Ajker Patrika

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন, ডিগ্রির সীমানা পেরিয়ে সম্ভাবনার পথে

দেশের উচ্চশিক্ষা অঙ্গনে এক অনন্য উদ্‌যাপনের মুহূর্ত সৃষ্টি করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশ কয়েকটির সাম্প্রতিক সমাবর্তন অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের কঠোর পরিশ্রম, একাডেমিক উৎকর্ষ ও ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতিকে স্বীকৃতি জানাতে দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জমকালো আয়োজনে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি দিয়েছে এবং কৃতিত্বপূর্ণ শিক্ষার্থীদের স্বর্ণপদক ও বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করেছে। দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিতি এবং অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পথচলায় নতুন উদ্দীপনা জোগাবে। বিস্তারিত লিখেছেন আবদুর রাজ্জাক খান।

আবদুর রাজ্জাক খান
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৫, ০৮: ৩৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বেসরকারি গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এই আয়োজন সম্পন্ন হয়। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিসটিংগুইশড অধ্যাপক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খাজা ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ। সমাবর্তনে ৪ হাজার ১২৯ জন গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ৫ জনকে আচার্য গোল্ড মেডেল এবং ১০ জনকে উপাচার্য গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ১৬তম সমাবর্তন ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পূর্বাচলে অবস্থিত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সমাবর্তনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘এক্সিলেন্স ইন ইউ’। বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪ হাজার ৮২৯ জন শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জন করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দুজনকে আচার্য স্বর্ণপদক এবং ২৮ জনকে উপাচার্য স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিক্ষার্থীদের আচার্য স্বর্ণপদক তুলে দেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার উপাচার্য স্বর্ণপদক দেন। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংবাদিক শারমিন ওবায়েদ চিনয়।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দ্বাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি বিরুলিয়ায় ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা সম্মেলন কেন্দ্রে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। সমাবর্তনে ৩ হাজার ৯৫১ গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি দেওয়া হয়। পাশাপাশি কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্য ১২ গ্র্যাজুয়েটকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ‘স্বর্ণপদক’ দেওয়া হয়। পদকগুলো তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তব্য দেন লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক ড. হাসান দিয়াব। স্বাগত বক্তব্য দেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিনরাও বক্তৃতা করেন।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) ২৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আইইউবি ক্যাম্পাসে। সমাবর্তনে ১ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থী সনদ পান। সমাবর্তনে কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জনকারী দুজন স্নাতক শিক্ষার্থীকে আচার্য গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান।

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের (এআইইউবি) ২২তম সমাবর্তন ২২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের সম্মতিক্রমে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এআইইউবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মিস নাদিয়া অনোয়ার, উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। এবার ২ হাজার ৫৪৭ শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। কৃতিত্বপূর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আচার্য স্বর্ণপদক (৩টি), সুম্মা কাম লাউড (৭৯টি), লিডারশিপ পদক (২০টি), ম্যাগনা কাম লাউড (১২৮টি), উপাচার্য পদক (২৩টি) ও কাম লাউড (৩৯টি) দেওয়া হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) অষ্টম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি দেওয়া হয়। এবারের সমাবর্তনে ১ হাজার ৪১২ জন শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জন করেন। কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জনকারী তিনজন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীকে আইইউবিএটির প্রতিষ্ঠাতা মিয়ান স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের অধ্যাপক ট্যামসিন ব্র্যাডলি। স্বাগত বক্তব্য দেন আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুর রব।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির ষষ্ঠ সমাবর্তন

২৪ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঢাকার শেরেবাংলা নগরের বিসিএফসিসিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিইউবিটির সম্মানিত উপাচার্য, অধ্যাপক ড. এ বি এম শওকত আলী এবং বিইউবিটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মো. শামসুল হুদা, এফসিএ। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। সমাবর্তনে ৩ শিক্ষার্থীকে আচার্য গোল্ড মেডেল, চেয়ারম্যান গোল্ড মেডেল এবং উপাচার্য গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়।

উত্তরা ইউনিভার্সিটির নবম সমাবর্তন

নবমবারের মতো সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে উত্তরা ইউনিভার্সিটি। এবারের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৩ হাজার ৪৯৭ জন শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি দেওয়া হয়। কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্য দুজন শিক্ষার্থীকে আচার্য স্বর্ণপদক এবং ৩৫ জন শিক্ষার্থীকে ট্রাস্টি, ভিসি ও ডিন পদক দেওয়া হয়। এই সমাবর্তন অনুষ্ঠান ২৫ জানুয়ারি শনিবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পক্ষে বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়) প্রফেসর ড. এম আমিনুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন। সমাবর্তনে

বক্তা ছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী। আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইয়াসমীন আরা লেখা, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌর গোবিন্দ গোস্বামী।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সপ্তম সমাবর্তন

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এইউবি) সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের প্রতিনিধি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম গ্র্যাজুয়েটদের ডিগ্রি সদন তুলে দেন। এ সমাবর্তনে ১৯ জন কৃতী শিক্ষার্থী স্বর্ণপদক অর্জন করেন। সমাবর্তনে বক্তব্য দেন ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফ্রান্সিস টি. ডেভিস এবং তুরস্কের আঙ্কারা ইলদ্রিম বেইজিদ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইয়াসিন আকটে।

এ সময় এইউবির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মাদ জাফার সাদেক, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. মাহমুদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. শাহজাহান খান তাঁর বক্তব্যের সময় জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণ করেন।

সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি

সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির (এসইইউ) অষ্টম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডস এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানের সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। এবারের সমাবর্তনে বিভিন্ন অনুষদের ১ হাজার

৯২২ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করে আচার্য স্বর্ণপদক লাভ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগে সর্বোচ্চ সিজিপিএ পাওয়া ২৭ শিক্ষার্থী উপাচার্যের স্বর্ণপদক পান। অনুষ্ঠানে এসইইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম, এসইইউর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম মোফাজ্জল হোসেনসহ বিশেষ অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের সমাবর্তন

ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সেনা প্রাঙ্গণে জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর সমাবর্তনে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ২১তম ব্যাচের ৩৫ জন শিক্ষার্থীকে তাঁদের অসাধারণ একাডেমিক পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি হিসেবে আচার্য গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং উপাচার্য অধ্যাপক এনামুল বশির শিক্ষার্থীদের হাতে অ্যাওয়ার্ড ও ডিগ্রি হস্তান্তর করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী।

বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি

বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি ও বিইউএফটির আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে সমাবর্তনে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিগ্রি প্রদান করেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি কিহাক সাং সমাবর্তন বক্তব্য দেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মোট ২ হাজার ৭৩১ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জনের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের আচার্য গোল্ড মেডেল, চেয়ারম্যান গোল্ড মেডেল এবং উপাচার্য গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) অনুষ্ঠিত হলো চতুর্থ সমাবর্তন। ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি তুলে দেন তিনি। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন গণ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ওয়ালিউল ইসলাম। এবারের সমাবর্তনে ৭ হাজার ৭২৭ জন গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিপ্রাপ্ত হন এবং ২ হাজার ৪৭৮ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট সমাবর্তনে অংশ নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্বের ৫০ তরুণের একজন আমিমুল

আব্দুর রাজ্জাক খান
বিশ্বের ৫০ তরুণের একজন আমিমুল

বিশ্বের নানা প্রান্তের তরুণেরা যখন পরিবর্তনের স্বপ্নে ভবিষ্যৎ গড়ছেন, তখন সেই স্বপ্নবাজদের সারিতে বাংলাদেশের তরুণ আমিমুল এহসান খান যোগ করেছেন এক অনন্য অধ্যায়। সম্প্রতি তিনি নির্বাচিত হয়েছেন ‘গ্লোবাল চেঞ্জমেকার ২০২৫’ হিসেবে। বিশ্বের ৫০ জন তরুণের মধ্য থেকে এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি অর্জন করেছেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ইয়ুথ সামিট ২০২৫-এ অংশ নেন আমিমুল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৫০ তরুণ নেতাকে নিয়ে আয়োজিত এই সামিটে আলোচনা হয় নেতৃত্ব, টেকসই উন্নয়ন, সামাজিক পরিবর্তন ও বৈশ্বিক সহযোগিতা নিয়ে। এই সম্মেলন ছিল ফুল ফান্ডেড। সামিটে অংশগ্রহণ করা তরুণদের সব ব্যয় বহন করেছে আয়োজক সংস্থা।

টোকিও থেকে বিশ্বমঞ্চে

আমিমুলের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে জাপানের টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পেয়েছেন ৮০ শতাংশ স্কলারশিপ, পাশাপাশি জাপান সরকারের এক বছরের বৃত্তিও পেয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন অ্যাওয়ারনেস ৩৬০ নামের একটি বৈশ্বিক তরুণ নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট লিড হিসেবে। পাশাপাশি জাপানের এশিয়ান বিজনেস নেটওয়ার্কে তিনি মার্কেটিং ম্যানেজার পদেও কর্মরত।

পরিবর্তনের পথে নেতৃত্ব

নিজের যাত্রা নিয়ে আমিমুল বলেন, ‘আমি এই সুযোগ পেয়েছি যুব ক্ষমতায়নমূলক কাজের জন্য, যা আমি অ্যাওয়ারনেস ৩৬০-এর সঙ্গে করে আসছি। আমি একা পৃথিবী বদলাতে পারব না জানি, তাই আমি অন্যদের অনুপ্রাণিত করছি, যাতে তারাও পরিবর্তনের পথে এগিয়ে আসে।’

39f00df0-২

তাঁর নেতৃত্বে প্রতিবছর আয়োজিত হয় অ্যাওয়ারনেস ৩৬০ ফেলোশিপ প্রোগ্রাম। যেখানে তরুণদের শেখানো হয় নেতৃত্ব, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও সামাজিক প্রভাব তৈরির দক্ষতা। পাঁচ বছর ধরে প্রতিবছর এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন বিশ্বের ৭০টির বেশি দেশের প্রায় ৫০০ তরুণ।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

যুবসমাজের জন্য নিরলস পরিশ্রমের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে আমিমুল পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘দ্য ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড’। এটি ছিল তরুণ নেতৃত্ব এবং সামাজিক প্রভাব তৈরির অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার।

অনুপ্রেরণার বার্তা

দক্ষিণ আফ্রিকার সামিটে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও দৃঢ় করেছে। তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে বুঝেছি, পৃথিবীর প্রত্যেক তরুণই পরিবর্তনের বাহক হতে পারে। আমাদের চিন্তা, কাজ আর সহযোগিতার মাধ্যমে গড়ে উঠতে পারে এক সুন্দর, টেকসই ভবিষ্যৎ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাইবার সুরক্ষায় শিক্ষার্থীদের পাশে আরাফাত চৌধুরী

নওসাদ আল সাইম
আরাফাত চৌধুরী।
আরাফাত চৌধুরী।

দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে সাইবার অপরাধের ঝুঁকি। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, ভুয়া আইডি থেকে অপপ্রচার, অনলাইন প্রতারণা কিংবা ডিপফেক ভিডিও—সবকিছু মিলিয়ে এখন সাইবার অপরাধ এক বড় সামাজিক সংকটে পরিণত হয়েছে।

সাইবার এইড বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, ডিপফেক ও এআইনির্ভর অপরাধের হার এখন ২৩ শতাংশের বেশি। সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাকিং ২১ শতাংশ, ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে অপপ্রচার ১৫ শতাংশ, ই-কমার্স প্রতারণা ১৫ শতাংশ এবং অনলাইন হুমকি ১১ শতাংশ। ভুক্তভোগীদের প্রায় ৭৯ শতাংশের বয়স ১৮-৩০ বছরের মধ্যে, তাঁদের ৫৯ শতাংশই নারী।

অধিকাংশ ভুক্তভোগী জানেন না, কোথায় অভিযোগ করতে হবে। জরিপে দেখা গেছে, ৪২ শতাংশ অভিযোগ দাখিলের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞ এবং যাঁরা অভিযোগ করেন, তাঁদের মাত্র ১২ শতাংশ আইনি প্রতিকার পান। ফলে সচেতনতার অভাব ও আইনি কাঠামোর সীমাবদ্ধতায় সাইবার নিরাপত্তা এখন দেশের বড় এক চ্যালেঞ্জ।

এই বাস্তবতায় এগিয়ে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত চৌধুরী। ২০২২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘সাইবার এইড বাংলাদেশ’, যা সাইবার অপরাধের শিকার মানুষের আইনি সহায়তা এবং মানসিক সাপোর্ট দেয়। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে সংগঠনটি দেশে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।

আরাফাত বলেন, ‘সাইবার অপরাধ শুধু মানসিক যন্ত্রণা নয়, সামাজিক মর্যাদাহানির কারণও। কিন্তু বেশির ভাগ ভুক্তভোগী ভয় বা লজ্জায় মুখ খুলতে চান না।’ সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ১ হাজার ৭৬১ জন এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রায়

৪ হাজার মানুষ সাইবার এইডের সহায়তা পেয়েছেন। সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে ৭৬ শতাংশই নারী। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে ব্ল্যাকমেল ও ই-কমার্স প্রতারণা-সংক্রান্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান সুমনা বলেন, ‘একজন আমার ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেল করতে থাকে। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তখন সাইবার এইডে যোগাযোগ করি। শুধু আইনি সহায়তাই নয়; মানসিকভাবেও তারা পাশে দাঁড়ায়।’

অন্যদিকে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘অনলাইনে একটি পেজ থেকে আইফোন কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছিলাম। সাইবার এইডের সহায়তায় পুলিশে অভিযোগ করতে পারি। এখন অন্তত জানি, প্রতারণার শিকার হলে চুপ করে না থেকে লড়াই করা যায়।’

শুধু আইনি সহায়তা নয়, সচেতনতা সৃষ্টিতেও কাজ করছে সংগঠনটি। এ পর্যন্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইবার সচেতনতা ক্যাম্পেইন এবং বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৫৬টির বেশি সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছে তারা। অনলাইনে ‘বেসিক সাইবার লিটারেসি’, ‘সাইবার স্পেস সিকিউরিটি’ ও ‘ডিজিটাল ফরেনসিক’ কোর্স চালু করেছে। ভবিষ্যতে চালু হবে একটি মোবাইল অ্যাপ, যেখানে থাকবে লাইভ চ্যাট সাপোর্ট, এআইনির্ভর নিরাপত্তা নির্দেশনা এবং দ্রুত অভিযোগ দাখিলের সুবিধা।

ভুক্তভোগীরা হটলাইন, ফেসবুক পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমে অভিযোগ করলে সাইবার এইড বাংলাদেশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন ও সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।

সাইবার অপরাধ বাড়ার পেছনে আরাফাত দুটি বড় কারণ দেখছেন। সেগুলো হলো সচেতনতার অভাব এবং আইনগত সীমাবদ্ধতা। তাঁর মতে, বেশির ভাগ সাইবার অপরাধ জামিনযোগ্য হওয়ায় অপরাধীদের ভয় কম। আবার ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতায়ও ঘাটতি রয়েছে।

আরাফাতের বিশ্বাস, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সাইবার ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই প্রয়োজন আগাম প্রস্তুতি ও সচেতনতা। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা চাই তরুণেরা শুধু প্রযুক্তির ব্যবহারকারী নয়, বরং প্রযুক্তির নিরাপত্তা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুক।’

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আল মামুন রাসেল বলেন, সাইবার এইড বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে সাইবার ক্রাইম ভিকটিমদের আইনি সহযোগিতা করে যাচ্ছে। পাশাপাশি সাইবার‌ ক্রাইম প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সাইবার ক্রাইম ভুক্তভোগীদের আইনি সহযোগিতা প্রদানে এটি অনন্য ও কার্যকরী উদ্যোগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব

জাককানইবি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র

আশরাফুল আলম
জাককানইবি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ প্রতিষ্ঠিত স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব (এসডিসি) অন্যতম। এটি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি এবং ক্যারিয়ার গঠনের কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রশংসা অর্জন করেছে।

এসডিসির লক্ষ্য ও ভিশন হলো শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা এবং একটি দক্ষতানির্ভর তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলা। এসব তরুণ জাতীয় এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখবে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসডিসি শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত ওয়ার্কশপ, সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আসছে। যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্ব, নেটওয়ার্ক তৈরি, ক্যারিয়ার পরিকল্পনা ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

সম্প্রতি এসডিসি আয়োজন করেছে জাতীয় পর্যায়ের বিজনেস কেস প্রতিযোগিতা ‘বিস কেইস ২০২৫’। তিন ধাপে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ২৮৫টির বেশি দল, যার পুরস্কারমূল্য ছিল ১ লাখ টাকা। এতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়। ইভেন্টের টাইটেল স্পনসর ছিল এসআর ড্রিম আইটি এবং সহ-স্পনসর ছিল ২৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান।

ক্লাবটির অন্যতম সিগনেচার আয়োজন ‘ফ্রেশারস চয়েস’। এখানে নবীন শিক্ষার্থীরা মঞ্চে কথা বলার আত্মবিশ্বাস অর্জন এবং পাবলিক স্পিকিং দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ পায়। এটি শুধু প্রতিযোগিতা নয়; বরং নবীনদের আত্মপ্রকাশের সাহস জোগানো এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।

শিক্ষার্থীদের চাকরির প্রস্তুতিতে সহায়তার জন্য এসডিসি আয়োজন করে ‘জব ফেয়ার ২০২৫’। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী সিভি জমা দেন এবং অনেকে ইন্টারভিউ কল পান। এই আয়োজন ক্যারিয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখে।

বর্তমানে ক্লাবটির ষষ্ঠ কার্যনির্বাহী কমিটি দায়িত্ব পালন করছে। সভাপতি মো. মোস্তাকিম, সাধারণ সম্পাদক বেলাল হাসান শাওন, মরিয়ম আক্তার তানিয়াসহ নির্বাহী সদস্যরা দলগতভাবে নানা সৃজনশীল উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন।

এসডিসি আগামী দিনে উদ্যোক্তা উন্নয়ন, প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ ও গবেষণামূলক কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে আরও বিস্তৃত পরিসরে দক্ষতা উন্নয়নমূলক উদ্যোগ নিতে চান তাঁরা।

সভাপতি মো. মোস্তাকিম বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য শুধু প্রশিক্ষণ নয়, শিক্ষার্থীদের এমনভাবে গড়ে তোলা, যেন তারা প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে নিজেদের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে।’

ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘এসডিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কার্যকর সংগঠন। শিক্ষার্থীরা এখানে যোগ দিয়ে তাদের ইন্টারপারসোনাল স্কিল উন্নয়নের সুযোগ পাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে অত্যন্ত সহায়ক।’

দক্ষতা ও শিক্ষার মেলবন্ধনে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী এবং দক্ষ ভবিষ্যতের সহযাত্রী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উপকূলে আলো ছড়াচ্ছে রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগার

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
উপকূলে আলো ছড়াচ্ছে রাজাখালী
উন্মুক্ত পাঠাগার

বই মানুষকে আলোকিত করে, চিন্তার জগতের প্রসার ঘটায়। কিন্তু গ্যাজেটের আসক্তিতে আজকের প্রজন্ম বই থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। এই বাস্তবতায় কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের কিছু তরুণ নেন ভিন্ন উদ্যোগ। তাঁরা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সামাজিক বিপ্লব’-এর সহযোগিতায় ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি রাজাখালীর সবুজবাজারের দক্ষিণে কৃষ্ণচূড়া মোড়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগার’।

শুরু থেকে এটি শুধু বই পড়ার স্থান নয়, বরং তরুণদের আড্ডা, জ্ঞানচর্চা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তাঁদের মতে ‘প্রযুক্তির বাইরে বইয়ের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে যুক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য।’ পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছেন মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, লায়ন আরিফ চৌধুরী, আনোয়ারুল ইসলাম মামুন, মিসবাহ উদ্দিন, হুমায়ুন কবির খোকন, মোহাম্মদ আলমগীর, অ্যাডভোকেট কামরুল কবির আজাদ, হেফাজ উদ্দিন, মোস্তাক আহমেদ, মিশকাত উদ্দিন সিকো প্রমুখ।

বর্তমানে পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২০০। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ২০০টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই। এগুলোর মধ্যে আছে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র’ গ্রন্থের ১৫ খণ্ড। প্রতিদিন একটি জাতীয় দৈনিক ও মাসিক কয়েকটি পত্রিকা-ম্যাগাজিনও রাখা হয়।

পাঠকেরা রেজিস্টারে স্বাক্ষর করে বই বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। এলাকার সব বয়সী মানুষের জন্য উন্মুক্ত হলেও স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন পাঠক নিয়মিত বই পড়তে আসেন। পাঠাগারের সার্বিক পরিচালনায় রয়েছেন গ্রন্থাগারিক সাইমনুল ইসলাম। ব্যয়ভার বহন করে উপদেষ্টা পরিষদ এবং ২১ সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদ।

স্থানীয় এক শিক্ষার্থী মেহজাবিন মুনা বলেন, ‘আগে অবসর সময় মোবাইল চালাতাম, এখন বই পড়ি। চাইলে বই বাড়িতেও নিতে পারি।’ প্রতিদিন এখানে পত্রিকা পড়তে আসেন প্রবীণ মুনাফ মুন্সি। তাঁর ভাষায়, ‘এই পাঠাগার জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে।’

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগারে বেশ কয়েকজন পাঠক। ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগারে বেশ কয়েকজন পাঠক। ছবি: সংগৃহীত

তবে শুরুটা সহজ ছিল না। পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক মিজাহাজুল ইসলাম বলেন, ‘রাজাখালীর মানুষ শিক্ষাদীক্ষায় কিছুটা পিছিয়ে। তাঁদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।’

একটি পাঠাগার কেবল বই পড়ার স্থানই নয়; এটি হতে পারে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণের কেন্দ্র। রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগারটি সেই উদাহরণ স্থাপন করেছে। বই পাঠের পাশাপাশি এখানে নিয়মিত আয়োজন করা হয় সাহিত্য আড্ডা, পাঠচক্র, বুক রিভিউ, কুইজ, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন, সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী, হিমু উৎসব, ক্যারিয়ার গাইডলাইন কর্মশালা ও ক্যারিয়ার অলিম্পিয়াড।

এ ছাড়া পাঠাগার নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, সাইবার নিরাপত্তা, কৃষি প্রশিক্ষণ, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং আইনি সহায়তা বিষয়েও নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মশালা আয়োজন করে।

রাজাখালীর তরুণেরা বইয়ের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। পাঠাগারের উদ্যোগে ‘পরিবেশ রক্ষায় তারুণ্যের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ১০ হাজার ৯৫০টি গাছের চারা বিতরণ ও রোপণ এবং ৭৬টি পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণে পাঠাগারটি নিয়েছে সামাজিক উদ্যোগও। এলজি ইলেকট্রনিকস বাংলাদেশের সহায়তায় ৪০টি পরিবারে ১২০টি ভেড়া এবং ১৫টি পরিবারে লবণ মাঠের সেচপাম্প বিতরণ করা হয়েছে।

রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগার খুব কম সময়ে মধ্যে সুধী সমাজের দৃষ্টি কেড়েছে। পাঠাগারটি পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব সাব্বির ইকবাল সুমন; বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীন শিশির; অধ্যাপক আবদুর রহিম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল আজিম এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রাসেলুল কাদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত