রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবে সরকার। আগে এ কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর কলেজগুলোর অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায় ঢাবি। এমন বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগপর্যন্ত কলেজগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। এ পদে দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস। গত মে মাসে তিনি প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। অধ্যাপক ইলিয়াসের নতুন দায়িত্ব গ্রহণ এবং সাত কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার মুখোমুখি হয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইলিয়াস শান্ত।
ইলিয়াস শান্ত
প্রশ্ন: আপনাকে একসঙ্গে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করতে হবে, দুটি প্রধান দায়িত্ব পালনে কোনো জটিলতা তৈরি হবে বলে মনে করেন?
অধ্যাপক ইলিয়াস: না, কোনো জটিলতা হবে বলে মনে করি না। কারণ, আমি এর আগেও বেশ কিছুদিন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। নতুন মেয়াদে সে অভিজ্ঞতা আমাকে কাজে দেবে। এ ছাড়া সাত কলেজের বাকি কলেজগুলোতে যেসব সম্মানিত অধ্যক্ষরা রয়েছেন—আমরা সবাই প্রায় কাছাকাছি সময়ে নিয়োগ পেয়েছি। আমাদের সবার সঙ্গে সবার পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই আন্তরিক। নতুন যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের এ সম্পর্ক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। এখানে কোনো কলেজকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। প্রত্যেক কলেজের শিক্ষার্থীদের আমরা নিজেদের শিক্ষার্থী বলে মনে করি। কলেজগুলোতে হেল্প ডেস্কের কার্যক্রম শুরু হলে আমাদের কার্যক্রমগুলো আরও সহজ ও গতিশীল হবে। নতুন প্রশাসনের কাজকে আরও কীভাবে সহজ ও গতিশীল করা যায়, সে লক্ষ্যে ঈদের পর থেকে ইউজিসির সমন্বয়ে আমরা ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যাব। এসব আলোচনার আউটপুট আমরা প্রতিনিয়ত শেয়ার করব। এতে নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, সেটা সম্পর্কে সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধারণা আরও স্বচ্ছ হবে।
প্রশ্ন: সাত কলেজের নতুন প্রশাসনের গঠন কেমন হবে? এ প্রশাসনের ক্ষমতা ও কার্যাবলি কী কী থাকবে?
অধ্যাপক ইলিয়াস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে যে কাঠামো পাস হয়েছে, সেটাই আমাদের কার্যক্রমের মূল চালিকাশক্তি। নতুন প্রশাসনে ইউজিসির একজন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন প্রতিনিধি রয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষসহ সাত কলেজের বাকি কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের সমন্বয়ে এই প্রশাসন গঠিত হয়েছে। নতুন এই কাঠামোর অধীনে ভবিষ্যতে সাত কলেজের সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে। নতুন প্রশাসন অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারলে সাত কলেজে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
প্রশ্ন: নবগঠিত প্রশাসন পরিচালনায় পর্যাপ্ত জনবল রয়েছে কি?
অধ্যাপক ইলিয়াস: কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই জনবলের প্রয়োজন হবে। অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে নতুন প্রশাসন ঢাকা কলেজ থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভবিষ্যতে নতুন প্রশাসনের যে কার্যক্রমগুলো হবে, সেগুলো এখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা-নেওয়া অথবা ঢাকা কলেজ থেকে অন্য কলেজগুলোতে পাঠানোর ক্ষেত্রে যাতে কোনো বিড়ম্বনা না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে আমাদের অতিরিক্ত জনবল প্রয়োজন হতে পারে। সেটা আমাদের ভাবনায় রয়েছে। কী পরিমাণ জনবল লাগতে পারে, সেটা আমরা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছে।
প্রশ্ন: এ প্রশাসনের মেয়াদ কত দিন হবে?
অধ্যাপক ইলিয়াস: অধ্যক্ষ পদে দুই বছরের যে মেয়াদের উল্লেখ রয়েছে, আপাতত সেটাই এ প্রশাসকের মেয়াদ। এটা এখানে কমবেশি হতে পারে। তবে এখানে যেহেতু দুই বছরের একটা লিমিটেশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে এখনই সেটি দুই বছরের বেশি করার সুযোগ নেই। তার আগেই যদি প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শেষ করা যায়, তাহলে হয়তো এ পদের প্রয়োজন আর নাও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকার যেটা ভালো মনে করবে, তারা সে ব্যবস্থা নেবে। তার আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কার্যক্রম, সেটার অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে এ প্রশাসনের মেয়াদ।
প্রশ্ন: প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কবে থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারে, এ বিষয়ে কোনো বার্তা পেয়েছেন কি?
অধ্যাপক ইলিয়াস: কার্যক্রমের দুইটা ধারা রয়েছে। একটা হলো আমাদের যে চলমান কাঠামো আছে, সেটাকে চালিয়ে নেওয়া। অপরটি হলো নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য যে আইনগত কার্যক্রম, সেটাকে ত্বরান্বিত করা। এই দুটি কাজ আমাদের একসঙ্গে করতে হবে। যাতে একটির জন্য অপরটি আটকে না থাকে অথবা বাধাগ্রস্ত না হয়। এ ছাড়া নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের নির্দেশনায় ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। তাদের কাজ শেষ হওয়ার পর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনগত ভিত্তি তৈরি হলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
প্রশ্ন: সাত কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েশন শেষে ঢাবির সনদ চান না। তাঁরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন...
অধ্যাপক ইলিয়াস: এ বিষয়ে আমাদের কিছুটা সময় দিতে হবে। আমাদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাস হলেই কেবল শিক্ষার্থীদের এ দাবির বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারব। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়, তখন নিয়মিত শিক্ষার্থীরা কীভাবে সনদ পেয়েছে, সেটা আমাদের দেখতে হবে। তখন যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের সনদ দিতে পারে, আমার মনে হয়, এখন দিতেও কোনো সমস্যা হবে না। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনগত ভিত্তি তৈরি করা। সেটা যত দ্রুত সম্ভব হবে, শিক্ষার্থীদের এ-সংক্রান্ত দাবিগুলো বাস্তবায়ন তত সহজ হবে। এ বিষয়ে আমি শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন না হতে অনুরোধ করব।
প্রশ্ন: প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে, এ বিষয়ে কিছু বলবেন কিনা?
অধ্যাপক ইলিয়াস: সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের যে কার্যক্রমটা ঘটছে, সেটা দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে ঘটছে। এ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউজিসির সম্মানিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান। আপনি জানেন, ফায়েজ স্যারের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস রয়েছে। এ রকম মানুষের ওপর আস্থা রেখেই আমরা কাজ করছি। চেয়ারম্যান স্যার সাত কলেজের এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্পষ্ট বলেছেন, প্রত্যেক কলেজের স্বকীয়তা বজায় থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর হলেও বর্তমান শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে আমরা ইউজিসি থেকে আশ্বাস পেয়েছি। সুতরাং আমি আশঙ্কার বিষয়ে বলব, সেটা অমূলক। একই সঙ্গে কলেজগুলোতে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির যে পাঠদান চলছে, সেটাও থাকবে। অর্থাৎ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় কারও কোনো কিছু হারানোর শঙ্কা নেই। দুটি বিষয়ে উইন উইন সিচুয়েশনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রশ্ন: সাত কলেজের যে দুটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক নেই, নতুন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে কলেজগুলোতেও উচ্চমাধ্যমিক যুক্ত করা হবে বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি। এ বিষয়ে আপনি জানেন কিনা?
অধ্যাপক ইলিয়াস: এখন পর্যন্ত আমাদের যে মিটিংগুলো হয়েছে, সেখানে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত—কোনো কিছুই হয়নি।
প্রশ্ন: ঈদের আগেই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো-মডেল প্রকাশের কথা আমরা শুনেছি। কবে এগুলো প্রকাশ হতে পারে?
অধ্যাপক ইলিয়াস: আমিও সংবাদমাধ্যমের বরাতে শুনেছি। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির নেতাদের সঙ্গে আমার পৃথক কোনো আলোচনা হয়নি। তবে এটুকু বলতে পারি, কার্যক্রমের একটি ধারাবাহিকতা আছে। সে ক্ষেত্রে হয়তো কমিটি কোনটা আগে কোনটা পরে প্রকাশ করা যেতে পারে, সে বিষয়ে একটা ধারণা দিয়েছে। এখন যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর হচ্ছে, এটার জন্য সর্বোচ্চ সমাধান হলো বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন করা। এটা আমি আগেও বলেছি, যে অধ্যাদেশটা হবে সেটা না হওয়ার আগপর্যন্ত যা কিছু প্রকাশ করি না কেন, সেটা বাস্তবসম্মত নয়। বাস্তবতা হলো আগে আইনটা হওয়া। এটা কত দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্ভুলভাবে শেষ করা যায়, সে বিষয়ে আমরা ইউজিসিকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছি।
প্রশ্ন: অধিভুক্ত থাকাকালে ঢাবি সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিষয়ে দায়িত্ব পালন করেছে। এখন ইউজিসি, ঢাবি ও নবগঠিত প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করবে। তিনটি বডির সঙ্গে এ সমন্বয়টা কীভাবে করবেন?
অধ্যাপক ইলিয়াস: নতুন প্রশাসনের সমন্বয় কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন ইউজিসির সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান। সাত কলেজের অধ্যক্ষরাও এ কমিটিতে আছেন। এর সঙ্গে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস, রেজিস্ট্রার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (শিক্ষা)। এর বাইরে ভর্তির ক্ষেত্রে অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক যিনি হবেন, তিনি এ কমিটিতে যুক্ত থাকবেন। আমরা সব বডির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব। প্রতি সপ্তাহে হয়তো সম্ভব হবে না, মাসে অন্তত একটা হলেও মিটিং করে নতুন যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। এটা আমরা যথাযথভাবে করতে পারলে আমাদের সব কাজ সময়ের আগেই শেষ করা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন: ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে যেসব বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে ছিলেন, এসব সমস্যা সমাধানে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে?
অধ্যাপক ইলিয়াস: এখানে আপনাকে একটা উদাহরণ দিচ্ছি। আমাদের চলমান যে শিক্ষাবর্ষ আছে, এসবের ফাইনাল পরীক্ষার ডেটলাইন অলরেডি দিয়ে দিয়েছি। প্রতিটি কলেজের বিভাগগুলো যদি এ সময়ের মধ্যে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করতে পারে, তাহলে আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই ইয়ার কার্যক্রম শেষ করতে পারব। নিকট অতীতে বিভিন্ন কারণে ইয়ার শেষ করতে আমাদের কিছুটা বেশি সময় লেগেছিল। সেটা নিয়েও আমাদের রিকোভারি প্ল্যান রয়েছে। আমরা এখন ১২ মাসের শিক্ষাবর্ষ ৮ মাসে শেষ করছি। চলতি শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে প্রথমে আমরা নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরে ঢাবি সেটা কার্যকরে সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে। এভাবে শিক্ষার্থীদের আরও অন্য যেসব সমস্যা আছে, সব সমস্যা ধরে ধরে সমাধান করা হবে।
প্রশ্ন: অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁদের সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন কি?
অধ্যাপক ইলিয়াস: শিক্ষার্থীদের এ দাবির বিষয়ে আমরা অবগত আছি। ইতিমধ্যে ফাইনাল ইয়ারের পদার্থবিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ের যেসব শিক্ষার্থীরা অধিক মাত্রায় অকৃতকার্য হয়েছেন, তাঁদের অতি দ্রুত আরেকটি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজির একটি কোর্স ও পদার্থবিজ্ঞানের একাধিক কোর্সের শিক্ষার্থী রয়েছেন।
প্রশ্ন: সাত কলেজের প্রশ্ন প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতি, খাতা মূল্যায়ন, ফল প্রকাশ—এসব বিষয়গুলোতে এখন কেমন পরিবর্তন আসছে? এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ফি সহনীয় পর্যায়ে পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন...
অধ্যাপক ইলিয়াস: আগে যেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করত, এখন সেটা অন্তর্বর্তী প্রশাসন করবে। এর মাধ্যমে আমাদের কাজগুলোতে আরও অনেক বেশি গতিশীলতা আসবে। আমরা মাস্টার্স ও ডিগ্রির বিশেষ পরীক্ষা ইতিমধ্যে শেষ করেছি। দ্রুত এসব কোর্সের ফল প্রকাশিত হবে। ফল প্রকাশের বিষয়ে যদি বলি, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর খাতা বিতরণে আমরা নতুন একটা উদ্যোগ নিয়েছি। সেটা কার্যকর করা গেলে আরও দ্রুত সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে। আরেকটা হলো, আমরা যদি অটোমেশনে যাই, তাহলে ফলটা আরও দ্রুত প্রকাশ করতে পারব। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফি কমানোর বিষয়টিও আমরা পর্যালোচনা করছি।
প্রশ্ন: সাত কলেজের প্রতিটি ক্যাম্পাসে ‘হেল্প ডেস্ক’ স্থাপনের বিষয়ে একটি প্রস্তাব ছিল। এটার কার্যক্রম কবে থেকে দৃশ্যমান হবে?
অধ্যাপক ইলিয়াস: হেল্প ডেস্ক স্থাপনের বিষয়ে ইতিমধ্যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ঈদের ছুটি শেষে প্রতিটি কলেজের হেল্প ডেস্ক মনিটর করা শুরু হবে। এ ডেস্কের কার্যক্রম যেন যথাযথভাবে চালু থাকে, সে জন্য আমরা এটাতে নজর রাখব। হেল্প ডেস্ক চালু হলে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি উপকৃত হবেন। তাঁরা আগে নিজেদের যেসব সমস্যা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শেষ করতেন, সেটা এই ডেস্কের সহায়তা নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করতে পারবেন। প্রতিটি কলেজে হেল্প ডেস্ক পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা গেলে শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য নিজ ক্যাম্পাস থেকে আর বাইরে আসতে হবে না।
প্রশ্ন: ঢাবির অধীনে সাত কলেজের একটি কলেজ অন্য কলেজে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন থেকে নিজের কলেজে পরীক্ষায় বসতে চান। শিক্ষার্থীদের এ দাবি বিবেচনা করবেন কিনা?
অধ্যাপক ইলিয়াস: আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবার এ বিষয়ে শুনেছি। এখানে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই, এটা সমন্বিত সিদ্ধান্তের বিষয়। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আপনি যেটি বলেছেন, সেটা আমরা আমলে নিচ্ছি। আমাদের ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা হলে তখন শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে জানাতে পারব। ব্যক্তিগতভাবে যদি বলি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে আমাদের সেদিকেই যেতে হবে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাই করছে।
প্রশ্ন: চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হবে, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখবেন কিনা, এসব শিক্ষার্থীরা কোন সিলেবাসের অধীনে ভর্তি হবেন?
অধ্যাপক ইলিয়াস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শুরু হওয়া সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রায় ৩৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। স্থগিত হওয়া ভর্তি আবেদন চলতি মাসের মধ্যে আবার শুরু হবে। ঈদের ছুটি শেষে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারব। নতুন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা পূর্বের সিলেবাসে ভর্তি হবেন। ইতিপূর্বে যাঁরা ভর্তি আবেদন করেছেন, তাঁদের আর আবেদন করতে হবে না। সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় আমরা দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণের সুযোগ রাখতে চাই। এ বিষয়ে আমাদের একটা প্রস্তাবনা আছে।
প্রশ্ন: সাত কলেজের কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেছেন, অন্য কলেজের চেয়ে ঢাকা কলেজের প্রতি আপনার বেশি আগ্রহ থাকবে। আপনার দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে অন্য কলেজের চেয়ে ঢাকা কলেজ বেশি সুবিধা পাবে। এ বিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা জানতে চাই।
অধ্যাপক ইলিয়াস: আমি সবার উদ্দেশে বলব, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে আমার দায়িত্ব এখান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। কিন্তু যখন আমি প্রশাসক, তখন আমার কাছে সব কলেজের শিক্ষার্থীরা সমান মর্যাদা পাবেন। আমি এটা শুধু দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই না, এটা কার্যকর করতে চাই। অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা যখন কোনো বিষয়ে ঢাকা কলেজে আসবেন, তখন আমি আগে তাঁদের সঙ্গে কথা বলব। পরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলব। এসব ক্ষেত্রে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা আমার কাছে অগ্রাধিকার পাবেন। অন্য কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আমি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, এ বিষয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। বাকিটা কাজে বাস্তবায়ন করব।
প্রশ্ন: আপনাকে একসঙ্গে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করতে হবে, দুটি প্রধান দায়িত্ব পালনে কোনো জটিলতা তৈরি হবে বলে মনে করেন?
অধ্যাপক ইলিয়াস: না, কোনো জটিলতা হবে বলে মনে করি না। কারণ, আমি এর আগেও বেশ কিছুদিন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। নতুন মেয়াদে সে অভিজ্ঞতা আমাকে কাজে দেবে। এ ছাড়া সাত কলেজের বাকি কলেজগুলোতে যেসব সম্মানিত অধ্যক্ষরা রয়েছেন—আমরা সবাই প্রায় কাছাকাছি সময়ে নিয়োগ পেয়েছি। আমাদের সবার সঙ্গে সবার পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই আন্তরিক। নতুন যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের এ সম্পর্ক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। এখানে কোনো কলেজকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। প্রত্যেক কলেজের শিক্ষার্থীদের আমরা নিজেদের শিক্ষার্থী বলে মনে করি। কলেজগুলোতে হেল্প ডেস্কের কার্যক্রম শুরু হলে আমাদের কার্যক্রমগুলো আরও সহজ ও গতিশীল হবে। নতুন প্রশাসনের কাজকে আরও কীভাবে সহজ ও গতিশীল করা যায়, সে লক্ষ্যে ঈদের পর থেকে ইউজিসির সমন্বয়ে আমরা ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যাব। এসব আলোচনার আউটপুট আমরা প্রতিনিয়ত শেয়ার করব। এতে নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, সেটা সম্পর্কে সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধারণা আরও স্বচ্ছ হবে।
প্রশ্ন: সাত কলেজের নতুন প্রশাসনের গঠন কেমন হবে? এ প্রশাসনের ক্ষমতা ও কার্যাবলি কী কী থাকবে?
অধ্যাপক ইলিয়াস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে যে কাঠামো পাস হয়েছে, সেটাই আমাদের কার্যক্রমের মূল চালিকাশক্তি। নতুন প্রশাসনে ইউজিসির একজন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন প্রতিনিধি রয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষসহ সাত কলেজের বাকি কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের সমন্বয়ে এই প্রশাসন গঠিত হয়েছে। নতুন এই কাঠামোর অধীনে ভবিষ্যতে সাত কলেজের সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে। নতুন প্রশাসন অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারলে সাত কলেজে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
প্রশ্ন: নবগঠিত প্রশাসন পরিচালনায় পর্যাপ্ত জনবল রয়েছে কি?
অধ্যাপক ইলিয়াস: কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই জনবলের প্রয়োজন হবে। অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে নতুন প্রশাসন ঢাকা কলেজ থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভবিষ্যতে নতুন প্রশাসনের যে কার্যক্রমগুলো হবে, সেগুলো এখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা-নেওয়া অথবা ঢাকা কলেজ থেকে অন্য কলেজগুলোতে পাঠানোর ক্ষেত্রে যাতে কোনো বিড়ম্বনা না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে আমাদের অতিরিক্ত জনবল প্রয়োজন হতে পারে। সেটা আমাদের ভাবনায় রয়েছে। কী পরিমাণ জনবল লাগতে পারে, সেটা আমরা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছে।
প্রশ্ন: এ প্রশাসনের মেয়াদ কত দিন হবে?
অধ্যাপক ইলিয়াস: অধ্যক্ষ পদে দুই বছরের যে মেয়াদের উল্লেখ রয়েছে, আপাতত সেটাই এ প্রশাসকের মেয়াদ। এটা এখানে কমবেশি হতে পারে। তবে এখানে যেহেতু দুই বছরের একটা লিমিটেশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে এখনই সেটি দুই বছরের বেশি করার সুযোগ নেই। তার আগেই যদি প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শেষ করা যায়, তাহলে হয়তো এ পদের প্রয়োজন আর নাও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকার যেটা ভালো মনে করবে, তারা সে ব্যবস্থা নেবে। তার আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কার্যক্রম, সেটার অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে এ প্রশাসনের মেয়াদ।
প্রশ্ন: প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কবে থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারে, এ বিষয়ে কোনো বার্তা পেয়েছেন কি?
অধ্যাপক ইলিয়াস: কার্যক্রমের দুইটা ধারা রয়েছে। একটা হলো আমাদের যে চলমান কাঠামো আছে, সেটাকে চালিয়ে নেওয়া। অপরটি হলো নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য যে আইনগত কার্যক্রম, সেটাকে ত্বরান্বিত করা। এই দুটি কাজ আমাদের একসঙ্গে করতে হবে। যাতে একটির জন্য অপরটি আটকে না থাকে অথবা বাধাগ্রস্ত না হয়। এ ছাড়া নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের নির্দেশনায় ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। তাদের কাজ শেষ হওয়ার পর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনগত ভিত্তি তৈরি হলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
প্রশ্ন: সাত কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েশন শেষে ঢাবির সনদ চান না। তাঁরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন...
অধ্যাপক ইলিয়াস: এ বিষয়ে আমাদের কিছুটা সময় দিতে হবে। আমাদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাস হলেই কেবল শিক্ষার্থীদের এ দাবির বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারব। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়, তখন নিয়মিত শিক্ষার্থীরা কীভাবে সনদ পেয়েছে, সেটা আমাদের দেখতে হবে। তখন যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের সনদ দিতে পারে, আমার মনে হয়, এখন দিতেও কোনো সমস্যা হবে না। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনগত ভিত্তি তৈরি করা। সেটা যত দ্রুত সম্ভব হবে, শিক্ষার্থীদের এ-সংক্রান্ত দাবিগুলো বাস্তবায়ন তত সহজ হবে। এ বিষয়ে আমি শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন না হতে অনুরোধ করব।
প্রশ্ন: প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে, এ বিষয়ে কিছু বলবেন কিনা?
অধ্যাপক ইলিয়াস: সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের যে কার্যক্রমটা ঘটছে, সেটা দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে ঘটছে। এ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউজিসির সম্মানিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান। আপনি জানেন, ফায়েজ স্যারের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস রয়েছে। এ রকম মানুষের ওপর আস্থা রেখেই আমরা কাজ করছি। চেয়ারম্যান স্যার সাত কলেজের এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্পষ্ট বলেছেন, প্রত্যেক কলেজের স্বকীয়তা বজায় থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর হলেও বর্তমান শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে আমরা ইউজিসি থেকে আশ্বাস পেয়েছি। সুতরাং আমি আশঙ্কার বিষয়ে বলব, সেটা অমূলক। একই সঙ্গে কলেজগুলোতে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির যে পাঠদান চলছে, সেটাও থাকবে। অর্থাৎ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় কারও কোনো কিছু হারানোর শঙ্কা নেই। দুটি বিষয়ে উইন উইন সিচুয়েশনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রশ্ন: সাত কলেজের যে দুটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক নেই, নতুন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে কলেজগুলোতেও উচ্চমাধ্যমিক যুক্ত করা হবে বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি। এ বিষয়ে আপনি জানেন কিনা?
অধ্যাপক ইলিয়াস: এখন পর্যন্ত আমাদের যে মিটিংগুলো হয়েছে, সেখানে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত—কোনো কিছুই হয়নি।
প্রশ্ন: ঈদের আগেই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো-মডেল প্রকাশের কথা আমরা শুনেছি। কবে এগুলো প্রকাশ হতে পারে?
অধ্যাপক ইলিয়াস: আমিও সংবাদমাধ্যমের বরাতে শুনেছি। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির নেতাদের সঙ্গে আমার পৃথক কোনো আলোচনা হয়নি। তবে এটুকু বলতে পারি, কার্যক্রমের একটি ধারাবাহিকতা আছে। সে ক্ষেত্রে হয়তো কমিটি কোনটা আগে কোনটা পরে প্রকাশ করা যেতে পারে, সে বিষয়ে একটা ধারণা দিয়েছে। এখন যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর হচ্ছে, এটার জন্য সর্বোচ্চ সমাধান হলো বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন করা। এটা আমি আগেও বলেছি, যে অধ্যাদেশটা হবে সেটা না হওয়ার আগপর্যন্ত যা কিছু প্রকাশ করি না কেন, সেটা বাস্তবসম্মত নয়। বাস্তবতা হলো আগে আইনটা হওয়া। এটা কত দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্ভুলভাবে শেষ করা যায়, সে বিষয়ে আমরা ইউজিসিকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছি।
প্রশ্ন: অধিভুক্ত থাকাকালে ঢাবি সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিষয়ে দায়িত্ব পালন করেছে। এখন ইউজিসি, ঢাবি ও নবগঠিত প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করবে। তিনটি বডির সঙ্গে এ সমন্বয়টা কীভাবে করবেন?
অধ্যাপক ইলিয়াস: নতুন প্রশাসনের সমন্বয় কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন ইউজিসির সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান। সাত কলেজের অধ্যক্ষরাও এ কমিটিতে আছেন। এর সঙ্গে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস, রেজিস্ট্রার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (শিক্ষা)। এর বাইরে ভর্তির ক্ষেত্রে অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক যিনি হবেন, তিনি এ কমিটিতে যুক্ত থাকবেন। আমরা সব বডির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব। প্রতি সপ্তাহে হয়তো সম্ভব হবে না, মাসে অন্তত একটা হলেও মিটিং করে নতুন যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। এটা আমরা যথাযথভাবে করতে পারলে আমাদের সব কাজ সময়ের আগেই শেষ করা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন: ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে যেসব বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে ছিলেন, এসব সমস্যা সমাধানে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে?
অধ্যাপক ইলিয়াস: এখানে আপনাকে একটা উদাহরণ দিচ্ছি। আমাদের চলমান যে শিক্ষাবর্ষ আছে, এসবের ফাইনাল পরীক্ষার ডেটলাইন অলরেডি দিয়ে দিয়েছি। প্রতিটি কলেজের বিভাগগুলো যদি এ সময়ের মধ্যে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করতে পারে, তাহলে আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই ইয়ার কার্যক্রম শেষ করতে পারব। নিকট অতীতে বিভিন্ন কারণে ইয়ার শেষ করতে আমাদের কিছুটা বেশি সময় লেগেছিল। সেটা নিয়েও আমাদের রিকোভারি প্ল্যান রয়েছে। আমরা এখন ১২ মাসের শিক্ষাবর্ষ ৮ মাসে শেষ করছি। চলতি শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে প্রথমে আমরা নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরে ঢাবি সেটা কার্যকরে সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে। এভাবে শিক্ষার্থীদের আরও অন্য যেসব সমস্যা আছে, সব সমস্যা ধরে ধরে সমাধান করা হবে।
প্রশ্ন: অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁদের সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন কি?
অধ্যাপক ইলিয়াস: শিক্ষার্থীদের এ দাবির বিষয়ে আমরা অবগত আছি। ইতিমধ্যে ফাইনাল ইয়ারের পদার্থবিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ের যেসব শিক্ষার্থীরা অধিক মাত্রায় অকৃতকার্য হয়েছেন, তাঁদের অতি দ্রুত আরেকটি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজির একটি কোর্স ও পদার্থবিজ্ঞানের একাধিক কোর্সের শিক্ষার্থী রয়েছেন।
প্রশ্ন: সাত কলেজের প্রশ্ন প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতি, খাতা মূল্যায়ন, ফল প্রকাশ—এসব বিষয়গুলোতে এখন কেমন পরিবর্তন আসছে? এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ফি সহনীয় পর্যায়ে পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন...
অধ্যাপক ইলিয়াস: আগে যেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করত, এখন সেটা অন্তর্বর্তী প্রশাসন করবে। এর মাধ্যমে আমাদের কাজগুলোতে আরও অনেক বেশি গতিশীলতা আসবে। আমরা মাস্টার্স ও ডিগ্রির বিশেষ পরীক্ষা ইতিমধ্যে শেষ করেছি। দ্রুত এসব কোর্সের ফল প্রকাশিত হবে। ফল প্রকাশের বিষয়ে যদি বলি, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর খাতা বিতরণে আমরা নতুন একটা উদ্যোগ নিয়েছি। সেটা কার্যকর করা গেলে আরও দ্রুত সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে। আরেকটা হলো, আমরা যদি অটোমেশনে যাই, তাহলে ফলটা আরও দ্রুত প্রকাশ করতে পারব। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফি কমানোর বিষয়টিও আমরা পর্যালোচনা করছি।
প্রশ্ন: সাত কলেজের প্রতিটি ক্যাম্পাসে ‘হেল্প ডেস্ক’ স্থাপনের বিষয়ে একটি প্রস্তাব ছিল। এটার কার্যক্রম কবে থেকে দৃশ্যমান হবে?
অধ্যাপক ইলিয়াস: হেল্প ডেস্ক স্থাপনের বিষয়ে ইতিমধ্যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ঈদের ছুটি শেষে প্রতিটি কলেজের হেল্প ডেস্ক মনিটর করা শুরু হবে। এ ডেস্কের কার্যক্রম যেন যথাযথভাবে চালু থাকে, সে জন্য আমরা এটাতে নজর রাখব। হেল্প ডেস্ক চালু হলে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি উপকৃত হবেন। তাঁরা আগে নিজেদের যেসব সমস্যা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শেষ করতেন, সেটা এই ডেস্কের সহায়তা নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করতে পারবেন। প্রতিটি কলেজে হেল্প ডেস্ক পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা গেলে শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য নিজ ক্যাম্পাস থেকে আর বাইরে আসতে হবে না।
প্রশ্ন: ঢাবির অধীনে সাত কলেজের একটি কলেজ অন্য কলেজে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন থেকে নিজের কলেজে পরীক্ষায় বসতে চান। শিক্ষার্থীদের এ দাবি বিবেচনা করবেন কিনা?
অধ্যাপক ইলিয়াস: আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবার এ বিষয়ে শুনেছি। এখানে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই, এটা সমন্বিত সিদ্ধান্তের বিষয়। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আপনি যেটি বলেছেন, সেটা আমরা আমলে নিচ্ছি। আমাদের ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা হলে তখন শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে জানাতে পারব। ব্যক্তিগতভাবে যদি বলি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে আমাদের সেদিকেই যেতে হবে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাই করছে।
প্রশ্ন: চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হবে, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখবেন কিনা, এসব শিক্ষার্থীরা কোন সিলেবাসের অধীনে ভর্তি হবেন?
অধ্যাপক ইলিয়াস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শুরু হওয়া সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রায় ৩৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। স্থগিত হওয়া ভর্তি আবেদন চলতি মাসের মধ্যে আবার শুরু হবে। ঈদের ছুটি শেষে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারব। নতুন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা পূর্বের সিলেবাসে ভর্তি হবেন। ইতিপূর্বে যাঁরা ভর্তি আবেদন করেছেন, তাঁদের আর আবেদন করতে হবে না। সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় আমরা দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণের সুযোগ রাখতে চাই। এ বিষয়ে আমাদের একটা প্রস্তাবনা আছে।
প্রশ্ন: সাত কলেজের কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেছেন, অন্য কলেজের চেয়ে ঢাকা কলেজের প্রতি আপনার বেশি আগ্রহ থাকবে। আপনার দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে অন্য কলেজের চেয়ে ঢাকা কলেজ বেশি সুবিধা পাবে। এ বিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা জানতে চাই।
অধ্যাপক ইলিয়াস: আমি সবার উদ্দেশে বলব, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে আমার দায়িত্ব এখান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। কিন্তু যখন আমি প্রশাসক, তখন আমার কাছে সব কলেজের শিক্ষার্থীরা সমান মর্যাদা পাবেন। আমি এটা শুধু দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই না, এটা কার্যকর করতে চাই। অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা যখন কোনো বিষয়ে ঢাকা কলেজে আসবেন, তখন আমি আগে তাঁদের সঙ্গে কথা বলব। পরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলব। এসব ক্ষেত্রে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা আমার কাছে অগ্রাধিকার পাবেন। অন্য কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আমি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, এ বিষয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। বাকিটা কাজে বাস্তবায়ন করব।
ডেঙ্গু ও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোতে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। আজ রোববার (১৫ জুন) মাউশির সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. খালিদ হোসেন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
৫ ঘণ্টা আগেভালোবাসা সব সময় শব্দ চায় না; বিশেষ করে সেই ভালোবাসা, যা এক নীরব আত্মত্যাগে প্রতিদিন গড়ে তোলে আমাদের স্বপ্ন, সাহস আর সাফল্যের ভিত্তি। তিনি আমাদের চোখে কখনো কাঁদেন না, ক্লান্তিও দেখান না, কিন্তু আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের পেছনে থাকে তাঁর নিরলস প্রেরণা। তিনি আমাদের বাবা।
১৪ ঘণ্টা আগেইংরেজিতে প্যারাগ্রাফ লেখার কথা উঠলেই অনেক শিক্ষার্থীর কপালে ভাঁজ পড়ে। কীভাবে শুরু করব। কোন শব্দ ব্যবহার করব। বানান বা গ্রামারে ভুল হবে না তো! আসলে কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করলে বিষয়টি আর কঠিন মনে হবে না।
১৪ ঘণ্টা আগেব্রাজিলে ইন্টারন্যাশনাল মোবিলিটি স্কলারশিপ ২০২৬-এর আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সম্পূর্ণ অর্থায়িত এ বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন।
১৪ ঘণ্টা আগে