন হিসেবে ছাত্ররাজনীতি করার আইনগত ভিত্তি রয়েছে। ফলে এসব সংগঠনের নিষিদ্ধের সুযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী আমার নেই। তবে বর্তমান বাস্তবতায় আমরা শিক্ষার্থীদের কতগুলো পরামর্শ দিয়েছি। তার মধ্যে আমরা বলেছি, কোনো ছাত্রসংগঠন কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করবে না। প্রয়োজনে আমাদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত যে অধ্যাদেশ রয়েছে, সেটা সংস্কার করব। একই সঙ্গে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতিও ৭৩-এর আইন অনুযায়ী পরিচালিত। ৭৩-এর আইনের ৪৩ এর ২ ধারা মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনৈতিক দল করার বাধা দেওয়ার অধিকার প্রশাসনের নেই বলে উল্লেখ আছে। সুতরাং, যতক্ষণ না জাবির আইন পরিবর্তন হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দলীয় রাজনীতির বিষয়ে ঘোষণার এখতিয়ার উপাচার্য হিসেবে আমার নেই।
জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আপনার কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামের ইতিহাস শুনতে চাই।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর রিয়াল অ্যাডমিরাল এস এম আহসান ১৯৭১ সালে ১২ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করেছিলেন। প্রতিষ্ঠাকালীন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করে। এই আইনে পূর্ববর্তী নাম সংশোধন করে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার সে সময় হয়তো নামটি পরিবর্তন করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার এ বিষয়ে মন্তব্য বিবেচনাপ্রসূত হবে না। আপনি দেখবেন, প্রতিটি বিষয়ে একটা ভাবনা থাকে। যাঁরা এভাবে পরিবর্তন করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের একটা ভাবনা ছিল। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নাম পরিবর্তনের এ ধারা কোন বিবেচনায় করেছেন, তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে অংশীজনদের সমন্বিত বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তই যথার্থ বলে মনে করি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে পাখি মেলা, প্রজাপতি মেলা, হিম উৎসবের মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কেমন থাকে? এসব আয়োজন সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে চাই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয় সেই বৈচিত্র্য নিয়েই জাতির কাছে পরিচিত। এখানে পরিযায়ী পাখি আসে। পাখি ও প্রজাপতি মেলা হয়। হিম উৎসব হয়। এগুলো জাহাঙ্গীরনগরের পরিচয় নির্ধারণী বৈশিষ্ট্য। এখানে বৈচিত্র্য থাকলেও এ বৈচিত্র্যের মাঝে মমতার এক ঐক্যও বিরাজমান। এর একটিও যদি হারিয়ে যায়, জাহাঙ্গীরনগরের একটি অঙ্গ হারিয়ে যাবে। সে জন্য এ সবকিছুর চর্চা জাহাঙ্গীরনগরকে আপন মহিমায় প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিয়ে চলেছে। তবে সীমা লঙ্ঘন কোনো পরিস্থিতিতেই জাহাঙ্গীরনগরের বৈশিষ্ট নয়। সেটা যেকোনো বিবেচনায় হোক।
গত বছরের শেষ দিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশনের ২০২৫ সালের র্যাংকিং প্রকাশিত হয়। এতে দেখা গেছে, জাবির অবস্থান ৮০০-১০০০ এর মধ্যে। র্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে দেশের প্রায় সব কটি বিশ্ববিদ্যালয় একটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তবে বিগত দুই বছর টাইমস হায়ার এডুকেশনের র্যাঙ্কিংয়ে দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। আরেকটা র্যাঙ্কিংয়েও জাবির সাফল্য রয়েছে। সেটি হলো বিষয়ভিত্তিক র্যাংকিং। গত বছর দর্শন বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগ সারা দেশে প্রথম হয়েছে। চলতি বছর কম্পিউটার সায়েন্স, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ বিষয়ভিত্তিক র্যাঙ্কিংয়ে দেশসেরা হয়েছে। বৈশ্বিক পর্যায়ে শুধু জাবি নয়, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েরও আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। এটার অন্তরায় হলো সুশাসনের অভাব। বিগত সরকারের সময়ে যেভাবে মেধার অবমূল্যায়ন করে দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ ব্যবস্থা ছিল, সেখানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে হাজারের বাইরে যায়নি, তা কম কিসে? পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নেই, কোনো সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাও চলে গেছেন। এখন সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। নিয়োগপ্রক্রিয়াসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা গেলে র্যাঙ্কিংয়েও আরও উন্নতি করা সম্ভব হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। বর্তমানে জিডিপির ২ শতাংশের কম বাজেট শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এটাকে ৪-৬ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনার পড়ালেখা, এখান থেকেই ১৯৯৩ সালে কর্মজীবন শুরু করেছেন। এ ছাড়া আপনার দেশে-বিদেশে আরও কাজের ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনার শিক্ষাজীবন ও উজ্জ্বল কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, একটা মানুষ যা পড়ে, সেটা যদি সে উপলব্ধি করে, তাহলে সে এটা থেকে অনেক কিছু পায়। এই প্রাপ্তির মাধ্যমে সে অন্যকে কিছু দিতেও পারে। দেখুন, আমি দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। আমি যেটুকু বুঝেছি, সেটুকু ধারণ করার চেষ্টা করেছি। আমার যেটা মনে হয়েছে, মানুষ যদি কোনো বিষয়ে শ্রম দেয়, আর সেটার প্রতি যদি প্রেম থাকে, তাহলেই কিন্তু সাফল্য আসে। ধরুন, আপনি খুব মেধাবী। কিন্তু আপনি যা পড়ছেন, তা পছন্দ করছেন না। তাহলে আপনাকে দিয়ে ভালো কিছু হবে না। আবার আপনি খুব শ্রম দিচ্ছেন, কিন্তু আপনার পঠিত বিষয়ের প্রতি ভালো লাগা নেই। তাহলেও কিন্তু হবে না। অর্থাৎ প্রথমত পঠিত বিষয়ের প্রতি ভালো লাগা থাকতে হবে। একই সঙ্গে শ্রম দিতে হবে। তাহলে প্রেম আর শ্রমের সমন্বয়ে সাফল্য আসবে। ব্যক্তিগতভাবে বলব, বাজার মূল্য নেই এমন বিষয়টির প্রতি আমার একধরনের ভালো লাগা ছিল। এতে আমি সামর্থ্য অনুযায়ী সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাতে আমার মতো মানুষেরও কিছু কিছু অর্জন আছে বলে আপনারা বলছেন। আমার মনে হয়, চেষ্টা থাকার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে।
আপনার পড়ালেখা ও গবেষণার ক্ষেত্র দর্শনশাস্ত্র হলেও আপনি একজন সাংগঠনিক ব্যক্তিত্বও বটে। অধ্যাপনার পাশাপাশি আপনি জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের জাবি শাখার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া আপনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিরও সদস্য। পাঠদানের বাইরে সাংগঠনিক এই জার্নি কেমন উপভোগ করেছেন?
যখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা জীবন শুরু হয়, তখন লক্ষ করেছি, গবেষকদের মধ্যে একটা মনোবেদনা কাজ করে। তারা অসম্ভব মেধাবী ও প্রোডাকটিভ হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের জায়গাগুলোতে তাদের বক্তব্য পৌঁছায় না। তখন ভেবেছি, শুধু গবেষণায় সীমাবদ্ধ থাকা নয়, গবেষকদের কথা বলার যে ফোরামগুলো রয়েছে, সেখানেও আমাদের উপস্থিতি প্রয়োজন। এই যে গবেষকদের বঞ্চিত হওয়া, সেটি মাথায় রেখে তাদের পক্ষ হয়ে কথা বলা, নিজের জন্য কথা বলা—এগুলোর জন্য সাংগঠনিক সম্পৃক্ততার যে গুরুত্ব, সেটা আমাদের দেশে রয়েছে। সেই চিন্তা থেকেই হয়তো আমার পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তৈরি হয়েছে।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে ক্যাম্পাসে মাদক সেবনকালে ৯ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জাবির চার, ঢাবির তিন এবং উত্তরা ইউনিভার্সিটি ও প্রাইম নার্সিং কলেজের দুই শিক্ষার্থী ছিলেন। গণমাধ্যমে এমন সংবাদ দেখে মানুষের ধারণা, বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে জাবিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা মাদকের আসর বসিয়েছেন। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে আগেও এমন অপ্রীতিকর ঘটনার অনেক নজির রয়েছে। এসব প্রতিরোধে জাবি প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অনমনীয়, সেটা হয়তো দেখেছেন। আমরা চাই, একজন শিক্ষার্থী যে আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে, সে যেন সফলভাবে তার শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারে। তবু কিছু বিপৎগামী শিক্ষার্থী মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আমরা তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছি। মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীদের আমরা কাউন্সেলিংয়েরও ব্যবস্থা করছি। এ ছাড়া জাবির সবেচতন শিক্ষার্থীরা প্রতিটি অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার। যার কারণে এটি খুব দ্রুত মিডিয়ায় চলে আসে। আমি আমার সচেতন শিক্ষার্থী এবং সচেতন অংশীদারদের নিয়ে গর্বিত। থার্টি ফার্স্টে যে অন্যায়গুলো হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে যে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি, তার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা বলব, ভালোভাবে শিক্ষাজীবন শেষ করার জন্য মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। আশা করছি, মাদক-সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি ধীরে ধীরে কমে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে? বিগত সময়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।
নানাভাবে জাবিতে গবেষণাকর্ম হচ্ছে। যেমন শিক্ষকদের গবেষণার যে বরাদ্দ, সেটা আমরা তাৎপর্যপূর্ণ হারে বাড়িয়ে দিয়েছি। প্রত্যেক শিক্ষককে গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। যেটা এবার আমরা প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছি। আরেকটি হলো, এখান পিএইচডি-এমফিল পর্যায়ে যে থিসিস হচ্ছে, সেগুলো গবেষণার একধরনের প্রশিক্ষণ। এখান থেকে অনেক প্রবন্ধ, পুস্তক প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে জাবিতে একাডেমিক প্রয়োজনীয়তার জায়গা থেকে গবেষণাকর্মে বরাদ্দ বাড়িয়েছি। এ গবেষণার বড় ধরনের একটি প্রভাব দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে রয়েছে। গবেষণার জন্য বরাদ্দ আমরা ইউজিসি থেকেও পাচ্ছি। তার অধীনেও কিছু গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আরআইসি নামে একটি গবেষণা পয়েন্ট রয়েছে, যেখানে বিশ্বব্যাংক ফান্ডিং করে। জাবির পক্ষ থেকে সেখানে অন্তত ১৫টি প্রজেক্টে গবেষকদের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। বাকি যেসব গবেষণাকর্ম হচ্ছে, সেগুলো জাবির র্যাঙ্কিংয়ে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকর্ম দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কতটা কাজে লাগছে?
অবশ্যই, জাবির গবেষণাকর্ম দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। এখানে বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের যে ডিসিপ্লিনগুলো রয়েছে, এখানে যে গবেষকেরা আছেন, তাঁরা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছেন। সোশ্যাল সায়েন্সের অনেক গবেষক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান রাখছেন। কিন্তু হতাশার জায়গাটা হলো, ইন্ডাস্ট্রি আর একাডেমিয়ার কোলাবোরেশনের যে জায়গাটা, সেটায় কিন্তু আমরা পিছিয়ে আছি। শুধু জাবি নয়, অন্যান্য ইউনিভার্সিটিও পিছিয়ে রয়েছে। ফলে যাদের সংশ্লিষ্টতা আছে, যেমন ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়, তাদের উচিত হচ্ছে আমরা যেসব গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি, তাদের কর্মসংস্থানের জন্য দেশের যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে, তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটা সম্পর্ক তৈরি করে দেওয়া। যাতে করে তারা তাদের শিক্ষাজীবন শেষে কর্মসংস্থানের জন্য নিজেদের পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করতে পারে।
গণরুম বিলুপ্ত করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের গণরুম সংস্কৃতি এখন আর নেই। এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে? প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ শিক্ষার্থী-অভিভকদের মাঝে ইতিবাচক সাড়া জাগিয়েছে।
এ সাফল্যের শুরুতে আমি যাদের ধন্যবাদ জানাব, তারা হলো ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা। যারা গণরুম সৃষ্টিকারী ও দখলদার ছিল, এ বিপ্লবী ছাত্র-জনতা তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করেছে। এটা সম্পূর্ণ তাদের কৃতিত্ব। আমরা কতিপয় শিক্ষক সহযোগী হিসেবে ছিলাম। গণরুম বিলুপ্তিতে আমাদের প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। শিক্ষার্থীরা এখানে প্রশংসার দাবিদার। অন্তর্বর্তী সরকার এখন দেশ চালাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও যে সহযোগিতা ছিল, এটাও কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ। সরকারের ভাষ্য ছিল, আমরা যেটা চেয়েছি, সেটা যেন সফলভাবে কার্যকর করতে পারি। ফলে আমি বলব, সরকার, বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ও জাহাঙ্গীরনগরের অংশীজনদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। এটার সুফল পাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও অনাগত শিক্ষার্থীরা।
তবে আবাসিক হলগুলোর খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। খাবারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় নানা কিছু পাওয়া যায়। কীভাবে খাবারের মানে আরও উন্নতি করা যায়?
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ৯৫ শতাংশ অর্থ আসে সরকারের পক্ষ থেকে। সাধারণ মানুষের ভ্যাট-ট্যাক্সের টাকা থেকে এ বরাদ্দ আসে। তাদের এই অর্থ দিয়ে আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। জাবির অভ্যন্তরীণ আয়ের তেমন কোনো উৎস নেই। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও কিন্তু উচ্চমূল্যের টিউশন ফি নেওয়া হয় না। ফলে এখানে খাবারের সার্বিক মান বাড়াতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। অপুষ্টিতে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আপনি কী গবেষণা আশা করেন?
আমি আমার মেধাবী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সবচেয়ে সেরাটা চাই, অথচ সে অপুষ্টিতে ভুগবে, এ কী করে হয়! আমি শিক্ষার্থীদের ক্যানটিন-ডাইনিং পরিদর্শন করেছি। আমি তাদের সঙ্গে খাবারও গ্রহণ করেছি। আমার মনে হয়েছে, এসব ক্যানটিন-ডাইনিংয়ের খাবারে যে প্রয়োজনীয় পুষ্টির প্রয়োজন, তা অনুপস্থিত। আশা করি, যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকে ধন্যবাদ।
আরও খবর পড়ুন:
দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থা কেমন দেখেছেন?
বিগত সরকারের সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। এতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে বিপর্যয় নেমে আসে। গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে বিগত সরকার ক্যাম্পাসগুলোতে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়েছে। একটি বিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে পরিস্থিতি যতটা না খারাপ ভেবেছি, দায়িত্ব গ্রহণের পর দুরবস্থা আরও বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। বিগত সময়ে এখানে আমরা দেখেছি, একাডেমিক বিষয়ের পাঠদানের চেয়ে অবকাঠামো নির্মাণের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কাজে বিগত সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ লোপাটের মতো ঘটনাগুলো মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে চাইলেই হুট করে সবকিছুতে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের দাবি এবং সময়ের চাহিদা অনুযায়ী একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজকে প্রত্যাশা অনুযায়ী এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এ কাজ চালিয়ে নিতে আমাদের নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরেও সময় দিতে হচ্ছে। কাজের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ক্যাম্পাসে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে আসবে বলে বিশ্বাস করি।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার সংগ্রামকে কীভাবে দেখছেন?
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বড় বেনিফিশিয়ারি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন স্বৈরাচার সরকারের পতনের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাসহ সাধারণ জনতার মুক্তি মিলেছে। সবাই এখন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে। এটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন ভীতিহীন পরিবেশ ফিরে এসেছে, বিগত সময়ে যেটা ছিল না। আপনি রিকশাচালক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন অফিসের সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কথা বলুন, বিগত সময়ে সত্যের পক্ষে কথা বলা সবার জন্য হুমকি ছিল। কিন্তু আপনি দেখবেন, এখন প্রত্যেকে কথা বলছে। ফলে সরকার পতনের মাধ্যমে দলমত-নির্বিশেষে সবার মুক্তি মিলেছে। যদিও দীর্ঘদিনের দুর্নীতি-অপশাসনে সর্বস্তরে রয়েছে ক্ষতবিক্ষত অবস্থা। সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও নির্ভয়ে কথা বলতে পারা যে স্বস্তির, তা আছে। এখান থেকে আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। এই যাত্রা একটা সূচনাবিন্দু থেকে শুরু হয়। সেটি এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে।
ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রম কেমন দেখছেন?
আন্দোলন চলাকালীন ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি প্রায় সব কটি ছাত্রসংগঠন বৈষম্যবিরোধীদের ব্যানারে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এই ধারাবাহিকতা দীর্ঘ সময় বিরাজমান ছিল। আন্দোলন-পরবর্তী বিভিন্ন ইস্যুতে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো বর্তমানে তাদের নিজস্ব ব্যানারে অংশ নিচ্ছে। জাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, কিছু কিছু সংগঠন বলছে সংস্কার করার পর নির্বাচন দিতে। আবার কেউ কেউ বলছে, অনতিবিলম্বে নির্বাচন হওয়া উচিত। এই যে তাদের ভিন্ন বক্তব্য, এটা নির্বাচন বিষয়ে একটা সংকট সৃষ্টি করছে। প্রত্যেকে তার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে। আমরা চাই, জাকসুতে ছাত্রসংগঠনগুলো যেহেতু সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবে, সে জায়গা থেকে তারা এ বিষয়ে একটা অভিন্ন মত পোষণ করতে পারবে। তবে সময় নিয়ে তাদের ভিন্নতা থাকলেও ছাত্রসংগঠনগুলো জাকসু নির্বাচন চায়, এই ইস্যুতে তাদের মতের ভিন্নতা নেই।
পোষ্য কোটা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলকালাম ঘটে। পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক বিক্ষোভের পর এই কোটাব্যবস্থা বাতিল হয়। ‘পোষ্য কোটা’ হঠাৎ এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কেন?
কোটায় ভর্তি হয়ে অনেকে ক্যাম্পাসে নানা অপকর্ম, নাশকতা ও গণরুম সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের প্রভাবশালী অনেক নেতা মেধার পরিবর্তে এ পোষ্য কোটার সুযোগে ক্যাম্পাসে এসেছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। এরপর হলে হলে বাকি খেয়ে টাকা না দেওয়াসহ যত অপকর্ম আছে, সব অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের এই অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা ক্ষোভের সঞ্চার করেছে বলে মনে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আরেকটি বিষয় বলেছে, পোষ্য থেকে যারা আসে, তাদেরকে ভর্তির শর্ত শিথিল করে ভর্তি করানো হয়। তাদের কথা হলো, সাধারণ শিক্ষার্থী নিজেদের মেধায় ভর্তিযুদ্ধে প্রমাণ করে ভর্তি হচ্ছে। অন্যদিকে কিছু শিক্ষার্থী কোটায় ভর্তি হওয়ার ফলে মেধাবীদের সঙ্গে অসম মেধার যে একটা সংযোগ ঘটে, তা একটা ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। তারা বলেছে, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তান হয়ে এ ধরনের কোটার সুবিধা নেওয়া বৈষম্যমূলক।
তবে শিক্ষার্থীদের বিপরীতেও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বক্তব্য রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য হলো, পৃথিবীর সব প্রতিষ্ঠানেই প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে যেহেতু পোষ্যের ব্যবস্থাপনা নিয়ে দাবি উঠেছে, সে ক্ষেত্রে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি এবং পোষ্য ভর্তির সুযোগ বাতিল করে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার বিধান চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন আয়োজনের অগ্রগতি কতটুকু?
জাকসু নিয়ে আমরা একটা রোডম্যাপ দিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাকসু নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। কেউ সংস্কারের পরে নির্বাচনের পক্ষে, আবার কেউ এখনই নির্বাচনের পক্ষে। জাকসুতে নতুন কিছু পদ সৃষ্টির পক্ষে সবাই।
সিন্ডিকেট সভায় গঠনতন্ত্র সংস্কারের মাধ্যমে নতুন এই পদগুলো সৃষ্টি করতে হবে। এরপর হয়তো আমরা জাকসুর তফসিল ঘোষণা করতে পারব। কারণ, নির্ধারিত পদের সংখ্যা না জানলে তফসিল ঘোষণা করা সম্ভব নয়। জাসকু বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা অসম্ভব ধৈর্য আর সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছে। তাদের সহায়তায় আমরা জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে একটা সময়সীমা নির্ধারণ করতে পেরেছি। আগামী ২১ মে তারিখের মধ্যে এ নির্বাচন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘ সাত বছর পর ২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জাবির ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর সমাবর্তন আয়োজনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কি সম্ভব হবে?
চলতি বছরই আমরা সপ্তম সমাবর্তন আয়োজন করব বলে একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সমাবর্তন প্রতিবছরই করা উচিত। তা সম্ভব না হলে অন্তত দুই বছর পর সমাবর্তন আয়োজন করা উচিত। বছরের পর বছর সমাবর্তন আয়োজন বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা ভুলেই যায় যে সমাবর্তন বলে কিছু আছে। নতুন প্রশাসন আশা করছে, এ বছর সপ্তম সমাবর্তন আয়োজন করা গেলে পরে প্রতিবছরই সমাবর্তনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব হবে। নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজনে সুবিধা রয়েছে। সেটা হচ্ছে, আমাদের যে একাডেমিক ক্যালেন্ডার রয়েছে, সেটা পালন করার বাধ্যবাধকতা তৈরি করে। সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিক সনদ প্রদানের যে বিষয়টা, সেটাও নিশ্চিত করা যায়।
নতুন দায়িত্ব গ্রহণের কোন বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জ মনে হয়েছে?
বিগত সরকারের সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতির এ জায়গাটা নানামুখী। বিশেষ করে একটা হলো শিক্ষা কার্যক্রম, অন্যটি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন, সে সময়কার পুলিশ এবং সর্বোপরি পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা। যার কারণে জাবির অনেক শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে। সাভার অঞ্চলে অনেকে প্রাণ হারিয়েছে। সরকারের সামান্য বাজেটে ভুক্তভোগী এসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। তবু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে জাবির পক্ষ থেকে হতাহতদের পরিবারগুলোকে এখন পর্যন্ত ৩৭ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১০০ কোটি ঘাটতি বাজেটের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের জন্য এটাও একটা চ্যালেঞ্জের জায়গা।
জুলাই-আগস্টের সেই উত্তপ্ত দিনগুলোতে জাবি ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি কেমন ছিল? জাবির কতজন শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছেন?
এই আন্দোলনে অংশ নিয়ে আমাদের শতাধিক শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, আমাদের ক্যাম্পাসে দায়িত্বরত গণমাধ্যমকর্মী, এমনকি শিক্ষকেরাও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আন্দোলনে চোখ হারিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন, এমন শিক্ষকও রয়েছেন। আন্দোলন চলাকালে জাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাভার এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরাও এসে যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, এমন দুজন হলেন আলিফ আহমেদ সিয়াম ও মো. শ্রাবণ গাজী। এ ছাড়া বৃহত্তর সাভার এলাকায় প্রায় ২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর বাইরে হাজারের অধিক আন্দোলনকারী হতাহত হয়েছেন। সাভার এলাকায় নারকীয় তাণ্ডবটা হয়েছে ৫ আগস্ট বিকেলে। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সারা দেশের মানুষ যখন উল্লাস করছিল, ঠিক তখন সাভার এলাকায় পুলিশ ও সরকারসমর্থিত দুর্বৃত্তদের নেতৃত্বে এখানে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চলেছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় এক ছাত্রীর মৃত্যুর পর ক্যাম্পাসে এমন সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এরপর থেকে প্যাডেলচালিত রিকশা চললেও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, এটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। এ বিষয়ে বিকল্প নিরাপদ কোনো যানের ভাবনা আপনাদের আছে কি না।
জাবি ছাত্রী আফসানা কারিম রাচির মৃত্যুটি মর্মান্তিক। এ ঘটনার পর আমাদের মনে হয়েছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হওয়াই উচিত। রাচির পরিবারের পক্ষ থেকেও এই দাবি করা হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সঙ্গে আমরা বিকল্প হিসেবে প্যাডেলচালিত রিকশার ব্যবস্থা করেছি। তবু আমি বলব, এটা প্রয়োজনের তুলনা অপ্রতুল। এর পাশাপাশি আমরা আরও কিছু বিকল্প চিন্তাভাবনা করেছি। প্যাডেলচালিত রিকশার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে নিরাপদ আরও কিছু যানের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে আমাদের কাজ এগিয়ে চলছে। একটা কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা কাজ করছে। ইতিমধ্যে ১২-১৬ সিটের কয়েকটি ইলেকট্রনিক কার্ট গাড়ি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। ঝুঁকি রয়েছে, এমন যানবাহন আর আমরা ক্যাম্পাসে আনব না। নতুন যানের পাশাপাশি আমরা ক্যাম্পাসের সড়কগুলোতে স্পিডব্রেকার স্থাপন, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। খুব শিগগির আমরা এ বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখতে পাব।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গত ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি এ পরীক্ষা শেষ হয়। ভর্তি পরীক্ষায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন এসেছে কি?
এবারের ভর্তি পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা বাতিল করা হয়েছে। উপাচার্যের কোটা বলে একটা কোটা চালু ছিল। এটা আমার বিবেচনায় বৈষম্যমূলক মনে হয়েছে। এটাও বাতিল করেছি। আমি মনে করি, ভিসি এমন কোনো জান্তা নন, যার কোটা থাকতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার যে ১০ ইউনিট ছিল, সেটাকে আমরা কমিয়ে ৭ ইউনিটে নিয়ে এসেছি। এ সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন সময় বাঁচাতে পারবে, অন্যদিকে তাদের অর্থেরও সাশ্রয় হবে। ভর্তি আবেদন ফি যৌক্তিক হারে কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ করেছি। আরেকটা যেটা করেছি, একসঙ্গে একাধিক ইউনিটে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে বরাদ্দ করা মোট আসনকে সমহারে বণ্টন করে মেধাতালিকা প্রস্তুত করেছি। আগে দেখা গেছে, একটা শিফট থেকে অনেক বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে, অন্য শিফট থেকে কম সুযোগ পাচ্ছে। সমহারে বণ্টনের ফলে বৈষম্য কমে এটায় একটা সমতা আসবে।
একাধিক স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে নেওয়া হচ্ছে। জাবির এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না।
হ্যাঁ, ভবিষ্যতে আমাদের অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার একটা পরিকল্পনা আছে। এতে করে পরীক্ষা একাধিক শিফটে না নিয়ে একবারে শেষ করা যাবে। আপনি দেখবেন, এখন একাধিক শিফটে পরীক্ষার নেওয়ার সঙ্গে কিন্তু একটা বৈষম্যমূলক ভাবনা জড়িয়ে আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ঢাবি, রাবি ও চবি যদি জাবির সঙ্গে অভিন্ন মত পোষণ করে, তাহলে আমরা একে অপরের পরীক্ষাগুলো এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কেন্দ্রে আয়োজন করতে পারি। শুধু এগুলো নয়, নির্ভর করা যায় অন্য যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। যেসব প্রতিষ্ঠান ভর্তি পরীক্ষার যে গোপনীয়তা, সেটা রক্ষা করতে পারছে বলে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, সেখানেও ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্র করা যেতে পারে। ভর্তি পরীক্ষার যদি এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়, তাহলে দেখবেন একটা বড় ধরনের পরিবর্তন চলে আসবে। আমাদেরও এ বিষয়ে আগ্রহ আছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে তো আমাদের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এমন পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণের বিষয়ে উপাচার্য পরিষদের পরবর্তী সভায় আলোচনা করব। সেখানে সম্মতি পেলে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নিয়ে একটা আলোচনা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদেরও দলীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপের কথা শোনা যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দলীয় রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে?
শিক্ষার্থীরা শুরুতে বিষয়টা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। একাধিক ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের কাছে এসেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আমাদের জানিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আপনি জানেন এই বিশ্ববিদ্যালয় ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩’ দ্বারা পরিচালিত। এই আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির ব্যাপারে উল্লেখ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো প্রাপ্তবয়স্ক। তারা রাষ্ট্রের ভোটারও। আপনি জানেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সর্বশেষ আমরা ২০২৪ সালে দেখেছি। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে ছাত্র নেতৃত্বের গুণাবলি।
তবে সরকারের লেজুড়বৃত্তি এ ছাত্ররাজনীতিকে বিতর্কিত করেছে; বিশেষ করে বিগত সরকারের আমলে ছাত্রলীগ দলীয় ব্যানারে বিভিন্ন অপকর্ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের এই আচরণ ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে দেশবাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝেও এ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যার কারণে ছাত্ররাজনীতির এত ঐতিহ্য থাকার পরও শুধু এসব দুঃসহ অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের অভিমানী ও ক্ষুব্ধ করেছে। সংগত কারণে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের দাবি থাকতে পারে। তবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ছাত্রশৃঙ্খলা অধ্যাদেশের বাইরে যেতে পারি না। ছাত্রশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ, ২০১৮ এর ৫ নং ধারার ‘ক’ এ বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জাকসু, হল সংসদ, এ ছাড়া প্রশাসনের অনুমতিপ্রাপ্ত সংগঠন ছাড়া এর বাইরে কোনো সংগঠনের কর্মতৎপরতার সুযোগ থাকবে না। তার মানে হলো নিবন্ধিত সংগঠন হিসেবে ছাত্ররাজনীতি করার আইনগত ভিত্তি রয়েছে। ফলে এসব সংগঠনের নিষিদ্ধের সুযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী আমার নেই। তবে বর্তমান বাস্তবতায় আমরা শিক্ষার্থীদের কতগুলো পরামর্শ দিয়েছি। তার মধ্যে আমরা বলেছি, কোনো ছাত্রসংগঠন কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করবে না। প্রয়োজনে আমাদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত যে অধ্যাদেশ রয়েছে, সেটা সংস্কার করব। একই সঙ্গে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতিও ৭৩-এর আইন অনুযায়ী পরিচালিত। ৭৩-এর আইনের ৪৩ এর ২ ধারা মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনৈতিক দল করার বাধা দেওয়ার অধিকার প্রশাসনের নেই বলে উল্লেখ আছে। সুতরাং, যতক্ষণ না জাবির আইন পরিবর্তন হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দলীয় রাজনীতির বিষয়ে ঘোষণার এখতিয়ার উপাচার্য হিসেবে আমার নেই।
জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আপনার কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামের ইতিহাস শুনতে চাই।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর রিয়াল অ্যাডমিরাল এস এম আহসান ১৯৭১ সালে ১২ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করেছিলেন। প্রতিষ্ঠাকালীন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করে। এই আইনে পূর্ববর্তী নাম সংশোধন করে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার সে সময় হয়তো নামটি পরিবর্তন করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার এ বিষয়ে মন্তব্য বিবেচনাপ্রসূত হবে না। আপনি দেখবেন, প্রতিটি বিষয়ে একটা ভাবনা থাকে। যাঁরা এভাবে পরিবর্তন করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের একটা ভাবনা ছিল। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নাম পরিবর্তনের এ ধারা কোন বিবেচনায় করেছেন, তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে অংশীজনদের সমন্বিত বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তই যথার্থ বলে মনে করি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে পাখি মেলা, প্রজাপতি মেলা, হিম উৎসবের মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কেমন থাকে? এসব আয়োজন সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে চাই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয় সেই বৈচিত্র্য নিয়েই জাতির কাছে পরিচিত। এখানে পরিযায়ী পাখি আসে। পাখি ও প্রজাপতি মেলা হয়। হিম উৎসব হয়। এগুলো জাহাঙ্গীরনগরের পরিচয় নির্ধারণী বৈশিষ্ট্য। এখানে বৈচিত্র্য থাকলেও এ বৈচিত্র্যের মাঝে মমতার এক ঐক্যও বিরাজমান। এর একটিও যদি হারিয়ে যায়, জাহাঙ্গীরনগরের একটি অঙ্গ হারিয়ে যাবে। সে জন্য এ সবকিছুর চর্চা জাহাঙ্গীরনগরকে আপন মহিমায় প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিয়ে চলেছে। তবে সীমা লঙ্ঘন কোনো পরিস্থিতিতেই জাহাঙ্গীরনগরের বৈশিষ্ট নয়। সেটা যেকোনো বিবেচনায় হোক।
গত বছরের শেষ দিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশনের ২০২৫ সালের র্যাংকিং প্রকাশিত হয়। এতে দেখা গেছে, জাবির অবস্থান ৮০০-১০০০ এর মধ্যে। র্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে দেশের প্রায় সব কটি বিশ্ববিদ্যালয় একটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তবে বিগত দুই বছর টাইমস হায়ার এডুকেশনের র্যাঙ্কিংয়ে দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। আরেকটা র্যাঙ্কিংয়েও জাবির সাফল্য রয়েছে। সেটি হলো বিষয়ভিত্তিক র্যাংকিং। গত বছর দর্শন বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগ সারা দেশে প্রথম হয়েছে। চলতি বছর কম্পিউটার সায়েন্স, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ বিষয়ভিত্তিক র্যাঙ্কিংয়ে দেশসেরা হয়েছে। বৈশ্বিক পর্যায়ে শুধু জাবি নয়, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েরও আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। এটার অন্তরায় হলো সুশাসনের অভাব। বিগত সরকারের সময়ে যেভাবে মেধার অবমূল্যায়ন করে দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ ব্যবস্থা ছিল, সেখানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে হাজারের বাইরে যায়নি, তা কম কিসে? পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নেই, কোনো সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাও চলে গেছেন। এখন সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। নিয়োগপ্রক্রিয়াসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা গেলে র্যাঙ্কিংয়েও আরও উন্নতি করা সম্ভব হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। বর্তমানে জিডিপির ২ শতাংশের কম বাজেট শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এটাকে ৪-৬ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনার পড়ালেখা, এখান থেকেই ১৯৯৩ সালে কর্মজীবন শুরু করেছেন। এ ছাড়া আপনার দেশে-বিদেশে আরও কাজের ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনার শিক্ষাজীবন ও উজ্জ্বল কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, একটা মানুষ যা পড়ে, সেটা যদি সে উপলব্ধি করে, তাহলে সে এটা থেকে অনেক কিছু পায়। এই প্রাপ্তির মাধ্যমে সে অন্যকে কিছু দিতেও পারে। দেখুন, আমি দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। আমি যেটুকু বুঝেছি, সেটুকু ধারণ করার চেষ্টা করেছি। আমার যেটা মনে হয়েছে, মানুষ যদি কোনো বিষয়ে শ্রম দেয়, আর সেটার প্রতি যদি প্রেম থাকে, তাহলেই কিন্তু সাফল্য আসে। ধরুন, আপনি খুব মেধাবী। কিন্তু আপনি যা পড়ছেন, তা পছন্দ করছেন না। তাহলে আপনাকে দিয়ে ভালো কিছু হবে না। আবার আপনি খুব শ্রম দিচ্ছেন, কিন্তু আপনার পঠিত বিষয়ের প্রতি ভালো লাগা নেই। তাহলেও কিন্তু হবে না। অর্থাৎ প্রথমত পঠিত বিষয়ের প্রতি ভালো লাগা থাকতে হবে। একই সঙ্গে শ্রম দিতে হবে। তাহলে প্রেম আর শ্রমের সমন্বয়ে সাফল্য আসবে। ব্যক্তিগতভাবে বলব, বাজার মূল্য নেই এমন বিষয়টির প্রতি আমার একধরনের ভালো লাগা ছিল। এতে আমি সামর্থ্য অনুযায়ী সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাতে আমার মতো মানুষেরও কিছু কিছু অর্জন আছে বলে আপনারা বলছেন। আমার মনে হয়, চেষ্টা থাকার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে।
আপনার পড়ালেখা ও গবেষণার ক্ষেত্র দর্শনশাস্ত্র হলেও আপনি একজন সাংগঠনিক ব্যক্তিত্বও বটে। অধ্যাপনার পাশাপাশি আপনি জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের জাবি শাখার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া আপনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিরও সদস্য। পাঠদানের বাইরে সাংগঠনিক এই জার্নি কেমন উপভোগ করেছেন?
যখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা জীবন শুরু হয়, তখন লক্ষ করেছি, গবেষকদের মধ্যে একটা মনোবেদনা কাজ করে। তারা অসম্ভব মেধাবী ও প্রোডাকটিভ হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের জায়গাগুলোতে তাদের বক্তব্য পৌঁছায় না। তখন ভেবেছি, শুধু গবেষণায় সীমাবদ্ধ থাকা নয়, গবেষকদের কথা বলার যে ফোরামগুলো রয়েছে, সেখানেও আমাদের উপস্থিতি প্রয়োজন। এই যে গবেষকদের বঞ্চিত হওয়া, সেটি মাথায় রেখে তাদের পক্ষ হয়ে কথা বলা, নিজের জন্য কথা বলা—এগুলোর জন্য সাংগঠনিক সম্পৃক্ততার যে গুরুত্ব, সেটা আমাদের দেশে রয়েছে। সেই চিন্তা থেকেই হয়তো আমার পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তৈরি হয়েছে।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে ক্যাম্পাসে মাদক সেবনকালে ৯ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জাবির চার, ঢাবির তিন এবং উত্তরা ইউনিভার্সিটি ও প্রাইম নার্সিং কলেজের দুই শিক্ষার্থী ছিলেন। গণমাধ্যমে এমন সংবাদ দেখে মানুষের ধারণা, বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে জাবিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা মাদকের আসর বসিয়েছেন। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে আগেও এমন অপ্রীতিকর ঘটনার অনেক নজির রয়েছে। এসব প্রতিরোধে জাবি প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অনমনীয়, সেটা হয়তো দেখেছেন। আমরা চাই, একজন শিক্ষার্থী যে আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে, সে যেন সফলভাবে তার শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারে। তবু কিছু বিপৎগামী শিক্ষার্থী মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আমরা তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছি। মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীদের আমরা কাউন্সেলিংয়েরও ব্যবস্থা করছি। এ ছাড়া জাবির সবেচতন শিক্ষার্থীরা প্রতিটি অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার। যার কারণে এটি খুব দ্রুত মিডিয়ায় চলে আসে। আমি আমার সচেতন শিক্ষার্থী এবং সচেতন অংশীদারদের নিয়ে গর্বিত। থার্টি ফার্স্টে যে অন্যায়গুলো হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে যে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি, তার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা বলব, ভালোভাবে শিক্ষাজীবন শেষ করার জন্য মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। আশা করছি, মাদক-সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি ধীরে ধীরে কমে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে? বিগত সময়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।
নানাভাবে জাবিতে গবেষণাকর্ম হচ্ছে। যেমন শিক্ষকদের গবেষণার যে বরাদ্দ, সেটা আমরা তাৎপর্যপূর্ণ হারে বাড়িয়ে দিয়েছি। প্রত্যেক শিক্ষককে গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। যেটা এবার আমরা প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছি। আরেকটি হলো, এখান পিএইচডি-এমফিল পর্যায়ে যে থিসিস হচ্ছে, সেগুলো গবেষণার একধরনের প্রশিক্ষণ। এখান থেকে অনেক প্রবন্ধ, পুস্তক প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে জাবিতে একাডেমিক প্রয়োজনীয়তার জায়গা থেকে গবেষণাকর্মে বরাদ্দ বাড়িয়েছি। এ গবেষণার বড় ধরনের একটি প্রভাব দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে রয়েছে। গবেষণার জন্য বরাদ্দ আমরা ইউজিসি থেকেও পাচ্ছি। তার অধীনেও কিছু গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আরআইসি নামে একটি গবেষণা পয়েন্ট রয়েছে, যেখানে বিশ্বব্যাংক ফান্ডিং করে। জাবির পক্ষ থেকে সেখানে অন্তত ১৫টি প্রজেক্টে গবেষকদের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। বাকি যেসব গবেষণাকর্ম হচ্ছে, সেগুলো জাবির র্যাঙ্কিংয়ে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকর্ম দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কতটা কাজে লাগছে?
অবশ্যই, জাবির গবেষণাকর্ম দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। এখানে বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের যে ডিসিপ্লিনগুলো রয়েছে, এখানে যে গবেষকেরা আছেন, তাঁরা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছেন। সোশ্যাল সায়েন্সের অনেক গবেষক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান রাখছেন। কিন্তু হতাশার জায়গাটা হলো, ইন্ডাস্ট্রি আর একাডেমিয়ার কোলাবোরেশনের যে জায়গাটা, সেটায় কিন্তু আমরা পিছিয়ে আছি। শুধু জাবি নয়, অন্যান্য ইউনিভার্সিটিও পিছিয়ে রয়েছে। ফলে যাদের সংশ্লিষ্টতা আছে, যেমন ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়, তাদের উচিত হচ্ছে আমরা যেসব গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি, তাদের কর্মসংস্থানের জন্য দেশের যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে, তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটা সম্পর্ক তৈরি করে দেওয়া। যাতে করে তারা তাদের শিক্ষাজীবন শেষে কর্মসংস্থানের জন্য নিজেদের পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করতে পারে।
গণরুম বিলুপ্ত করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের গণরুম সংস্কৃতি এখন আর নেই। এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে? প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ শিক্ষার্থী-অভিভকদের মাঝে ইতিবাচক সাড়া জাগিয়েছে।
এ সাফল্যের শুরুতে আমি যাদের ধন্যবাদ জানাব, তারা হলো ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা। যারা গণরুম সৃষ্টিকারী ও দখলদার ছিল, এ বিপ্লবী ছাত্র-জনতা তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করেছে। এটা সম্পূর্ণ তাদের কৃতিত্ব। আমরা কতিপয় শিক্ষক সহযোগী হিসেবে ছিলাম। গণরুম বিলুপ্তিতে আমাদের প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। শিক্ষার্থীরা এখানে প্রশংসার দাবিদার। অন্তর্বর্তী সরকার এখন দেশ চালাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও যে সহযোগিতা ছিল, এটাও কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ। সরকারের ভাষ্য ছিল, আমরা যেটা চেয়েছি, সেটা যেন সফলভাবে কার্যকর করতে পারি। ফলে আমি বলব, সরকার, বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ও জাহাঙ্গীরনগরের অংশীজনদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। এটার সুফল পাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও অনাগত শিক্ষার্থীরা।
তবে আবাসিক হলগুলোর খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। খাবারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় নানা কিছু পাওয়া যায়। কীভাবে খাবারের মানে আরও উন্নতি করা যায়?
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ৯৫ শতাংশ অর্থ আসে সরকারের পক্ষ থেকে। সাধারণ মানুষের ভ্যাট-ট্যাক্সের টাকা থেকে এ বরাদ্দ আসে। তাদের এই অর্থ দিয়ে আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। জাবির অভ্যন্তরীণ আয়ের তেমন কোনো উৎস নেই। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও কিন্তু উচ্চমূল্যের টিউশন ফি নেওয়া হয় না। ফলে এখানে খাবারের সার্বিক মান বাড়াতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। অপুষ্টিতে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আপনি কী গবেষণা আশা করেন?
আমি আমার মেধাবী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সবচেয়ে সেরাটা চাই, অথচ সে অপুষ্টিতে ভুগবে, এ কী করে হয়! আমি শিক্ষার্থীদের ক্যানটিন-ডাইনিং পরিদর্শন করেছি। আমি তাদের সঙ্গে খাবারও গ্রহণ করেছি। আমার মনে হয়েছে, এসব ক্যানটিন-ডাইনিংয়ের খাবারে যে প্রয়োজনীয় পুষ্টির প্রয়োজন, তা অনুপস্থিত। আশা করি, যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকে ধন্যবাদ।
আরও খবর পড়ুন:
নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
৫ ঘণ্টা আগেসিজিপিএ স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়—এমন ধারণা অনেকেরই। তবে অধ্যবসায়, একাগ্রতা আর সঠিক পরিকল্পনা থাকলে এই সীমাবদ্ধতাও জয় করা সম্ভব। তারই উদাহরণ ববির সুব্রত। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেন তিনি, যেখানে তাঁর সিজিপিএ ছিল ২.৯৮।
১৫ ঘণ্টা আগেলিসেনিংয়ের রেকর্ডিংয়ে (ধারা বর্ণনায়) সাইন পোস্ট ল্যাঙ্গুয়েজের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। এই সাইন পোস্ট শব্দগুলো (ফ্রেজ) অনেক কিছু বলে দেয়...
১৬ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যে বিশ্বমানের প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পিছিয়ে নেই, তার প্রমাণ দিচ্ছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) দুই শিক্ষার্থী শাহ আসিফ হাফিজ ও দেওয়ান মো. আলিফ। ইলন মাস্কের টানেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান দ্য বোরিং কোম্পানি আয়োজিত নট-আ-বোরিং কম্পিটিশনের চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেওয়ার...
১৬ ঘণ্টা আগে