Ajker Patrika

মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা: যেসব বিষয় মাথায় রাখা চাই

সপ্তর্ষি মণ্ডল
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৩, ১৪: ৪৯
মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা: যেসব বিষয় মাথায় রাখা চাই

ভর্তি পরীক্ষার বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। স্বপ্নের এই অগ্রযাত্রায় নিজেকে সাবলীলভাবে প্রস্তুত করাটা জরুরি। এই প্রস্তুতি তোমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে। তাই হাতের কয়টা দিন তোমরা জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা অর্জনের জন্য পরিকল্পিতভাবে ব্যয় করো।

কোচিং, প্রাইভেট বা যেকোনো প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা কেবল নিজের সময় ব্যবস্থাপনা ও পরীক্ষা দেওয়ার মনোভাব তৈরির জন্য। পরবর্তী দুই মাস অনেক পরীক্ষা, প্রতিযোগিতায় পার করলেও এই কয়েকটা দিন এগুলো আর না করাই শ্রেয়। তবে প্রতিদিন সকাল ১০টায় একটা ১০০ নম্বরের প্রশ্ন সমাধান করলে ১০ মার্চের পরীক্ষায় ঠিক সকাল ১০টায় পরীক্ষার ভয়টা অনেকাংশেই কমে যাবে।

সবার আগে সুস্থতা
পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার, পানি, পর্যাপ্ত বিশ্রাম জরুরি। ভর্তির আগে আমরা অনেকেই রাত জেগে পড়ে সকালে অনেক দেরিতে উঠি। কিন্তু ১০ মার্চের পরীক্ষাটি কিন্তু সকাল ১০টায়। তো এই শেষ সপ্তাহটি অভ্যাস করতে হবে রাতে ১২টায় ঘুমিয়ে সকাল ৬টার মধ্যে উঠতে। ন্যূনতম ৬ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কারণ, প্রস্তুতি তোমার শেষ, এখন শুধু সেটার যথাযথ প্রয়োগ দরকার। এর জন্য সুস্থ শরীর ও মনের বিকল্প নেই। 

এখন কঠিন টপিক নয়
পরীক্ষার আগের এই কয়েকটা দিন শুধু পাঠ্যবই পড়াই শ্রেয়। গুরুত্বপূর্ণ ছক বৈশিষ্ট্য, পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র, সব বিষয়ের অনুশীলনীর প্রশ্ন—এগুলো থাকবে রিভিশনের তালিকায়। সাধারণ জ্ঞানের জন্য বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ—বিষয়গুলো রিভিশন করতে হবে। ইংরেজি বিগত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএসের প্রশ্ন এ-সম্পর্কিত টপিকই পড়া উচিত। বাদ দিতে হবে কঠিন টপিক। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের চ্যাপ্টারগুলোতে অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। 

মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে হবে
মেডিকেল পরীক্ষার সঙ্গে আমাদের অনেক আবেগ, পরিবারের প্রত্যাশা, নিজেকে প্রমাণ করার আকাঙ্ক্ষা জড়িয়ে থাকে। আবার মাত্র ১ ঘণ্টার একটা পরীক্ষায় লক্ষাধিক পরীক্ষার্থীর সব মিলিয়ে ভালো প্রস্তুতি থাকলেও মানসিক চাপ থাকাটাই স্বাভাবিক। চাপের মধ্যেও পরীক্ষা ভালোভাবে দেওয়ার জন্য নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।

  • প্রতিযোগীদের দিকে নয়; বরং আমার ফোকাস হতে হবে নিজের দিকেই। ভাবতে হবে আমি পড়াশোনা করেছি। ৮৫ থেকে ৯০ মার্কস পেলেই আমি ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাব। কিংবা ৭০ থেকে ৭৫ পার হলে আমার চান্স পাওয়া নিশ্চিত এবং এটা আমি পারি।আমি প্রস্তুতির সময় অনেক পরীক্ষা দিয়েছি ১০ মার্চ ওই রকমই আরেকটি পরীক্ষা।
  • মনে রাখব, প্রশ্ন কঠিন বা সহজ—যা-ই হোক সেটা সবার জন্য। তাই আমার যোগ্যতা অনুযায়ী আমি অবশ্যই ফল পাব। দিনশেষে ভালো-মন্দ যা-ই হোক না কেন সেটা স্রষ্টার ইচ্ছা। আজকের ব্যর্থতা কালকে ভালো কিছুই বয়ে আনবে। 

ভাবতে হবে ব্যর্থতার বিকল্প
এক ঘণ্টার একটা পরীক্ষা অনেক কিছুই নির্ধারণ করে কিন্তু কখনোই এটা নিশ্চিতভাবে একটা মানুষের যোগ্যতা বা অযোগ্যতার মানদণ্ড না। হাতে অনেক অপশন আছে যেমন:

  • ডেন্টাল
  • এএমসি/এএফএমসি
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ
  • কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
  • গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা
  • দ্বিতীয়বার মেডিকেল পরীক্ষা

আমরা কেউ জানি না, আজকে একটা ব্যর্থতা, হয়তো কালকে অনেক বড় একটা সাফল্যের পথ খুলে দিতে পারে। 

পরীক্ষার আগের দিন
স্বাভাবিকভাবে ঠান্ডা মাথায় শুধু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই পড়তে হবে। রাত ১০টার পরে আর পড়তে না যাওয়াই ভালো। বাবা-মা পরিবারের সঙ্গে কিছু সময় কাটাও বা ফোনে কথা বলো। নিজ ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করো, নিজেকে উৎসাহ দাও। পরীক্ষার আগের রাতে পুরোনো পড়া মনে করতে যাওয়ার দরকার নেই। প্রয়োজনীয় কলম, পেনসিল, অ্যাডমিট কার্ড—ওগুলো একটা স্বচ্ছ ফাইলে নিয়ে নাও। 
ঘুমাতে যাও তাড়াতাড়ি। ঘুম না এলে চুপচাপ শুয়ে স্রষ্টাকে স্মরণ করো। তোমার আগামীকালের পরীক্ষাটি তোমার জীবনের একটা অংশমাত্র। আর তোমার সৎ পরিশ্রম কখনোই বিফল হবে না। 

পরীক্ষার দিন করণীয়
সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়ো। গোসল করে একটা পরিপাটি ও আরামদায়ক পোশাক পরো। এই পোশাকটিও তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। পরীক্ষার আগে ভারী খাবার না খেয়ে রোজকার স্বাভাবিক নাশতা করো, তবে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। হলের জন্য সঙ্গে দুটো চকলেট রাখো। পরীক্ষার শুরুর আগে খেতে পারো। গ্লুকোজ ব্রেনকে শক্তি জোগায়। হলে পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা আগে পৌঁছাবে। সেই অনুযায়ী দূরত্ব ও যানজটের হিসাব মাথায় রেখে হাতের সময় নিয়ে বের হতে হবে। পরীক্ষার হলের ভিড়ে ভয় পাওয়া যাবে না। প্রত্যেকে ঠিক তোমার মতোই। রুম ও সিট নম্বর খুঁজে বসে আগে চেক করো বেঞ্চ ঠিক আছে কি না। সমস্যা থাকলে আগেই হলের দায়িত্বে থাকা অফিসারকে জানাও। আশপাশের কারও সঙ্গে বেশি কথা না বলা ভালো। তবে হালকা কথা বলা অনেক সময় টেনশন কমিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা আনতে সাহায্য করে। পরীক্ষার পরিদর্শক অফিসারদের নির্দেশনা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। ঘড়ি যদি বেশি দূরে থাকে পরিদর্শকের কাছে কয়েক বার করে সময় জিজ্ঞেস করতে পারো। এক ঘণ্টার ১০০টা এমসিকিউ দাগানোর মূল হাতিয়ার সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা।

প্রশ্ন পেলে যা করবে
যেকোনো সহজ একটা প্রশ্ন দিয়ে একেক করে দাগানো শুরু করবে। প্রশ্ন আর ওএমআরের সিরিয়াল খেয়াল রাখতে হবে। প্রশ্নটা সমাধান করবে তিনটি পর্যায়ে।

  • প্রথমত, সবচেয়ে সহজ জানা প্রশ্নের উত্তর করবে, বাকিগুলোর পাশে পেনসিলের টিক মার্ক দিয়ে রাখো।
  • দ্বিতীয়ত, একটু চিন্তা/অ্যানালাইসিস করা বা গাণিতিক সমস্যার সমাধান করো।
  • তৃতীয়ত, যেগুলো অনুমানে দাগাবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে যেটির দুটি অপশনের মাঝে কনফিউশন সেগুলো দাগাতে হবে, যদিও নেগেটিভ মার্ক থাকে; তবুও অনুমানে দাগানো পাঁচটি প্রশ্নের যদি একটিও সঠিক হয়, তবে কোনো মার্ক কমবে না। তবে পাঁচটিতে দুটি ঠিক হলেই তোমার দশমিক ২৫ নম্বর অর্জন হবে। তবে অনুমানের ঝুঁকি নিতে হবে ঠান্ডা মাথায়। এক ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই গুনে দেখো কোনো সহজ প্রশ্ন বাদ গেল কি না; রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঠিক লিখেছ কি না।দেখতে দেখতে এক ঘণ্টার একটা ছোট পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল? এখন দুই হাত তুলে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করো। যথাসময় তোমার যথাযোগ্য ফলাফলটি তুমি পাবে। সবশেষে এটাই বলতে চাই, প্রতিযোগিতার খাতিরে নয় ডাক্তার পেশার প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে তোমার সাধ্যমতো চেষ্টা করো। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। দেখা হবে স্বপ্নের ক্যাম্পাসে।

সপ্তর্ষি মণ্ডল, শিক্ষার্থী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত