Ajker Patrika

ঈদেও মলিন সেই মুক্তার পরিবার, এখনো জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ২১: ৩২
ঈদেও মলিন সেই মুক্তার পরিবার, এখনো জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন

রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া মুক্তা বানুর (২০) পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে মুক্তার মা-বাবা বারবার ডুকরে উঠছেন। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশীরা। তার ওপর মেয়ের লাশ ছাড়াতে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার করে হাসপাতালে দেওয়া ৬৪ হাজার টাকা পরিশোধের দুশ্চিন্তায় দিশেহারা দরিদ্র পরিবারটি। 

আজ রোববার বেলা ২টায় মুক্তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ। প্রতিবেশীরা বাড়িতে বসে আছেন। একটি ঘরে মুক্তার মা জায়নামাজে বসে মেয়ের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দুই হাত তুলে দোয়া করছেন আর কাঁদছেন। বাড়ির পাশে মুক্তার কবর ঘিরতে বাঁশের বাতা তৈরি করছেন মুক্তার দিনমজুর বাবা। 

প্রতিবেশী আলোকা বেগম বলেন, ‘একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে মুক্তার মা-বাবা বারবার ডুকরে উঠছেন। আমরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কারণ, মেয়েকে খুবই ভালোবাসতেন মা-বাবা।’

আলোকা বেগম আরও বলেন, ‘মেয়ের চিকিৎসার নামে প্রাইম হাসপাতাল অনেক টাকা নিয়েছে। এই টাকা গ্রামের মানুষের কাছ থেকে ধার করেছেন মা-বাবা। কয়দিন ধরে মেয়ের শোকে কাজে যেতে পারেননি বাবা। এ কারণে পরিবার অনেকটাই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ঈদের আমেজ নেই তাঁদের মাঝে। এক দিকে মেয়ের শোক, অন্যদিকে ধারের টাকা পরিশোধ নিয়ে চিন্তিত মুক্তার মা-বাবা।’ 

জায়নামাজে বসে মেয়ের জন্য দোয়া করছেন মুক্তার মা। ছবি: আজকের পত্রিকা সরেজমিন জানা গেছে, মুক্তা অল্পে বয়সে বিয়ে করতে চায়নি। সে চেয়েছিল সমাজের জন্য কাজ করতে। এ জন্য ছোটবেলা থেকে তার ঝোঁক ছিল লেখাপড়ার প্রতি। সে সব সময়ে উচ্চশিক্ষিত হয়ে সমাজের জন্য কাজ করার কথা বলত পরিবার-গ্রামবাসীকে। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে মুক্তা বানুর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তাঁর লেখাপড়া বন্ধ করে দেড় বছর আগে বিয়ে দেওয়া হয়। গত ২৯ মার্চ সন্তান প্রসবকালে না ফেরার দেশে চলে যান মুক্তা বানু। 

মুক্তা বানুর বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়নের মোস্তফাপুর বখশীপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা মোক্তার হোসেন দিনমজুর ও মা মোহসিনা বেগম গৃহিণী। 
 
জানা গেছে, মুক্তাকে দেড় বছর আগে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় বিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর স্বামী সালমান হোসেন। সালমান রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মুক্তা বানু আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে গত দুই মাস আগে বাবা মোক্তার হোসেন তাঁকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। গত ২৮ মার্চ প্রসববেদনা উঠলে তাঁকে প্রথমে রংপুরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে উচ্চ রক্তচাপ থাকায় গভীর রাতে তাঁকে নেওয়া হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। 

পরদিন (২৯ মার্চ) ভোর ৫টার দিকে স্বাভাবিকভাবে মৃত ছেলেসন্তান প্রসব করেন মুক্তা বানু। এরপর ওই দিন দুপুরে তাঁর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে আইসিইউতে রেফার্ড করেন। সেখানে শয্যা ফাঁকা না থাকায় ওই দিন বিকেলে তাঁকে ভর্তি করা হয় রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে রাত ১১টার দিকে মুক্তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। 

বাবা মোক্তার হোসেনের অভিযোগ করে বলেন, ৩০ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে মুক্তা মারা গেলেও বাড়তি টাকা আদায়ের জন্য তাঁকে রাত ২টা পর্যন্ত আইসিইউতে রেখে ১০০ প্রকার ওষুধ দেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসার বিল ৬৪ হাজার টাকা আদায়ে রাত ২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত লাশ আটকে রাখা হয়। সকাল ৬টার মধ্যে লাশের দুর্গন্ধ ছড়ালে দ্রুত হাসপাতাল থেকে লাশ ছাড়িয়ে বাড়ির পাশে দাদা-দাদির কবরের পাশে দাফন করা হয়। 

এ নিয়ে ১ এপ্রিল আজকের পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘আইসিইউতে ১৪ ঘণ্টায় ১ রোগীকে ১০০ ওষুধ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে রংপুরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আজকের পত্রিকার সূত্র ধরে ওই দিন তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করে দেন রংপুরের সিভিল সার্জন মো. ওয়াজেদ আলী। এতে কমিটির প্রধান করা হয় ডেপুটি সিভিল সার্জন রুহুল আমিনকে। ওই দিনই মুক্তার বাবা মোক্তার হোসেন প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রংপুর জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। তদন্ত প্রতিবেদন তিন কার্যদিবসের মধ্যে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও আজ রোববার পর্যন্ত জমা দেওয়া হয়নি। 
 
মুক্তার কবর ঘিরতে বাঁশের বাতা তৈরি করছেন মুক্তার দিনমজুর বাবা। ছবি: আজকের পত্রিকা জানা গেছে, মুক্তা বানুর দিনমজুর বাবার ভিটাবাড়ি ছাড়া আর কোনো জমিজমা নেই। কখনো মানুষের বাড়িতে কাজ করেন, কখনো পৌর শহরে রাস্তার ধারে কাঁচামাল বিক্রি করে সংসার চালান মোক্তার হোসেন। নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে মুক্তা বানু ২০২০ সালে আফতাবগঞ্জ দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসা থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৪২ পেয়ে দাখিল পাস করার পর বদরগঞ্জ মহিলা কলেজে ভর্তি হয়। অর্থাভাবে সেখানে মুক্তা এইচএসসির ফরম পূরণ করতে পারেননি। ছেলে মোকছেদ আলী (১৮) পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও অর্থাভাবে তাঁরও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। 
 
প্রতিবেশী ফারজেনা বেগম বলেন, ‘মুক্তা বানু ছিল পরিবারের আদরের মেয়ে। সে অত্যন্ত নম্র-ভদ্র মেয়ে ছিল। মুক্তা সব সময় বলত পড়াশোনা করে সমাজের জন্য ভালো কিছু কাজ করার কথা। লেখাপড়া শেষ না করে বিয়ে করতে চায়নি সে। কিন্তু তার গরিব মা-বাবা অর্থাভাবে তার লেখাপড়া বন্ধ করে বিয়ে দেয়।’ 

মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ে লেখাপড়া কখনোই ছাড়তে চায়নি। এই বয়সে বিয়ে করতেও চায়নি। সে স্বপ্ন দেখত পড়াশোনা করে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর। কিন্তু আমি তাকে পড়াতে পারিনি। মেয়ে বড় হয়ে গেলে প্রতিবেশীদের কটু কথা শোনার ভয়ে তাকে বাড়িতে রাখিনি। দেড় বছর আগে তাকে বিয়ে দেই। যদি জানতাম মেয়ে এভাবে চলে যাবে, কখনোই তাকে অমতে বিয়ে দিতাম না।’ 

মেয়ের মা মোহসিনা বলেন, ‘আমার মেয়ে লেখাপড়া করতে চেয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে তার ইচ্ছা পূরণ করতে পারিনি। এখন নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে।’ মোহসিনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পরও ১৪ ঘণ্টা আইসিইউতে রেখে বাড়তি টাকা যারা নিয়েছে, আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই।’ 

আজ বিকেলে মোবাইল ফোনে রংপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন মো. রুহুল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত শেষ করতে আরও সময় লাগবে। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারিনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত