Ajker Patrika

সীমাবদ্ধতা কখনো স্বপ্নকে থামাতে পারে না

পাহাড়, নদী আর বাঁশঝাড়ে ঘেরা লক্ষ্মীপুরের একটি গ্রাম। শহরের আলো-আঁধারি, সুযোগ-সুবিধা, এমনকি ইন্টারনেট সুবিধাও ছিল সীমিত। সেই পরিবেশে বড় হয়েছেন মাইনুল ইসলাম। তিনি প্রমাণ করেছেন, স্বপ্ন দেখা আর কঠোর পরিশ্রম করলে সবই সম্ভব। লক্ষ্মীপুরের হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া আর এম কামিল মাদ্রাসার আলিম ২০২৪ ব্যাচের এই তরুণ পেয়েছেন তুরস্ক সরকারের ফুল-ফান্ডেড তুর্কিয়ে বুরস্লারি স্কলারশিপ, যা তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ আবেদনেই সফলতা এনে দিয়েছে। সীমিত সুযোগের মাঝেও মাইনুল ইসলামের দৃঢ়সংকল্প এবং ধারাবাহিক প্রস্তুতি তাঁকে আন্তর্জাতিক মানের এই অর্জনে পৌঁছে দিয়েছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আশিকুর রহমান

মো. আশিকুর রহমান
মাইনুল ইসলাম
মাইনুল ইসলাম

তুর্কিয়ে বুরস্লারি বৃত্তি পাওয়ার যাত্রা কেমন ছিল? আপনি কীভাবে লক্ষ্য স্থির করে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন?

এটি আমার জীবনের অন্যতম বড় অর্জন। সব সময় বিশ্বাস ছিল, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে পরিষ্কার লক্ষ্য থাকা খুব জরুরি। স্কুলজীবন সম্পন্ন করার পর থেকে আমি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে উচ্চশিক্ষা নিতে চেয়েছিলাম। এ জন্য ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানো, একাডেমিক ফল ভালো রাখা এবং আন্তর্জাতিক বৃত্তির শর্তাবলি ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। প্রতিটি ধাপে ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছি। প্রথমবারের আবেদন করেই সফল হয়েছি। আমি সুযোগ পেয়েছি পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন বিষয়ে কুকুরোভা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

গ্রামের সীমিত সুযোগ-সুবিধা থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার সুযোগ অর্জন—এই যাত্রায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল এবং আপনি কীভাবে তা জয় করেছেন?

আমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রিসোর্স ও গাইডলাইনের অভাব। গ্রামের পরিবেশে ইন্টারনেট, মানসম্মত বই কিংবা নির্দেশনা সহজলভ্য ছিল না। কিন্তু এটিকে দুর্বলতা মনে না করে আমি প্রেরণায় রূপান্তর করেছি। অনলাইন রিসোর্স, ইউটিউব লেকচার এবং সিনিয়রদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি। যেহেতু গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করেছি, তাই সেখানে স্কলারশিপ নিয়ে তেমন অভিজ্ঞ কাউকে পাইনি। সামাজিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্কলারশিপ সম্পর্কে গবেষণা শুরু করি; বিশেষত ফুল-ফান্ডেড সুযোগগুলো নিয়ে।

প্রতিদিনের শিখন অভ্যাস ও পরিকল্পনা কেমন ছিল, যা আপনাকে বিদেশে পড়াশোনার জন্য প্রস্তুত করেছে?

আমি প্রতিদিন নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলতাম। ইংরেজি অনুশীলন, স্কলারশিপ-সংক্রান্ত লেখাপড়া, প্রবন্ধ রচনা অনুশীলন এবং সাধারণ জ্ঞান বাড়ানোর জন্য নিয়মিত আর্টিকেল পড়া ও লেখা ছিল অভ্যাস। আমি বিশ্বাস করি, ছোট ছোট নিয়মিত প্রস্তুতিই বড় সাফল্য এনে দেয়।

কুকুরোভা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত
কুকুরোভা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কীভাবে স্বেচ্ছাসেবা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পড়াশোনার ভারসাম্য বজায় রেখেছেন এবং তা স্কলারশিপ জেতার প্রস্তুতিতে কীভাবে আপনাকে সাহায্য করেছে?

স্বেচ্ছাসেবা ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কাজ আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘শাইনিং লাইফ’ নামে একটি তরুণকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি। আমরা শিশু অধিকার, মানসিক স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, পরিবেশ-সচেতনতা ও মানবিক সহায়তার মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করি। এসব কাজ আমাকে নেতৃত্ব, দলগত কাজ ও যোগাযোগ দক্ষতা শিখিয়েছে, যা আসলে বৃত্তি জেতার প্রস্তুতিরই অংশ। পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট সময় আলাদা রাখতাম, আবার সামাজিক কাজগুলোকে নিজের শেখার ক্ষেত্র হিসেবেও দেখতাম। ভারসাম্য বজায় রাখাই ছিল আমার মূল লক্ষ্য।

বিদেশে পড়াশোনা করে আপনি কীভাবে বাংলাদেশের তরুণদের প্রতিনিধিত্ব এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে চান?

আমার স্বপ্ন হলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের তরুণদের সক্ষমতা তুলে ধরা। এটি শুধু পড়াশোনার জন্য নয়; সাংস্কৃতিক বিনিময় ও নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে আমাদের তরুণ প্রজন্মের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে চাই। পাশাপাশি ভবিষ্যতে দেশে শিক্ষা, নেতৃত্ব ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার ইচ্ছা রয়েছে।

এই অভিজ্ঞতা থেকে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কী? তারা কীভাবে স্বপ্ন অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারে?

সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—সীমাবদ্ধতা কখনো স্বপ্নকে থামিয়ে দিতে পারে না। ধারাবাহিক চেষ্টা

এবং সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে অসম্ভবও সম্ভব করা যায়। নতুন প্রজন্মের প্রতি আমার মূল বার্তা হলো, নিজের স্বপ্নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করা জরুরি

এবং এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে প্রতিটি প্রচেষ্টা একদিন ফল অবশ্যই দেবে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। এতে অন্যদের তুলনায় অনেক গুণ এগিয়ে থাকা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গ্রাহকের ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ, জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার জেলহাজতে

‎জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তাঁর ছাত্রী সপরিবারে পুলিশ হেফাজতে

পুরান ঢাকায় বাসার সিঁড়িতে জবি ছাত্রদল নেতার রক্তাক্ত লাশ

৪৯তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১২১৯

ফরিদপুরে এ কে আজাদের গণসংযোগে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত