Ajker Patrika

প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক পদ বিলুপ্তি, বেতন বাড়ানোর সুপারিশ পরামর্শক কমিটির

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২: ১২
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ তুলে ধরে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংস্কার পরামর্শক কমিটি। ফাইল ছবি
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ তুলে ধরে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংস্কার পরামর্শক কমিটি। ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদ বিলুপ্ত ও শিক্ষকদের বেতন-গ্রেড বৃদ্ধিসহ ১৪ দফা সুপারিশ করেছে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংস্কার পরামর্শক কমিটি। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষা খাতের সংস্কারে সরকারকে সহায়তার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে শিক্ষা পরামর্শক পরিষদ গঠন করারও সুপারিশ করেছে কমিটি।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন কমিটির আহ্বায়ক ড. মনজুর আহমেদ। এর আগে বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিটির সুপারিশমালা পেশ করা হয়।

পরামর্শক কমিটি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদটি বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে। বলা হয়েছে-‘সহকারী শিক্ষক’ পদবি বিলুপ্ত হবে, ‘শিক্ষক’ হিসেবে কর্মজীবনের সূচনার পর ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হিসেবে পরবর্তী পদোন্নতি হবে। আর বেতন গ্রেড বৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয়েছে, শিক্ষক পদে প্রবেশ ১২ তম গ্রেডে, দুই বছর পর স্থায়ীকরণ, আরও দুই বছর পর ১১ তম গ্রেডে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি। প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে ১০ম গ্রেড নির্ধারণ এবং সকল প্রধান শিক্ষক পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ। শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষকেরা নিয়মানুযায়ী উচ্চতর স্কেল পাওয়ার যোগ্য হবেন।

গত অক্টোবরে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংস্কারে পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদকে। কমিটিতে একজন সদস্যসচিব এবং ৭ জন সদস্য ছিলেন।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও সাবেক সচিব খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামান, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সাবেক মহাপরিচালক মো. রফিকুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পিইডিপি-২ এর সাবেক যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক চৌধুরী মুফাদ আহমেদ, গণ সাহায্য সংস্থার পরিচালক (শিক্ষা) বেগম সামসি হাসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরাম মারিয়াম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব মোরশেদ এবং শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. নূরুল আলম।

সার্বিক বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘পরামর্শক কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে তা মানার নেতিক দায় আমাদের আছে। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। আর শিক্ষকদের বেতন ও পদোন্নতির বিষয়ে কমিটির সুপারিশে যদি শিক্ষকেরা সম্মত হন তাহলে আমরা তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।’

প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মানোন্নয়নের দিকে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে কমিটি। বলা হয়েছে, শিশুদের বাংলা ও গণিতের ভিত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলা ও গণিতের জন্য প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭৫ মিনিট করে শিক্ষণ-শিখন সময় নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া শিখন সময় বৃদ্ধির জন্য সকল বিদ্যালয়কে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এক শিফটের স্কুলে পরিণত করা প্রয়োজন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত অনূর্ধ্ব ১:৩০ নিশ্চিত করা দরকার।

পিছিয়ে পড়া শিশুদের দিকেও বিশেষ নজর দেওয়ার সুপারিশ করে কমিটি বলছে, পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য শ্রেণিকক্ষের ভেতরে এবং বাইরে নিরাময়মূলক সহায়তা দিতে হবে। এ জন্য স্কুল স্থানীয়ভাবে প্যারা-টিচার (শিক্ষা-সহায়ক) নিয়োগ দিতে পারে। এ ছাড়া সুযোগবঞ্চিত শ্রমজীবী, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

আরও বলা হয়েছে, জেন্ডার ন্যায্যতা ও জলবায়ু অভিঘাত বিষয়ে এবং দুর্গম ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব মিড-ডে-মিল প্রবর্তন, খাতা-কলম-ব্যাগ ইত্যাদি সামগ্রী বিতরণ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্ধারিত অতি দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য বর্ধিত হারে অর্থ সাহায্য প্রদান করা যেতে পারে।

বিদ্যালয়-বহির্ভূত ও ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলমুখী করতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ও দক্ষ এনজিওদের সহযোগিতায় মাধ্যমে কার্যকর মডেল তৈরি করতে হবে বলেও সুপারিশ করছে কমিটি। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বা এ ধরনের পরীক্ষার পরিবর্তে ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্টের আদলে মৌলিক দক্ষতা জরিপের মাধ্যমে প্রতি বিদ্যালয়কে মান অনুযায়ী সবুজ-হলুদ-লালে চিহ্নিত করার সুপারিশ করেছে কমিটি।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ বলেন, পড়াশোনার মান পর্যবেক্ষণ করার জন্যই এমন ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ছাড়া শিক্ষা খাতের সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য শিক্ষা পরামর্শক পরিষদ ও স্থায়ী শিক্ষা কমিটি গঠন এবং দুর্নীতি ও অসদাচরণ রোধে দেশব্যাপী হটলাইন চালুরও পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত