Ajker Patrika

এসএসসিতে গণিতে ফল বিপর্যয়ের কারণ ও উত্তরণের উপায়

শিক্ষা ডেস্ক
অধ্যাপক ড. পেয়ার আহম্মেদ
অধ্যাপক ড. পেয়ার আহম্মেদ

২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার গণিত বিষয়ের ফলে ব্যাপক বিপর্যয় হয়েছে। বিশেষ করে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি যে কতটা দুর্বল ও নড়বড়ে, তা অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে। এই বছরের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার গণিতে মাত্র ৭৭.৪৬ শতাংশ। যেখানে বাংলায় এই হার ৯৭.২৭ শতাংশ, রসায়নে ৯৪.৭৬ শতাংশ এবং পদার্থবিজ্ঞানে ৯৪.০২ শতাংশ। বরিশাল বোর্ডের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। সেখানে গণিতে ফেল করেছে ৩৫.৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। ইংরেজিতেও প্রায় একই রকম ভয়াবহ চিত্র।

প্রশ্ন জাগে, কেন এত শিক্ষার্থী গণিতে ফেল করছে? এর পেছনে রয়েছে একাধিক গভীর ও কাঠামোগত সমস্যা, যা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক দুর্বলতাকে তুলে ধরে। নিচে গণিত বিষয়ে ফল বিপর্যয়ের কারণ ও উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো—

বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) প্রকাশিত তথ্য বলছে, দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে ৬৪ হাজার ১৪৭ জন গণিত শিক্ষক রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৩.২২ শতাংশ শিক্ষক গণিতে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর করেছেন। অর্থাৎ, প্রায় ৮৬.৭৮ শতাংশ গণিত শিক্ষকই গণিত বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অদক্ষ।

ব্যানবেইসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গণিত শিক্ষকদের মধ্যে ১৮.৭২ শতাংশ পদার্থ-রসায়নের সঙ্গে মিলিয়ে বিএসসি করেছেন, আর ১২.০৭ শতাংশ অন্য বিষয়ের সঙ্গে গণিত নিয়ে বিএসসি করেছেন। সুতরাং, এই পরিস্থিতিতে গণিতে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে গণিত শেখার অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

গণিতে ফেলের কারণ

  • অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ: বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠানে ইতিহাস, দর্শন কিংবা সমাজবিজ্ঞানের গ্র্যাজুয়েটদের দিয়ে গণিত পড়ানো হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। গাইনি ডাক্তার দিয়ে হার্ট সার্জারি করালে যেমন বিপদ, তেমনি বিষয়ভিত্তিক অদক্ষ শিক্ষকের হাতে গণিত পড়ানো এক ধরনের জাতীয় দুর্ভাগ্য।
  • প্রশ্ন প্রণয়নে অদক্ষতা ও মূল্যায়নে ঘাটতি: শিক্ষক অদক্ষ হলে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও খাতা মূল্যায়নে অবিচার হবেই। পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর মেধার গভীরতা না বুঝে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয় এবং স্পষ্ট জ্ঞান না থাকায় খাতা মূল্যায়নে অবিচার করা হয়।
  • প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ভিত্তি দুর্বল: গণিত শেখার বীজ রোপণ করতে হয় প্রাথমিক স্তর থেকেই। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত পদ্ধতিগত পরিবর্তন না আনলে ওপরের স্তরে ব্যর্থতা অনিবার্য।

উত্তরণের উপায়সমূহ:

  • গণিতের ওপর বিএসসি, এমএসসি ও সম্ভাব্য ক্ষেত্রে পিএইচডি ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা।
  • প্রথম শ্রেণি থেকে গণিতে ভীতি দূরীকরণ ও গণিতকে জনপ্রিয় করে তোলার প্রয়োজনীয় Recommendation দেওয়া।
  • সৃজনশীল, উদ্ভাবনী ও বাস্তবমুখী গণিত পাঠক্রম চালু।
  • শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক গণিতবিষয়ক টিচার্স ট্রেনিং দেওয়া।
  • সঠিক খাতা মূল্যায়নের জন্য স্বচ্ছ প্রশিক্ষণ ও স্বয়ংক্রিয় মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু।
  • ভার্চুয়াল ও AI সহায়ক গণিত শেখার প্ল্যাটফর্ম তৈরি (বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে)।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত