Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি ১৬ ঘণ্টা কাজের সুযোগ

মোহাম্মদ সুমন মোল্লা সেলিম।

নেদারল্যান্ডসের ইকো-মভু মেন্ট প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন মোহাম্মদ সুমন মোল্লা সেলিম। চাকরি পেয়েছিলেন লিংকডইনের মাধ্যমে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) এই প্রাক্তন শিক্ষার্থী কথা বলেছেন বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার নিয়ে। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাদিম মজিদ

নাদিম মজিদ
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭: ৫৩

প্রশ্ন: বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন, সেখানে কাজ পেতে কী কী ধাপ অনুসরণ করতে হয়েছে?

উত্তর: ইউরোপে টেক ইন্ডাস্ট্রির বেশির ভাগ চাকরির জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হলো লিংকডইন। আমি যখন নতুন চাকরি খোঁজা শুরু করেছিলাম, তখন প্রথমেই লিংকডইন থেকে আবেদন শুরু করি। ইকো-মভু মেন্ট চাকরির জন্য মোট চারটি ধাপে সাক্ষাৎকার দিতে হয়েছিল। প্রথম ধাপে ছিল এইচআর ইন্টারভিউ, যেখানে আমার অভিজ্ঞতা, পদের বিষয় এবং কোম্পানির প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ছিল কোডিং ও সিস্টেম ডিজাইন ইন্টারভিউ। তৃতীয় ধাপে কোম্পানির চিফ প্রোডাক্ট অফিসারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এ দুটো ইন্টারভিউই ইকো-মভুমেন্টের অফিসে গিয়ে দিতে হয়েছিল। সবশেষে সিটিওর সঙ্গে চূড়ান্ত সাক্ষাৎকার ছিল। সব ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর আমি চাকরির অফার পাই।

প্রশ্ন: ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডস। এখানে বাংলাদেশিদের জন্য উচ্চতর পড়াশোনার জন্য কেমন সুযোগ রয়েছে? স্কলারশিপ ও ক্যারিয়ারের সুযোগ কেমন?

উত্তর: নেদারল্যান্ডস উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় দেশ। এখানে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে মাস্টার্স ও ব্যাচেলর প্রোগ্রাম পড়ানো হয়। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সহজেই আবেদন করতে পারছেন। পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোতে আবেদন করার জন্য ভালো আইইএলটিএস স্কোর থাকা বাধ্যতামূলক। স্কলারশিপের ক্ষেত্রে কিছু সুযোগ রয়েছে। যেমন অরেঞ্জ টিউলিপ স্কলারশিপ, হল্যান্ড স্কলারশিপ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। এ ব্যাপারে বিস্তারিত studyinnl.org এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানা যাবে। পড়াশোনা শেষ করার পর এক বছরের ‘ওরিয়েন্টেশন ইয়ার ভিসা’ পাওয়া যায়। যার মাধ্যমে চাকরির সুযোগ নেওয়া সহজ হয়। বিশেষ করে আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফাইন্যান্স সেক্টরে ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে।

প্রশ্ন: নেদারল্যান্ডসে উচ্চতর শিক্ষার প্রস্তুতি নিতে বাংলাদেশিদের কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন?

উত্তর: প্রথমেই ইংরেজি দক্ষতা থাকা জরুরি। কারণ প্রায় সব প্রোগ্রামের জন্য IELTS বা TOEFL স্কোর লাগে। এরপর নিজের আগ্রহের বিষয় অনুযায়ী উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রাম বেছে নিতে হয় এবং সময়মতো আবেদন করতে হয়। ভালো স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP), রেকমেন্ডেশন লেটার (LOR) এবং একাডেমিক রেজাল্ট এখানে অনেক গুরুত্ব পায়। নেদারল্যান্ডসে জীবনযাত্রার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। এখানে প্রতি মাসে একজন ছাত্রের ভাড়া, খাবার, পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক খাতে ১২০০ থেকে ১৫০০ ইউরোর মতো খরচ হতে পারে। নেদারল্যান্ডসে পড়াশোনার সময় শিক্ষার্থীরা প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১৬ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। আর ছুটির সময়ে ফুলটাইম কাজের অনুমতি থাকে। স্টুডেন্ট ভিসায় আসা শিক্ষার্থীর স্পাউসের (স্বামী-স্ত্রী) কাজ করার জন্য আলাদা ওয়ার্ক পারমিট বা টিডব্লিউভি প্রয়োজন হয়। নেদারল্যান্ডসের সংস্কৃতি, পরিবেশ ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সবাই সময়নিষ্ঠ ও সরাসরি কথা বলেন। তাই খোলামেলা যোগাযোগের দক্ষতাও বড় একটি প্লাস পয়েন্ট।

প্রশ্ন: নেদারল্যান্ডসে ক্যারিয়ার করতে চাইলে বাংলাদেশিদের কোন কোন সেক্টরে সুযোগ রয়েছে?

উত্তর: নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে বেশি সুযোগ আইটি ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে। তা ছাড়া ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেটা সায়েন্স, ফাইন্যান্স, সাপ্লাই চেইন এবং হেলথটেক সেক্টরেও ভালো সুযোগ রয়েছে। দেশটি স্টার্টআপ ও টেক ইনোভেশনে অনেক এগিয়ে। তাই তরুণ পেশাজীবীদের জন্য পরিবেশটি খুবই অনুকূল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হসপিটালিটি ও গ্যাস্ট্রনোমি সেক্টরেও সুযোগ বেড়েছে। নেদারল্যান্ডসে হোটেল, রেস্তোরাঁ ও আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্কৃতি-সম্পর্কিত কাজের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের জন্য।

প্রশ্ন: নেদারল্যান্ডসে ক্যারিয়ার করতে চাইলে একজন বাংলাদেশির কেমন প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন?

উত্তর: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের টেকনিক্যাল স্কিল ও প্রফেশনাল কমিউনিকেশন স্কিল উন্নত করা। রেজুমে ও লিংকডইন প্রোফাইল ভালোভাবে সাজানো দরকার। ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া অনেক সময় একাধিক ধাপে হয়। বিশেষ করে আইটি সেক্টরে চাকরির ক্ষেত্রে ভালোভাবে নিয়মিত কোডিং, সিস্টেম ডিজাইন ও বিহেভিয়েরাল প্রশ্নের অনুশীলন করা উচিত। এ ছাড়া ইউরোপের কাজের সংস্কৃতি ও টিমওয়ার্কের ধারণা থাকা উচিত।

প্রশ্ন: নেদারল্যান্ডসের কোন কোন শহরে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশি রয়েছে?

উত্তর: সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন আমস্টারডাম, রটারডাম, দ্য হেগ এবং আইন্দহোভেন শহরে। এ ছাড়া গ্রোনিঙেন, ডেলফট ও উট্রেখট শহরেও অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী বসবাস করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ