Ajker Patrika

হুমায়ূন-সাহিত্যের মূল্য ও মূল্যায়ন

আতাউর রহমান মারুফ
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২১, ১২: ৪৪
হুমায়ূন-সাহিত্যের মূল্য ও মূল্যায়ন

হ‌ুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। এ সত্যে কোনো খাদ নেই। মানুষ তাঁর সাহিত্য পড়তে ভালোবাসেন। পড়ে ভীষণ আনন্দ পান। কিন্তু বড় মুখ করে তা অন্যের কাছে বলতে সংকোচ করেন। ‘মূলধারা’র সাহিত্যপাঠেও হ‌ুমায়ূনকে নিয়ে খুব বেশি উচ্চবাচ্য নেই। ফলে একটা সংকট আঁচ করা যায়। হ‌ুমায়ূনের অত্যন্ত স্বতন্ত্র সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য এর প্রধান কারণ। আর সাহিত্য পাঠজনিত আমাদের জাতীয় দীনতাও তার জন্য কম দায়ী নয়। এই সূত্রের ওপর ভিত্তি করে হ‌ুমায়ূন আহমেদ: পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য বইটি নির্মিত। আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়কে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে হ‌ুমায়ূন তাঁর কথাসাহিত্যে ফুটিয়ে তোলার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এই বইয়ের মোট নয়টি অধ্যায়ে সে বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে। সংযুক্তি হিসেবে রয়েছে প্রাসঙ্গিক আরও তিনটি প্রবন্ধ। আড়াই শ পৃষ্ঠার এই বইয়ে হ‌ুমায়ূনকে দেখার সম্ভাব্য সব ক’টি চোখই যাচাই-বাছাই করেছেন মোহাম্মদ আজম।

হ‌ুমায়ূনের একজন একনিষ্ঠ পাঠক আজম। পঁচিশ বছর ধরে হ‌ুমায়ূন পড়ছেন। একই সঙ্গে তিনি ‘পেশাদার’ পাঠকও। সাহিত্য পড়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে হ‌ুমায়ূনকে বোঝাপড়ার এক নিজস্ব নিরীক্ষায় রত আছেন। সাহিত্যবোদ্ধাদের হ‌ুমায়ূন-মূল্যায়নেও রেখেছেন কড়া নজর। ‘কেন হুমায়ূন আহমেদ’ অধ্যায়ে তিনি তাঁর এই যৌথ প্রযোজনার ফলাফল তুলে ধরেন। তাঁর মতে, হাতে-কলমে ‘শিক্ষিত’ নয় বলে অনেকে হুমায়ূন আহমেদকে যোগ্য ভাবেন না। তবে আজম নিজে হ‌ুমায়ূনকে একজন ‘জাত লেখক’ বলে মনে করেন। তাই হ‌ুমায়ূনকে আবিষ্কারের সংকল্পে এই বইয়ে হাত দিয়েছেন। তাতে আরেকটি কাজও উদ্ধার হবে—‘শিক্ষিত’ লেখকশ্রেণির হালহকিকত বের করে আনা যাবে।

জনপ্রিয়তা হ‌ুমায়ূন-পাঠের প্রধান অন্তরায়। জনপ্রিয় সাহিত্য নিয়ে সাহিত্যবোদ্ধাদের জনপ্রিয় উক্তি বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে। জনপ্রিয় সাহিত্যকে পড়ার প্রচলিত কিছু পদ্ধতি আছে। বিপদ হচ্ছে, হ‌ুমায়ূন সেসব খোপে আঁটেন না। ‘হ‌ুমায়ূন-পাঠের সমস্যা’ অধ্যায়ে মোহাম্মদ আজম হ‌ুমায়ূনের লেখার বৈশিষ্ট্যটি চিহ্নিত করেন। হ‌ুমায়ূন তাঁর চরিত্রগুলোর ওপর কোনো ধরনের মতাদর্শ চাপিয়ে দেন না। তার মানে, উদারনৈতিক ধারার সরলরৈখিক ভালো-মন্দের দিকনির্দেশনা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে, তা-ও নয়। হ‌ুমায়ূন মূলত নাগরিক মধ্যবিত্তদের নিয়ে লিখেছেন। তবে নগরের বৃহৎ ক্যানভাস তুলে ধরেননি। তাঁর গল্প পারিবারিক আবহে সীমাবদ্ধ থেকেছে। সেখানেই আবর্তিত হয়েছে প্রেম, সমাজ বা রাজনীতি; এমনকি মুক্তিযুদ্ধের অসাধারণ চিত্রকল্প। মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাঁর সাহিত্যের একটা প্রধান বিষয়। কিন্তু আধুনিকতাবাদী সাহিত্যে মনস্তত্ত্বের যেসব নিপুণ নিরীক্ষা করা হয়েছে, তার আশপাশেও ঘেঁষেননি হ‌ুমায়ূন। এসবে অবশ্য একটা সুবিধা হয়েছে—গল্পের চরিত্র বা পরিবেশের নিজস্বতা বজায় থাকে। হ‌ুমায়ূনের সাহিত্যে যে স্বাভাবিক ‘ঢাকা’র চিত্র পাওয়া যায়, তা বাংলা সাহিত্যে খুব সুলভ নয়। তবে এটাই আবার হ‌ুমায়ূন-পাঠের প্রধান প্রতিবন্ধক। সাহিত্যপাঠের প্রচলিত পদ্ধতি দিয়ে তাঁকে বোঝা দুরূহ হয়ে ওঠে। তবে সাহিত্য সমালোচনার সক্রিয়তাকে আরও বেগবান করার মাধ্যমে হ‌ুমায়ূন-পাঠ সহজ হবে বলে আজম মনে করেন। 

মধ্যবিত্ত পরিবারের যাপিত জীবনের দৈনন্দিনতাকে নিপুণভাবে চিত্রিত করতে হ‌ুমায়ূন অতুলনীয়। সে সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত থেকে সহানুভূতির উদার দৃষ্টি নিয়েই তাঁদের গল্প লিখেছেন। জীবনকে তিনি দেখতেন ইতিবাচক অর্থে। সেটাই প্রচার করেছেন সাহিত্যে। নিজের ভাব ফুটিয়ে তুলতে উপযোগী আর মনোরম ভাষা ছিল তাঁর সহজাত অস্ত্র। লেখার এই পদ্ধতি ছিল পাঠকের জন্য খুবই আরামদায়ক। ফলে হ‌ুমায়ূন হয়ে ওঠেন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন জনপ্রিয় সাহিত্যিক। ‘জনপ্রিয় হ‌ুমায়ূন’ অধ্যায়ে তাঁর এই অভাবনীয় গ্রহণযোগ্যতার কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। 

বাঙালি জনগোষ্ঠীর গড় বৈশিষ্ট্যকে হ‌ুমায়ূন দারুণ বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে তাঁর গল্প বলার ধারা পাল্টেছে; কিন্তু সেই বৈশিষ্ট্যের সমান উপস্থাপনায় হেরফের হয়নি। পরিবার এখনো বাঙালির প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তাই ভবঘুরে হিমু বা জটিল-কঠিন রহস্য সমাধানকারী মিসির আলির জীবনযাপন পদ্ধতি থেকে পারিবারিক বলয় বাদ পড়ে না। এসব চরিত্র গড়পড়তা বাঙালির স্বভাবমুক্তও থাকে না। হ‌ুমায়ূনের বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনিতেও অজপাড়া গাঁয়ের সজীব আবহ বজায় থাকে। মানুষ ‘কল্পকাহিনি’ ঠিক যেসব কারণে পছন্দ করে, বাস্তব তুলে ধরতে হ‌ুমায়ূন সেসব উপকরণের কার্যকর প্রয়োগ করেন লেখায়। ফলে অপরিচিত প্লটকেও পাঠক অবচেতনে আপন ভাবতে পারেন। আবার এসব বৈশিষ্ট্যের ফলে হ‌ুমায়ূনের সাহিত্যে পাওয়া যায় দেশজতার একটা তাজা ঘ্রাণ। জনপ্রিয় হয়েও ‘মূলধারা’র সাহিত্যে এ কারণে তিনি অবধারিত পাঠ্য হবেন।

হ‌ুমায়ূনের কথাসাহিত্যে তাঁর নিজের আরোপিত কথা খুব কম পাওয়া যায়। চরিত্রগুলোর সংলাপ আর মনোজগতের তৎপরতা নিয়ে কাহিনির কাঠামো দাঁড় করিয়ে ফেলেন। হ‌ুমায়ূন নিজে বিশেষ কোনো পক্ষের ওকালতি করেন না; বরং তাঁর বিশেষ নজর থাকে প্রতিটি চরিত্রের জন্য একটি অনুকূল পরিস্থিতির সুযোগ তৈরি করা। যাতে চরিত্রগুলোর অন্তস্থ শক্তি ও সুপ্ত মানবিকতা সহজাতভাবেই বিকাশের সুযোগ পায়। এটাই তাঁর সাহিত্য দর্শন। ‘কথাশিল্পী হ‌ুমায়ূন’ অধ্যায়ে তাঁর সাহিত্যিক সফলতা ও সীমাবদ্ধতার বিষয়টি উঠে এসেছে। হুমায়ূন আহমেদ বড় উপন্যাস লিখেছিলেন। তবে সেগুলো সার্থক উপন্যাস হিসেবে গড়ে তুলতে পুরোপুরি সফল হননি। কিন্তু ছোটগল্প বা ছোট উপন্যাসে ইঙ্গিতধর্মী ও তীক্ষ্ণ বর্ণনা তৈরিতে তিনি অসাধারণভাবে সফল। এসব ক্ষেত্রের বহুসংখ্যক রচনা ও সফলতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখক হিসেবে চিহ্নিত করবে।

হ‌ুমায়ূনের ভাষার সারল্য বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ‍হুমায়ূনের ভাষাবিষয়ক অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে; সরল রেখেও ভাষার গভীরতা বজায় রাখতে হ‌ুমায়ূনের বেগ পেতে হয়নি। হ‌ুমায়ূন গল্প বলতেন ‍মুখের ভাষায়। ফলে তাঁর লেখায় জনগোষ্ঠীর অকৃত্রিম স্বর উপস্থাপিত হয়েছে। তাঁর রচনাপাঠের জন্য দুটিই প্রয়োজন—নান্দনিকবোধ আর সারল্যের মধ্যেই গভীরতা আবিষ্কারের সামর্থ্য।

মুক্তিযুদ্ধ হ‌ুমায়ূনের সৃষ্টিকর্মে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখিতে হ‌ুমায়ূন অধিকতর বাস্তবনিষ্ঠ থাকতে চেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রচলিত মত বা দৃষ্টিভঙ্গিসমূহকে বিভিন্নভাবে নিরীক্ষা করেছেন হ‌ুমায়ূন। হ‌ুমায়ূনের মুক্তিযুদ্ধ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়নি। একটি যুদ্ধের আঁচ কীভাবে ব্যক্তি বা পরিবারের নিত্যনৈমিত্তিকতাকে ছুঁয়ে দিয়ে সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে, তার দুর্দান্ত চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন হ‌ুমায়ূন। গ্রামে বা শহরে গেরিলা বাহিনীর সক্রিয়তার বাঙ্ময় উপস্থাপনাও উঠে এসেছে। সর্বোপরি, মুক্তিযুদ্ধকে একটি ‘জনযুদ্ধে’র ভাষ্য হিসেবে খুঁজে পেতে হ‌ুমায়ূনের সাহিত্য অতুলনীয়।

হ‌ুমায়ূনের সাহিত্যে উঠে আসা মওলানা বা ভাটি অঞ্চল নিয়ে দুটি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। ‘মূলধারা’য় অবহেলিত মওলানা শ্রেণিকে নতুন চোখে দেখার চেষ্টা করেছেন হ‌ুমায়ূন। এসব মওলানা ক্ষমতাকাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন বা নিষ্ক্রিয়। তবে ধর্মের নিরপেক্ষ চর্চার বাস্তবতা উপস্থাপন পুরো দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন আঙ্গিক দিয়েছে। একইভাবে ভাটি অঞ্চল বা গ্রামীণ জীবনের যে অনুপুঙ্খ বিবরণ হ‌ুমায়ূন তুলে ধরেছেন, বাংলা সাহিত্যে তার দৃষ্টান্ত অত বেশি নেই। 

এই বইয়ের সর্বশেষ অধ্যায়ে হ‌ুমায়ূনের সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বকে খুব স্বল্প কথায় তুলে ধরা হয়েছে। সাহিত্যিক হিসেবে হ‌ুমায়ূনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—তিনি যা দেখতেন, তাই তুলে ধরতেন। তার লেখায় পিতৃতন্ত্র এসেছে; কিন্তু পুরুষতন্ত্র প্রাধান্য পায়নি। নারী চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পরিবারকাঠামোর বাইরে ক্ষমতাবান কোনো নারী চরিত্র পাওয়া যায় না। সামাজিক মূল্যবোধের এমন রক্ষণশীল উপস্থাপনে তার পাঠকগোষ্ঠীও সম্মত ছিল বলে ধরা যায়। তবে, চূড়ান্তভাবে, হ‌ুমায়ূনের সৃষ্টিকর্ম বাংলা সাহিত্য ও পাঠাভ্যাসকে ঔপনিবেশিকতার অবধারিত প্রভাব থেকে মুক্ত পাঠের স্বাদ এনে দেয়।

সবশেষে বলা যায়, এই বই সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে পদ্ধতিগতভাবে মূল্যায়নের প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রচেষ্টা। হুমায়ূন আহমেদকে পড়ার প্রচলিত পদ্ধতির বিপরীত স্রোতে দাঁড়িয়ে এবং ‘মূলধারা’র সাহিত্যে তাঁর অবস্থান নির্ণয়ের প্রচেষ্টা—দুই-ই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ। তবে মোহাম্মদ আজম তা দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। যথাযথ প্রশংসা বা সমালোচনার ক্ষেত্রে তিনি প্রশংসনীয় সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। আজমের আলোচনার পদ্ধতিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য, ইতিহাস বা সাংস্কৃতিক কানাগলির প্রাসঙ্গিক সব গুরুত্বপূর্ণ নমুনা তিনি হাজির করেছেন। তার ছাঁচে ফেলে হ‌ুমায়ূনকে বিচার করেছেন। বিপুল তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্তের ফলাফল পাঠকেও মজাদার করে তোলে। বক্তব্যের প্রাঞ্জলতা ধরে রাখতে ভাষার সীমাবদ্ধতাকে উতরে যেতে চেয়েছেন। শব্দের ব্যবহার চমক জাগানিয়া, তবে অনুভূতিকে তৃপ্তি দেয়। ফলে গবেষণাধর্মী হলেও বইটি পড়ার উত্তেজনা পুরো সময়ে টানটান হয়ে থাকে। সংস্কৃতি অধ্যয়নের (কালচারাল স্টাডিজ) নিরিখে সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বকে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে এই বই একটি ‍উৎকৃষ্ট নিদর্শন এবং বাংলা সাহিত্যে আদর্শস্থানীয়।

হ‌ুমায়ূন আহমেদ: পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য
লেখক: মোহাম্মদ আজম
প্রথমা প্রকাশন
মূল্য: ৫০০ টাকা

আরও পড়ুন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেডিকেল ভর্তি-ইচ্ছুকদের শেষ মুহূর্তের করণীয়

সুরাইয়া ফেরদৌস ঋতু
সুরাইয়া ফেরদৌস ঋতু। ছবি: সংগৃহীত
সুরাইয়া ফেরদৌস ঋতু। ছবি: সংগৃহীত

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১২ ডিসেম্বর। বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম, অসংখ্য রাত জাগা, পরিবার-পরিজনের ত্যাগ—সবকিছুর লক্ষ্য হলো কাঙ্ক্ষিত আসনটি নিশ্চিত করা। এই দীর্ঘ যাত্রার শেষ ধাপ হচ্ছে পরীক্ষার আগের কয়েকটি দিন, যা ভর্তি-ইচ্ছুকদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দক্ষতা, মেধা ও প্রস্তুতির সেরা ব্যবহার হয় ঠিক এই সময়েই। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি অনেকের জন্য চাপের। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও মানসিক স্থিরতা থাকলে এটিই হতে পারে সাফল্যের মোড় ঘোরানোর সময়।

ভুল থেকে শেখাই শেষ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় প্রস্তুতি

যাঁরা নিয়মিত মডেল টেস্ট দিয়েছেন বা বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করেছেন, তাঁদের সবারই কিছু ভুল থাকে—বিষয়ভিত্তিক বা প্রশ্নভিত্তিক। শেষ সময়ে এই ভুলগুলোই হয়ে ওঠে সবচেয়ে কার্যকর উপাদান। ভুলগুলো চিহ্নিত করে টপিকভিত্তিক দ্রুত রিভিশন করলে মস্তিষ্ক তথ্য ধরে রাখতে আরও সক্ষম হয়। সুপারফিসিয়াল রিভিশন বা দ্রুত চোখ বোলানো রিভিশনও শেষ মুহূর্তে দারুণ কাজ দেয়; কারণ, এটি মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় তথ্যের সিগন্যালকে আরও সক্রিয় করে। তাই এখন নতুন কিছু শেখার চেয়ে নিজের ভুল জানা এবং সেগুলো সংশোধন করাই বেশি যুক্তিসংগত।

নেগেটিভ মার্কিং এড়াতে কৌশল

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো নেগেটিভ মার্কিং। শেষ মুহূর্তে বাড়তি উত্তেজনায় অনেকেই কনফিউজিং প্রশ্নে ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন। এতে প্রাপ্ত নম্বরের চেয়ে কাটা নম্বরই বেশি হয়। তাই নিয়মটি পরিষ্কার—৫০% নিশ্চিত না হলে দাগানো নয়। আর ৭০-৮০% নিশ্চিত হলে তখন হিসাব করে উত্তর দেওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, ভর্তি পরীক্ষা শুধু জানার পরীক্ষা নয়; এটি হলো বুদ্ধি, স্থিরতা এবং পরিস্থিতি বিশ্লেষণেরও পরীক্ষা।

মানসিক চাপ হলো সাফল্যের নীরব শত্রু

পরীক্ষার আগে চাপ অনুভব করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই চাপ যদি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়, তবে এটি মেধাবী শিক্ষার্থীকেও দুর্বল করে দিতে পারে। ‘চান্স না পেলে কী হবে?’, ‘সবাই তো পারছে, আমি পারব তো?’— এমন ভাবনা আত্মবিশ্বাসকে ভেতর থেকে খেয়ে ফেলে। নিজের সঙ্গে অন্যের তুলনা করা এই সময় সবচেয়ে বড় ভুল। প্রত্যেকের যাত্রাই আলাদা, চেষ্টা ও মানসিক প্রস্তুতিও ভিন্ন। তাই শেষ সময়ে নিজের প্রতি আস্থা রাখতে হবে, আর আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপনি যেদিন প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন, সেদিন থেকেই আপনি সঠিক পথেই হাঁটছেন।

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মনোবল ধরে রাখে

ভর্তি পরীক্ষার চাপ, দুশ্চিন্তা, অনিশ্চয়তা—সবই মানসিক শক্তিকে দুর্বল করে। কিন্তু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ধরে রাখতে পারলে মন স্থির থাকে, মনোযোগ বাড়ে এবং পরীক্ষার হলে দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। ভুল হওয়া স্বাভাবিক; কিন্তু ভুল দেখেই ভেঙে পড়লে চলবে না। বরং ভাবতে হবে, আমি জানি, আমি পারি, এবং সেরা চেষ্টা আমি করব। ইতিবাচক মনোভাবই শেষ ধাপের লড়াইয়ে আপনাকে সবচেয়ে কার্যকরভাবে টিকিয়ে রাখবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বড় বিভ্রান্তি

ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে অসংখ্য ভুয়া তথ্য—প্রশ্নপত্র ফাঁস, সময় পরিবর্তন, আসনসংখ্যা, নম্বর বণ্টন নিয়ে ভিত্তিহীন পোস্ট, কিংবা ‘নিশ্চিত প্রশ্ন’ নামে গুজব, এগুলো অনেকের মনকে অস্থির করে তোলে। যারা যাচাই না করে এসব শেয়ার করে, তারা বিভ্রান্তি আরও বাড়ায়। এই সময় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা বা শুধু সরকারি নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুসরণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে মনোযোগ বিঘ্নিত হয় না এবং মানসিক চাপও কম থাকে।

শেষ মুহূর্তে যেসব বিষয় অবশ্যই মেনে চলা উচিত

শেষ সময়ে নিজেকে স্থির রাখা সবচেয়ে জরুরি। নতুন কিছু শেখার চেষ্টা নয়; বরং পড়া বিষয়গুলো রিভিশন করলেই স্মৃতি আরও স্থায়ী হয়। নিয়মিত, হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত; কম খেয়ে দুর্বল হওয়া নয়। পর্যাপ্ত পানি পান শরীরকে সতেজ রাখে এবং স্বল্প সময় হাঁটা বা স্ট্রেচিং মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে। পরিবারের সঙ্গে শুধু প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বললে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয় না। সোশ্যাল মিডিয়া ব্লক করে দিলে অপ্রয়োজনীয় গুজব থেকে দূরে থাকা যায়। আর হালকা দোয়া-ইবাদত মনকে শান্ত করে, আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

শেষ কথা হলো, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শুধু বইয়ের নয়, মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতিরও সমন্বয়। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন, নিয়ম মেনে চলুন এবং সেরাটুকু দিন। সাফল্য অবশ্যই আসবে। শুভকামনা প্রতিটি ভর্তি-ইচ্ছুকদের জন্য।

অনুলিখন: তানজিল কাজী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা শুক্রবার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ব্যাচেলর অব মেডিসিন ও ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) এবং ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হলেও পরীক্ষার্থীদের সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে অবশ্যই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

এতে বলা হয়, এবার ভর্তি পরীক্ষার সময় ১৫ মিনিট বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ পরীক্ষা হবে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাওয়া যাবে। তবে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। পাস নম্বর ৪০।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরীক্ষার্থীদের স্বচ্ছ ব্যাগে রঙিন প্রবেশপত্র, কালো কালির স্বচ্ছ বলপয়েন্ট কলম, এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার প্রবেশপত্র অথবা রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে আসতে হবে। মোবাইল ফোন, ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, ইলেকট্রনিকসামগ্রী বা অন্য কোনো ব্যাগ নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসি বা সমমান সিলেবাস অনুযায়ী জীববিজ্ঞান ৩০, রসায়ন ২৫, পদার্থবিজ্ঞান ১৫, ইংরেজি ১৫ এবং সাধারণ জ্ঞান, প্রবণতা ও মানবিক গুণাবলি মূল্যায়নে ১৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মোট ১৩ হাজার ৫১টি আসনের জন্য এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য এ বছর মোট আবেদনকারী ১ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন। যার মধ্যে ৪৯ হাজার ২৮ জন আবেদনকারী ছাত্র ও ৭৩ হাজার ৬০৪ জন ছাত্রী।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে মোট আসন ১৩ হাজার ৫১টি। এর মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজে ৫ হাজার ১০০ ও ডেন্টাল ইউনিটে ৫৪৫টি আসন রয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন রয়েছে ৬ হাজার ১টি এবং ডেন্টাল কলেজে ১ হাজার ৪০৫টি। অর্থাৎ এমবিবিএস কোর্সে মোট ১১ হাজার ১০১টি এবং বিডিএস কোর্সে ১ হাজার ৯৫০টি আসন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি: অধ্যাদেশ জারির আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর সাত কলেজ নিয়ে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠনের অধ্যাদেশ জারির দাবিতে চলমান আন্দোলন ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

রাজধানীর ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে আজ মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তাঁরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ও ঢাকা কলেজের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মো. রবিন হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান এক দফার কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। এ বিষয়ে সাত কলেজের সিনিয়র শিক্ষার্থীরাও আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এ সময়ের মধ্যে পরবর্তীতে যেকোনো পরিস্থিতির আলোকে আমাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করে জানাব।’

ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ—এই সাত কলেজ নিয়ে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠনের কার্যক্রম যখন চলছে, তখন এর আশু কাঠামো নিয়ে কলেজগুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কয়েকটি অংশ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। খসড়ায় সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারি’ বা স্কুলিং কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী, কলেজগুলোয় উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদানও চালু থাকবে।

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রস্তাবিত কাঠামোতে সাতটি কলেজসহ সারা দেশের সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতির মতো মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। তাঁরা কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে ‘অধিভুক্তিমূলক কাঠামোতে’ নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন।

অন্যদিকে কলেজগুলোর বর্তমান শিক্ষার্থীদের একাংশ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি কাঠামো দ্রুত নিশ্চিত করার পক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্রুততম সময়ে অধ্যাদেশ জারির দাবি জানায়। গত রোববার ও গতকাল সোমবার শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা।

আজ ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত রাখার ঘোষণা এল তাদের কাছ থেকে।

অপর দিকে উচ্চমাধ্যমিক ও অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতোই প্রস্তাবিত কাঠামোর বিরোধিতা করে বলছে, স্কুলিং কাঠামোয় কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকবে না।

এমন বাস্তবতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সব মহলের সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যাদেশের খসড়া পরিমার্জন ও চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। ২৫ ডিসেম্বর খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা আয়োজনের কথা রয়েছে। আর প্রথম ব্যাচের (২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীদের ক্লাস আগামী ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রবিন হোসেন বলেন, ‘আমরা বরাবরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সরকার তথা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যশীল। বিগত সময়ের মতো এবারও আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের যে সময়সীমা জানানো হয়েছে, সে সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ এবং নবীনদের পাঠদান শুরু হবে। আমরা শুনেছি, চলতি মাসের মধ্যে অধ্যাদেশের আরেকটি খসড়া প্রকাশ করা হবে। আমরা সেই খসড়ায় গভীর দৃষ্টি রাখছি। শুনেছি, পূর্বের খসড়ায় বৃহৎ সংশোধনী আনা হচ্ছে। শিক্ষা সিন্ডিকেট তথা ষড়যন্ত্রকারীদের প্রেসক্রিপশনে এমন সংশোধনী আনা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে আমাদের আশঙ্কা আছে।’

অধ্যাদেশে গুণগত শিক্ষার মান ও অধিকার সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে রবিন বলেন, মন্ত্রণালয়ের অধ্যাদেশে যদি এর ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে শিক্ষার্থীরা সে অধ্যাদেশ ছুড়ে ফেলে দেবেন। শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে কোনো ষড়যন্ত্রকারীদের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীদের গুণগত শিক্ষার মান নিশ্চিতের লক্ষ্যেই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ নিয়ে সভা ২৫ ডিসেম্বর, নতুন বছরে প্রথম দিন ক্লাস শুরু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ১৩
প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ জারির দাবিতে শিক্ষা ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করে নানা স্লোগান দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ জারির দাবিতে শিক্ষা ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করে নানা স্লোগান দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি) প্রথম ব্যাচের ক্লাস আগামী ১ জানুয়ারি শুরু হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের খসড়া ২৫ ডিসেম্বর আন্তমন্ত্রণালয় সভায় উপস্থাপন করা হবে।

অধ্যাদেশ জারির দাবিতে শিক্ষার্থীদের একাংশের শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধ্যাদেশ সংশোধন করা হচ্ছে জানিয়ে বলেছে, এ প্রক্রিয়া ‘সময়সাপেক্ষ’।

আজ বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৯ হাজার ৩৮৮ জন শিক্ষার্থী ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট, বিজ্ঞান ইউনিট ও ব্যবসাশিক্ষা ইউনিটে ভর্তি নিশ্চয়ন করেছেন। বিদ্যমান একাডেমিক কাঠামোতে ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর জন্য স্ব-স্ব কলেজের শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আসন্ন শীতকালীন ছুটি শেষে ১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে বলে শিক্ষক প্রতিনিধিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সুধীজনসহ বিভিন্ন মহল হতে পাঁচ হাজারের বেশি মতামত পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত প্রতিটি মতামত আইনগত ও বাস্তবতার নিরিখে পর্যালোচনা করে খসড়া পরিমার্জন করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, পরিমার্জনের কাজ সম্পন্ন করে ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিমার্জিত খসড়ার ওপর আন্তমন্ত্রণালয় সভা করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে সাত কলেজের সম্পৃক্ততার ধরন বিষয়ে বাস্তবসম্মত, কার্যকর ও উপযোগী কাঠামো নির্ধারণসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সব বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে ও বিধিবদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করে অধ্যাদেশের খসড়া পরিমার্জন করা হচ্ছে।

এদিকে এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আজ দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। দুপুরের পর আব্দুল গণি রোডের শিক্ষা ভবনের সামনের সংযোগ সড়ক থেকে সচিবালয় অভিমুখী সড়কে অবস্থান নেন তাঁরা। এতে হাইকোর্ট মোড় থেকে সচিবালয় অভিমুখে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট হয়। শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে গতকাল রোববার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত শিক্ষা ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

জানতে চাইলে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ২০২৪-২৫ ব্যাচের ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবু বকর আজ দুপুরে বলেন, ‘অধ্যাদেশ জারি হওয়ার আগপর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব ৷ দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজকে নিয়ে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠনের কার্যক্রম চলছে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। খসড়ায় সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারি’ বা ‘স্কুলিং’ কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী কলেজগুলোতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদানও চালু থাকবে।

ওই খসড়া প্রকাশের পর কলেজগুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভিন্ন অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন। ওই সাত কলেজসহ সারা দেশের সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতির মতো মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার শঙ্কায় আছেন। তাঁরা কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে ‘অধিভুক্তিমূলক কাঠামোতে’ নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের একাংশ দ্রুত অধ্যাদেশের দাবি জানিয়েছেন এবং উচ্চমাধ্যমিক ও অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ ‘স্কুলিং’ কাঠামো বাতিল এবং কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার দাবি জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত