শাহ বিলিয়া জুলফিকার

বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমানে প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ মাত্র ১.২৫ বিলিয়ন ডলার, যা বাজারের তুলনায় নগণ্য। তবে এই খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। ফলে দক্ষ লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, কীভাবে একজন শিক্ষার্থী লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন, কোথায় পড়বেন, কী কী বিষয় পড়ানো হয়, চাকরির সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনা কেমন—এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. শরীফুল ইসলাম।
কোথায় পড়বেন
বাংলাদেশে বর্তমানে চামড়া শিল্পসংক্রান্ত বিষয় পড়ার সুযোগ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি বিভাগে আসন সংখ্যা ৫০টি। তাছাড়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রতিবছর ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির জন্য বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আবেদনের যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩.৫ জিপিএসহ মোট জিপি-৮। কুয়েটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির জন্য প্রার্থীকে চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েটের স্নাতক পর্যায়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ন্যূনতম জিপিএ-৪ এবং উচ্চমাধ্যমিকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজি মিলিয়ে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট ১৮ হতে হবে।
যা পড়ানো হয়
চামড়াশিল্পের পণ্যগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স খোলা হলেও তিনটি বিষয়ের পড়াশোনায় বেশ মিল রয়েছে। এখানে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে শুরু করে উচ্চ মানসম্পন্ন চামড়াজাত পণ্য যেমন জুতা, ব্যাগ উৎপাদনের জ্ঞান আহরণ করেন শিক্ষার্থীরা। তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি হাতেকলমে শিক্ষালাভের জন্য রয়েছে সমৃদ্ধ কয়েকটি ল্যাব।
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সম্ভাবনা
বাংলাদেশের চামড়াশিল্পের ঐতিহ্য ও বৈশ্বিক বাজারে চাহিদার কারণে এই খাতে কর্মসংস্থানের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি বিষয় যেখানে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ, উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষার মাধ্যমে ভালো ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
সরকারি চাকরি
বাংলাদেশে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সরকারি খাতে চাকরির সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন বাংলাদেশ লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক সিনিয়র অফিসার (প্রকৌশল-লেদার টেকনোলজি) নিয়োগ দিয়ে থাকে। আবার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসেও চাকরি করছেন অসংখ্য লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট।
বেসরকারি চাকরি
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের সুযোগ বেশি মূলত বেসরকারি সেক্টরে। বাংলাদেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন অ্যাপেক্স, বাটা, বে-এর মতো বড় বড় কোম্পানি লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও চর্ম প্রকৌশলীদের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বায়িং হাউসগুলোতেও অনেক লেদার ইঞ্জিনিয়ারের কর্মসংস্থান হয়ে থাক।
উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যাঁরা উদ্যোক্তা হতে চান তাঁদের জন্যও অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বিশ্বব্যাপী রয়েছে। বাংলাদেশে এই পণ্যের কাঁচামাল সহজলভ্য। যাঁরা নিজেদের উদ্যোগে কারখানা স্থাপন করতে চান, তাঁরা সহজেই চামড়া প্রক্রিয়াজাত, জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ও অন্যান্য চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করতে পারেন।
উচ্চশিক্ষার অবারিত সুযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েট উভয় প্রতিষ্ঠানে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমএসসি কোর্স চালু রয়েছে। অনেকেই কর্মজীবনে গিয়ে হিউম্যান রিসোর্স, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে এমবিএ করছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, প্রোডাকশন প্ল্যানিং ইত্যাদির ওপর এমএসসি/পিজিডি করছেন কেউ কেউ। দেশের বাইরে ভারত, ইতালি, চীন, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে লেদার ইঞ্জিনিয়াররা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে-বিদেশে চামড়া সেক্টরে অবদান রাখছেন।
বেতন
রপ্তানিমুখী ট্যানারি ও জুতা ফ্যাক্টরিতে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক বেতন ২০-২৫ হাজার টাকা। অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে বেতন বৃদ্ধি পায়। তবে বহুজাতিক সোর্সিং প্রতিষ্ঠান ডেকাথলন, টিম্বারল্যান্ড, অ্যাডিডাস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে প্রারম্ভিক বেতন আরও বেশি। বাংলাদেশ লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে মূল বেতন ২২,০০০ টাকা। পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।
সমস্যা
বাংলাদেশের চামড়াশিল্প, বিশেষ করে ট্যানারিগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (LWG)-এর পরিবেশ সনদ না থাকায় কিছু বায়ার বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত চামড়ার ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করছে। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও এখন অনেক সচেতন। ফলে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের সম্ভাবনা বরং উজ্জ্বলতর হচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমানে প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ মাত্র ১.২৫ বিলিয়ন ডলার, যা বাজারের তুলনায় নগণ্য। তবে এই খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। ফলে দক্ষ লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, কীভাবে একজন শিক্ষার্থী লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন, কোথায় পড়বেন, কী কী বিষয় পড়ানো হয়, চাকরির সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনা কেমন—এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. শরীফুল ইসলাম।
কোথায় পড়বেন
বাংলাদেশে বর্তমানে চামড়া শিল্পসংক্রান্ত বিষয় পড়ার সুযোগ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি বিভাগে আসন সংখ্যা ৫০টি। তাছাড়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রতিবছর ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির জন্য বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আবেদনের যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩.৫ জিপিএসহ মোট জিপি-৮। কুয়েটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির জন্য প্রার্থীকে চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েটের স্নাতক পর্যায়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ন্যূনতম জিপিএ-৪ এবং উচ্চমাধ্যমিকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজি মিলিয়ে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট ১৮ হতে হবে।
যা পড়ানো হয়
চামড়াশিল্পের পণ্যগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স খোলা হলেও তিনটি বিষয়ের পড়াশোনায় বেশ মিল রয়েছে। এখানে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে শুরু করে উচ্চ মানসম্পন্ন চামড়াজাত পণ্য যেমন জুতা, ব্যাগ উৎপাদনের জ্ঞান আহরণ করেন শিক্ষার্থীরা। তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি হাতেকলমে শিক্ষালাভের জন্য রয়েছে সমৃদ্ধ কয়েকটি ল্যাব।
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সম্ভাবনা
বাংলাদেশের চামড়াশিল্পের ঐতিহ্য ও বৈশ্বিক বাজারে চাহিদার কারণে এই খাতে কর্মসংস্থানের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি বিষয় যেখানে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ, উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষার মাধ্যমে ভালো ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
সরকারি চাকরি
বাংলাদেশে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সরকারি খাতে চাকরির সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন বাংলাদেশ লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক সিনিয়র অফিসার (প্রকৌশল-লেদার টেকনোলজি) নিয়োগ দিয়ে থাকে। আবার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসেও চাকরি করছেন অসংখ্য লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট।
বেসরকারি চাকরি
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের সুযোগ বেশি মূলত বেসরকারি সেক্টরে। বাংলাদেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন অ্যাপেক্স, বাটা, বে-এর মতো বড় বড় কোম্পানি লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও চর্ম প্রকৌশলীদের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বায়িং হাউসগুলোতেও অনেক লেদার ইঞ্জিনিয়ারের কর্মসংস্থান হয়ে থাক।
উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যাঁরা উদ্যোক্তা হতে চান তাঁদের জন্যও অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বিশ্বব্যাপী রয়েছে। বাংলাদেশে এই পণ্যের কাঁচামাল সহজলভ্য। যাঁরা নিজেদের উদ্যোগে কারখানা স্থাপন করতে চান, তাঁরা সহজেই চামড়া প্রক্রিয়াজাত, জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ও অন্যান্য চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করতে পারেন।
উচ্চশিক্ষার অবারিত সুযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েট উভয় প্রতিষ্ঠানে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমএসসি কোর্স চালু রয়েছে। অনেকেই কর্মজীবনে গিয়ে হিউম্যান রিসোর্স, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে এমবিএ করছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, প্রোডাকশন প্ল্যানিং ইত্যাদির ওপর এমএসসি/পিজিডি করছেন কেউ কেউ। দেশের বাইরে ভারত, ইতালি, চীন, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে লেদার ইঞ্জিনিয়াররা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে-বিদেশে চামড়া সেক্টরে অবদান রাখছেন।
বেতন
রপ্তানিমুখী ট্যানারি ও জুতা ফ্যাক্টরিতে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক বেতন ২০-২৫ হাজার টাকা। অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে বেতন বৃদ্ধি পায়। তবে বহুজাতিক সোর্সিং প্রতিষ্ঠান ডেকাথলন, টিম্বারল্যান্ড, অ্যাডিডাস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে প্রারম্ভিক বেতন আরও বেশি। বাংলাদেশ লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে মূল বেতন ২২,০০০ টাকা। পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।
সমস্যা
বাংলাদেশের চামড়াশিল্প, বিশেষ করে ট্যানারিগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (LWG)-এর পরিবেশ সনদ না থাকায় কিছু বায়ার বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত চামড়ার ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করছে। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও এখন অনেক সচেতন। ফলে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের সম্ভাবনা বরং উজ্জ্বলতর হচ্ছে।
শাহ বিলিয়া জুলফিকার

বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমানে প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ মাত্র ১.২৫ বিলিয়ন ডলার, যা বাজারের তুলনায় নগণ্য। তবে এই খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। ফলে দক্ষ লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, কীভাবে একজন শিক্ষার্থী লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন, কোথায় পড়বেন, কী কী বিষয় পড়ানো হয়, চাকরির সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনা কেমন—এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. শরীফুল ইসলাম।
কোথায় পড়বেন
বাংলাদেশে বর্তমানে চামড়া শিল্পসংক্রান্ত বিষয় পড়ার সুযোগ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি বিভাগে আসন সংখ্যা ৫০টি। তাছাড়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রতিবছর ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির জন্য বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আবেদনের যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩.৫ জিপিএসহ মোট জিপি-৮। কুয়েটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির জন্য প্রার্থীকে চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েটের স্নাতক পর্যায়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ন্যূনতম জিপিএ-৪ এবং উচ্চমাধ্যমিকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজি মিলিয়ে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট ১৮ হতে হবে।
যা পড়ানো হয়
চামড়াশিল্পের পণ্যগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স খোলা হলেও তিনটি বিষয়ের পড়াশোনায় বেশ মিল রয়েছে। এখানে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে শুরু করে উচ্চ মানসম্পন্ন চামড়াজাত পণ্য যেমন জুতা, ব্যাগ উৎপাদনের জ্ঞান আহরণ করেন শিক্ষার্থীরা। তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি হাতেকলমে শিক্ষালাভের জন্য রয়েছে সমৃদ্ধ কয়েকটি ল্যাব।
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সম্ভাবনা
বাংলাদেশের চামড়াশিল্পের ঐতিহ্য ও বৈশ্বিক বাজারে চাহিদার কারণে এই খাতে কর্মসংস্থানের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি বিষয় যেখানে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ, উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষার মাধ্যমে ভালো ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
সরকারি চাকরি
বাংলাদেশে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সরকারি খাতে চাকরির সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন বাংলাদেশ লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক সিনিয়র অফিসার (প্রকৌশল-লেদার টেকনোলজি) নিয়োগ দিয়ে থাকে। আবার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসেও চাকরি করছেন অসংখ্য লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট।
বেসরকারি চাকরি
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের সুযোগ বেশি মূলত বেসরকারি সেক্টরে। বাংলাদেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন অ্যাপেক্স, বাটা, বে-এর মতো বড় বড় কোম্পানি লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও চর্ম প্রকৌশলীদের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বায়িং হাউসগুলোতেও অনেক লেদার ইঞ্জিনিয়ারের কর্মসংস্থান হয়ে থাক।
উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যাঁরা উদ্যোক্তা হতে চান তাঁদের জন্যও অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বিশ্বব্যাপী রয়েছে। বাংলাদেশে এই পণ্যের কাঁচামাল সহজলভ্য। যাঁরা নিজেদের উদ্যোগে কারখানা স্থাপন করতে চান, তাঁরা সহজেই চামড়া প্রক্রিয়াজাত, জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ও অন্যান্য চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করতে পারেন।
উচ্চশিক্ষার অবারিত সুযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েট উভয় প্রতিষ্ঠানে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমএসসি কোর্স চালু রয়েছে। অনেকেই কর্মজীবনে গিয়ে হিউম্যান রিসোর্স, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে এমবিএ করছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, প্রোডাকশন প্ল্যানিং ইত্যাদির ওপর এমএসসি/পিজিডি করছেন কেউ কেউ। দেশের বাইরে ভারত, ইতালি, চীন, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে লেদার ইঞ্জিনিয়াররা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে-বিদেশে চামড়া সেক্টরে অবদান রাখছেন।
বেতন
রপ্তানিমুখী ট্যানারি ও জুতা ফ্যাক্টরিতে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক বেতন ২০-২৫ হাজার টাকা। অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে বেতন বৃদ্ধি পায়। তবে বহুজাতিক সোর্সিং প্রতিষ্ঠান ডেকাথলন, টিম্বারল্যান্ড, অ্যাডিডাস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে প্রারম্ভিক বেতন আরও বেশি। বাংলাদেশ লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে মূল বেতন ২২,০০০ টাকা। পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।
সমস্যা
বাংলাদেশের চামড়াশিল্প, বিশেষ করে ট্যানারিগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (LWG)-এর পরিবেশ সনদ না থাকায় কিছু বায়ার বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত চামড়ার ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করছে। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও এখন অনেক সচেতন। ফলে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের সম্ভাবনা বরং উজ্জ্বলতর হচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমানে প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ মাত্র ১.২৫ বিলিয়ন ডলার, যা বাজারের তুলনায় নগণ্য। তবে এই খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। ফলে দক্ষ লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, কীভাবে একজন শিক্ষার্থী লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন, কোথায় পড়বেন, কী কী বিষয় পড়ানো হয়, চাকরির সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনা কেমন—এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. শরীফুল ইসলাম।
কোথায় পড়বেন
বাংলাদেশে বর্তমানে চামড়া শিল্পসংক্রান্ত বিষয় পড়ার সুযোগ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি বিভাগে আসন সংখ্যা ৫০টি। তাছাড়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রতিবছর ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির জন্য বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আবেদনের যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩.৫ জিপিএসহ মোট জিপি-৮। কুয়েটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির জন্য প্রার্থীকে চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েটের স্নাতক পর্যায়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ন্যূনতম জিপিএ-৪ এবং উচ্চমাধ্যমিকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজি মিলিয়ে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট ১৮ হতে হবে।
যা পড়ানো হয়
চামড়াশিল্পের পণ্যগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স খোলা হলেও তিনটি বিষয়ের পড়াশোনায় বেশ মিল রয়েছে। এখানে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে শুরু করে উচ্চ মানসম্পন্ন চামড়াজাত পণ্য যেমন জুতা, ব্যাগ উৎপাদনের জ্ঞান আহরণ করেন শিক্ষার্থীরা। তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি হাতেকলমে শিক্ষালাভের জন্য রয়েছে সমৃদ্ধ কয়েকটি ল্যাব।
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সম্ভাবনা
বাংলাদেশের চামড়াশিল্পের ঐতিহ্য ও বৈশ্বিক বাজারে চাহিদার কারণে এই খাতে কর্মসংস্থানের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি বিষয় যেখানে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ, উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষার মাধ্যমে ভালো ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
সরকারি চাকরি
বাংলাদেশে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সরকারি খাতে চাকরির সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন বাংলাদেশ লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক সিনিয়র অফিসার (প্রকৌশল-লেদার টেকনোলজি) নিয়োগ দিয়ে থাকে। আবার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসেও চাকরি করছেন অসংখ্য লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট।
বেসরকারি চাকরি
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের সুযোগ বেশি মূলত বেসরকারি সেক্টরে। বাংলাদেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন অ্যাপেক্স, বাটা, বে-এর মতো বড় বড় কোম্পানি লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও চর্ম প্রকৌশলীদের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বায়িং হাউসগুলোতেও অনেক লেদার ইঞ্জিনিয়ারের কর্মসংস্থান হয়ে থাক।
উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যাঁরা উদ্যোক্তা হতে চান তাঁদের জন্যও অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বিশ্বব্যাপী রয়েছে। বাংলাদেশে এই পণ্যের কাঁচামাল সহজলভ্য। যাঁরা নিজেদের উদ্যোগে কারখানা স্থাপন করতে চান, তাঁরা সহজেই চামড়া প্রক্রিয়াজাত, জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ও অন্যান্য চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করতে পারেন।
উচ্চশিক্ষার অবারিত সুযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েট উভয় প্রতিষ্ঠানে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমএসসি কোর্স চালু রয়েছে। অনেকেই কর্মজীবনে গিয়ে হিউম্যান রিসোর্স, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে এমবিএ করছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, প্রোডাকশন প্ল্যানিং ইত্যাদির ওপর এমএসসি/পিজিডি করছেন কেউ কেউ। দেশের বাইরে ভারত, ইতালি, চীন, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে লেদার ইঞ্জিনিয়াররা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে-বিদেশে চামড়া সেক্টরে অবদান রাখছেন।
বেতন
রপ্তানিমুখী ট্যানারি ও জুতা ফ্যাক্টরিতে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক বেতন ২০-২৫ হাজার টাকা। অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে বেতন বৃদ্ধি পায়। তবে বহুজাতিক সোর্সিং প্রতিষ্ঠান ডেকাথলন, টিম্বারল্যান্ড, অ্যাডিডাস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে প্রারম্ভিক বেতন আরও বেশি। বাংলাদেশ লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে মূল বেতন ২২,০০০ টাকা। পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।
সমস্যা
বাংলাদেশের চামড়াশিল্প, বিশেষ করে ট্যানারিগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (LWG)-এর পরিবেশ সনদ না থাকায় কিছু বায়ার বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত চামড়ার ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করছে। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও এখন অনেক সচেতন। ফলে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের সম্ভাবনা বরং উজ্জ্বলতর হচ্ছে।

দেশে মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি আছে। রয়েছে কর্মসংস্থানের অভাব, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা। এতে তরুণদের বড় অংশের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় বিদেশমুখী হচ্ছেন তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা। জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) তথ্য বলছে, উচ্চশি
৩ ঘণ্টা আগে
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্নাতকে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়টির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির ডিন মুহাম্মদ তারেক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২ দিন আগে
‘পরিবেশ’ শব্দটি এখন কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা স্বাস্থ্য—সব ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য আলোচ্য বিষয়। কিন্তু এই বোধ সঞ্চার করতে সময় লেগেছে অনেক, আর সেই বিলম্বই আজ পৃথিবীকে করেছে অসুস্থ। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শ...
২ দিন আগে
স্বরবর্ণ হলো ভাষার সুর, কিন্তু সুরে গড়ন না থাকলে গান টেকে না। ব্যঞ্জনবর্ণ বা Consonants হলো সেই গড়ন। এটি ভাষাকে কাঠামো দেয়, শব্দকে শক্তপোক্ত করে তোলে।
২ দিন আগেরাহুল শর্মা, ঢাকা

দেশে মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি আছে। রয়েছে কর্মসংস্থানের অভাব, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা। এতে তরুণদের বড় অংশের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় বিদেশমুখী হচ্ছেন তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা। জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) তথ্য বলছে, উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক দশকে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ৯ অর্থবছরে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে দেশ থেকে বেরিয়ে গেছে প্রায় ৩১১ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা (হিসাবটি গত ৯টি অর্থবছরের ডলারের দর অনুযায়ী)।
শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা বাড়ার কারণ জানতে বিদেশে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থী, বিদেশে পড়তে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবক, শিক্ষকসহ অন্তত ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা। তাঁরা মোটাদাগে পাঁচটি কারণের কথাই বলেছেন। কারণগুলো হলো মানসম্মত উচ্চশিক্ষার অভাব, কর্মসংস্থানের ঘাটতি ও বেকারত্ব বৃদ্ধি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, উন্নত ভবিষ্যতের হাতছানি এবং নিরাপদ ও আধুনিক জীবনযাত্রার আকাঙ্ক্ষা। এর সঙ্গে একমত শিক্ষাবিদেরাও। তাঁরা বলছেন, দেশে উচ্চশিক্ষার মান ও গবেষণার সুযোগ এবং কর্মসংস্থান না বাড়লে এই প্রবণতা আরও বাড়বে।
সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য জানতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় যোগাযোগ করা হলে তাঁরা দেশের উচ্চশিক্ষা দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য ১৯ অক্টোবর অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপাতদৃষ্টে যে চিত্র আপনারা তুলে এনেছেন, তার সঙ্গে আমি একমত।’ মানসম্মত উচ্চশিক্ষার বিষয়টি সামগ্রিক শিক্ষার ওপর নির্ভর করে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে যে শিক্ষার ঘাটতি তৈরি হয়েছে, এর প্রভাব পড়ছে উচ্চশিক্ষায়। এটা সত্য যে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ-শিক্ষার মান এক নয়; বিশেষ করে নতুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
কেন বিদেশমুখীনতা
গত এক সপ্তাহে রাজধানীর গুলশান ও বনানীতে অবস্থিত ভিএফএস গ্লোবাল (বিভিন্ন দেশের সরকার ও দূতাবাসের জন্য ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকরণে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান) অফিসের সামনে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা সবাই এখানে এসেছেন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার জন্য।
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্য জানতে চাইলে ওই সব শিক্ষার্থীর ভাষ্য, দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই, অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। কেউ কেউ দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টি বিবেচনা করে উন্নত ভবিষ্যৎ, আধুনিক ও নিরাপদ জীবনের জন্য বিদেশকে বেছে নিচ্ছেন বলে জানান।
গুলশানে ভিএফএস গ্লোবাল অফিসের সামনে কথা হয় ২০২৪ সালে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করা শাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, দেশে পড়াশোনার মান দিন দিন কমছে। তাই পরিবার চাইছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষে সেখানেই ক্যারিয়ার গড়তে। আর দেশের পরিস্থিতি তো দিন দিন খারাপ হচ্ছে, তাই না?
দেশের উচ্চশিক্ষার মান কমার বিষয়টি উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের চলতি বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি শিশু ১৮ বছর বয়সে সাধারণত ১১ বছর মেয়াদি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করে (প্রথম শ্রেণি থেকে একাদশ শ্রেণি)। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শেখার মান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনায় ৬ দশমিক ৫ বছরের সমতুল্য। অর্থাৎ শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মানে অন্তত সাড়ে ৪ বছর পিছিয়ে বাংলাদেশ।
বিদেশে পড়াশোনা শেষে সেখানেই স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পাস করা মো. শাহরিয়ার। কথা হলে তিনি জানান, দেশে চাকরির নিশ্চয়তা কম। এ ছাড়া যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সব মিলিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে দেশে মোট ২৬ লাখ ২৪ হাজার বেকার ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ছিলেন স্নাতক ডিগ্রিধারী।
ভিসার আবেদন জমা দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট থেকে পাস করা জহির রায়হান জয়ের সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর বাবা তবিরুল রায়হান। উচ্চশিক্ষার জন্য ছেলেকে বিদেশে পাঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দিন দিন আমাদের পড়ালেখার মান কমে যাচ্ছে। এ তো সবাই জানে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ছেলেকে বিদেশে পড়তে পাঠাব। পড়াশোনা শেষে যেন সে সেখানেই চাকরি পায়।’
সম্প্রতি উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপের দেশ সুইডেনে গিয়েছেন সাইম আখন্দ। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশকে বেছে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সেখান থেকে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী নয়, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার মতো নয়। এ জন্যই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা।
উচ্চশিক্ষার জন্য মেধাবীদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ার পেছনে পাঁচ কারণের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আলী জিন্নাহ। তাঁর মতে, এই কারণগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু ছোটখাটো কারণ থাকতে পারে।
আলী জিন্নাহ বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা তো আছেই, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি, কর্মসংস্থানের ঘাটতি, উপযুক্ত সম্মান, মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকা, বসবাসের অনুপযুক্ততা, জীবনমান নিম্নমুখী হওয়া—এমন বহুমাত্রিক কারণে দেশ ছাড়ছেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা। মেধাবীদের দেশে রাখতে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক।
একই ভাষ্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদের। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা-দীক্ষার অবস্থা খুবই শোচনীয়। যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মসংস্থানেরও ঘাটতি রয়েছে। এগুলোই প্রধান কারণ। এ ছাড়া রাজনৈতিক, সামাজিক নানান সংকট তো রয়েছেই।’
বছরে বিদেশে যান অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থী
ইউনেসকোর সর্বশেষ ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫৫টি দেশে পড়াশোনার জন্য গেছেন ৫২ হাজার ৭৯৯ শিক্ষার্থী। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ১৫১ আর ২০২১ সালে ৪৪ হাজার ৩৩৮ জন। এ সংখ্যা ২০১৩ সালে ছিল ২৪ হাজার ১১২ জন।
তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থী বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জুলফিকার আলী জুয়েল বলেন, ইউনেসকোর যে পরিসংখ্যান, তার চেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গেছেন।
রাজধানীতে আইইএলটিএস ও জিআরই কোচিং করায় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিড় বাড়া দেখেই বোঝা যায়, শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ কতটা। বর্তমানে অনলাইনেও বাড়ছে ইংরেজি শেখা ও আইইএলটিএস, টোয়েফল, জিআরই এবং বিভিন্ন দেশের ভাষা শেখার আগ্রহ।
রাবেয়া তানহা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দেশের অনিরাপদ পরিবেশ আমাকে খুবই ভাবাচ্ছে। তাই বিদেশে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
বৈধ পথেই ৯ বছরে গেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা বিগত ৯ অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে উচ্চশিক্ষা বাবদ ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো টাকার পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশিদের বিদেশে শিক্ষার ব্যয় ছিল ৬৬ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় করা এই অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ৭৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)। একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৩ কোটি ৩২ লাখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫২ কোটি ৮ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১ কোটি ৪৫ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ কোটি ৩১ লাখ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২১ কোটি ৮০ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৬১ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৭ কোটি ৭ লাখ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৪ লাখ ডলার বৈধ চ্যানেলে নিয়ে গেছেন শিক্ষার্থীরা।
টাকা বেশি যাচ্ছে অবৈধ পথে
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সাধারণত ভর্তি ফি, এক সেমিস্টারের টিউশন ফি এবং বাসস্থান ও অন্যান্য ফি ইত্যাদি দিয়ে বিদেশে পড়তে চলে যান। এ টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে দুটি পথ—একটি ব্যাংকিং চ্যানেল, অন্যটি অবৈধ পথ হুন্ডি।
একাধিক স্টুডেন্ট কাউন্সেলিং ফার্মের কর্ণধার এবং একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈধ পথে বা ব্যাংকের মাধ্যমে যত টাকা যায়, তার চার-পাঁচ গুণ টাকা অবৈধ পথে যায়। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষার অর্থ পাঠানোর নামে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে। গত ১০ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, একজন তাঁর সন্তানের টিউশন ফি হিসেবে এক সেমিস্টারেই ৪০০-৫০০ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন।
হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে একটি কাউন্সেলিং প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জানান, কোনো শিক্ষার্থী বিদেশে পড়াশোনার জন্য যেতে চাইলে স্থানীয় ব্যাংকে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে (বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে) বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় ফি পরিশোধ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে আয়ের উৎস জানাতে অভিভাবকের অনীহা থাকে। ফলে তাঁরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান। আবার অনেকে কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে আর কিছু হুন্ডিতে পাঠান। আবার অনেকে টাকা পাচারের জন্যও শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে গেছেন ঢাকার ধানমন্ডির এক তরুণ। তিনি জানান, বৈধ পথে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচই আনা সম্ভব হয়। এর বাইরে আরও অনেক খরচ রয়েছে। হুন্ডির মাধ্যমে এই টাকা আনা অনেক সহজ। ওই তরুণ বলেন, তাঁর পরিচিত এক কনসালট্যান্ট ফার্মকে নগদ টাকা দিয়েছেন, তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেছে।
বিষয়টি নজরে আনা হলে অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জুলফিকার আলী জুয়েল অবশ্য বলেন, ‘আমাদের সদস্যদের কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছি, এ ধরনের বেআইনি কাজ যেন কেউ না করে। এতে দেশের ক্ষতি হয়।’
প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকে
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রতারিত হচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। রাজধানীতে গড়ে ওঠা একাধিক কনসালট্যান্সি ফার্ম এসব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকারের মনিটরিং না থাকা এবং বিদেশ গমনে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ায় প্রতারক চক্রগুলো এখন লাগামহীন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চটকদার প্রচারণার মাধ্যমে অসাধু এজেন্সিগুলো প্রধানত তিন ধরনের প্রতারণা করে। এগুলো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপ্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ রাখা এবং বিদেশে না পাঠানো, আগ্রহী প্রার্থীদের ভুয়া কাগজ তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করা এবং ভিসা করে বাইরে পাঠিয়ে প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধা না দেওয়া।
এরই মধ্যে গত বছরের ১৭ অক্টোবর ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান মো. খায়রুল বাশার বাহার এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। পরে গত ১৪ জুলাই খায়রুল বাশারকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ভিসাপ্রাপ্তিও কঠিন হচ্ছে
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ভিসা জটিলতায় ইউরোপের অনেক দেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ, ইউরোপের বেশ কিছু দেশের ভিসা নিতে শিক্ষার্থীদের ভারতে যেতে হয়। কিন্তু এখন ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়া কঠিন হওয়ায় ইউরোপে যাওয়া জটিল হয়ে পড়ছে। এর বাইরে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সারা বিশ্বের জন্য ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন।
এ ছাড়া শুধু জার্মানিতে ভিসা আবেদনে ব্যয় হয় লম্বা সময়। জার্মান দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, তারা বছরে দুই হাজার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। কিন্তু এর বিপরীতে প্রায় ৪০ গুণ আবেদন জমা পড়ে জার্মান দূতাবাসে। যে কারণে এই ধীরগতি।
৮ অক্টোবর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, জার্মানিতে শিক্ষাব্যবস্থা খুবই উচ্চমানের এবং সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ফি লাগে না। কাজেই বাংলাদেশি ছাত্ররা খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাওয়ার জন্য। ৮০ হাজার আবেদন পড়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, জার্মান রাষ্ট্রদূত কয়েক দিন আগে চলে গেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘দেখুন, আমার কিছুই করার নেই। কারণ, আমার মোট সামর্থ্যই হচ্ছে দুই হাজার কেস প্রতিবছর ডিল করা। তার মানে, এত আবেদন তাঁরা গ্রহণ করতে পারবেন না।’
দেশে কমছে বিদেশি শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৩৩ জন। তাঁদের মধ্যে ছাত্রী ১৭১ ও ছাত্র ৪৬২। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬৭০ জন। সেই হিসাবে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী কমেছে ৩৭ জন।

দেশে মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি আছে। রয়েছে কর্মসংস্থানের অভাব, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা। এতে তরুণদের বড় অংশের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় বিদেশমুখী হচ্ছেন তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা। জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) তথ্য বলছে, উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক দশকে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ৯ অর্থবছরে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে দেশ থেকে বেরিয়ে গেছে প্রায় ৩১১ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা (হিসাবটি গত ৯টি অর্থবছরের ডলারের দর অনুযায়ী)।
শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা বাড়ার কারণ জানতে বিদেশে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থী, বিদেশে পড়তে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবক, শিক্ষকসহ অন্তত ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা। তাঁরা মোটাদাগে পাঁচটি কারণের কথাই বলেছেন। কারণগুলো হলো মানসম্মত উচ্চশিক্ষার অভাব, কর্মসংস্থানের ঘাটতি ও বেকারত্ব বৃদ্ধি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, উন্নত ভবিষ্যতের হাতছানি এবং নিরাপদ ও আধুনিক জীবনযাত্রার আকাঙ্ক্ষা। এর সঙ্গে একমত শিক্ষাবিদেরাও। তাঁরা বলছেন, দেশে উচ্চশিক্ষার মান ও গবেষণার সুযোগ এবং কর্মসংস্থান না বাড়লে এই প্রবণতা আরও বাড়বে।
সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য জানতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় যোগাযোগ করা হলে তাঁরা দেশের উচ্চশিক্ষা দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য ১৯ অক্টোবর অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপাতদৃষ্টে যে চিত্র আপনারা তুলে এনেছেন, তার সঙ্গে আমি একমত।’ মানসম্মত উচ্চশিক্ষার বিষয়টি সামগ্রিক শিক্ষার ওপর নির্ভর করে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে যে শিক্ষার ঘাটতি তৈরি হয়েছে, এর প্রভাব পড়ছে উচ্চশিক্ষায়। এটা সত্য যে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ-শিক্ষার মান এক নয়; বিশেষ করে নতুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
কেন বিদেশমুখীনতা
গত এক সপ্তাহে রাজধানীর গুলশান ও বনানীতে অবস্থিত ভিএফএস গ্লোবাল (বিভিন্ন দেশের সরকার ও দূতাবাসের জন্য ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকরণে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান) অফিসের সামনে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা সবাই এখানে এসেছেন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার জন্য।
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্য জানতে চাইলে ওই সব শিক্ষার্থীর ভাষ্য, দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই, অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। কেউ কেউ দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টি বিবেচনা করে উন্নত ভবিষ্যৎ, আধুনিক ও নিরাপদ জীবনের জন্য বিদেশকে বেছে নিচ্ছেন বলে জানান।
গুলশানে ভিএফএস গ্লোবাল অফিসের সামনে কথা হয় ২০২৪ সালে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করা শাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, দেশে পড়াশোনার মান দিন দিন কমছে। তাই পরিবার চাইছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষে সেখানেই ক্যারিয়ার গড়তে। আর দেশের পরিস্থিতি তো দিন দিন খারাপ হচ্ছে, তাই না?
দেশের উচ্চশিক্ষার মান কমার বিষয়টি উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের চলতি বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি শিশু ১৮ বছর বয়সে সাধারণত ১১ বছর মেয়াদি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করে (প্রথম শ্রেণি থেকে একাদশ শ্রেণি)। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শেখার মান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনায় ৬ দশমিক ৫ বছরের সমতুল্য। অর্থাৎ শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মানে অন্তত সাড়ে ৪ বছর পিছিয়ে বাংলাদেশ।
বিদেশে পড়াশোনা শেষে সেখানেই স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পাস করা মো. শাহরিয়ার। কথা হলে তিনি জানান, দেশে চাকরির নিশ্চয়তা কম। এ ছাড়া যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সব মিলিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে দেশে মোট ২৬ লাখ ২৪ হাজার বেকার ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ছিলেন স্নাতক ডিগ্রিধারী।
ভিসার আবেদন জমা দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট থেকে পাস করা জহির রায়হান জয়ের সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর বাবা তবিরুল রায়হান। উচ্চশিক্ষার জন্য ছেলেকে বিদেশে পাঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দিন দিন আমাদের পড়ালেখার মান কমে যাচ্ছে। এ তো সবাই জানে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ছেলেকে বিদেশে পড়তে পাঠাব। পড়াশোনা শেষে যেন সে সেখানেই চাকরি পায়।’
সম্প্রতি উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপের দেশ সুইডেনে গিয়েছেন সাইম আখন্দ। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশকে বেছে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সেখান থেকে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী নয়, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার মতো নয়। এ জন্যই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা।
উচ্চশিক্ষার জন্য মেধাবীদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ার পেছনে পাঁচ কারণের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আলী জিন্নাহ। তাঁর মতে, এই কারণগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু ছোটখাটো কারণ থাকতে পারে।
আলী জিন্নাহ বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা তো আছেই, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি, কর্মসংস্থানের ঘাটতি, উপযুক্ত সম্মান, মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকা, বসবাসের অনুপযুক্ততা, জীবনমান নিম্নমুখী হওয়া—এমন বহুমাত্রিক কারণে দেশ ছাড়ছেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা। মেধাবীদের দেশে রাখতে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক।
একই ভাষ্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদের। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা-দীক্ষার অবস্থা খুবই শোচনীয়। যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মসংস্থানেরও ঘাটতি রয়েছে। এগুলোই প্রধান কারণ। এ ছাড়া রাজনৈতিক, সামাজিক নানান সংকট তো রয়েছেই।’
বছরে বিদেশে যান অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থী
ইউনেসকোর সর্বশেষ ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫৫টি দেশে পড়াশোনার জন্য গেছেন ৫২ হাজার ৭৯৯ শিক্ষার্থী। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ১৫১ আর ২০২১ সালে ৪৪ হাজার ৩৩৮ জন। এ সংখ্যা ২০১৩ সালে ছিল ২৪ হাজার ১১২ জন।
তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থী বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জুলফিকার আলী জুয়েল বলেন, ইউনেসকোর যে পরিসংখ্যান, তার চেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গেছেন।
রাজধানীতে আইইএলটিএস ও জিআরই কোচিং করায় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিড় বাড়া দেখেই বোঝা যায়, শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ কতটা। বর্তমানে অনলাইনেও বাড়ছে ইংরেজি শেখা ও আইইএলটিএস, টোয়েফল, জিআরই এবং বিভিন্ন দেশের ভাষা শেখার আগ্রহ।
রাবেয়া তানহা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দেশের অনিরাপদ পরিবেশ আমাকে খুবই ভাবাচ্ছে। তাই বিদেশে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
বৈধ পথেই ৯ বছরে গেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা বিগত ৯ অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে উচ্চশিক্ষা বাবদ ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো টাকার পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশিদের বিদেশে শিক্ষার ব্যয় ছিল ৬৬ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় করা এই অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ৭৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)। একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৩ কোটি ৩২ লাখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫২ কোটি ৮ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১ কোটি ৪৫ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ কোটি ৩১ লাখ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২১ কোটি ৮০ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৬১ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৭ কোটি ৭ লাখ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৪ লাখ ডলার বৈধ চ্যানেলে নিয়ে গেছেন শিক্ষার্থীরা।
টাকা বেশি যাচ্ছে অবৈধ পথে
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সাধারণত ভর্তি ফি, এক সেমিস্টারের টিউশন ফি এবং বাসস্থান ও অন্যান্য ফি ইত্যাদি দিয়ে বিদেশে পড়তে চলে যান। এ টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে দুটি পথ—একটি ব্যাংকিং চ্যানেল, অন্যটি অবৈধ পথ হুন্ডি।
একাধিক স্টুডেন্ট কাউন্সেলিং ফার্মের কর্ণধার এবং একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈধ পথে বা ব্যাংকের মাধ্যমে যত টাকা যায়, তার চার-পাঁচ গুণ টাকা অবৈধ পথে যায়। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষার অর্থ পাঠানোর নামে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে। গত ১০ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, একজন তাঁর সন্তানের টিউশন ফি হিসেবে এক সেমিস্টারেই ৪০০-৫০০ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন।
হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে একটি কাউন্সেলিং প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জানান, কোনো শিক্ষার্থী বিদেশে পড়াশোনার জন্য যেতে চাইলে স্থানীয় ব্যাংকে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে (বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে) বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় ফি পরিশোধ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে আয়ের উৎস জানাতে অভিভাবকের অনীহা থাকে। ফলে তাঁরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান। আবার অনেকে কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে আর কিছু হুন্ডিতে পাঠান। আবার অনেকে টাকা পাচারের জন্যও শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে গেছেন ঢাকার ধানমন্ডির এক তরুণ। তিনি জানান, বৈধ পথে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচই আনা সম্ভব হয়। এর বাইরে আরও অনেক খরচ রয়েছে। হুন্ডির মাধ্যমে এই টাকা আনা অনেক সহজ। ওই তরুণ বলেন, তাঁর পরিচিত এক কনসালট্যান্ট ফার্মকে নগদ টাকা দিয়েছেন, তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেছে।
বিষয়টি নজরে আনা হলে অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জুলফিকার আলী জুয়েল অবশ্য বলেন, ‘আমাদের সদস্যদের কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছি, এ ধরনের বেআইনি কাজ যেন কেউ না করে। এতে দেশের ক্ষতি হয়।’
প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকে
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রতারিত হচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। রাজধানীতে গড়ে ওঠা একাধিক কনসালট্যান্সি ফার্ম এসব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকারের মনিটরিং না থাকা এবং বিদেশ গমনে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ায় প্রতারক চক্রগুলো এখন লাগামহীন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চটকদার প্রচারণার মাধ্যমে অসাধু এজেন্সিগুলো প্রধানত তিন ধরনের প্রতারণা করে। এগুলো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপ্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ রাখা এবং বিদেশে না পাঠানো, আগ্রহী প্রার্থীদের ভুয়া কাগজ তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করা এবং ভিসা করে বাইরে পাঠিয়ে প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধা না দেওয়া।
এরই মধ্যে গত বছরের ১৭ অক্টোবর ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান মো. খায়রুল বাশার বাহার এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। পরে গত ১৪ জুলাই খায়রুল বাশারকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ভিসাপ্রাপ্তিও কঠিন হচ্ছে
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ভিসা জটিলতায় ইউরোপের অনেক দেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ, ইউরোপের বেশ কিছু দেশের ভিসা নিতে শিক্ষার্থীদের ভারতে যেতে হয়। কিন্তু এখন ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়া কঠিন হওয়ায় ইউরোপে যাওয়া জটিল হয়ে পড়ছে। এর বাইরে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সারা বিশ্বের জন্য ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন।
এ ছাড়া শুধু জার্মানিতে ভিসা আবেদনে ব্যয় হয় লম্বা সময়। জার্মান দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, তারা বছরে দুই হাজার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। কিন্তু এর বিপরীতে প্রায় ৪০ গুণ আবেদন জমা পড়ে জার্মান দূতাবাসে। যে কারণে এই ধীরগতি।
৮ অক্টোবর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, জার্মানিতে শিক্ষাব্যবস্থা খুবই উচ্চমানের এবং সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ফি লাগে না। কাজেই বাংলাদেশি ছাত্ররা খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাওয়ার জন্য। ৮০ হাজার আবেদন পড়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, জার্মান রাষ্ট্রদূত কয়েক দিন আগে চলে গেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘দেখুন, আমার কিছুই করার নেই। কারণ, আমার মোট সামর্থ্যই হচ্ছে দুই হাজার কেস প্রতিবছর ডিল করা। তার মানে, এত আবেদন তাঁরা গ্রহণ করতে পারবেন না।’
দেশে কমছে বিদেশি শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৩৩ জন। তাঁদের মধ্যে ছাত্রী ১৭১ ও ছাত্র ৪৬২। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬৭০ জন। সেই হিসাবে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী কমেছে ৩৭ জন।

বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমানে প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ মাত্র ১.২৫ বিলিয়ন ডলার, যা বাজারের তুলনায় নগণ্য। তবে এই খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক।
১৫ মার্চ ২০২৫
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্নাতকে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়টির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির ডিন মুহাম্মদ তারেক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২ দিন আগে
‘পরিবেশ’ শব্দটি এখন কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা স্বাস্থ্য—সব ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য আলোচ্য বিষয়। কিন্তু এই বোধ সঞ্চার করতে সময় লেগেছে অনেক, আর সেই বিলম্বই আজ পৃথিবীকে করেছে অসুস্থ। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শ...
২ দিন আগে
স্বরবর্ণ হলো ভাষার সুর, কিন্তু সুরে গড়ন না থাকলে গান টেকে না। ব্যঞ্জনবর্ণ বা Consonants হলো সেই গড়ন। এটি ভাষাকে কাঠামো দেয়, শব্দকে শক্তপোক্ত করে তোলে।
২ দিন আগেশিক্ষা ডেস্ক

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্নাতকে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়টির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির ডিন মুহাম্মদ তারেক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি ভর্তি পরীক্ষার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আবেদনের সময়সীমা ও এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও পত্রিকায় জানিয়ে দেওয়া হবে।
যেসব বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হবে, সেগুলো হলো বিএসসি (অনার্স) ইন ওশানোগ্রাফি, বিএসসি ইন নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং, বিবিএ ইন পোর্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লজিসটিকস, এলএলবি (অনার্স) ইন মেরিটাইম ল ও বিএসসি (অনার্স) ইন মেরিন ফিশারিজ।

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্নাতকে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়টির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির ডিন মুহাম্মদ তারেক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি ভর্তি পরীক্ষার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আবেদনের সময়সীমা ও এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও পত্রিকায় জানিয়ে দেওয়া হবে।
যেসব বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হবে, সেগুলো হলো বিএসসি (অনার্স) ইন ওশানোগ্রাফি, বিএসসি ইন নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং, বিবিএ ইন পোর্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লজিসটিকস, এলএলবি (অনার্স) ইন মেরিটাইম ল ও বিএসসি (অনার্স) ইন মেরিন ফিশারিজ।

বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমানে প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ মাত্র ১.২৫ বিলিয়ন ডলার, যা বাজারের তুলনায় নগণ্য। তবে এই খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক।
১৫ মার্চ ২০২৫
দেশে মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি আছে। রয়েছে কর্মসংস্থানের অভাব, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা। এতে তরুণদের বড় অংশের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় বিদেশমুখী হচ্ছেন তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা। জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) তথ্য বলছে, উচ্চশি
৩ ঘণ্টা আগে
‘পরিবেশ’ শব্দটি এখন কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা স্বাস্থ্য—সব ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য আলোচ্য বিষয়। কিন্তু এই বোধ সঞ্চার করতে সময় লেগেছে অনেক, আর সেই বিলম্বই আজ পৃথিবীকে করেছে অসুস্থ। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শ...
২ দিন আগে
স্বরবর্ণ হলো ভাষার সুর, কিন্তু সুরে গড়ন না থাকলে গান টেকে না। ব্যঞ্জনবর্ণ বা Consonants হলো সেই গড়ন। এটি ভাষাকে কাঠামো দেয়, শব্দকে শক্তপোক্ত করে তোলে।
২ দিন আগেমো. আশিকুর রহমান

‘পরিবেশ’ শব্দটি এখন কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা স্বাস্থ্য—সব ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য আলোচ্য বিষয়। কিন্তু এই বোধ সঞ্চার করতে সময় লেগেছে অনেক, আর সেই বিলম্বই আজ পৃথিবীকে করেছে অসুস্থ। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস বিপুলেন্দু বসাক। লিখেছেন মো. আশিকুর রহমান
মানুষ এখন ধীরে ধীরে বুঝতে শিখছে। মানুষ একা ভালো থাকতে পারে না; চারপাশ ভালো না থাকলে নিজের মঙ্গলও অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই সামগ্রিক ভালো থাকার মূল চাবিকাঠি হলো পরিবেশ। উন্নত বিশ্ব যেখানে বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পরিবেশবিজ্ঞানের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিল, সেখানে আমাদের দেশে বিষয়টি গুরুত্ব পেতে আরও প্রায় অর্ধশতাব্দী লেগে গেছে। এই দীর্ঘ অপেক্ষা আমাদের পরিবেশ ও উন্নয়নের সূচকে মারাত্মক ক্ষতি ডেকে এনেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে
এ দেশের পরিবেশবিজ্ঞান খুব পুরোনো কোনো বিষয় নয়। গত শতকের শেষ দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশে বিষয়টির একাডেমিক যাত্রা শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিভাগ চালু এবং ব্যক্তি পর্যায়ের চিন্তা থেকে পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা ও কর্মসূচি একটি সামগ্রিক রূপ নিতে শুরু করে।
২০১৬ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। এটি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালে বুটেক্সেও একই নামে একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত টেক্সটাইল শিল্পের দূষণ ও এর প্রতিকার নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছে।
একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোনো একক শাখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি প্রকৃত অর্থে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি প্রফেশনাল অ্যাপ্রোচ। এই বিষয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য দরকার পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, ভূগোল, অণুজীববিজ্ঞান, হাইড্রোলজি, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড সেফটির মতো নানা ক্ষেত্রের জ্ঞান।
ভূমির গভীর কোর থেকে শুরু করে মহাশূন্যের এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল অবজেক্ট পর্যন্ত। প্রকৃতির প্রতিটি স্তর এই বিষয়ের গবেষণার পরিসরে আসে। এককথায়, পৃথিবীকে জানাই এই বিষয়ের মূল লক্ষ্য।
কর্মপরিধি ও সম্ভাবনা
পরিবেশবিজ্ঞান ও প্রকৌশল পেশার সুযোগ অত্যন্ত বিস্তৃত। পরিবেশবিজ্ঞানী বা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের পাশাপাশি বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দপ্তর, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পানিসম্পদ বিভাগ, নদী ও উপকূল গবেষণা কেন্দ্র, মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা, স্প্যারো), বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্প ও এনজিওতেও কাজের সুযোগ রয়েছে।
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা
বর্তমান বিশ্বে একজন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্টিস্ট বা ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা ও বেতন দুটোই বিশ্বে প্রথম সারির পেশাগুলোর মধ্যে অন্যতম। উচ্চশিক্ষা ও যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই পেশায় খুব সহজেই নিজের ক্যারিয়ারের উন্নতি করা যায়। আর উন্নত বিশ্বে এই বিভাগের উচ্চ চাহিদার কথা মাথায় রেখেই উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ, ফেলোশিপ ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা। যেগুলোতে কোয়ালিফাই করতে হলে ছাত্রজীবনে একটু অধ্যয়ন ও গবেষণায় মনোযোগী হওয়ার সদিচ্ছাই যথেষ্ট।

‘পরিবেশ’ শব্দটি এখন কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা স্বাস্থ্য—সব ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য আলোচ্য বিষয়। কিন্তু এই বোধ সঞ্চার করতে সময় লেগেছে অনেক, আর সেই বিলম্বই আজ পৃথিবীকে করেছে অসুস্থ। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস বিপুলেন্দু বসাক। লিখেছেন মো. আশিকুর রহমান
মানুষ এখন ধীরে ধীরে বুঝতে শিখছে। মানুষ একা ভালো থাকতে পারে না; চারপাশ ভালো না থাকলে নিজের মঙ্গলও অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই সামগ্রিক ভালো থাকার মূল চাবিকাঠি হলো পরিবেশ। উন্নত বিশ্ব যেখানে বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পরিবেশবিজ্ঞানের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিল, সেখানে আমাদের দেশে বিষয়টি গুরুত্ব পেতে আরও প্রায় অর্ধশতাব্দী লেগে গেছে। এই দীর্ঘ অপেক্ষা আমাদের পরিবেশ ও উন্নয়নের সূচকে মারাত্মক ক্ষতি ডেকে এনেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে
এ দেশের পরিবেশবিজ্ঞান খুব পুরোনো কোনো বিষয় নয়। গত শতকের শেষ দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশে বিষয়টির একাডেমিক যাত্রা শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিভাগ চালু এবং ব্যক্তি পর্যায়ের চিন্তা থেকে পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা ও কর্মসূচি একটি সামগ্রিক রূপ নিতে শুরু করে।
২০১৬ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। এটি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালে বুটেক্সেও একই নামে একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত টেক্সটাইল শিল্পের দূষণ ও এর প্রতিকার নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছে।
একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোনো একক শাখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি প্রকৃত অর্থে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি প্রফেশনাল অ্যাপ্রোচ। এই বিষয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য দরকার পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, ভূগোল, অণুজীববিজ্ঞান, হাইড্রোলজি, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড সেফটির মতো নানা ক্ষেত্রের জ্ঞান।
ভূমির গভীর কোর থেকে শুরু করে মহাশূন্যের এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল অবজেক্ট পর্যন্ত। প্রকৃতির প্রতিটি স্তর এই বিষয়ের গবেষণার পরিসরে আসে। এককথায়, পৃথিবীকে জানাই এই বিষয়ের মূল লক্ষ্য।
কর্মপরিধি ও সম্ভাবনা
পরিবেশবিজ্ঞান ও প্রকৌশল পেশার সুযোগ অত্যন্ত বিস্তৃত। পরিবেশবিজ্ঞানী বা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের পাশাপাশি বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দপ্তর, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পানিসম্পদ বিভাগ, নদী ও উপকূল গবেষণা কেন্দ্র, মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা, স্প্যারো), বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্প ও এনজিওতেও কাজের সুযোগ রয়েছে।
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা
বর্তমান বিশ্বে একজন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্টিস্ট বা ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা ও বেতন দুটোই বিশ্বে প্রথম সারির পেশাগুলোর মধ্যে অন্যতম। উচ্চশিক্ষা ও যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই পেশায় খুব সহজেই নিজের ক্যারিয়ারের উন্নতি করা যায়। আর উন্নত বিশ্বে এই বিভাগের উচ্চ চাহিদার কথা মাথায় রেখেই উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ, ফেলোশিপ ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা। যেগুলোতে কোয়ালিফাই করতে হলে ছাত্রজীবনে একটু অধ্যয়ন ও গবেষণায় মনোযোগী হওয়ার সদিচ্ছাই যথেষ্ট।

বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমানে প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ মাত্র ১.২৫ বিলিয়ন ডলার, যা বাজারের তুলনায় নগণ্য। তবে এই খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক।
১৫ মার্চ ২০২৫
দেশে মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি আছে। রয়েছে কর্মসংস্থানের অভাব, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা। এতে তরুণদের বড় অংশের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় বিদেশমুখী হচ্ছেন তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা। জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) তথ্য বলছে, উচ্চশি
৩ ঘণ্টা আগে
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্নাতকে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়টির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির ডিন মুহাম্মদ তারেক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২ দিন আগে
স্বরবর্ণ হলো ভাষার সুর, কিন্তু সুরে গড়ন না থাকলে গান টেকে না। ব্যঞ্জনবর্ণ বা Consonants হলো সেই গড়ন। এটি ভাষাকে কাঠামো দেয়, শব্দকে শক্তপোক্ত করে তোলে।
২ দিন আগেফোনেটিকস
মমতাজ জাহান মম

স্বরবর্ণ হলো ভাষার সুর, কিন্তু সুরে গড়ন না থাকলে গান টেকে না। ব্যঞ্জনবর্ণ বা Consonants হলো সেই গড়ন। এটি ভাষাকে কাঠামো দেয়, শব্দকে শক্তপোক্ত করে তোলে।
ব্যঞ্জনবর্ণ কী?
যখন তুমি কোনো শব্দ উচ্চারণ করো আর মুখের ভেতর বাতাস কোথাও গিয়ে আটকে যায় বা ধাক্কা খায়, তখন তৈরি হয় ব্যঞ্জনবর্ণ। এ বাধা শব্দকে আলাদা আলাদা করে শোনায়।
উদাহরণ
‘b’ বললে ঠোঁট একসঙ্গে বন্ধ হয়।
‘t’ বললে জিব দাঁতের কাছে ঠেকে যায়।
‘s’ বললে বাতাস দাঁতের ফাঁক দিয়ে বের হয়।
ইংরেজিতে ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা
প্রায় ২৪টি ব্যঞ্জন ধ্বনি আছে। এগুলোকে উচ্চারণের ধরন ও জায়গা অনুযায়ী ভাগ করা হয়।
ব্যঞ্জনবর্ণের দুই বড় দিক
১. উচ্চারণের ধরন
Plosive (বিস্ফোরণধ্বনি)
Fricative (ঘর্ষণধ্বনি) f, v, s, z, sh, zh
Nasal (নাসিক্যধ্বনি) m, n, ng
Lateral l
Approximant— r, w, y
২. উচ্চারণের স্থান
Bilabial (দুই ঠোঁট) b, p, m
Dental (দাঁতের কাছে)— th (think, this)
Alveolar (দাঁতের মাড়ির কাছে) t, d, s, z, n, l
Velar (জিভের পেছনে) k, g, ng
মজার তুলনা
ভাবো, তোমার মুখটা এক মিউজিক ব্যান্ড। ঠোঁট = ড্রাম; দাঁত = গিটার
জিভ = পিয়ানো।
প্রতিটি ব্যঞ্জনবর্ণ একেকটা বাদ্যযন্ত্রের মতো বাজে, আর মিলেমিশে বানায় সুন্দর গান, মানে কথা।
ছোট্ট অনুশীলন
একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলো: p, t, k। দেখো ঠোঁট, জিব আর গলার কোন অংশ নড়ে।
তারপর বলো: f, s, sh এবার লক্ষ করো বাতাস কীভাবে বের হচ্ছে।
আগামী পর্বে (পর্ব-৭)

স্বরবর্ণ হলো ভাষার সুর, কিন্তু সুরে গড়ন না থাকলে গান টেকে না। ব্যঞ্জনবর্ণ বা Consonants হলো সেই গড়ন। এটি ভাষাকে কাঠামো দেয়, শব্দকে শক্তপোক্ত করে তোলে।
ব্যঞ্জনবর্ণ কী?
যখন তুমি কোনো শব্দ উচ্চারণ করো আর মুখের ভেতর বাতাস কোথাও গিয়ে আটকে যায় বা ধাক্কা খায়, তখন তৈরি হয় ব্যঞ্জনবর্ণ। এ বাধা শব্দকে আলাদা আলাদা করে শোনায়।
উদাহরণ
‘b’ বললে ঠোঁট একসঙ্গে বন্ধ হয়।
‘t’ বললে জিব দাঁতের কাছে ঠেকে যায়।
‘s’ বললে বাতাস দাঁতের ফাঁক দিয়ে বের হয়।
ইংরেজিতে ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা
প্রায় ২৪টি ব্যঞ্জন ধ্বনি আছে। এগুলোকে উচ্চারণের ধরন ও জায়গা অনুযায়ী ভাগ করা হয়।
ব্যঞ্জনবর্ণের দুই বড় দিক
১. উচ্চারণের ধরন
Plosive (বিস্ফোরণধ্বনি)
Fricative (ঘর্ষণধ্বনি) f, v, s, z, sh, zh
Nasal (নাসিক্যধ্বনি) m, n, ng
Lateral l
Approximant— r, w, y
২. উচ্চারণের স্থান
Bilabial (দুই ঠোঁট) b, p, m
Dental (দাঁতের কাছে)— th (think, this)
Alveolar (দাঁতের মাড়ির কাছে) t, d, s, z, n, l
Velar (জিভের পেছনে) k, g, ng
মজার তুলনা
ভাবো, তোমার মুখটা এক মিউজিক ব্যান্ড। ঠোঁট = ড্রাম; দাঁত = গিটার
জিভ = পিয়ানো।
প্রতিটি ব্যঞ্জনবর্ণ একেকটা বাদ্যযন্ত্রের মতো বাজে, আর মিলেমিশে বানায় সুন্দর গান, মানে কথা।
ছোট্ট অনুশীলন
একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলো: p, t, k। দেখো ঠোঁট, জিব আর গলার কোন অংশ নড়ে।
তারপর বলো: f, s, sh এবার লক্ষ করো বাতাস কীভাবে বের হচ্ছে।
আগামী পর্বে (পর্ব-৭)

বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমানে প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ মাত্র ১.২৫ বিলিয়ন ডলার, যা বাজারের তুলনায় নগণ্য। তবে এই খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক।
১৫ মার্চ ২০২৫
দেশে মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি আছে। রয়েছে কর্মসংস্থানের অভাব, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা। এতে তরুণদের বড় অংশের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় বিদেশমুখী হচ্ছেন তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা। জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) তথ্য বলছে, উচ্চশি
৩ ঘণ্টা আগে
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্নাতকে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়টির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির ডিন মুহাম্মদ তারেক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২ দিন আগে
‘পরিবেশ’ শব্দটি এখন কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা স্বাস্থ্য—সব ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য আলোচ্য বিষয়। কিন্তু এই বোধ সঞ্চার করতে সময় লেগেছে অনেক, আর সেই বিলম্বই আজ পৃথিবীকে করেছে অসুস্থ। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শ...
২ দিন আগে